ডাবের পানি কিডনির পাথর সৃষ্টি রোধ করে এবং ডায়রিয়া, আলসার, গ্যাসটাটাইটিস বা অ্যাসিডিটি, মূত্রনালীর সংক্রমণ ও ইউরোলিথিয়েসিস প্রতিরোধ করে।
ডাবের পানি হচ্ছে প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক—এটাই সাধার
ণের বিশ্বাস। ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে, পানিশূন্যতা প্রতিরোধে এবং শক্তির উৎস হিসেবে কচি ডাবের পানি ভীষণ জনপ্রিয়। বলা হয়, একটি ডাবের পানিতে চারটি কলার সমান পটাশিয়াম আছে, সেই সঙ্গে আছে সহজ শর্করা বা চিনি, যা সহজে শোষিত হয়ে শক্তি দিতে পারে।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডাবের পানিকে খাওয়ার স্যালাইনের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ডায়রিয়া বা বমির পর পানিশূন্যতা দূর করতে ডাবের পানির ব্যবহার প্রচলিত। কিন্তু সম্প্রতি এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। খেলাধুলা বা কঠোর পরিশ্রমে ঘাম হয়, আর এই ঘামের সঙ্গে দেহ হারায় পানি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম। ডায়রিয়া বা বমির পর দেহ থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। কিন্তু ডাবের পানি খেলে সেই অভাব পূরণ হবে কি না তা নিয়ে বিতর্ক আছে। দি পেডিট্রিয়া সাময়িকী বলছে, ডাবের পানিতে যথেষ্ট পটাশিয়াম থাকলেও সোডিয়ামের পরিমাণ অনেক কম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত খাওয়ার স্যালাইনের তুলনায় অন্তত ৩০ গুণ কম। আর এই দুই তরলের ঘনত্বেও ব্যাপক পার্থক্য আছে। তাই একে অপরের পরিপূরক হতে পারে না।
একটি সাধারণ কচি ডাবে আকারভেদে ২০০ থেকে ১০০০ মিলিলিটার পানি থাকতে পারে। এর ৯৫ শতাংশই পানি। আর সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও অন্যান্য লবণের পরিমাপ স্থানভেদে একেক রকম। তবে সাধারণভাবে এক লিটার ডাবের পানিতে পটাশিয়াম আছে ৩৫ থেকে ৮২ মিলিমোল, সোডিয়াম ০.৭ থেকে ০.৯ মিলিমোল ও শর্করা ১.২ থেকে ২.৮ মিলিমোল। আর এক লিটার স্যালাইনে পটাশিয়ামের পরিমাণ ২০ মিলিমোল, সোডিয়াম ৭৫ মিলিমোল ও শর্করা ৭৫ মিলিমোল।
এবিসি হেলথ।
ডাবের পানি হলো কচি ডাবের ভেতরকার রস। ডাব পেকে নারিকেল হবার সাথে সাথে ডাবের পানি কমে যায়, আর তার জায়গায় নারিকেলের শাঁস ভেতরে জমা হয়। একেবারে কচি ডাবের ভিতরে অল্প পরিমাণে শাঁস থাকে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে পানীয় হিসাবে ডাবের পানি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপসমূহ, এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। টাটকা, ক্যানে ভরা, অথবা বোতলে ভরে ডাবের পানি বিক্রি করা হয়। ডাবের পানিতে প্রতি ১০০ গ্রামে ১৬.৭ ক্যালোরি তথা ৭০ কিলো জুল খাদ্যশক্তি রয়েছে।
ডাবের পানির উৎস হিসাবে আস্ত ডাব অনেক জায়গাতেই বিক্রি করা হয়। ডাবের বাইরের সবুজ খোসা সরিয়ে বাকি অংশকে অনেক সময় প্লাস্টিকে মুড়িয়ে বেচা হয়। দক্ষিণ এশিয়া (যেমন বাংলাদেশ, ভারত) ও মধ্য আমেরিকার অনেক দেশে (যেমন কোস্টা রিকা ও পানামায়) রাস্তার পাশে বিক্রেতারা আস্ত ডাব বিক্রি করে। খদ্দেরের সামনেই দা দিয়ে ডাবের মুখটি কেটে টাটকা ডাবের পানি বিক্রি করা হয়। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ আছে। ১ কাপ ডাবের পানিতে যা খনিজ পদার্থ আছে, তা অনেক স্পোর্টস ড্রিংকের চাইতেও বেশি। একটি ডাবে একটি কলার চাইতে বেশি পটাশিয়াম থাকে।
মাটির গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে ডাবের পানির স্বাদ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন, ভারতের ডাব মিষ্টি হয়, কিন্তু ব্রাজিলের ডাব হয় একটু পানসে। আবার বাংলাদেশের ডাবের পানি বেশ মিষ্টি হয়, আর একটু হালকা নোনতা স্বাদ থাকে।
ডাবের পানি কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এটা কিডনির পাথর সৃষ্টি রোধ করে এবং ডায়রিয়া, আলসার, গ্যাসটাটাইটিস বা অ্যাসিডিটি, মূত্রনালীর সংক্রমণ ও ইউরোলিথিয়েসিস প্রতিরোধ করে। ডাবের পানিতে এন্টিসেপটিক গুণ থাকাতে কাটা-ছেড়া জায়গায় ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মুখের ক্ষত যেমন—ব্রণ, মেছতা ও ফক্সের ক্ষত ডাবের পানি দিয়ে ধৌত করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এতে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, রিবোফ্লেভিন ও কার্বোহাইড্রেট আছে। ডাবের পানি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
যেসব দেশে স্যালাইন পাওয়া যায় না, সেখানে ডাবের পানিকে অনেক সময় শিরার মাধ্যমে দেয়া স্যালাইন হিসাবে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের কাজে ব্যবহার করা হয়।[১]
ডাবের পানির উপাদান %
পানি ৯৫.৫
নাইট্রোজেন ০.০৫
ফসফরিক অ্যাসিড ০.৫৬
পটাসিয়াম ০.২৫
ক্যালসিয়াম ০.৬৯
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড ০.৫৯
গ্রাম/প্রতি ১০০ গ্রামে
লৌহ ০.৫
মোট কঠিন ৪.৭১
চিনি ০.৮০
মোট চিনি ২.০৮
Ash ০.৬২
Source: Pandalai, K. M. (1958). Coconut water and its uses. Coconut Bull. 12, No. 5, 167-173.
No comments: