বাসক কথাটি অর্থ সুগন্ধকারক। এটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। লোকের মুখে ঘুরে ঘুরে বাসকের নাম পরিণত হয়েছিল ‘বসায়।’ বাসকের অনেক গুণ। বাসকের ছাল, পাতা, রস সবই উপকারী। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বাসক পাতাকে নানা রোগ সারাতে ব্যবহার করা হয়। সর্দি-কাশির মহা ওষুধ বাসক, একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ। গাছটি লম্বায় ১-১৫ মিটার (৩-৫ ফুট) পর্যন্ত হয়। কচি অবস্থায় গাছের গোড়া সবুজ হলেও পরিণত অবস্থায় হাল্কা বেগুনি রঙের মতো দেখায়। পাতাগুলি লম্বায় ৫-১২ সেন্টিমিটারের মতো হয়। ফুল সাদা রঙের এবং গুচ্ছাকারে ফোটে। ফলগুলি ক্যাপসুলের মতো দেখতে।
বাসকের তাজা অথবা শুকনো পাতা ওষুধের কাজে লাগে। বাসকের পাতায় ‘ভাসিসিন’ নামীর ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল থাকে। শ্বাসনালীর লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্মানাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ। বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা করে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ উপকারী। তবে অধিক মাত্রায় খেলে বমি হয়, অন্তত বমির ভাব বা নসিয়া হয়, অস্বস্তি হয়।
উপকারিতা
১. বাসক পাতার রস ১-২ চামচ হাফ থেকে এক চামচ মধু-সহ খেলে শিশুর সদির্কাশি উপকার পাওয়া যায়।
২. বাসক পাতার রস স্নানের আধ ঘণ্টা আগে মাথায় কয়েক দিন মাখলে উকুন মরে যায়। আমবাত ও ব্রণশোথে (ফোঁড়ার প্রাথমিক অবস্থা) বাসক পাতা বেঁটে প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।
৩. যদি বুকে কফ জমে থাকে এবং তার জন্য শ্বাসকষ্ট হয় বা কাশি হয় তা হলে বাসক পাতার রস ১-২ চামচ এবং কন্টিকারী রস ১-২ চামচ, ১ চামচ মধুসহ খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।
৪. প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রণা থাকলে বাসকের ফুল বেঁটে ২-৩ চামচ ও মিছরি ১-২ চামচ সরবত করে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৫. জ্বর হলে বা অল্প জ্বর থাকলে বাসকের মূল ৫-১০ গ্রাম ধুয়ে থেঁতো করে ১০০ মিলিলিটার জলে ফোটাতে হবে।
৬. ২৫ মিলিলিটার থাকতে নামিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে দিনে ২ বার করে খেলে জ্বর এবং কাশি দুই-ই চলে যায়।
৭. বাসকের কচি পাতা ১০-১২টি ও এক টুকরো হলুদ এক সঙ্গে বেঁটে দাদ বা চুলকানিতে লাগালে কয়েক দিনের মধ্যে তা সেরে যায়।
৮. বাসক পাতা বা ফুলের রস ১-২ চামচ মধু বা চিনি ১ চামচ-সহ প্রতি দিন খেলে জন্ডিস রেগে উপকার পাওয়া যায়।
৯. পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে বাসক পাতা ২০টি থেঁতো করে ২ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় কুলকুচি করলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
১o. যাঁদের হাঁপানির টান আছে তাঁরা বাসক পাতা শুকনো করে, ওই পাতা বিড়ি বা চুরুটের মতো পাকিয়ে, তার সাহায্যে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়।
১১. যাঁদের গায়ে ঘামের গন্ধ হয় তাঁরা বাসক পাতার রস গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে।
১২. বাসক পাতার রস ও শঙ্খচূর্ণ মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে রঙ ফরসা হবে।
১৩. এক কলসি জলে তিন-চারটি বাসক পাতা ফেলে তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই জল বিশুদ্ধ হয়ে যায়। এর পর ব্যবহার করতে পারেন।
১৪. পাতার রস নিয়মিত খেলে খিঁচুনি রোগ দূর হয়ে যায়।