Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » প্রখ্যাত রহস্য লেখক দীনেন্দ্র কুমার রায় মেহেরপুরের কৃতি সন্তান





প্রখ্যাত রহস্য লেখক দীনেন্দ্র কুমার রায়
মেহেরপুরের কৃতি সন্তান


দীনেন্দ্রকুমারের জন্ম ১৮৬৯ খ্রীষ্টাব্দের ২৫শে আগষ্ট বৃহস্পতিবার ( ১২৭৬ বঙ্গাব্দের ১১ই ভাদ্র ) নদীয়া জেলার মেহেরপুর গ্রামে। বাবা ব্রজনাথ কর্মরত ছিলেন কৃষ্ণনগরের জমিদারের সেরেস্তায়। পিতার কাছে কৃষ্ণনগরেই পড়াশোনা; কিন্তু স্কুলের পাঠ শেষ করলেও গণিত শাস্ত্রে তার ভীতি তাকে উচ্চতর পাঠক্রমে পড়ায় উৎসাহিত করে নি। বরং সাহিত্য তাকে আকর্ষণ করতে থাকে। কাকা যদুনাথ ছিলেন মহিষাদল রাজ এস্টেটের ম্যানেজার ও রাজ স্কুলের প্রেসিডেন্ট। পড়াশোনা চালিয়ে না যাওয়ায় কাকা তার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন না। যাই হোক, দীনেন্দ্রকুমার মহিষাদল রাজ স্কুলের শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন। শোনা যায় কাকাকে ধরে দীনেন্দ্রনাথ জলধর সেনকে স্কুলের তৃতীয় শিক্ষক পদে নিয়ে আসেন। জলধর এসে ওঠেন তার পরম হিতাকাঙ্খী যদুনাথ রায়ের বাসায়; অবসর সময়ে যদুনাথের ছেলেকে পড়াতেন তিনি। এখানেই চলত দীনেন্দ্রকুমার ও জলধরের সাহিত্য আলোচনা। ১২৯৭-এর অগ্রহায়ণ মাসে দীনেন্দ্রকুমার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শিক্ষকতার স্বল্প উপার্জ্জনে ব্যয় নির্বাহ কঠিন হওয়ায় তিনি চলে যান রাজসাহীতে জেলা জজের অফিসে কর্মচারী হিসাবে। রবীন্দ্র-ঘণিষ্ঠ লোকেন্দ্রনাথ পালিতের সহায়তায় তার এই কর্মপ্রাপ্তি বলে জানা যায়। উপার্জন কিছুটা বাড়লেও শিক্ষকতার জীবনে যে সাহিত্য চর্চার সুযোগ ছিল রাজসাহীতে তার একান্তই অভাব। যান্ত্রিক একঘেয়েমিতে হাঁপিয়ে ওঠেন দীনেন্দ্রকুমার। অবশ্য তার পরে এখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় অক্ষয় কুমার সরকারের সঙ্গে। ইতিহাসবিদ অক্ষয়কুমার মৈত্রও 'ভারতী' পত্রিকায় লিখতেন এবং দীনেন্দ্রকুমার ছিলেন তার খুব স্নেহের পাত্র। এ ছাড়া রাজসাহীতে আলাপ হয় কান্ত-কবি রজনী কান্ত সেনের সঙ্গে।
এর পরের পর্যায়ে দীনেন্দ্রকুমারের আবার স্থান ও পেশা পরিবর্তন। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে এসে ১৮৯৩ সালে অরবিন্দ ঘোষ বরোদা কলেজে অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ছোট বেলা থেকেই বাইরে থাকায় বাংলা ভাষায় তিনি মোটেই স্বচ্ছন্দ ছিলেন না, অথচ বাংলা শিখবার তার আগ্রহ ছিল প্রবল। তিনি একজন বাংলা শিক্ষকের অনুসন্ধান করছিলেন। ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে দীনেন্দ্রকুমারের ভালই যোগাযোগ ছিল। স্বর্ণকুমারী দেবী সম্পাদিত 'ভারতী ও বালক' পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় দীনেন্দ্রকুমারের রচনা 'একটি কুসুমের মর্মকথা : প্রবাদ প্রশ্ন' প্রথম প্রকাশিত হয়। সম্ভবতঃ এই সূত্র ধরে রবীন্দ্রনাথ দীনেন্দ্রকুমারকে মনোনীত করেন অরবিন্দকে বাংলা শেখানোর জন্য। দু'বছর তিনি বরোদায় থেকে অরবিন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেলামেশার সুযোগ পান। অরবিন্দ সম্বন্ধে তার মূল্যায়ন ও স্মৃতি রোমন্থন ১৯২৪ সালে 'অরবিন্দ প্রসঙ্গ' গ্রন্থে প্রকাশিত হয়।
এদিকে জলধর সেন 'বসুমতী' পত্রিকার দায়িত্ব নিয়ে প্রাক্তন ছাত্র ও সহকর্মী দীনেন্দ্রকুমারকে আহ্বান জানান তার সঙ্গে যোগদানের জন্য। বরোদা থেকে চলে এসে সানন্দে দীনেন্দ্রকুমার 'বসুমতী'তে যোগ দেন। এখান থেকেই তার প্রকৃত সাহিত্য জীবনের শুরু। 'বসুমতী'-র দৈনিক ও মাসিক সংস্করণ দুইএর সঙ্গেই তিনি ঘণিষ্ঠ ভাবে যুক্ত হয়েছিলেন। তার জীবনের শেষ রচনা 'কথাশিল্পীর হত্যারহস্য' বৈশাখ ১৩৫০ সংখ্যা থেকে শুরু করে তার মৃত্যুর (১২ই আষাঢ়,১৩৫০, ২৭শে জুন, ১৯৪৩) পরেও ধারাবাহিক হিসাবে প্রকাশিত হয়েছিল।
ইংরাজিতে এড্গার অ্যালেন পো (Edger Allan Poe ) (১৮০৯ - ১৮৪৯ ) রচিত The Murders in the Rue Morgue (১৮৪১) বইটিকেই প্রথম ডিটেক্টিভ কাহিনী বলে ধরা হয় । শোনা যায় প্রুসিয়ার ( বর্তমানে জার্মানী ) লেখক E.T.A. Hoffmann-এর একটি গল্পের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হন । তবে অনেকে উইল্কি কলিন্সকে (Wilkie Collins) (১৮২৪ - ১৮৮৯ ) ডিটেক্টিভ উপন্যাসের জনক বলে মনে করেন । বিখ্যাত লেখক চার্লস ডিকেন্স রচিত Bleak House-ও (১৮৫৩) একটি প্রাচীন গোয়েন্দা কাহিনী । শার্লক হোম্স এসেছেন ১৮৮৬ সালে। যাই হোক, বাংলায় ঠিক গোয়েন্দা কাহিনী না হলেও ১৮৮৮ খৃষ্টাব্দে দারোগা গিরিশচন্দ্র বসু রচিত ‘সেকালের দারোগার কাহিনী’ অপরাধ ও অপরাধীদের নিয়ে সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখিত গল্প । এর পর উল্লেখযোগ্য লেখক হলেন প্রিয়নাথ মুখোপাধ্য্যায় (১৮৫৫ - ১৯১৭ ), যিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন ‘দারোগার দপ্তর’ লিখে । এই সঙ্গে হরিসাধন মুখোপাধ্যায়ের নামও উল্লেখযোগ্য । এর পর স্বল্প কালের জন্য আবির্ভাব ‘তপস্বিনী’ খ্যাত নগেন্দ্রনাথ গুপ্তর । রহস্য কাহিনীর ইতিহাস অবসর-এও আলাদাভাবে রয়েছে, এ নিয়ে বেশী লেখা নিষ্প্রয়োজন । পরে কিছু গোয়েন্দা কাহিনী রচিত হলেও বিখ্যাত হন তিনজন লেখক পাঁচকড়ি দে (১৮৭৩ - ১৯৪৫ ) , দীনেন্দ্রকুমার রায় ( ১৮৭৩ - ১৯৪৩ ) এবং সুরেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য্য । এদের সবার মধ্যে যার জনপ্রিয়তা তখনকার দিনে প্রায় শরৎচন্দ্র বা রবীন্দ্রনাথকেও ছুঁতে চলেছিল তিনি হলেন পাঁচকড়ি দে ।
ঐবসুমতী সাহিত্য মন্দির’-এর প্রতিষ্ঠাতা উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৬৮ - ১৯১৯) ১৩০৭ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে ‘নন্দন কানন’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন; এর সম্পাদক হন দীনেদ্রকুমার। প্রথম সংখ্যা থেকেই এতে প্রকাশিত হয়েছিল তার ধারাবাহিক উপন্যাস ‘জয়সিংহের কুঠী’। অবশ্য এই ধারাবাহিকটি প্রথম বেরোতে শুরু করে ‘দাসী’ নামক মাসিক পত্রিকায় এবং পরে তা ‘নন্দন কানন’-এ প্রকাশিত হতে থাকে। মাসিক পত্রিকা ‘নন্দন কানন’ ক্রমশঃ ক্রাইম পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। শুরু হয় ‘নন্দন কানন সিরিজ’ ও ‘রহস্য লহরী সিরিজ’। এই দুই সিরিজ মিলে তার প্রকাশিত বইএর সংখ্যা প্রায় পাঁচশ। ‘নন্দন কানন’ মাসিক পত্রিকাটি কেন বেশ কিছু সাময়িক-পত্র গবেষকদের নজর এড়িয়ে গেছে এবং তাদের গ্রন্থপঞ্জীতে অন্তর্ভুক্ত হয় নি তা বোঝা কঠিন। জনপ্রিয়তায দীনেদ্রকুমারের রবার্ট ব্লেক পাঁচকড়ি দের দেবেন্দ্রবিজয়কে অতিক্রম করতে পারে নি হয় ত; কিন্তু দীনেদ্রকুমারের লেখনী শুধু গোয়েন্দা কাহিনীতেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে নি।
বহু লোক দীনেন্দ্রকুমারকে শুধু রবার্ট ব্লেকের স্রষ্টা এবং গোয়েন্দা কাহিনীর রচয়িতা বলেই জানেন। কিন্তু পল্লীচিত্র ও পল্লীসমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে তার রসস্নিগ্ধ রচনা পড়ে বিস্মিত হতে হয়। এই রচনাগুলিতে তার চিন্তার ব্যাপ্তি, সাহিত্য প্রতিভা ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখনী চালনার সহজাত ক্ষমতাকেই তুলে ধরে। তার লেখনী সৃষ্ট পল্লীচিত্র, পল্লীবৈচিত্র, পল্লীকথা প্রভৃতি গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত বিবিধ রচনা অসাধারণ বৈচিত্র ও বর্ণময়তায় ভরপুর। ‘সাহিত্য’ সম্পাদক সুরেশচন্দ্র সমাজপতি স্বয়ং তার পল্লীকথা গ্রন্থের ‘প্রুফ’ সংশোধন করে দিযেছেন; আর পল্লীজীবনকে তুলে ধরার জন্য রবীন্দ্রনাথ তাকে লিখেছেন ‘বাংলা দেশের হৃদয় হইতে আনন্দ ও শান্তি বহন করিয়া আনিয়া আমাকে উপহার দিয়াছেন। ও অনেক পাঠক পল্লীসমাজের বিভিন্ন দিক ও বিষয়বস্তু নিয়ে রচনাকে তার গোয়েন্দা কাহিনীর থেকে বেশি উপভোগ্য বলে মনে করেন। পল্লীজীবনের অন্তর্নিহিত সত্তাকে তিনি আত্মস্থ করেছিলেন। সম্ভবতঃ মুর্শিদাবাদ, মহিষাদল ও রাজসাহীতে থাকা কালীন গ্রাম বাংলা ও পল্লী জীবনের সঙ্গে তার একাত্মতা গড়ে ওঠে। একই সঙ্গে তার লেখনী গোয়েন্দা কাহিনীর জটিল ঘটনা প্রবাহ ও যুক্তিজালের ঘেরাটোপে আবার পল্লীগ্রামের সরলতা ও সজীবতার মুক্ত আঙিনায় কি করে বিচরণ করেছিল ভাবলে আশ্চর্য্য হতে হয়। শেষ জীবনে নদীয়ার মেহেরপুরে তার বাসস্থানের কাছে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি ছাপাখানা; এখান থেকেই তার লেখা দ্রুত গতিতে ছাপা হয়ে বেরোত। দীনেন্দ্রকুমার ‘মুকুল’, ‘শিশুসাথী’, ‘সখা ও সাথী’, ‘মৌচাক’ প্রভৃতি পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। ছোটদের জন্যও তিনি লিখেছেন। তার রচিত ‘মজার কথা’, ‘লোহার বাক্স’, ‘তালপাতার সিপাই’ ইত্যাদি বহুবিধ রচনা কখনও মজার কখনও হাস্যরসে পূর্ণ। গোয়েন্দা কাহিনী বাদে তার রচিত কিছু গ্রন্থ : বাসন্তী (১৩০৫), হামিদা (১৮৯৯), পট(১৩০১), মজার কথা (১৯০৩), পল্লীচিত্র (১৯০৪), পল্লীবধূ (১৯২৩), তালপাতার সিপাই (১৯২৩), পল্লীকথা (১৩২৪), নায়েবমশাই (১৩৩১), অরবিন্দ প্রসঙ্গ (১৩৩০), সোনার পাহাড় (১৯২৯), নানাসাহেব (১৯২৯), নারীর প্রেম, পল্লীবৈচিত্র্য (১৩১২), কলির কালনেমি, আরব্য উপন্যাস (১৯০২), নেপোলিয়ন বোনাপার্টি (১৯০৩), মহিমময়ী, ঢেঁকির কীর্তি (১৩৩১), আরব্য রজনী (১৩৪২) ইত্যাদি। এ ছাড়া কাশিমবাজার রাজবাটি থেকে প্রকাশিত ‘তিলি পত্রিকা’ এবং সাপ্তাহিকী ‘হিন্দুরঞ্জিকা’ পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তার উপর। তার রচনা উদ্ধার করে কিছু পুণঃপ্রকাশিত হয়েছে, আরও হয় ত হবে। জানি না ব্যস্ততা ও চাহিদায় জর্জরিত এই সময়ে ক’জন তার লেখা পড়তে আগ্রহী হবেন। ]
( লেখক পরিচিতি প্রস্তুত করতে বারিদবরণ ঘোষের রচনার সহায্য নেওয়া হয়েছে)।
বি: দ্র: দীনেন্দ্রনাথ সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্যসূত্রে উল্লেখিত তারিখ নিয়ে এত বিভিন্ন মত সাধারণতঃ দেখা যায় না। তার জন্ম সময় বারিদবরণ ঘোষ বলেছেন ১৮৬৯ সালের ২৫শে আগষ্ট, ‘সাহিত্যসেবক-মঞ্জুষা’য় রয়েছে ১৮ই আগষ্ট, ‘বাঙালি চরিতাভিধান’ অনুসারে ১৮৭৩ সালের ২৬শে আগষ্ট। আন্যান্য কিছু সময় নিয়েও এই ধরণের বিভ্রান্তি রয়েছে।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply