গাভাসকরের জন্মদিনে এই ৫ টা তথ্য আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই
গাভাসকরের জন্মদিনে এই ৫ টা তথ্য আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই
আজ জন্মদিন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রথম সেরা মানুষের। বলা ভালো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রানের প্রথম তেনজিং নোরগের। আরও ভালো করে বললে, বেঁটেদের উচ্চতায় সেরা করার মানুষটার জন্মদিন আজ। সুনীল গাভাসকর। ক্রিকেট ১ বলের খেলা। সেদিনও বলা হতো। আজও বলা হয়। সেই খেলাটায় কেউ ১০ হাজার রান করতে পারেন, এটা কল্পনাতেও আসতো না কারও। তিনি সুনীল গাভাসকর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই ১০ হাজার ফুট উচ্চতার রানের এভারেষ্টে প্রথম জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিলেন! তারপর থেকে সবাই তাঁকে অনুসরণ করেছেন শুধু। প্রদীপ হাতে আগের রাতে পথ দেখিয়ে গিয়েছিলেন তিনিই।
যে ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারির কথা ভাবলেই হাড় হিম হয়ে যেত বিশ্বের তাবড় ব্যাটসম্যানদের, সেই 'দৈত্য-দানব' (ভালো অর্থে) দেরও মাথা কুটতে হয়েছে সুনীলের দুর্দান্ত রক্ষণের সামনে। হোল্ডিং, রবার্টস, মার্শালরা বল করছেন আর জামাইকা কিংবা বার্বাডোজের গ্যালারি চিত্কার শুরু করেছে, 'ব্যাটসম্যানের খুলিটা আমাদের চাই!' সেই গাভাসকর হেলমেট ছাড়াই মার্শাল, হোল্ডিংদের ঠেঙিয়ে পাট করে ছেড়েছেন। সেই একই গ্যালারির মহিলারা এবার ক্যালিপসোর সুরে গর্জন করেছে এই বলে যে, 'আমি তোমার সন্তানের মা হতে চাই। তোমার একটা সন্তান দিয়ে যাও প্লিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজে।' আজ সেই সুনীল গাভাসকরের জন্মদিন। তাঁকে নিয়ে বলার কী আর শেষ আছে! তবু, আজকের দিনে অন্তত ৫ টা তথ্য আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। যাতে মানুষটা চিরকাল এমনই প্রাসঙ্গিক থাকুন। তাঁকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য হন আপনি। তাহলে বলা শুরু করি এক এক করে।
১) বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি টেস্টে ১০ হাজার রান টপকেছেন। অথচ, সেই মানুষটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম রানটাই আসে কিনা লেগ বাই থেকে! কে বলে, সকাল দেখে সারা দিনের পূর্বাভাষ পাওয়া যায়? আসলে 'সানি ডেজ'-এ গাভাসকার লিখছেন এরকমভাবে, 'অশোক মানকড় তিন রান নিল। আমি নন স্ট্রাইক এন্ড থেকে চলে গেলাম স্টান্স নিতে। সামনে হোল্ডিং। বল করল আমার লেগ স্টাম্পে। আমি চালালাম। বল ব্যাটে না লেগে পায়ে লাগলো। পরে দেখলাম আম্পায়ার কোনও সিগন্যাল দিল না! তারপরেই অবশ্য একটা তৃপ্তিদায়ক বাউন্ডারি মেরেছিলাম হোল্ডিংকে!'
২) সুনীল গাভাসকর জন্মের পর হাসপাতালেই বদলে গিয়েছিলেন সদ্যজাত অন্য এক শিশুর সঙ্গে! হ্যাঁ, এই বিষয়েও নিজের আত্মজীবনী 'সানি ডেজ'-এ গাভাসকর লিখেছিলেন বেশ মজা করেই। 'আমার জন্মের পর আমার কাকু ভালো করে খেয়াল করে দেখেন আমার কানের পাশে একটা ছোট ছিদ্র মতো ছিল। পরে দেখেন সেটা নেই। ভালো করে খুঁজে কাকু দেখেন যে আমি এক জেলে পরিবারের মহিলার পাশে শুয়ে রয়েছি! কে জানে, কাকু যদি আমায় চিনে না রাখতো তাহলে কী হতো! হয়তো বড় হয়ে মাছ ধরতাম। আর সেই ছেলেটি হয়তো খেলতো ক্রিকেট!' বুঝতে পারছেন, সত্যিই এমন অদল-বদল হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তাহলে কী হারাতো!
৩) সুনীল গাভাসকর কিন্তু যে সে পরিবারের ছেলে নন। তাঁর পরিবারের অনেকেরই ক্রিকেটের হাতটা বেশ ভালো। গাভাসকরের মায়ের দিকের আত্মীয় মাধব মন্ত্রী। তিনি দেশের হয়ে চারটে টেস্ট খেলেছিলেন। গাভাসকরের ছেলে রোহন গাভাসকরও দেশের জার্সিতে ১১ টা একদিনের ম্যাচ খেলেছেন। গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ এই দেশের ক্রিকেটের বিরাট বড় নাম। তিনিও গাভাসকরের শ্যালক। সুনীল গাভাসকরের বোন পুনমও দেশের প্রথম মহিলা ক্রিকেট ক্লাবে চুটিয়ে খেলেছেন!
৪) শুধু ক্রিকেটেই গাভাসকর গোটা জীবনটা কাটিয়ে দিয়েছেন ভাবলে ভুল হবে। ফিল্মেও অভিনয় করেছেন সপ্রতিভভাবে। মারাঠি ছবি শাবলি মেমাচিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন মূল চরিত্রে! ১৯৮৮ সালে নাসিরুদ্দিন শাহের ছবি মালামালেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। দর্শকদের প্রশংসাও পেয়েছিলেন তিনি। শুধু অভিনয়ও নয়। তিনি গানও গেয়েছেন মারাঠিতে। 'ইয়ে দুনিয়ামাধ্যে থাম্বেয়ালা ভেল কোনালা..' শুনে দেখবেন কখনও। ভালো লাগবে। ক্রিকেট আর জীবনের সাদৃশ্য নিয়েই এই গান।
৫) সানি গাভাসকর ১৯৯৪ সালে শেরিফ হয়েছিলেন মুম্বই শহরের। তিনি কিন্তু শুধু 'সানি ডেজ'-ই লেখেননি। এছাড়াও সুনীল গাভাসকর লিখেছিলেন বেশকিছু বই। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, আইডলস, রানস ইন রুইনস এবং ওয়ান ডে ওয়ান্ডারস! এগুলো পড়লেই জানতে পারবেন যে, সুনীল গাভাসকর আসলে ছেলেবেলায় কখনও ক্রিকেটার হতেই চাননি! তিনি হতে চেয়েছিলেন বড় কুস্তিগীর। মারুথি ভাদারের মতো কুস্তিগীরই ছিলেন তাঁর জীবনের আদর্শ। কিন্তু একেই তো বলে জীবন। কুস্তির প্যাঁচ আর তাঁর শেখা হয়নি। বরং, শিখেছিলেন স্ট্রেট ব্যাটে কীভাবে খেলতে হয়! সরল মানুষটা তাই তো অবলীলায় বলতে পারেন ওই কথাগুলো - 'সবাই বলে তাঁর প্রিয় শট কভার ড্রাইভ অথবা লেট কাট। আমার প্রিয় শট কোনটা বলুন তো? আমার ব্যাটে লাগার পর বলটা আসতে আসতে বাউন্ডারি লাইনের দিকে যাবে। বিপক্ষ ফিল্ডার প্রাণপাত করে দৌড়বেন, বাউন্ডারি বাঁচাতে। সবশেষে বলটা টুক করে বাউন্ডারি পাড় হয়ে যাবে! আর বিপক্ষ ফিল্ডারের জিভ বেরিয়ে যাবে! এটাই হল আমার সবথেকে প্রিয় শট।' এমন কোনও কথা আজ পর্যন্ত কোনও ক্রিকেটারকে বলতে শুনেছেন! সুনীল গাভাসকর এমনই। পরে অনেকেই এসছেন। আগে অনেকেই ছিলেন। শুধু আজ তাঁর জন্মদিনে একটা শপথ নিন যে, সব সংখ্যায় হয় না। ৩৪ টা সেঞ্চুরিকে, ১০, ১২২ রানকে শুধু সংখ্যা দিয়ে টপকানো যায় না। তিনিই ওই ১০ হাজার রানের মাইল্টোনটা পুঁতে দিয়েছিলেন সবার আগে গিয়ে। সবাই শুধু তাঁকে অনুসরণ করেছেন। যাঁকে অনুসরণ করা হল, তাঁকে টপকে আর যাওয়া যায় কীভাবে! সবশেষে, ভালো থাকুন সানি। এমনই মেঘমুক্ত রৌদ্রজ্বল থাকুক সানির দিনগুলো!
No comments: