শনির উপগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার উপাদান খুঁজে পেল নাসা
শনির বরফাবৃত উপগ্রহ এনসেলাডাসে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার মতো রাসায়নিক উপকরণ বা শক্তি রয়েছে। বৃহস্পতিবার নাসার পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে জানানো হয়েছে, শনির এই উপগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। নাসার ক্যাসিনি অভিযানের লেখক হুন্টার ওয়েট বলেন, এখনও পর্যন্ত প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি ঠিকই। কিন্তু প্রাণ থাকলে যে যে খাদ্যের প্রয়োজন হয়, তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গিয়েছে শনির ওই উপগ্রহে। পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব সন্ধানে এই তথ্যই বিজ্ঞানীদের নতুন করে উৎসাহিত করে তুলেছে।
প্রাণের অস্তিত্ব থাকার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত জল থাকতে হবে, দ্বিতীয়ত এমন রাসায়নিক পদার্থ থাকতে হবে, যা শক্তি সংগ্রহ করতে পারবে, তৃতীয়ত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান (যেমন কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস, সালফার) থাকতে হবে। নাসার পাঠানো ‘ক্যাসিনি’ উপগ্রহের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, সূর্য থেকে অনেক দূরে থাকলেও ছোট এনসেলাডাস উপগ্রহে এই সবকটি বৈশিষ্ট্য বর্তমান। তবে কৃত্রিম উপগ্রহ ক্যাসিনি এখনও এনসেলাডাসে ফসফরাস বা সালফারের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। তবে বিজ্ঞানীদের দাবি, এনসেলাডাসের পাথুরে উপরিতলের সঙ্গে গ্রহাণুর সামঞ্জস্য রয়েছে। এই অবস্থায় যেহেতু গ্রহাণুতে ওই দুটি রাসায়নিক থাকার প্রমাণ মিলেছে, তাই এনসেলাডাসেও ফসফরাস এবং সালফার রয়েছে বলেই মনে করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। জেট প্রপালশান ল্যাবরেটরির (জেপিএল) ক্যাসিনি প্রকল্পের মুখ্য বিজ্ঞানী লিনডা স্পিলকার বলেছেন, শনির উপগ্রহের সমুদ্রে যে রাসায়নিক শক্তির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তাতে বহির্বিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার গবেষণায় অবশ্যই এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
নাসার সায়েন্স মিশন ডিরেক্টরেটের অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর থমাস জুরবুকেন বলেছেন, পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার ক্ষেত্রে এটা এখনও পর্যন্ত তাঁদের সবথেকে বড় সাফল্য। ক্যাসিনি অভিযানে শনির উপগ্রহ সম্পর্কে যেরকম তথ্য মিলেছে, একইভাবে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা সম্পর্কেও প্রচুর নতুন তথ্য পাওয়া গিয়েছে। যা এখানেও প্রাণের অস্তিত্ব থাকার প্রশ্নকে উসকে দিয়েছে। নাসার ক্যাসিনি অভিযানের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এনসেলাডাসের সমুদ্রে রাসায়নিক শক্তির সন্ধান মিলেছে। যা খেয়ে ‘প্রাণ’ বেঁচে থাকতে পারে। অন্যদিকে, হাবল স্পেস টেলিস্কোপের বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপার পৃষ্ঠদেশ থেকে পালকপুচ্ছের মতো কিছু একটা সর্বদা নির্গত হচ্ছে। ক্যাসিনি অভিযানের বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, এনসেলাডাসের সমুদ্রের উপরিতলের ঠিক নীচে যে রাসায়নিক শক্তির কথা বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে তা হাইড্রোজেন গ্যাস। অর্থাৎ প্রাণের অস্তিত্ব থাকার অন্যতম উপকরণ এই গ্যাস শনির উপগ্রহে উপস্থিত রয়েছে। একইসঙ্গে এই গ্যাসকে খেতে সক্ষম জীবাণু এনসেলাডাসের সমুদ্রের অতলে থাকতে পারে বলেই বিজ্ঞানীদের অনুমান। সেক্ষেত্রে জলে দ্রবীভূত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সঙ্গে এই গ্যাস মিশে মিথেন প্রস্তুতের সম্ভাবনা প্রবল। উল্লেখ্য, প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে মিথেনের থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।