বাংলাদেশের হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় গড়ে ওঠা তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন—বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
এ বিষয়ে এ মামলার অ্যামিকাস কিউরি আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন। এতে করে ৯০ দিনের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হবে। এ রায়ের ফলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকল না।’
বিজিএমইএ ভবনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক,অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান খান এবং পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে বিজিএমইএর ভবন ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি ভাঙতে বলা হয়। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেয়া হয়।
একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএর আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো বাড়ান।
এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ২০১৩ সালের ২৩ মে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। এ আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়। আপিল বিভাগ আজ রায়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।
রায়ে আদালত বলেন, ভবনটির সৌন্দর্য ও মহিমান্বিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো। এই ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট করা না হলে এটা শুধু হাতিরঝিল নয়, গোটা ঢাকা শহরকে সংক্রমিত করবে।
রায়ে ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার জন্য সরকার ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ওপর নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়,ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প।
রায়ে আদালত বলেন, বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাটের অংশ বিক্রি করেছে, তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। দাবি করার এক বছরের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলা হয় রায়ে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, বিজিএমইএ ভবনের সঙ্গে তাদের চুক্তি ছিল বেআইনি।
বিজিএমইএর ওই ভবন নির্মাণ বা ভবনের অংশ কারো কাছে বিক্রি করার কোনো অধিকার ছিল না। ওই জমির ওপর বিজিএমইএর মালিকানা নেই বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।#
No comments: