Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » টাইফয়েড বা সান্নিপাতিক জ্বর ।।পানি বাহিত রোগঃ আমাশয়






টাইফয়েড বা সান্নিপাতিক জ্বর


টাইফয়েড জ্বর এখন আমাদের জন্য আর তেমন ভয় জাগানিয়া কিছু নয় আগের মতো। উন্নত চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসম্মত পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে টাইফয়েডকে একসময় অনেকটাই বশ মানিয়ে আনা হয়েছিলো যদিও আবার সেটি ফিরে আসছে মারাত্নক রুপে। চলুন আজ জেনে নেই টাইফয়েড সম্পর্কে সাধারন কিছু কথা।



টাইফয়েড বা সান্নিপাতিক জ্বর  এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয় যার নাম 'সালমোনেলা টাইফি'। এটি একটি পানি বাহিত রোগ। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও খাদ্যনালীতে এই জীবাণু অবস্থান করে এবং প্রস্রাব ও মলের মাধ্যমে পরিবেশে উন্মুক্ত হয় যা পরবর্তীতে পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। টাইফয়েড জীবাণু সংক্রমিত পানি পান করার মাধ্যমে পুনরায় অন্য আরেকজন আক্রান্ত হন। পানি ছাড়াও জীবাণু দ্বারা দূষিত দুধ কিংবা দুগ্ধজাত সামগ্রী, নারিকেল, চিংড়ি, মাছ, ডিম, কাচা সবজি, সালাদ, লেটুস প্রভৃতি থেকেও জীবানুটি মানুষের মাঝে ছড়াতে পারে। মাছি মানুষের মলমুত্র খেয়ে জীবনধারণ করে। মানুষ যখন মাছিতে বসা খাবার খায় তখন সেটি মানুষে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির  হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়া, মল ত্যাগের পরে হাত না ধোয়া ইত্যাদি কারনেও এটা ছড়াতে পারে।



একবার শরীরে প্রবেশ করার পরে জীবাণু অন্ত্র থেকে রক্তে প্রবেশ করার মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।





যেকোনো বয়সেই টাইফয়েড হতে পারে তবে আমাদের দেশে সাধারণত শিশু থেকে তরুণদের মাঝেই এটা বেশি হতে দেখা যায়।



টাইফয়েড জীবাণু দেহে প্রবেশের ১০-১৪ দিন পরে রোগের উপসর্গ ও লক্ষণসমূহ প্রকাশ পেতে শুরু করে।





    প্রধানত থাকে জ্বর যা সাধারণত ১০৩ থেকে ১০৪ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়, জ্বর ক্রমেই বাড়তে থাকে, সারাক্ষণই জ্বর থাকে।
    জ্বরের সাথে মাথাব্যথা, গায়ের মাংশপেশিতে ব্যাথা থাকে, থাকে দুর্বলতা।
    প্রাপ্ত বয়স্কদের অনেক সময়ই কোষ্টকাঠিন্য দেখা দেয়। শিশুদের ডায়রিয়া এবং বমি হতে পারে।
    খাওয়ায় থাকে না রুচি, সব লাগে বিস্বাদ, সাথে পেটে ব্যাথা।
    লিভার ও প্লিহা আকারে বড় হয়ে যেতে পারে।
    সপ্তাহখানেক পরে পেট এবং পিঠে গোলাপি রঙের ফুসকুড়ি হতে পারে। এই ফুসকুড়িগুলোর একটি বৈশিষ্ঠ্য হল হাতের আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওরা অদৃশ্য হয়ে যায়।





দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগীকে যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে তৃতীয় সপ্তাহের মাথায় রোগী মারাত্মক জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন।



যেসব জটিলতা হতে পারে তাদের মাঝে অন্ত্রের দেয়াল থেকে রক্তক্ষরণ এবং দুর্ভাগ্য বাড়লে অন্ত্রের দেয়ালে ছিদ্র হয়ে মারাত্নক রক্তক্ষরণ হতে পারে, যেক্ষেত্রে রোগী মারাত্নক জটিল শকে চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে।



অনেকে একবার আক্রান্ত হবার পড়ে সারা জীবনের জন্য টাইফয়েডের বাহক হয়ে পড়েন যারা জীবন্ত রোগবাহক হিসেবে আজীবন এই রোগ ছড়িয়ে দিতে থাকেন নিজের অজান্তে। এমন একজন ইতিহাস বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন ' টাইফয়েড মেরী' যাকে নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে।



এছাড়াও লিভারের ছিদ্র হওয়া, অগ্নাশয়ে বা মস্তিস্কে প্রদাহ, মায়াকার্ডাইটিস(হৃদ পেশীতে সংক্রমন), নেফ্রাইটিস(কিডনিতে সংক্রমন), হাড়ের ইনফেকশন, সেপটিসেমিয়া(রক্তে সংক্রমন) ইত্যাদি জটিলতা টাইফয়েড থেকে হতে পারে।





টাইফয়েড নির্ণয়ের জন্য রোগের উপসর্গ-লক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক টেস্ট রয়েছে





    রোগের প্রথম সপ্তাহে রক্তের কালচারের মাধ্যমে,
    দ্বিতীয় সপ্তাহে ভিডাল টেস্টের মাধ্যমে( যদিও এটা শতভাগ নির্ভরযপগ্য নয়)
    পরবর্তী সপ্তাহে যথাক্রমে মল ও প্রস্রাবের পরীক্ষার মাধ্যমে টাইফয়েড নির্ণয় করা যায়
    ক্ষেত্রবিশেষে অস্থিমজ্জা থেকেও পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা যায়







টাইফয়েডের চিকিৎসার ব্যাপারে বলতে হয় কার্যকরি এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারের পরে টাইফয়েড অনেক সহজেই বশ মানানো সম্ভব হয়েছে।



সাধারণত ১০-১৪ দিনের চিকিৎসাতেই মানুষ আরোগ্য লাভ করে যদিও একসময় এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারের পূর্বে টাইফয়েড ছিলো মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম।  তবে বর্তমানে ইচ্ছামত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অযথাই এন্টিবায়োটিকের ব্যাবহারের ফলে টাইফয়েডের জীবাণু নতুন ওষুধগুলোর বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে যার ফলে সাধারন কোন এন্টিবায়োটিকে সহজে টাইফয়েড সারানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদেরকে বলা হচ্ছে MDR Typhoid বা একাধিক ড্রাগ প্রতিরোধী টাইফয়েড।



এন্টিবায়োটিকের সাথে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং প্রচুর পানি ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে কাজে লাগে।







টাইফয়েড প্রতিরোধের জন্য বাজারে এখন ভ্যাকসিন বের হয়েছে যার একটা প্রতি ৩ বছর পর পর মাংশপেশীতে নিতে হয় এবং একটি মুখে

খেতে হয় যদিও এদের কার্যকারিতা সবক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় না।





টাইফয়েড জ্বরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল বিষয় হলো সামস্টিক পরিচ্ছন্নতা এবং সচেতনতা। অর্থাৎ,



    নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান
    স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার
    খাবার তৈরি এবং খাবার গ্রহণের পূর্বে এবং পায়খানা ব্যবহারের পর সাবান/ছাই দিয়ে হাত ধোয়া
    কাঁচা বা অপরিষ্কার শাক-সবজি ও ফলমূল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা
    খাবার গরম করে খাওয়া
    ঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা
    টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যের জন্য খাবার তৈরি থেকে বিরত থাকা
    আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যবহার্য দ্রব্যাদি আলাদা করে রাখা ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে টাইফয়েডের থেকে আমরা দূরে থাকতে পারবো।


পানি বাহিত রোগঃ আমাশয়

বন্ধুদের সাথে বাইরে খেয়েছেন, ফুচকা, সালাদ, সাথে পানিও খেয়েছেন। পরের দিন  অফিস বা ক্লাসে গিয়ে সুস্থির হয়ে বসতেই পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো, শুরু হল ক্রমাগত বাথরুমে যাওয়া-আসা। সাথে এলো জ্বর এবং মলের সাথে আম এবং রক্ত পড়া। খুব সাধারণ একটি দৃশ্য আমাদের দেশে এটি এবং এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি এমন বাংলাদেশী খুব কমই পাওয়া যাবে। উপরের যে সাধারণ সমস্যার কথা বলা হয়েছে তার নাম আমাশয় বা ইংরেজিতে Dysentery. এদেশের মানুষের কাছে যেটি খুব পরিচিত একটি রোগ।

আমাশয় মূলত দুই ধরণের, অ্যামিবিক এবং ব্যাসিলারি। অ্যামিবিক আমাশয়ের মূলে রয়েছে এককোষী অ্যামিবা এবং ব্যাসিলারি আমাশয়ের মূলে রয়েছে একটি ব্যাক্টেরিয়া যার নাম সিগেলা/ shigella. এই দুই ধরণের আমাশয়ই মূলত আমাদের দেহে প্রবেশ করে দূষিত পানি এবং খাবারের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তির মলের সাথে বেরিয়ে আসা জীবাণু দ্বারা দূষিত পানি দিয়ে ধোয়া খাবার যেমন ফল, সালাদ খাওয়া, অবিশুদ্ধ পানি পান এগুলো আমাশয়ে আক্রান্ত হওয়ার বড় কারণ। আক্রান্ত ব্যক্তির সঠিকভাবে হাত পরিস্কার না করে থাকলে তার কাছ থেকেও ছড়াতে পারে আমাশয়। মাছির মাধ্যমেও জীবাণু খোলা খাবারে সংক্রমিত হতে পারে।

আমাদের দেশে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের পরে আমাশয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। আমাশয়ের উপসর্গের মাঝে রয়েছে মোচড় দিয়ে পেটে ব্যাথা, বার বার মল ত্যাগ করা, মলের সাথে আম অথবা রক্ত যাওয়া, সাথে জ্বর থাকা, অ্যামিবিক আমাশয়ের ক্ষেত্রে মলে হাল্কা দুর্গন্ধ হতে পারে। ডায়রিয়ার সাথে আমাশয়ের একটা পার্থক্য হচ্ছে ডায়রিয়ায় মলে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে আর আমাশয়ে মলে পানির পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে।

মলের সাথে রক্ত গেলে তাকে বলা হয় রক্ত আমাশয়। আক্রান্ত ব্যক্তির অন্ত্রের দেয়াল যখন জীবাণু দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন ক্ষত সৃষ্টি হয়ে  রোগী আম এবং রক্ত মিশ্রিত মল ত্যাগ করেন। সাধারনত জীবাণু দেহের ভেতরে প্রবেশ করার ১ থেকে ৩ দিনের মাঝেই রোগের উপসর্গ প্রকাশ পেতে শুরু করে। একসপ্তাহের মাঝেই এটি অধিকাংশ সময়ে নিরাময় হয়ে যায়।

আমাশয়ের হাত থেকে বাঁচার প্রধান উপায় আমাদের সকলেরই জানা, তার পরেও আবার মনে করিয়ে দিতে চাইঃ

১। প্রতিবার মল ত্যাগের পরে হাত সাবান দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করা
২। স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করা
৩। না ধুয়ে কোন ফল বা অন্যান্য খাবার না খাওয়া
৪। খাবার খোলা না রাখা
৫। বাসি, পচা কোন খাবার না খাওয়া
৬। আক্রান্ত ব্যক্তিকে খাবার প্রস্তুত করতে না দেওয়া



আমাশয়ের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য দুইটিঃ বার বার পাতলা পায়খানার ফলে পানি শূন্যতার হাত থেকে রোগীকে রক্ষা করা এবং জীবাণু নাশে ঔষধের ব্যবহার করা।


পাতলা পায়খানার জন্য ওরস্যালাইন ব্যবহার করতে হবে, এটা আমরা সবাই জানি। ব্যাকটেরিয়া জনিত আমাশয়ে ৫-৭ দিনের এন্টিবায়োটিকেই কাজ হয়, বর্তমানে সিপ্রোফ্লকসাসিন বা এজিথ্রোমাইসিন খুব ভালো কাজ করে। অ্যামিবিক আমাশয়ে মেট্রনিডাজল ৫ দিনের কোর্সই যথেষ্ট।

আমাশয় এমন একটি অসুখ যা  থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ নিয়ম পালন করলেই চলে। তাই ব্যক্তিগত এবং সামাজিক পরিচ্ছন্নতার প্রতি সকলের নজর রাখা অতীব জরুরী এ ব্যাপারে






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply