রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত: সুলতানা কামাল
পরিবেশবাদীদের আপত্তি, নাগরিক সমাজের সমালোচনা ও রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা অগ্রাহ্য করে বাংলাদেশ সরকার ভারতের সাথে যৌথভাবে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সই করেছে।
বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিলি) ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লাভিত্তিক “মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার” নামের এই কেন্দ্র স্থাপন করছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ২০০ কোটি ডলার অর্থায়নে নির্মিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিরা।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, “রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের ওপর কোনরকম বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। এটা এমনভাবে করব, পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলব।”
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সবরকম নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।’
এসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত আগের মতোই অংশীদার থাকবে। কোনো কিছুই দুই দেশের এই উন্নয়ন পদক্ষেপগুলোকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।”
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান রেডিও তেহরানকে বলেন, “এ প্রকল্পটি সুন্দরবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে তাই প্রকল্পটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা চান সরকার এখান থেকে সরে আসুক।”
এদিকে, আজ ‘সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি’র আহ্বায়ক সুলতানা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্পটিকে ‘আত্মঘাতী’ উল্লেখ করে দ্রুত এটি স্থগিত করার আহ্বান জানান।
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কথা বলে সরকার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের যে সর্বনাশী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা দেশের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
লিখিত বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য এখনও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। সুন্দরবনের অস্তিত্বের জন্য প্রবল হুমকি হিসেবে বিবেচিত মারাত্মক দূষক ও লাল ক্যাটাগরির শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের এ সর্বনাশা সিদ্ধান্তে দেশবাসীর সাথে আমরাও স্তম্ভিত ও ব্যথিত।’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘৫৩টি সদস্য সংগঠনের পক্ষ থেকে আমি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আগত দিনসমূহে বাংলাদেশের পরিবেশ ও বন সংরক্ষণের ইতিহাসে ১২ জুলাই একটি কলঙ্কজনক ও দুঃখজনক দিন হিসেবে বিবেচিত হবে।’
এ সময় চার দফা দাবি তুলে ধরেন সুলতানা কামাল। দাবিগুলো হলো-
১. রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন চুক্তি বাতিল করতে হবে।
২. রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবিলম্বে বন্ধ ও নিরাপদ দূরত্বে স্থানান্তর করতে হবে।
৩. সুন্দরবনের পাশে প্রস্তাবিত ওরিয়নসহ অন্যান্য সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর সকল অবকাঠামো ও কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
৪. সুন্দরবন রক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত সার্বিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মন্তব্য করেন, পরিবেশ ও বন সংরক্ষণে বাংলাদেশের ইতিহাসে ১২ জুলাই ‘কালো দিবস’ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, ‘এ চুক্তি হলো আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য সুন্দরবন ধ্বংসের সর্বনাশা সিদ্ধান্ত।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ‘নিজেরা করি’-এর সমন্বয়ক খুশি কবির, অধ্যাপক এম এম আকাশসহ বিশিষ্ট নাগরিকগণ।
এর আগে তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে সুন্দরবন রক্ষার দাবীতে কয়েক দফা রোড-মার্চ আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে ঢাকা থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত পথে পথে সমাবেশ ও সভা করে এ আত্মঘাতি প্রকল্প বাতিলের দাবি জানানো হয়।#
No comments: