পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ পায়নি কানাডার আদালত, ৩ কর্মকর্তা খালাস
পদ্মা সেতু প্রকল্পের নকশা
বাংলাদেশের বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি না পাওয়ায় কানাডার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিন গ্রুপের তিন কর্মকর্তাকে অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে অন্টারিও'র একটি আদালত। এ রায়ের ফলে এসএনসি-লাভালিনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী ভূঁইয়া মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ওই তিন কর্মকর্তাকে খালাস দিয়ে রায় দেন বিচারক ইয়ান নর্ডহেইমার। ওই তিনজনের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের ঠিকাদারি পেতে বাংলাদেশ সরকারের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) করা ওই মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তবে দুই আসামি মোহাম্মাদ ইসমাইল ও বাংলাদেশের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন চৌধুরীকে আগেই মামলার নথি থেকে বাদ দেয় পুলিশ।
খালাস পাওয়া তিন আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তাদের টেলিফোন আলাপের রেকর্ড সংগ্রহ করে আরসিএমপি। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধেই ওই টেলিফোন কল রেকর্ড করা হয়। তবে ওই টেলিফোন সংলাপে সাধারণ গল্প-গুজব ছাড়া আর কিছুই ছিল না বলে জানান বিচারক ইয়ান নর্ডহেইমার।
অন্টারিওর ওই বিচারক বলেন, ‘সেখানে (টেলিফোন রেকর্ডে) গল্প-গুজব ও সাধারণ কথাবার্তা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। তদন্তে যা পাওয়া গেছে, তা গুজব বা অভিযোগের বিপরীতে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে ধরা যায় না। যা পাওয়া গেছে, তা একটা গুজবের সঙ্গে আরেকটা গুজব মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে।’
আদালতের আদেশের পর কেভিন ওয়ালেসের আইনজীবী স্কট ফেনটন বলেন, শেষ পর্যন্ত তাঁর মক্কেল নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি খুশি। রমেশ ও জুলফিকারের আইনজীবীরাও এ রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১০ সালে তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ সম্পর্কে নিজেদের তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আরসিএমপিকে অনুরোধ জানায়। এরই ভিত্তিতে আরসিএমপি, কানাডিয়ান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের কিছু কর্মকর্তার টেলিফোন সংলাপ রেকর্ড করার অনুমতি নেয়। পরে তারা এসএনসি-লাভালিনের কার্যালয়ে তল্লাশি চালায়। ২০১২ সালে মোহাম্মদ ইসমাইল ও রমেশ শাহকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে কেভিন ওয়ালেস ও বাংলাদেশি কানাডিয়ান ব্যবসায়ী জুলফিকার ভূঁইয়াকে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।
সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১১ সালে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ সরকারও বিশ্বব্যাংককে না বলে দেয়। পরে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর নদীশাসনকাজের উদ্বোধন করার পর এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ প্রকল্পকে দুর্নীতিগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চলেছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর কোনো কারণ ছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। এ নিয়ে অনেক আলোচনা ও তর্কবিতর্ক চলেছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ দিতে পারেনি।
২০১৪ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। গত মার্চে নির্মাণকাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। পদ্মা সেতুর নদীর শাসনের কাজ করছে সিনো হাইড্রো করপোরেশন। চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি মূল সেতুর নির্মাণকাজ করছে।
২০১৮ সালের মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। নিজস্ব অর্থায়নে এটি এ পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এর জন্য খরচ হবে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। এই সেতু হলে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণাঞ্চল। এই সেতুতে ট্রেনও চলবে। এশিয়ান হাইওয়ের পথ হিসেবেও সেতুটি ব্যবহৃত হবে। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন।#