চট্টগ্রাম ও সিলেটে ৩ জনের ফাঁসি কার্যকর
চট্টগ্রাম ও সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে হত্যা মামলার তিন আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তারা হলেন- চট্টগ্রামে সিএনজি অটোরিকশাচালক হত্যা মামলার দুই আসামি সাইফুল ইসলাম সহিদ (২৮) ও শহিদুল্লাহ শহিদ (৪০) এবং সিলেটে মাত্র দুই হাজার টাকার জন্য প্রতিবেশীকে কুপিয়ে হত্যাকারী মাকু রবিদাস।
চট্টগ্রাম : মিরসরাই উপজেলার সৈয়দালি গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে সিএনজি অটোরিকশাচালক রেজাউল করিম আজিমকে ২০০৪ সালে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ফটিকছড়ি থানায় করা মামলায় দুই আসামিকে নিম্নআদালত ফাঁসির আদেশ দেন। এ রায় সর্বোচ্চ আদালত বহাল রাখেন। এর মধ্যে দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানালে সেই আবেদনও নাকচ হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারাকর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করে।
এর আগে দুই আসামির স্বজনরা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দণ্ড কার্যকরের আগে জেল গেটের বিধান অনুযায়ী দুই আসামিকে তওবা পড়ানো হয়। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। দণ্ড কার্যকরের সময় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার, ডিআইজি প্রিজন অসীম কান্ত পাল, সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির ও জেলার মাহবুবুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
কারাগার সূত্র জানায়, আসামি সাইফুল ওরফে সহিদের বাড়ি মিরসরাই উপজেলার উত্তর হাজীসরাই গ্রামে। তার বাবার নাম কামাল উদ্দিন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। অপর আসামি শহিদুল্লাহ ওরফে শহিদের বাড়ি একই উপজেলার মধ্যম সোনাপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম তাজুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম কারাগারে সর্বশেষ ২০০৭ সালে এক আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়। ওই আসামির নাম পরিতোষ রুদ্র। পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই এলাকার বাসিন্দা পরিতোষ তার স্ত্রী ও কন্যাকে হত্যার অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হন।
সিলেট : হত্যা মামলার আসামি মাকু রবি দাসের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ছগির মিয়া। মাকু রবি দাস হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাড়াগাঁও গ্রামের সমাধনী রবি দাসের ছেলে। জুন মাসের ১২ তারিখে তার ফাঁসির দিন ধার্য ছিল। তবে রমজান থাকায় তা পেছানো হয়।
জানা গেছে, ২০০১ সালের ৩১ অক্টোবর মাত্র দুই হাজার টাকার জন্য প্রতিবেশী নানইনকা রবি দাসকে কুপিয়ে হত্যা করে মাকু রবি দাস। এ ঘটনায় চুনারুঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের হলে ২০০৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত দণ্ডবিধি ৩০২ ধারা মোতাবেক আসামি মাকু রবি দাসকে ফাঁসির আদেশ দেন।
সিলেট কারাগার সূত্রে জানা যায়, ফাঁসি কার্যকরের জন্য জল্লাদ রাজুকে ঢাকা থেকে সিলেটে আনা হয়েছিল। তাকে সহযোগিতা করেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের দুই কয়েদি। রাত ৮টায় দুই ছেলে ও দুই মেয়ে মাকুর সঙ্গে শেষ দেখা করেন। ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মাকুকে বনফুলের মিষ্টি দেয়া হয়। এরপর রাত ১২টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইজি প্রিজন তৌহিদুল ইসলাম, এডিএম সৈয়দ আমিনুর রহমান, উপ-পুলিশ কমিশনার বাসুদেব বণিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা, সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান, সিনিয়র জেল সুপার ছগির মিয়া প্রমুখ। রাত ১২টা ১৫ মিনিটে অ্যাম্বুল্যান্স কারাগারে প্রবেশ করে। ২০ মিনিট পর মাকুর লাশ নিয়ে সেটি বেরিয়ে আসে। লাশ গ্রহণ করেন তার ছেলে মধু রবি দাস। এর আগে ২০১১ সালে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত রবি মুল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল।
No comments: