বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের নিয়ম পাল্টাচ্ছে। এখন থেকে শুধু বিসিএস পরীক্ষার ফলের মেধাক্রম অনুযায়ী কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ হবে না। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগ পাওয়ার পর কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের ফল। অর্থাৎ বিসিএস পরীক্ষার মেধাক্রম এবং নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশিক্ষণের ফল সমন্বয়ে নির্ধারণ হবে আন্তঃক্যাডার কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা। এমন বিধান রেখে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা-১৯৮৩ সংশোধন হচ্ছে। এরই মধ্যে সংশোধনীর খসড়া তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শিগগির এটি সুপারিশের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
সূত্র জানায়, সংশোধিত বিধিমালার খসড়ায় বলা হচ্ছে, নিয়োগকালীন মেধার সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে মেধার সমন্বয় করে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে। সে ক্ষেত্রে বিসিএস পরীক্ষার শতকরা ৬০ এবং বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে ৪০ নম্বর থাকবে। কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণে পারফরম্যান্সের ওপর নির্ধারিত নম্বর পাবেন। পরে দুটো নম্বর যোগ হয়ে নির্ধারণ হবে আন্তঃক্যাডার জ্যেষ্ঠতা। বর্তমানে শুধু বিসিএস পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ হয় মেধাক্রম। আর এ মেধাক্রম অনুযায়ী দেওয়া হয় জ্যেষ্ঠতা। তবে ওপরের পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ জ্যেষ্ঠতার কিছুটা ব্যত্যয় ঘটছে। কারণ, পদোন্নতির ক্ষেত্রে নানা বিষয় দেখা হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে জ্যেষ্ঠতা। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রাকিব হোসেন .বলেন, নিয়োগকালীন মেধার সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে মেধার সমন্বয় করে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এ জন্য বিধিমালা সংশোধনের প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিসিএস পরীক্ষার মেধার সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে মেধার সমন্বয় করে চূড়ান্ত মেধাক্রম নির্ধারণের বিষয়টি নতুন ব্যাচের ক্ষেত্রে চালু করা যুক্তিযুক্ত হবে।
প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এটি ভালো উদ্যোগ। তবে তাদের মতে, এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়নে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদের মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদায়ন না করে সরাসরি পিএসসিতে অথবা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে যোগদানের ব্যবস্থা করতে হবে। একই ব্যাচের সব কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ অভিন্ন কারিকুলামে সম্পন্নের বিষয়টি যুক্ত করা উচিত। প্রশিক্ষণ শেষে মেধাকে পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।
বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে বিদ্যমান পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে বেশ কিছু দিন ধরে আলোচনা চলছে। পরে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকেও ক্যাডার সার্ভিসে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের নিয়ম পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এটি আরও পর্যালোচনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়। এরই মধ্যে কমিটি কয়েকটি সভা করে বিধিমালা সংশোধনের সুপারিশ করে। পরে বিধিমালা সংশোধনের কাজ শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের সিলেবাস হবে অভিন্ন। বর্তমানে পৃথক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পৃথক কারিকুলামে কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। এর ফলে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে না। বিদ্যমান অবস্থা থেকে উত্তরণে একটি একক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অভিন্ন প্রশ্নে প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের মূল্যায়ন করার নিয়ম হচ্ছে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ-পরবর্তী মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয়েও নীতিমালা তৈরির বিষয়টিও থাকছে ওই বিধিমালায়।
এ বিষয়ে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আ ই ম নেছার উদ্দিন জানান, কমিশনের মতামত এরই মধ্যে প্রতিবেদন আকারে জনপ্রশাসনে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে মেধাস্কোর সমন্বয় করতে হলে বিদ্যমান বিধিমালা বিশেষ করে বিসিএস নিয়োগবিধি ১৯৮১, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা ১৯৮৩ সংশোধনের প্রয়োজন। পাশাপাশি জ্যেষ্ঠতার সাধারণ নীতিমালা যাতে সাংঘর্ষিক না হয়, সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণের নম্বর সরকারি কর্মকমিশনে পাঠাতে হবে।