ভারত-পাকিস্তান দু’পক্ষেরই সাজ সাজ রব
রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে দিল্লি, এফ ১৬ মহড়া ইসলামাবাদের
দুই যুযুধান প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে শুরু হয়ে গেল সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মহড়া। দু’পক্ষেরই সাজ সাজ রব। বস্তুত ভারত ও পাকিস্তান উভয়পক্ষই যুদ্ধদামামা বাজিয়ে স্নায়ুর লড়াইয়ে নেমে পড়েছে। একদিকে ভারত প্রত্যাঘাত করতে পারে এই আতঙ্কে আজ পাকিস্তান ইসলামাবাদ-লাহোর হাইওয়ের উপর যুদ্ধবিমানের মহড়া শুরু করে দিয়েছে। জাতীয় সড়ক বন্ধ করে মহড়া চলেছে। পাকিস্তানের এই প্রক্সি হুঁশিয়ারির মধ্যেই ভারত দিয়েছে কড়া বার্তা। সীমান্তে সেনা মোতায়েন তথা অস্ত্র সরবরাহের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। নর্দার্ন এবং ওয়েস্টার্ন কমান্ডকে টলহদারি দ্বিগুণ করতে বলা হয়েছে। আজই আবার ফ্রান্সের থেকে অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পাদন করেছে ভারত। ভারত ও ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে আজ দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে এই চুক্তি হয়েছে। যা ভারতের বিমানবাহিনীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্ববহ এক সুসংবাদ। ৩৬টি রাফাল জেট কেনা হচ্ছে। এয়ার টু এয়ার মিসাইল রেঞ্জে ১০০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত হানতে পারার ক্ষমতাসম্পন্ন এই যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য হল ৪৫০ মিটার রানওয়ে থেকেই টেক অফ করতে পারে। ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড র্যাডার, ফ্রন্ট সেক্টর অপট্রনিক্স সংবলিত রাফালের সবথেকে বড় কার্যকারিতা হল শত্রুপক্ষের জ্যামার থাকা সত্ত্বেও মাল্টিপল টার্গেটকে আঘাত করতে পারে। দিন ও রাতে যে কোনও সময় উড়ানে সক্ষম রাফাল ২৪ ঘণ্টা ডেটা শেয়ারিং করতে পারে কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে। এই ৩৬টি যুদ্ধবিমান এলে ভারতের বায়ুসেনার যথেষ্ট শক্তি বৃদ্ধি হবে। যদিও প্রয়োজন ১২৬টি। ৩৬টি রাফাল জেট ক্রয় করতে ভারতের ব্যয় হচ্ছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা। সাধারণ সুখোই অথবা মিগ ফাইটারের তুলনায় বহুগুণ বেশি। তার কারণ এই যুদ্ধবিমানের সঙ্গেই প্রদান করা হবে পশ্চিমী দেশগুলির ব্যবহার করা শক্তিশালী মেটিওর মিসাইল, এয়ার টু গ্রাউন্ড হ্যামার স্কাল্প মিসাইল, লেসার গাইডেড বম্ব এবং অ্যান্টি শিপ মিসাইল। রাফাল এমন একটি যুদ্ধবিমান, যা ফ্রান্সের এয়ারফোর্স ও নৌবাহিনী ব্যবহার করে। রাফাল এশিয়ার খুব বেশি দেশে নেই। সবথেকে বড় তথ্য হল চীন এবং পাকিস্তানের কাছেও নেই। রাফাল ভারতে আসবে ৩৬ মাস পর। তবুও ভারতের এই যুদ্ধবিমান ডিলে পাকিস্তান উদ্বিগ্ন।
এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সবরকম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই ছিন্ন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার সবথেকে বড় আভাস হল সিন্ধু নদের জল চুক্তি ভারত পুনর্বিবেচনা করতে পারে বলে খবর। ১৯৬০ সালের এই জলচুক্তি ভারত যদি বাতিল করে দেয় তাহলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকবে। কারণ সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা খরার কবলে পড়বে। যা কোনওভাবেই হজম করা সম্ভব নয় পাকিস্তানের পক্ষে। অন্যদিকে ভারতের পক্ষেও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো খবর এসেছে। সমীকরণ বদলের ইঙ্গিত এসেছে এই উপমহাদেশের কূটনৈতিক মানচিত্রে। চীন ও পাকিস্তানকে চাপে রাখার জন্য মোদি সরকার বিগত দু’বছর ধরে অনেক বেশি আমেরিকার সঙ্গী হয়েছে। রাশিয়া একসময় ছিল ভারতের সবথেকে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। কিন্তু ক্রমেই সামরিক উপকরণ সরবরাহে আমেরিকার সহযোগী দেশ ইজরায়েল হয়েছে ভারতের নয়া মিত্র। ভারত স্থায়ীভাবেই মার্কিন শিবিরের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ঠিক এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই পাকিস্তান কি বন্ধুত্ব বাড়িয়ে নিচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে। আজই পাকিস্তানে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর গোষ্ঠী এসেছে পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ার কর্মসূচিতে অংশ নিতে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়া কোনও যৌথ সামরিক মহড়া কর্মসূচিতে অংশ নিতে পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখল। আজ ২০০ রুশ সেনা নেমেছে ইসলামাবাদে। আরও বাহিনী আসছে। মহড়া হবে গিলগিট ও বালটিস্তানে। উরি আক্রমণের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ মহড়া বাতিল করা হবে। আদতে কিন্তু তা হল না। তাই রাশিয়ার মতিগতির দিকে নজর রাখতেই হচ্ছে দিল্লিকে। তবে ভারতীয় সেনাও বসে নেই। জানা গেল আজই রাশিয়ায় গিয়ে যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে ভারতীয় সেনাও।
No comments: