বাজেট: বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী সংসদে যে ‘প্রতিবন্ধী বাজেট’ পেশ করেছেন তা আমরা মানি না, ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করি।
তিনি বলেন, বাজেটে রিজার্ভ চুরির মত এত বড় ঘটনাকে আড়াল করা হয়েছে। আর সেই ঘটনার জন্য যে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ করার কথা ছিল তিনি সেটা না করে নির্লজ্জের মত যে আকাশচুম্বী বাজেট পেশ করেছেন, বাংলাদেশের জনগণ সেটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরাও সেটা মানি না।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পকেট মারার বাজেট : গয়েশ্বর
এদিকে, বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবে অন্য এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটকে ‘জনগণের পকেট মারার বাজেট’ বলে মন্তব্য করেছেন।
গয়েশ্বের বলেন, পকেট মারার বাজেট দিয়ে কিভাবে জনগণের উন্নয়ন হবে। উন্নয়নের জন্য সরকারের মাথা খারাপ হয়ে যায়। কারণ উন্নয়ন দেশের জনগণের নয়, উন্নয়ন হবে এমপিদের, দলীয় লোকদের।
বিশাল ঘাটতি পূরণে ভ্যাটের ওপর নির্ভরতা: সাইফুল হক
অন্যদিকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, বিরাট অংকের বাজেটের বিশাল ঘাটতি পূরণে ভ্যাটের ওপর নির্ভর করা হয়েছে। এর অর্থ বোঝাটা জনগণের ওপর চাপানো।
বেশিরভাগ অর্থই যাবে লুটপাটে: রতন
অনুরূপ মন্তব্য করে বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাজেটে ব্যবসায়ীদের ওপর কম বোঝা চাপানো হয়েছে। জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে আমলা, প্রশাসন, পুলিশ পোষা হবে। আর বেশিরভাগ অর্থই যাবে লুটপাটে।
বাজেটে অন্য ধর্মের প্রসারে ২০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, এটা মুসলিম প্রধান একটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতি একটি বৈষম্যমূলক আচরণ।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকগণ বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে টেকসই উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, মধ্য আয়ের দেশে চূড়ান্ত পদার্পণের লক্ষ্যে সরকারের সাফল্য ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞের কথা বলা হলেও মোটা দাগে উপেক্ষিত হয়েছে প্রান্তিক ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী। বাজেটে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে অনেক।
বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ার প্রশংসা এলেও বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও মানবসম্পদ উন্নয়নের বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনার ‘স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি’ বলেও মত এসেছে।
নতুন অর্থবছরের জন্য সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, তার আকার নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা না দেখলেও বাস্তবায়নে সরকারকে অনেক বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এর ৭১ শতাংশেরও বেশি আসবে ভ্যাট ও আয়কর খাত থেকে। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রস্তাবিত বাজেটে কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হয়েছে। আর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানোয় বোঝা জনগণের ওপরই বর্তাবে।
বক্তব্য রাখছেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বাজেটের সার্বিক মূল্যায়ন তুলে ধরে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশীয় আয়কে ধনুক হিসেবে আর ব্যয়কে তীরের সাথে সাথে তুলনা করে বলেন, আমরা তীর-ধনুকে সেই শক্তি দেখতে পাচ্ছি না। এই তীর-ধনুক দিয়ে অগ্রগতির লক্ষ্যভেদ করা যাবে বলে এখনো মনে করা যাচ্ছে না।’
এডিপি নিয়ে নতুন কোনো অগ্রগতি নেই: দেবপ্রিয়
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রসঙ্গ তুলে ধরে ড. দেবপ্রিয় বলেন, এডিপি নিয়ে নতুন কোনো ধরনের অগ্রগতি লক্ষ্য করছি না। মেগা প্রকল্পগুলো আগের মতো অবস্থায় রয়েছে। এডিপির তহবিল গতবারের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। এটা ব্যবহার করতে হলে যে নীতির পরিবর্তন দরকার, যে অবকাঠামো দরকার তা সরকারের হাতে নেই।
বাজেট বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য হবে: আজিজুল ইসলাম
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করছেন, সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার এই বাজেট বাস্তবায়ন সরকারের জন্য ‘দুঃসাধ্য হবে’।
তার আশংকা, বিগত বছরগুলোর মত প্রকৃত রাজস্ব আদায় ও উন্নয়ন ব্যয়ের সঙ্গে বাজেটের লক্ষ্যের ‘ফারাক’ থেকে যাবে এবারও।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বক্তৃতা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ
অন্যায়ভাবে কর চাপালে তা আদায় হয় না: এফবিসিসিআই সভাপতি
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, অন্যায়ভাবে কর চাপালে তা আদায় হয় না। আজ শুক্রবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘বাজেটের আকার বড় হলে রাজস্ব আদায়ের চাপও বেশি হয়। তবে আমরা সাধ্যের মধ্যে থাকতে চাই।’।#
No comments: