স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের বিকল্প পন্থা খুঁজে বের করতে এ কমিটি কাজ করবে। প্রতি বছর সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ইনক্রিমেন্ট দেয়ার নিয়ম বা পদ্ধতি বের করে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে কমিটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দেবে।
রোববার অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তা নিশ্চিত করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
২০১৫ সালে পহেলা জুলাই অষ্টম বেতন কাঠামোতে মূল বেতন বাস্তবায়ন করা হয়। গত বছরের পহেলা জুলাই থেকে মূল বেতনের সঙ্গে সব ধরনের ভাতা কার্যকর হয়। ওই হিসাবে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ঘোষণা অনুযায়ী চাকরিজীবীদের বেতনের সঙ্গে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগ হওয়ার কথা। কিন্তু মূল্যস্ফীতি পর্যালোচনা না হওয়ায় আপাতত ইনক্রিমেন্ট যোগ হচ্ছে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের বেশি হলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইনক্রিমেন্ট দেয়ার বিষয়টি বিবেচিত হবে। মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে অবস্থান করলে কোনো ইনক্রিমেন্ট দেয়া হবে না। কাজেই প্রতি বছর বেতন বাড়বে, সে ধারণা সঠিক নয়।
বৈঠকের বিষয় তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, কমিটির প্রস্তাবে ২০১৭ সালে অথবা তার পরবর্তী বছরগুলোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কত শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেয়া যায়, তার দিকনির্দেশনা থাকবে। প্রস্তাব পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে অষ্টম বেতন স্কেলে বলা হয়েছে ভবিষ্যতে কোনো বেতন কমিশন হবে না। এর বিকল্প হিসেবে একটি পদ্ধতি বা কৌশল নির্ধারণ করতে আজকের বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে প্রাথমিকভাবে বিয়ষগুলো আলোচনা হয়েছে। আমরা আলোচনা করেছি স্থায়ী পে-কমিশনের আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু গত বেতন কমিশন গঠনের প্রধান লক্ষ্য ছিল অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বেতন স্কেলের ভিন্নতা ঠিক করা। আমরা নতুন বেতন স্কেল একটি সুন্দর স্থানে নিয়ে এসেছি। তবে এ পদ্ধতি থেকে আরও ভালো পদ্ধতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর সর্বত্রই আছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আশা করছি কমিটি বেতন কাঠামো নির্ধারণের ক্ষেত্রে নতুন একটি কৌশল বা পন্থা বের করবে। ভবিষ্যতে সরকারের জন্য কিছু রেখে যেতে হবে। নতুন সরকার এলে বলবে, ‘ওটা শেষ করে গেল অন্য উপায় তো বাতলালো না। সো দ্যাট মিনস উই হ্যাভ ফাইনালাইজড ইট নেক্সড ইয়ার।’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ ও পরিসংখ্যান বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের প্রতিনিধি থাকবেন।
মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী বেতন তো নাও বাড়তে পারে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, সামনে নাও বাড়তে পারে। আবার বাড়তেও পারে। এসব কিছুই ওই কমিটি দেখবে। তাদের তিন মাস সময় দেয়া হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, ২০১৮ সালে সরকার বিদায় নেয়ার আগে এ ব্যাপারে কিছু করে যাওয়া।
বর্তমান পদ্ধতিতে ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশ হারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হওয়ার কথা। সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত হয়নি। পাশাপাশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণে আগামীতে একটি সেল গঠন করা হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এর নেতৃত্বে থাকবেন একজন অতিরিক্ত সচিব।
ওই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনসহ কয়েকজন সচিব উপস্থিত ছিলেন