আজ ষষ্ঠ ও শেষ ধাপে সারাদেশে ৬৯৮ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে

 আজ ষষ্ঠ ও শেষ ধাপে সারাদেশে ৬৯৮ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) শুরু হয়েছে ভোট গ্রহণ। শনিবার সকাল ৮টা থেকে থেকে শুরু হয়েছে এ ভোট গ্রহণ- চলবে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

এ ধাপেও সহিংসতা ও কারচুপির আশংকা করছেন অনেক প্রার্থী। ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিরোধী মতের প্রার্থী নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতারের অভিযোগ রয়েছে। ভোটের আগের দিনও বেশ কিছু ইউপিতে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী মতের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। তাদের এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দিচ্ছে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কর্মী- সমর্থকরা। স্থানীয়ভাবে এসব ঘটনার প্রতিকার না পেয়ে ভোটের দিন সহিংসতার আশংকায় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসি জানিয়েছে, শেষ ধাপের ভোট সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার সব দায়-দায়িত্ব আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের। তবে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদে সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় চট্টগ্রামের মিরেরসরাই উপজেলার করেরহাট এবং কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউপিতে ভোটের প্রয়োজন হবে না।

এদিকে শেষ ধাপের ভোট ঘিরে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে টহল দিচ্ছেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সদস্যরা। তবুও প্রার্থী ও ভোটারদের ভয় কাটছে না। কিছু নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতরা মহড়া দিচ্ছে। এছাড়া পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ভোটের আগের দিন দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করতে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা হলেন- টাঙ্গাইলের গোপালপুর সার্কেলের এএসপি জমিরউদ্দিন সরকার ও ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার ওসি মুহিবুল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে ইসির সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম   বলেন, নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম ও সহিংস ঘটনা যাতে না হয়, সেজন্য পদক্ষেপ নিতে আইনশৃংখলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মাঠে নামানো হয়েছে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা চাই ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরবেন। প্রার্থীদের শংকার বিষয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শংকার কিছু নেই। নির্বাচনে অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃংখলা বাহিনীকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে শেষ ধাপের ইউপি নির্বাচনে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে চলমান ইউপি নির্বাচনে পাঁচ পর্ব শেষ হয়েছে। ৪ জুন ষষ্ঠ ও শেষ পর্বের ভোট হবে। পঞ্চম পর্বের ভোটেও বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, হানাহানি ঘটেছ এবং কিছু প্রাণহানি হয়েছে। যা কোনো মতেই কাম্য নয়। এ অবস্থায় শেষ পর্বের ইউপি নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়- তজ্জন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এ চিঠির অনুলিপি পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ র্যাব, আনসার, বিজিবি মহাপরিচালককেও পাঠানো হয়।

পুলিশের ডিআইজি একে শহীদুর রহমান   বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা এড়াতে পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে। কারও পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করার সুযোগ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল ইসলামের নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর করেছে প্রতিপক্ষ প্রার্থী। এ সময় আওয়ামী লীগের কয়েক নেতাকর্মীকে প্রহার করা হয়। একই দিন আশুলিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শাহাবুদ্দিন মাতবরের অফিসে আগুন দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। রাজশাহীর একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে চাপ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কেউ নৌকায় ভোট না দিলে হাত-পা ভেঙে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন।

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ৭নং বাঙ্গরা (পশ্চিম) ইউপির বিএনপি প্রার্থী মো. মহিউদ্দিনের অভিযোগ, হোন্ডা বাহিনী ও বহিরাগতরা নির্বাচনী এলাকায় মহাড়া দিচ্ছে। এরাই কেন্দ্র দখল করতে পারে এমন গুজব ভোটারদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। একই উপজেলার জাহাপুর ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ তৌফিক আহম্মেদ অভিযোগ করেছেন, তার নির্বাচনী এজেন্টদের কেন্দ্রে না যেতে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। ভোটারদেরও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহজাহান সিরাজ ইসমাইল ইসিতে সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা জমা দিয়েছেন। তার শংকা তালিকায় উল্লেখিত ব্যক্তিরা ভোট কেন্দ্র দখল করতে পারে। এছাড়াও নির্বাচন কমিশনে এ ধাপের ভোট নিয়ে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, কিছু অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে বেশিরভাগ অভিযোগ ঢালাও হওয়ায় তা আমলে নেয়া হচ্ছে না।

শেষ ধাপে নেই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা : ইসি সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনে আইনশৃংখলা বাহিনীর লক্ষাধিক সদস্য মাঠে রয়েছেন। প্রথম পাঁচ ধাপের মতো এবারও নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। প্রতিটি ইউপিতে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি মোবাইল ফোর্স এবং তিনটি ইউপির জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় র্যাবের দুটি মোবাইল ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং বিজিবির দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে। বিষয়টি স্বীকার করে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য ধাপের মতোই একই সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়তি কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে আইনশৃংখলা বাহিনীকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

যান চলাচল ও মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ : এদিকে পঞ্চম ধাপের ভোট গ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে যানবাহন চলাচলের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে কমিশনের অনুমোদিত আইনশৃংখলা বাহিনী, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকসহ অন্যান্য গাড়ি চলাচল করতে পারবে। হাইওয়ে এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকছে না। একই সঙ্গে ভোট গ্রহণের আগেপরে সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কেন্দ্রে পৌঁছেছে ব্যালট ও নির্বাচনীসামগ্রী : ষষ্ঠ ধাপের ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচনী মালামাল কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সকালে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয়। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির ৫৮টি কেন্দ্রে হেলিকপ্টারে নির্বাচনীসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, মালামাল নিরাপদে কেন্দ্রে পৌঁছেছে।