চীনের পর এবার উত্তর কোরিয়া সীমান্তে সেনা সমাবেশ করছে রাশিয়া। উত্তর কোরিয়ায় মার্কিন বাহিনী আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কায় দেশটির সঙ্গে রুশ সীমান্তে সেনা ও যুদ্ধ সরঞ্জাম পাঠাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
ডেইলি মেইল জানায়, পুতিনের আশঙ্কা, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি কিম জন উনের উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালান, তাহলে দেশটির নাগরিকদের একটা বিশাল অংশ শরণার্থী হয়ে রাশিয়ায় ঢুকে পড়তে পারে।
এর আগে চীনও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তার দক্ষিণ সীমান্তে ১ লাখ ৫০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এ সেনা সমাবেশের সিদ্ধান্ত মূলত তার দেশে উত্তর কোরীয় নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার ১১ কিমি. সীমান্তজুড়ে বৃহস্পতিবার সকালে রুশ সৈন্য মোতায়েন করা হয়। এ সম্পর্কিত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অস্ত্র-সরঞ্জাম বোঝাই তিনটি ট্রেন কোরীয়-রুশ সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত এলাকার দিকে রুশ সামরিক হেলিকপ্টার টহল দিতে যাচ্ছে।
রাশিয়ার ভেটো: এদিকে উত্তর কোরিয়ার একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সমালোচনা করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রাশিয়া ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেই প্রস্তাব আটকে দেয়। যদিও উত্তর কোরিয়ার সবচে বড় মিত্র চীন এ নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে। খবর ভয়েস অব আমেরিকার।
প্রস্তাবে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট অঞ্চলসহ পুরো বিশ্বে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। তাই দেশটিকে অবিলম্বে এসব পরীক্ষা বন্ধ করতে হবে। গত মাসে এ ইস্যুতে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের বিষয়ে একমত হয় পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ১৫ সদস্য দেশ।
বুধবার প্রস্তাবটি পরিষদের বৈঠকে তোলা হলে চীন সমর্থন দেয়। কিন্তু রাশিয়ার কূটনীতিক প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দিলে তা আটকে যায়। দেশটির দাবি, শুধু নিন্দা প্রস্তাব নয় বরং আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকট নিরসনের বিষয়টিও প্রস্তাবে যুক্ত করা হোক।
আগামী সপ্তাহে নিরাপত্তা পরিষদে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এর আগেই এ ইস্যুতে নিন্দা প্রস্তাব আটকে দিল রাশিয়া।
উত্তর কোরিয়ার হাতে ৩০টি পরমাণু বোমা: উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে আগে যে ধারণা করা হতো তার চেয়ে অনেক বেশি পরমাণু বোমা দেশটির অস্ত্রভাণ্ডারে আছে। দেশটির কাছে অন্তত ৩০টি পরমাণু বোমা রয়েছে। এ ছাড়া তিন বছরে এ সংখ্যা দ্বিগুণ করার মতো বোমা তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানও দেশটির কাছে আছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এসব তথ্য দিয়েছে বলে জানায় ওয়াশিংটন পোস্ট। ১৯৯৯ সালে দেয়া হিসাবে আমেরিকা মনে করত পিয়ংইয়ংয়ের হাতে বড়জোর দুটি পরমাণু বোমা রয়েছে।
২০২০ সালের মধ্যে দেশটির পরমাণু বোমার সংখ্যা বেড়ে ১০টি হতে পারে বলেও সে সময় ধারণা ব্যক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড অলব্রাইট মনে করেন, প্লুটোনিয়াম এবং ইউরেনিয়াম উৎপাদন বাড়ানোর কারণে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু বোমার সংখ্যা বেড়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিদ্রুপ: উত্তর কোরিয়াকে শায়েস্তা করতে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজবহর কার্ল ভিনসন নিয়ে ট্রাম্পের ‘মিথ্যাচার’ দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ৮ এপ্রিল মার্কিন নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, একটি স্ট্রাইক গ্রুপসহ বিমানবাহী রণতরী কার্ল ভিনসন কোরীয় উপদ্বীপের দিকে রওনা হয়েছে।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, কোরীয় উপদ্বীপে রণতরী পাঠানো হয়েছে। তবে এক সপ্তাহ পরে দেখা গেছে, রণতরীটি কোরীয় উপসাগরে প্রবেশ না করে ভারত মহাসাগরের সুন্দা প্রণালীতে প্রবেশ করেছে। এ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষোভ, বিরক্তি ও কৌতুকের ঝড় উঠেছে। দেশটিতে আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হং জুন পিও বলেন, ট্রাম্প যেভাবে মিথ্যা বলেছেন, তাতে তার শাসনে যুক্তরাষ্ট্রকে আর বিশ্বাস করা যায় না