বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির নিয়োগ বন্ধ করুন--- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষক ফেডারেশনের নেতারা
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির নিয়োগ বন্ধ করুন--- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষক ফেডারেশনের নেতারা
জামায়াতে ইসলামির সংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষক ফেডারেশনের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসিচব ড. এএসএম মাকসুদ কামাল উপাচার্যদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা শিবির নিয়োগ দিবেন না। এসব ক্ষেত্রে সুপরিশ করে আওয়ামী লীগ, সুপারিশ করে ছাত্রলীগ! এগুলো ঠিক না হলে কোনো তন্ত্র-মন্ত্র কিছুতেই কিছু হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের শত্রু চিহ্নিত করতে হবে। সরিষার মধ্যে যাতে ভূত না থাকে।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউিটে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চতকরণে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানান মাকসুদ কামাল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের মধ্যে স্বাধীনতা বিরোধীরা ঢুকে গেছে। আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ে বাধা দান করে তা আমরা জানি। তাই দয়া করে চিহিৃত স্বাধীনতা বিরোধী, জঙ্গিবাদের লোককে আমাদের মধ্যে আশ্রয় দিবেন না।
তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দেশের পরিস্থিতি অনেকটা নির্ভর করে। আমরা গুলশান-শোলাকিয়ার ঘটনা দেখেছি, একই সাথে দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। যে ব্যক্তি (উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক) ১৫-২০ বছর ধরে এদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করার জন্য দিন-রাত লড়াই করে চলেছেন, তাকে রাজাকার বলা হয়েছে, তাকে দুই ঘণ্টার মধ্যে অব্যাহতি দিতে বলা হয়েছে।
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আরেফিন সিদ্দিকের মতো লোকের সঙ্গে যদি এরকম হয় তাহলে অন্য বিশ্বদ্যিালয়ের উপাচার্য বা শিক্ষকদের বেলায় কী হতে পারে! তাকে যদি ঐসময় পদত্যাগ করতো হতো, তাহলে সাত দিনও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা তাদের পদে থাকতে পারতেন কি না আমার সন্দেহ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত গুলশান এবং শোলাকিয়ায় নিহত জঙ্গিদের ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের ছবি দেখে মনে হয়েছে তারা খুব উদ্ভাসিত, আনন্দিত এবং তারা তাদের আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে। এ ছবি দেখে আমাদের ভাবতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিরা প্রশিক্ষিত হচ্ছে উল্লেখ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মিজান উদ্দিন বলেন, সন্ত্রাসীদের কারা প্রতিষ্ঠিত করেছে? তাদের সাথে বিশ্বদ্যিালয় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কি যুক্ত ছিল না? শিক্ষকরা কি যুক্ত ছিলেন না? তাদের ব্যাপারে আমরা কী করেছি? সেই জবাবদিহিতা আমাদের রয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭১-৭৫, ১৯৯৬-২০০১, ২০০৯ থেকে অদ্যবধি যে সময়টায় আওয়ামী লীগ শাসন করেছে, সে সময়কালীন আমরা কী করেছি। আমরা আত্মকলহে ভুগি নাই? স্বার্থের কথা ভাবি নাই? আমরা বারে বারে বঙ্গবন্ধুর কথা তার আদর্শের কথা উচ্চারণ করি কিন্তু আমরা নিজেরা বিপরীতে অবস্থান করেছি। আমরা নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়কে মিনি ক্যান্টনমেন্ট আখ্যায়িত করে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, যে পরিমাণ সন্ত্রাসীর উৎপাদন হয়েছে তার ভয়াবহতা আমরা দেখতে পাচ্ছি।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ, বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলী আকবর, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েল উপাচার্য অধ্যাপক ড. সম ইমামুল হক এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যিালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন।
এসময় তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নেয়া জঙ্গিবাদ বিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আয়োজনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। আরো উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন খানসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, শিক্ষক নেতারা।
No comments: