কাশ্মিরে সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের: জাতিসংঘ মহাসচিব
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন
জম্মু-কাশ্মিরে চলমান সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন। তিনি বলেছেন, ‘কাশ্মিরে সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের। অবিলম্বে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন।’
নতুন করে হিংসা এড়াতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি মহাসচিবের আশা, ‘শান্তিপূর্ণভাবে সব সমস্যার সমাধান হবে।’ এভাবে কাশ্মির ইস্যুতে জাতিসংঘ বিবৃতি দেয়ায় অবশ্যই ভারতের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তিকর বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সম্প্রতি কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর করা পদক্ষেপের নিন্দা করে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘কাশ্মিরি নেতা বুরহান ওয়ানি হত্যার পাশাপাশি ভারতীয় সেনা এবং আধাসামরিক বাহিনীর গুলিতে সাধারণ মানুষের মৃত্যু নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করছে।’ ওয়ানির মৃত্যুর প্রতিবাদে যারা আন্দোলন করছেন তাদের থামাতে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন নওয়াজ শরিফ।
এভাবে ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের চুক্তি লঙ্ঘন করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। পাক প্রধানমন্ত্রী এখানেই না থেমে আরো বলেন, ‘প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করতে এ ধরনের পদক্ষেপ জম্মু ও কাশ্মিরের সাহসী নাগরিকদের তাদের দাবি থেকে বিরত করতে পারবে না। কারণ, তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা মেনে নিজেদের সংকল্পের অধিকারের দাবিতে সরব হয়েছেন। ভারতের উচিত মানবাধিকারের পাশাপাশি জাতিসংঘে দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করা।’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজিজু অবশ্য কাশ্মির সম্পর্কে পাকিস্তানের উদ্বেগকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘জম্মু-কাশ্মিরে যা হচ্ছে তা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। পাকিস্তান অহেতুক এতে যেন হস্তক্ষেপ না করে। যদি কিছু করতে হয় তাহলে তারা পাক অধিকৃত কাশ্মিরের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মনোযোগ দিক।’
কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু পাকিস্তানকে কিছুটা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘ভারত পাকিস্তানের সাথে একসঙ্গে কাজ করতে চায় এবং বন্ধুত্ব রাখতে চায়। কিন্তু পাকিস্তান যদি এ ধরণের কাজ অব্যাহত রাখে তাহলে ভারতকে নিজেদের নীতি সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। পাকিস্তানের এ ধরণের কৌশল ছেড়ে দেয়া উচিত। নাইডু জোর দিয়ে বলেন, কাশ্মির ভারতের এক অভিন্ন অংশ এবং এই ইস্যুতে কোনো প্রকার সংলাপ বা আলোচনার কোনো প্রশ্নই নেই।’ তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাশ্মিরে নিহত হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানির সমর্থকদের উসকানি দেয়ার অভিযোগ করেছেন।
যদিও ভারতের পক্ষ থেকে গতানুগতিক মন্তব্যকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ, ভারতের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানোর পরেও তারা বিষয়টি জাতিসংঘের নজরে এনেছে এবং মহাসচিবের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়াতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রের কাছেও নালিশ করেছে পাকিস্তান। সহিংসতায় উত্তপ্ত কাশ্মির উপত্যকায় ভারত মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে তারা। নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন এবং আমেরিকার দূতের সঙ্গে এরইমধ্যে কথা বলেছেন পাক পররাষ্ট্র সচিব আইজাজ আহমেদ চৌধুরী।
আইয়াজের অভিযোগ, যেভাবে নিরীহ সাধারণ মানুষের হত্যা করা হচ্ছে ও ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তাতে পাকিস্তান উদ্বিগ্ন।
অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে কাশ্মির ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করলেও তারাও কাশ্মিরের চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছেন, ‘কাশ্মিরে বিক্ষোভকারী এবং ভারতীয় বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের রিপোর্ট আমাদের গোচরে এসেছে। এই হিংসা নিয়ে আমার উদ্বিগ্ন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের রাস্তা খোঁজার জন্য সব পক্ষকে আবেদন জানাচ্ছি।’
এ ভাবে দেখা যাচ্ছে, কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের মুখ বন্ধ করার জোরালো চেষ্টা চালালেও কাশ্মিরের চলমান সহিংসতা ইস্যুটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
ইমামদের সঙ্গে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং
জম্মু-কাশ্মির সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের পক্ষ থেকে অবশ্য আগেই রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। কাশ্মির পরিস্থিতির জন্য রাজনাথ তার নির্ধারিত আমেরিকা সফর বাতিল করেছেন। অবস্থা সামাল দিতে তিনি গতকাল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ইমামদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সারা ভারত ইমাম সমিতির পক্ষে উমর আহমেদ ইলিয়াসি বলেন, ‘কাশ্মিরিরা আমাদের ভাইয়ের মতো। আমরা চাই কাশ্মিরে শান্তি স্থাপিত হোক।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়েছে। তিনি আমাদের বক্তব্য মন দিয়ে শুনেছেন এবং উপত্যাকার পরিস্থিতি শিগগিরি স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।#
No comments: