সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলী আর নেই
সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলী
সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলী পরলোক গমন করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
শনিবার সকালে আমেরিকার আরিজোনা প্রদেশের ফিনিক্স এরিনার একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান। মুহাম্মদ আলী গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে পারকিনসন্স রোগে ভুগছিলেন। কয়েক বছর ধরে তার অবস্থার আরও অবনতি হয়।
মুহাম্মদ আলী
মুহাম্মদ আলীর পারিবারিক মুখপাত্র বব গানেল জানান, বৃহস্পতিবার শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার কারণে মুহাম্মদ আলীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই তিনি মারা গেলেন।
১৯৬৪ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে তখনকার বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলে খ্যাতির তালিকায় উঠে আসেন মুহাম্মদ আলী। খেলাধুলার ইতিহাসে সেরা মুষ্টিযোদ্ধদের মধ্যে একজন হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে।
গত এপ্রিলে মুহাম্মাদ আলী পারকিনসন্স সেন্টারের সহায়তার জন্য অ্যারিজোনায় আয়োজন করা ‘সেলেব্রিটি ফাইট নাইট’-এ সবশেষ জনসমক্ষে এসেছিলেন। অনেক বছর ধরেই স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা সমস্যায় ভোগা আলী ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মূত্রঘটিত সংক্রমণের চিকিৎসা করাতে হয় তাকে। ১৯৮১ সালে বক্সিং থেকে অবসর নেয়ার তিন বছর পর থেকেই পারকিনসন্স রোগে ভুগছেন তিনবারের বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন এবং অলিম্পিক লাইট হেভিওয়েট স্বর্ণপদক বিজেতা আলী। ১৯৯৯ সালে মুহাম্মদ আলীর নাম বিবিসি এবং স্পোর্টস ইলাট্রেটেড 'স্পোর্টসম্যান অব দ্য সেঞ্চুরি' অথবা শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করে।
১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের লুইসভিলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন মুহাম্মদ আলী। তার বাবা ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে সিনিয়র-এর নাম অনুসারেই তার নাম রাখা হয়েছিল ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে জুনিয়র। নামকরণ করা হয়েছিল একজন দাসপ্রথাবিরোধী রাজনীতিবিদ ক্যাসিয়াস ক্লে-এর নামানুসারে।
ইসলাম গ্রহণের পর বদলে যাওয়া মুহাম্মদ আলী
ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে জুনিয়র ১৯৬৪ সালে ইসলামি সংগঠন নেশন অব ইসলাম-এ যুক্ত হন এবং ১৯৭৫ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম পরিবর্তন করে হয়ে যান মুহাম্মদ আলী। তার মতে, এ জন্য ভূমিকা রাখেন নেশন অফ মুসলিম-এর প্রধান ডব্লু ডি মুহাম্মদ।
১৯৫৪ সালের একদিন আলীর সাইকেল চুরি হয়ে যায়, তখন সে পুলিশ অফিসারকে (মার্টিন) জানায় যে, সে চোরকে পেটাতে চায়। অফিসার (সে শহরের বক্সিং কোচ) তাকে বলে যে, এর জন্য তাকে লড়াই করতে জানতে হবে। পরদিন তিনি মার্টিনের কাছ থেকে বক্সিং শেখা শুরু করেন। তিনি তাকে শিখিয়েছিলেন, কীভাবে প্রজাপতির মতো নেচে নেচে মৌমাছির মতো হুল ফোটাতে হয়। ১৯৬০ সালে তিনি অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জেতেন।
আলীর বিশেষত্ব ছিল, তিনি খেলার সময়ে সবার মতো হাত মুখের সামনে রাখতেন না, শরীরের পাশে রাখতেন। প্রতিপক্ষের মার ঠেকানোর জন্য নির্ভর করতেন সহজাত প্রবৃত্তির উপর। ২৯ অক্টোবর ১৯৬০-এ তিনি প্রথম পেশাদার লড়াই জিতেন। ১৯৬০-১৯৬৩ সালে তিনি টানা ১৯টি লড়াই জিতেন, যার মধ্যে ১৫টি নকআউট। ১৯৬৩ সালে তিনি ডগ জোন্স-এর সাথে ১০ বাউটের এক বিতর্কিত লড়াইয়ে জিতেন।
১৯৭৫ সালে আলী লড়াই করেন ফ্রেজিয়ার-এর সাথে। দুজন বীরের এ লড়াইয়ের জন্য সকলে খুবই উত্তেজিত ছিল। ১৪ রাউণ্ডের শেষে ফ্রেজিয়ার-এর কোচ তাকে আর লড়াই করতে দেননি, কারণ, তার এক চোখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফ্রেজিয়ার এর কিছুদিন পরই অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের এক লড়াইয়ে তিনি ১৯৭৬-এর অলিম্পিক মেডেলিস্ট লিয়ন স্পিংক্স-এর কাছে খেতাব হারান। তিনিই প্রথম যিনি একজন অপেশাদারের কাছে হেরেছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
তবে তিনি ১৯৮০ সালে ফিরে আসেন ল্যারি হোমস-এর কাছ থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নিতে। ল্যারি ছিলেন তার শিষ্য তাই সকলেই লড়াইটি নিয়ে আগ্রহী ছিল। ১১ রাউন্ড পর আলী পরাজিত হন। পরে জানা যায়, মস্তিষ্কে মারাত্মক ত্রুটি ধরা পড়েছে। তার মস্তিস্ক ফুটো হয়ে গিয়েছিল। পরে তিনি ১৯৮১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি হলেন সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা।#
No comments: