লন্ডন অগ্নিকাণ্ড: সেহেরির জন্য টের পেয়েছেন না হলে আরো মারা যেত
সেহেরির জন্য জেগে থাকা মুসলমানরা প্রথমে লন্ডনের গ্রিনফেল টাওয়ারে আগুন ধরার বিষয়টি টের পেয়েছেন। ঘুমন্ত প্রতিবেশীদের জাগিয়ে তুলে তাদেরকে টাওয়ার থেকে বের হতে সহায়তা করেছেন তারা। তা নাহলে হতাহতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতো। বুধবারের এ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১২ জন মর্মান্তিকভাবে পুড়ে নিহত হয়েছেন এবং অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মুসলমান পরিবারগুলোর একাংশ
পাশাপাশি মসজিদ থেকে ছুটে এসেও সহায়তা করেছে অনেক মুসলমান তরুণ। গ্রিনফেল ঘটনার ছবি তোলায় নিয়োজিত এক নারী সাংবাদিকদের বলেছেন, এসব তরুণ মুসলমান ছেলেরা যদি না থাকতো এবং তারা যদি মসজিদ থেকে ছুটে এসে টাওয়ার থেকে বের হতে সহায়তা না করতো তাহলে আরো অনেকেই মারা যেত।
গ্রিনফেল টাওয়ারে বসবাসকারী মুসলিমরা জানিয়েছেন, রাত ১টার আগে তারা পোড়া গন্ধ এবং ধোঁয়া দেখতে পেয়েছেন। দেরি না করে তখনই ঘুমন্ত প্রতিবেশীদের প্রাণপণে জাগানোর কাজে লেগে যান তারা। ঘুমন্ত প্রতিবেশীদের দরজায় আঘাত করে তাদেরকে জাগিয়ে তোলেন। এ ভূমিকার জন্য গ্রিনফেল টাওয়ারের মুসলমান অধিবাসীদের ‘লাইফলাইন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় টাওয়ারের ফায়ার অ্যালার্ম কাজ করে নি বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি বের হয়ে আসার যে ব্যবস্থা থাকে তাও কাজ করে নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০ বছর বয়সী খালিদ সুলেমান আহমেদ জানান, টাওয়ারের আট তলায় থাকেন তিনি। সেহেরির জন্যেই গভীর রাত পর্যন্ত জেগে ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, "চাচীকে ঘুম তুলে দ্রুত প্রতিবেশীদের ঘুম থেকে তোলার কাজে লেগে যাই। তাদের ঘরের দরজায় আঘাত করতে থাকি।"
তিনি আরো বলেন, "দু’টো ঘর ছাড়া বাকি সব ঘরের বাসিন্দারা জেগে উঠেছিল। অবশ্য পরে একটি ঘরের মানুষের দেখা পেয়েছি কিন্তু এখনো অন্য ঘরের মানুষের কোনো খবর পাই নি।"
এদিকে, আল-মানার মসজিদসহ অনেক ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও মসজিদ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। আল-মানার মসজিদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেকেনো ধর্মের বা ধর্ম মানে না এমন মানুষকে মসজিদে এসে বিশ্রাম নেয়ার, ঘুমানোর এবং খাদ্য ও পানি পানের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। অবশ্য ওই এলাকার দুইটি গির্জা এবং শিখদের গুরুদুয়ারাও তাদের দরজা দুর্গত মানুষদের জন্য খুলে দিয়েছে।#
লন্ডনে আগুন: ১৭ জন নিহত 'আর কেউ বেঁচে থাকার আশা নেই' বলছে উদ্ধারকর্মীরা
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় টেরেজা মে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন
পশ্চিম লন্ডনে গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জীবিত কাউকে খুঁজে পাবার আর কোনো আশা নেই -বলছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
লন্ডন ফায়ার কমিশনার ড্যানি কটন বলছেন, নর্থ কেনসিংটনে অবস্থিত আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রেনফেল টাওয়ারের ভেতরে ধ্বংসস্তুপের মধ্যেই হয়তো 'নিখোঁজ অনেকে রয়ে গেছেন'। এই সংখ্যাটা এখনো অজানা।
তবে 'আর কেউ বেঁচে নেই' বলে ধারণা উদ্ধারকর্মীদের।
ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় ১৭ জন নিহত হবার তথ্য নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে নিখোঁজ বাসিন্দাদের বিষয়ে সব জায়গায় খোঁজ চালাচ্ছেন স্বজন ও বন্ধুবান্ধবেরা।
ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ এ ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেছেন।
৭০ জনেরও বেশি মানুষকে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদের মধ্যে ১৮ জনের অবস্থা আশংকাজনক।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেজা মে বলেছেন "কিভাবে এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো তার পূর্ণ তদন্ত করা হবে।"
লন্ডনে আগুন: নিখোঁজদের মধ্যে বাংলাদেশি পরিবারও রয়েছে
লন্ডনে আগুন: জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে শিশুদের
পশ্চিম লন্ডনে গ্রেনফেল টাওয়ার নামে বহুতল ভবনটিতে যখন আগুন লাগে তখন সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই ঘুমিয়ে ছিলেন। লন্ডন সময় বুধবার প্রথম প্রহর, অর্থাৎ রাত একটার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই জানালা দিয়ে নীচে লাফিয়ে পড়েছেন।
এমনকি শিশু সন্তানকেও নিরাপদে রাখার জন্য জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে।
তারপরও ধোঁয়ার কারণে বহু মানুষ আটকা পড়েছিলেন ভবনটিতে, অনেকে বের হতে চাইলেও বের হতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার সকালে ফায়ার কমিশানর মিস কটন জানান, পুরো ভবনটিতে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। কিন্তু আগুনে পুড়ে ভেতরে এমন ধ্বংসস্তুপ তৈরি হয়েছে যার মধ্যে অভিযান চালানো হবে খুব 'জটিল ও কষ্টকর'।
আর যেহেতু ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে আগে সেই বিষয়টা ঠিক করে পরে ধ্বংসস্তুপের ভেতরে অনুসন্ধান চালাতে হবে বলেও জানান মিস কটন।
ওই ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় লেগেছে।
তবে, ঠিক কী কারণে এবং কিভাবে সেখানে আগুন লাগলো সে নিয়ে এখনো পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কিছু জানাতে পারেনি।
আগুন লাগার আগে নর্থ কেনসিংটনের ঐ ভবনটিতে সংস্কার কাজ চলছিল। সেসময় ভবনের বাসিন্দাদের অনেকেই গুরুতর অগ্নিকান্ডের ঝুঁকির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সাবধান করেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে।