লোকে আমাকে হিংসে করে ---রুক্মিণী মৈত্রে
লোকে আমাকে হিংসে করে ---রুক্মিণী মৈত্রে
দিন শুরু হয় হরলিক্স দিয়ে। পছন্দের খাবার, আরশোলা। হবি, পড়া আর ঘুম। ভয়, খারাপ কাজের। কলকাতা-মুম্বই প্রায় ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হয়ে মডেলিং করেছেন তিনি। এই হল কলকাতার সুপার মডেল রুক্মিণী মৈত্রের সিক্স লাইনার। কিন্তু এর বাইরেও রুক্মিণীর একটা অন্য পরিচয় আছে। ইন্ডাস্ট্রির ওপেন সিক্রেট, তিনি নাকি অভিনেতা-সাংসদ দেবের গার্লফ্রেন্ড। সত্যি নাকি? কী বললেন রুক্মিণী? সাউথ সিটির উল্টোদিকের ফ্ল্যাটে
ইন্ডাস্ট্রিতে আপনাকে কত লোক হিংসে করে জানেন?
কেন বলুন তো?
দু’টো কারণ। দ্বিতীয়টা নিয়ে পরে আলোচনা করছি। প্রথমটা আপনার হাইট।
(তুমুল হাসি) হুম। আমার ৫’৯।
এটা নিশ্চয়ই আপনার গর্বের বিষয়।
যখন ছোট ছিলাম, লম্বা হতে চাইতাম। ৫’৬ মতো হয়ে গেলাম যখন, তখন মনে হল ঠিকই আছে। তার বেশি যখন হতে শুরু করলাম আমার মধ্যে একটা কমপ্লেক্স কাজ করত। জানেন, ক্লাস সিক্সেই লোকে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, কোন কলেজ থেকে এসেছ তুমি? তার পর একটা সময় মনে হত, আর লম্বা হতে চাই না। আর এখন মনে হয়, এই হাইটাই আমার প্রফেশনে কত কাজে লাগছে।
সেকেন্ড রিজিনটা বলি?
প্লিজ…।
ইন্ডাস্ট্রির মোস্ট এলিজেবল ব্যাচেলরের গার্লফ্রেন্ড আপনি। সুতরাং লোকে তো হিংসে করবেই।
এটা আপনাকে কে বলল? আমি কি কখনও বলেছি?
এ তো ইন্ডাস্ট্রির ওপেন সিক্রেট।
তাই? (লাজুক হাসি) আমি কখনও বলিনি তো। বরং আমি আরও কয়েকটা নাম দিয়ে দিতে পারি।
এটাকে শুধুই গসিপ বলবেন? দেবের সঙ্গে প্রেম করছেন না?
(হাসি) আমি জানি না, হঠাত্ করে এটা নিয়ে কেন এত কথা হচ্ছে? আমি ওকে গত ১৭ বছর ধরে চিনি। আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। প্রথমে জানতামও না, ও অভিনয় করে। তার পর যোগাযোগও ছিল না কিছুদিন। আমি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। পরে জেনেছি, ও নিজের প্রফেশনে কতটা ফেমাস।
খুব কনফিডেন্ট শোনাচ্ছে ‘দেবের বেস্টফ্রেন্ড’-এর গলা।
ইয়েস। আমার বাকি জীবনটাও এই কনফিডেন্সটা থাকবে। ওর যদি বিয়ে হয়ে, বাচ্চা হয়ে, নাতি নাতনিও হয়ে যায়, ও জানবে রুক্মিনী ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।
আপনি নাকি দেবের সঙ্গে সব শুটিংয়ে যান?
একেবারেই না।
নৈনিতালে ‘ধূমকেতু’র শুটিংয়ে তো আপনি ছিলেন দেবের সঙ্গে?
না না। আমি আমার ফ্যামিলির সঙ্গে সে সময় ওখানে গিয়েছিলাম। দেবের সঙ্গে তো দেখা হয়নি।
দেব তো ফ্যামিলিরই মতো।
(চোখ পাকিয়ে) দেব আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ও ওখানে তখন ছিল না। বরং ওখানে শুভশ্রীর সঙ্গে ডিনার করেছিলাম।
এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?
আমি খুব অনেস্ট। এটা ইন্ডাস্ট্রির সবাই জানে। আমি ডিপ্লোম্যাটিক হতে পারি, কিন্তু কখনও মিথ্যে বলি না।
কেলোর কীর্তি দেখেছেন?
না। সুলতান দেখেছি। (উত্তেজিত হয়ে) আবার দেখব।
সেকি! আপনর বেস্ট ফ্রেন্ডের ছবিটা দেখলেন না?
ওখানে দেব ছাড়াও আমার অনেক বন্ধু আছে। আর সত্যি বলতে কী বাংলা সিনেমা তেমন একটা দেখা হয় না।
দেবের কোন ছবিটা লাস্ট দেখেছেন?
আরশিনগর। তবে এখনও পর্যন্ত ওকে ‘বুনো হাঁস’-এ আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে।
এত দিন ধরে দেবকে চেনেন, কী চেঞ্জ হয়েছে বলে মনে হয়?
আগের থেকে দেবের কনফিডেন্স অনেক বেড়েছে। তবে ও কখনও ওভার কনফিডেন্ট নয়। এখনও ও আগের মতোই ডাউন টু আর্থ।
দেবের রেস্তোরাঁর নাম তো আপনার দেওয়া।
এটা আপনাকে কে বলল? (মুচকি হাসি) আমি আর এটা নিয়ে কিছু বলি না। বলে কী হবে? কোনও ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি তো পেলাম না। অবশ্য তাতে কিছু না, আঙ্কেল যা ভাল রান্না করে আমার সব সেটিং ওখান থেকেই হয়ে যায়। আচ্ছা ইন্টারভিউটা দেবের ওপর না আমার ওপর ঠিক বুঝতে পারছি না। সব প্রশ্ন কি দেবকে নিয়েই করবেন? (কিছুটা বিরক্ত)।
না না। ইন্টারভিউটা একেবারেই আপনার। আচ্ছা, হঠাত্ মডেলিংকে কেরিয়ার হিসেবে চুজ করলেন কেন?
আমি মডেলিংকে চুজ করিনি বরং মডেলিং আমাকে চুজ করেছে। ঠাকুমা চাইতেন আমি উকিল হব। কারণ ঠাকুর্দা ছিলেন চিফ জাস্টিস। আর আমি তো প্রফেসর হতে চাইতাম। ক্লাস এইটের ফাইনাল পরীক্ষার পর প্রথম সুযোগ আসে। জাস্ট হয়ে গেছে একটার পর একটা। আমি আলাদা করে কিছু করিনি। ১০ বছর কেরিয়ারে তো এই প্রথম পোর্টফোলিও তৈরি করলাম।
বাড়ির সাপোর্ট ছিল তো?
প্রথম কাগজে ছবি বেরোনোর পর বাড়িতে খুব ঝামেলা হয়েছিল। বাবা বলেছিলেন, তুমি যদি এটাই করতে চাও কর, কিন্তু পরীক্ষায় নম্বর কম পেলে কী হবে তুমি জান। আমি ওটাই মেনটেন করতাম।
আরও দেখুন, কখনও প্রফেশন, কখনও বা পার্সোনাল, অকপট রুক্মিণী
আপনার ফার্স্ট ক্রাশ কে?
বিশ্বাস করবেন কী না জানি না কারও প্রতি কোনদিন ক্রাশ তৈরি হয়নি। হাইটের জন্য আমাকে তো সবাই ‘ম্যাম’ বলে ডাকত। (অট্টহাসি) আমি বরং ডেকে ডেকে বলতাম, দেখো স্কুলড্রেস পরে আছি। আমরা সেম সেম।
আপনার পেশার কারণে নিশ্চয়ই কড়া ডায়েটে থাকতে হয়?
কোনও ডায়েট নেই আমার। দিন শুরু হয় জুনিয়র হরলিক্স দিয়ে (হাসবেন না প্লিজ)। ব্রেড-বাটার, পোচ সব খাই। শুটিংয়ে মুড অফ হলেই চকোলেট খেয়ে নিই। জিম, যোগা কিচ্ছু করি না। আমি সত্যিই ব্লেসড। এটা কেউ বিশ্বাস করবে না বলে আমি কোথাও গিয়ে কিছু খাই না জানেন। কারণ সবাই আমার প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আপনি খুব ফুডি নাকি?
খু…উ…ব..। চিকেন, চকোলেট, কেক আমার ফেভারিট। জাপানি ফুড, সুশ্যিও ভালবাসি। আই লভ ককরোজ (এটা লিখবেন না প্লিজ, আমার বিয়ে হবে না, তুমুল হাসি)।
কলকাতায় মডেলিংয়ের ভবিষ্যত্ কী?
আমি তো অন্তত পজেটিভ কিছু বলতে পারব না। জানেন, বেস্ট ট্যালেন্ট সব কলকাতার। কিন্তু এখানকার মডেলদের প্যাশনেট হতে হবে, ডেসপারেট নয়। এই দু’টোর মাঝে একটা সূক্ষ্ম লাইন রয়েছে। তাছাড়া বাজেটটা একটা বড় সমস্যা। একই অর্গানাইজার কোনও কাজের জন্য দিল্লি, মুম্বই বা বেঙ্গালুরুর মডেলদের যা অফার করবে, কলকাতা হলেই বাজেটটা অনেক কমে যাবে।
কেন এটা হয়? এটা কি কোনও মানসিকতার সমস্যা?
অফকোর্স। এখানে সবাই ভাবে, যত হোর্ডিংয়ে বা ম্যাগাজিনে আমাকে দেখা যাবে, আমি তত ফেমাস। এখানে তো সবাই ফেসবুক মডেল। ফেসবুক ফটোগ্রাফার। ভাবতে হবে আমি কী করতে চাই। মডেল হয়ে একই সময়ে একসঙ্গে অনেক ব্র্যান্ডে মুখ দেখানোটা ঠিক নয়।
যাঁরা মডেলিং করতে চান, তাঁদের কোনও টিপস দেবেন?
আমি একটাই কথা বলব। ডেসপারেট হয়ো না। জীবনে সব কিছুর জন্য সময় লাগে। ধৈর্য ধর। নিজের যত্ন নাও। কারণ ইটস অল অ্যাবাউট ইয়োর বডি। নিজের শরীরকে ভীষণ ভাবে রেসপেক্ট কর।
Tag: Entertainment lid news
No comments: