মহসীন আলী আঙুর //
মুজিবনগর সরকার
‘১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা অনিবার্য হয়ে ওঠে এই কারণে যে, তার ২২ দিন আগে অর্থাৎ ২৬ মার্চ রাতে ঢাকায় জল্লাদ টিক্কা খানের নেতৃত্বে পাকহানাদার বাহিনী গণহত্যাযজ্ঞ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। তিনি ওই ঘোষণায় ‘বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মৃত্যুঞ্জয়ী আদেশ ও আহ্বান’ জানান। ওই আহ্বানের পরম্পরা নির্মিত হয়েছিল পাকিস্তানের পঁচিশ বছরের দুঃশাসনের ও নির্যাতনের নাগপাশ ছিন্ন করে বাঙালি জাতির মুক্তিদূত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’-এর অগ্নি মন্ত্রে। বঙ্গবন্ধুর এই পুণ্যময় অগ্নি মন্ত্রে আলোকিত ও অনুপ্রাণিত হয়ে ’৭১-এর ৯ মাসব্যাপী বাঙালি জাতির বীর সন্তানরা ‘জয় বাংলা, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ রণধ্বনি কণ্ঠে তুলে পঙ্গপালের মতো রণাঙ্গনে রণাঙ্গনে ফুলের মতো ঝরে ঝরে পড়েছে। কিন্তু এক কদম পিছু হটেনি। স্বাধীনতার মনজিলে মকসুদ থেকে একবিন্দু টলেনি।রণাঙ্গনে ৯ মাস ধরে হাসিমুখে তারা জীবনের জয়গান গেয়ে গেছে। পেছনে তাকায়নি, ক্লান্তি মানেনি। বঙ্গ জননীর লাখ লাখ বীর সন্তান ’৭১-এ প্রাণপ্রিয় জননী ও জন্মভূমির মান রাখতে প্রিয় প্রাণ নিঃশেষে দান করে জান্নাতবাসী হয়ে গেছে। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সূর্যের মতো সত্য হয়ে আছে যে, বাঙালি জাতির আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে প্রাণদানের মহত্তম পুণ্য অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই পুণ্য অর্জনের এক পুণ্যময় দিন ১৭ এপ্রিল। ততোদিনে বাঙালি জাতি ও বিশ্ববাসী জেনে গেছে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার রাতেই পাকিস্তানি হানাদার পাক সেনাবাহিনী তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও রাষ্ট্র
বিচ্ছিন্নকরণের অপরাধে ঢাকা থেকে বন্দি করে পাকিস্তানে অন্তরীণ করে। তার আদর্শের যোগ্য উত্তরসূরি জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান সেই আঁধার রাতে উত্তাল তরঙ্গ ক্ষুব্ধ সাগরে ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার, লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশিথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার’ বলে হাল ধরেছেন নৌকার। ১০ এপ্রিল সারা বিশ্বকে তারা জানিয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার করা হয়েছে। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে নটায় ‘আকাশবাণী’ রেডিওতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ভাষণ প্রচারিত হলো। বিশ্ববাসী ও বাঙালি জাতি ১১ এপ্রিলের সুপ্রভাতে আনন্দ-আবেগে নয়ন মেলে জেগে উঠলো বিশ্বের মানচিত্রে নতুন বাংলাদেশকে স্বাগতম, সু-স্বাগতম জানাতে। সূচি স্নিগ্ধ চিত্তে কোটি কোটি বাঙালি ভাইবোন কোরাসের কণ্ঠে গেয়ে উঠলো ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।’
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় জার্মানির সেনাবাহিনী ফ্রান্স দখল করে নিলে জেনারেল দ্য গলে লন্ডনে যেভাবে ফ্রান্সের প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন, সেভাবে ১৯৭১ সালে হানাদার পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী বাংলাদেশ দখল করে বাঙালি জাতির ওপর গণহত্যাযজ্ঞ শুরু করলে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার আদর্শের উত্তরসূরিরা কলকাতায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন। প্রবাসী সরকার ১৪ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গাকে রাজধানী করে সেখানে সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সনদ ঘোষণার ও স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের গোপন সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই কার্যক্রমের গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যায় এবং পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ১৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির মতো বোমা বর্ষণ করে এবং পাকহানাদার বাহিনী ওইদিনই চুয়াডাঙ্গা দখল করে নেয়।
ওই বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সিদ্ধান্ত নেন যে, পরবর্তী শপথ গ্রহণের দিনক্ষণ ও স্থান তিনি কাউকে জানাবেন না। পাকবাহিনীর বিমান হামলার কথা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের মানচিত্র দেখে সর্বোত্তম নিরাপদ একটি স্থান তিনি বাছাই করেন। তার এই গোপনতম কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য তার বিশ্বস্ত সহচর ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম এবং শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে লে. কর্নেল শ্রী গোলক মজুমদার এবং বিএসএফের শ্রী চট্টপাধ্যায়কে দেয়া হয়। দ্বিতীয়বার বিপর্যয় এড়াতে তাদের মধ্যে এ বিষয়ে কথা চলতো আকার ইঙ্গিতে এবং কোড ব্যবহারের মাধ্যমে।
অবশেষে অনেক কৌশলগত দিক বিবেচনা করে এবং জমিনে ও আকাশে ভারতের সামরিক নিরাপত্তার আচ্ছাদন নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে ১৭ এপ্রিল সকালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের সময় ও দিন তারিখ নির্ধারিত হয়।
‘৭১-এ বাংলাদেশের জন্মলগ্নের অকৃত্রিম বন্ধু ও বাঙালি জাতির দুঃসময়ের অভয়দাত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর হুকুমে ১৭ এপ্রিলের সকালে দমদম এয়ারপোর্টে গোপনে সজ্জিত হয় ভারতীয় যুদ্ধ বিমান বহর। মেহেরপুর সীমান্তের ভারতীয় ভূখ-ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় ভারতের অজেয় ক্ষিপ্রগতির সামরিক বাহিনী। মেহেরপুর আম্রকাননের দূর-দূরান্তে ঘাস-পাতা বিছানো জালের ছাউনিতে ভারতীয় বাহিনীর অ্যান্টি এয়ারক্রাফট গান মেহেরপুরের আকাশ নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে দেয়।
এদিকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে বাংলাদেশের সরকারের অফিসের কেউ জানে না, কলকাতা থেকে শত শত মাইল দূরে বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইতিহাসের এক স্বর্ণালি অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে। মেহেরপুরে ১৭ এপ্রিলের গোপন পরিকল্পনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এতোই কঠোর-কঠিন গোপনীয়তা অবলম্ব^ন করেন যে, শুধু বাংলাদেশের এমপিরা নন মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনি। তাদের শুধু বলা হয় তারা কেউ কলকাতার বাইরে বের হবেন না। ১৪ এপ্রিলের বিপর্যয়ের বেদনা ও গ্লানি মুছে ফেলতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কা-ারি বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি তাজউদ্দীন আহমদের এই কোষবদ্ধ কঠোর গোপনীয়তা।
১৭ এপ্রিলের মেহেরপুরের পুণ্যময় প্রভাতের জন্য ১৬ এপ্রিল মধ্যরাতে কলকাতার বুকে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। বিএসএফের কর্নেল চট্টপাধ্যায় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ১০০টা গাড়ি ও বাসের ব্যবস্থা করেন। ৫০টি বাস ও গাড়িতে করে কলকাতা শহর ও আশপাশে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত বাংলাদেশের এমপিদের ঘুম ভাঙিয়ে একে একে গাড়িতে তোলা হতে থাকে। সকাল সাড়ে পাঁচটায় কলকাতা প্রেসক্লাব এবং হোটেল গ্র্যান্ড ও হোটেল পার্কের সামনে থেকে ৫০টি গাড়িতে ও বাসে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ক্যামেরাম্যান ও টিভি ক্রুদের তোলা হয়। কলকাতা প্রেসক্লাবে মৌমাছির মতো সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানদের তুলতে গেলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ‘রহমত আলী’ ছদ্মনামে পরিচিত ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও টাঙ্গাইলের এমপি আবদুল মান্নান। তারা অনেক প্রশ্ন করলেন। তাদের অনেক প্রশ্নের কোনো উত্তর পেলেন না তারা। তাদের যাত্রা কোথায়? বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি রহমত আলী শুধু বললেন : ‘অজানার উদ্দেশে’। ১৯৭১, ১৭ এপ্রিল বাঙালি জাতির সামনে তখন সবকিছুই ছিল অজানা ও অনিশ্চিত পথযাত্রা। শুধু নিশ্চিত ছিল স্বাধীনতা। মেহেরপুরের উদ্দেশ্য সেই স্বাধীনতার পথযাত্রার প্রথম ধাপ ১৭ এপ্রিলের যাত্রা। কাক ডাকা ভোরে কলকাতা প্রেসক্লাব থেকে এবং হোটেল পার্ক ও গ্র্যান্ড হোটেল থেকে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যান এবং টিভি ক্রুদের নিয়ে একে একে ৫০টি গাড়ি ও বাস কলকাতা শহরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চললো অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে। তাদের গাইড হিসেবে অগ্রবর্তী গাড়িতে ছিল বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ‘রহমত আলী’ এবং আবদুুল মান্নান এমপি। অন্যদিকে ভারতীয় কমান্ডো বাহিনীর নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে কলকাতা থেকে রহমত আলী ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার’ সাইক্লোস্টাইল করা ইংরেজি ও বাংলার বহু কপি সঙ্গে নিয়েছিলেন সাংবাদিকদের মধ্যে বিতরণের জন্য। ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে পাঁচটায় বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্র ও ত্রাণ মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক খুনী মোশতাক আহমদ এবং কর্নেল (অব.) আতাউল গনি ওসমানী একটি গাড়িতে রওনা হন। সাংবাদিকদের গাড়িতে স্বাধীন বাংলা বেতারের ‘ওয়্যার করেসপন্ডেন্ট’ হিসেবে আমি এবং তথ্য ও প্রচার বিভাগের এম আর আখতার মুকুল ভাই সহযাত্রী হলাম। সকাল ১১টায় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার ভিআইপিরা সেখানে পৌঁছান। তার আগে সাংবাদিকদের নিয়ে আমরা সেখানে পৌঁছে যাই।
মেহেরপুরের মহকুমা প্রশাসক তওফিক এলাহী চৌধুরী এবং এসপি মাহবুবের নেতৃত্বে বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে ছোট্ট একটা মঞ্চ সাজানো, ছোট দুটি কার্পেট বিছানো এবং দেবদারুর কচিপাতার তোরণ নির্মাণ কার্যক্রম তখনো চলছিল। তোরণের দুপাশে বঙ্গবন্ধুর বড় বড় ছবি ঝোলানো হয়।
দুপুরের মধ্যে বৈদ্যনাথ তলার আম্রকানন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। মেহেরপুরের মুক্তিযোদ্ধারা শেষ মুহূর্তে খবর পেয়ে যে যেখানে ছিল পঙ্গপালের মতো উড়ে আসতে থাকে। আনন্দ-আবেগে উদ্বেলিত শত শত কণ্ঠের ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, গগন বিদারী স্লোগানে মেহেরপুরের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। স্লেøাগানে, মুখরিত বৈদ্যনাথ তলার মঞ্চে দুপুরের পরপরই উঠলেন অনুষ্ঠানের পরিচালক আবদুল মান্নান এমপি। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াতের জন্য একজন মাওলানার নাম তিনি মাইকে ঘোষণা করলেন। কিন্তু সেই মাওলানাকে সেখানে পাওয়া গেল না। তার কারণ, সকাল থেকে মেহেরপুরের জামায়াত ও পাকিস্তানপন্থী দলগুলো বৈদ্যনাথ তলায় ‘হিন্দুদের পূজোর অনুষ্ঠানে’ কেউ যাতে কোরআন তেলাওয়াত না করতে পারে সেজন্য মেহেরপুর মহকুমার সব মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেমদের তাড়িয়ে নিয়ে মেহেরপুর ছাড়া করে। ফলে সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত ভিড়ের মধ্য থেকে মেহেরপুরের কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র মহেশ নগরের বাকের আলীকে মঞ্চে তুলে আনলো। ভারি মিষ্টি গলায় ক্বেরাত পড়তো সে। সেই বাকের আলীর কণ্ঠে আল্লাহর পাক কালাম তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের জন্য পরে পাকহানাদাররা তার গায়ে গুড় মাখিয়ে দিয়ে গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে তার শরীরে পিঁপড়ার বাসা ভেঙে ঢেলে দেয়। কিন্তু আল্লাহর হুকুমে কোনো পিঁপড়া তাকে কামড়ায়নি। এরপর আবদুল মান্নান এমপি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করার জন্য মাইকে চিফ হুইপ অধ্যাপক ইউসুফ আলীর নাম ঘোষণা করেন। তিনি মঞ্চে উঠে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে মুহুর্মুহু জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো স্লোগানের মধ্যে ৪৬৪ শব্দে রচিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার সনদ পাঠ করেন।
স্বাধীনতা ঘোষণার এই সনদে সুস্পষ্টভাবে ও সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক আইনের অনুসরণে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানি বর্বর সশস্ত্রবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর গণহত্যা শুরু করার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের মেজরিটি দলের নেতা হিসেবে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের অখ-তা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
স্বাধীনতা ঘোষণার সনদে আরো বলা হয়, ‘…সেইহেতু আমরা বাংলাদেশকে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিতেছি এবং উহার দ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করিতেছি।