বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট
বা ভরা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত এবং উত্তরের পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাষ অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবারের অতি বর্ষণ আগামীকাল রবি ও সোমবার অব্যাহত থাকতে পারে। এই অবস্থায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হয়েছে।
এদিকে, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর ও উত্তরা-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ১৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণাধীন ৯০টি স্থানের মধ্যে শুক্রবার ৫৫টিতে পারি বৃদ্ধি ঘটেছে। ব্রহ্মপুত্রসহ সব শাখা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে উত্তরাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদীসংলগ্ন কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও বগুড়া জেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।
সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের মুখে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েও পানি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে শনিবার সকাল ৯টা বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে বন্যা দুর্গত এলাকার পানিবন্দী মানুষ পরিবার-পরিজন ও গবাদি পশু নিয়ে রাস্তা-ঘাটে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট। ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ।
ওদিকে, সুনামগঞ্জের সব পয়েন্টে গতকাল পানি কমলেও সুরমা নদীতে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতের কারণে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে এখানকার চারটি ফেরিঘাটই হুমকির মুখে পড়েছে।
দৌলতদিয়ার চার নম্বর ফেরিঘাটে ভাঙনরোধে বালুর বস্তা ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী প্রতিরোধ তৈরি করা হয়েছে।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ছয়টি ফেরি বিকল হয়ে যাওয়া এবং ফেরি চলাচলে ধীরগতির কারণে গত কয়েক দিন ধরে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।
তীব্র স্রোতে যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে বিকল হওয়া ছোট-বড় ছয়টি ফেরি শনিবার দুপুরে নাগাদ সচল করা যায়নি। পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতিতে এসব ফেরি মেরামত করা হচ্ছে।
এদিকে, শনিবার বেলা ১১টার দিকে রায়পুরা উপজেলার জংগীশিবপুর বাজারসংলগ্ন আড়িয়াল খাঁ নদীতে অর্ধশত যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার ডুবে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। জনাপঞ্চাশেক যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বরিকান্দি গ্রামের গণি শাহর মাজারে যাওয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে এ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।#
No comments: