ফুসফুস শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে সাহায্য করে। আমাদের বুকের বাঁ দিকে রয়েছে হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ডের দুপাশে এদের অবস্থান। এরা সংখ্যায় এক জোড়া।
পেটের ওপর থেকে বুকের সামনের দিকে এদের বিস্তৃতি। আমাদের মেরুদণ্ডের সঙ্গে অসংখ্য ছোট হাড় যুক্ত আছে বুকের সামনের দিকে। এই হাড়গুলোর সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে বক্ষপিঞ্জর। বক্ষপিঞ্জরের মধ্যেই ফুসফুসের অবস্থান। বক্ষপিঞ্জরের ছোট হাড়গুলো ফুসফুসকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। ফুসফুস লালচে বাদামি বর্ণের। অর্ধকোণাকৃতির বেলুনের মতো এদের গঠন। এদের দেহ স্পঞ্জের মতো। আমরা পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত বাতাস নিই। সেই বাতাস নাকের মাধ্যমে ট্রাকিয়ায় (গলার ভেতরে অবস্থিত) যায়। ট্রাকিয়া থেকে ফুসফুসে পৌঁছায়।
ফুসফুস থেকে বাতাস হৃৎপিণ্ডে যায়। হৃৎপিণ্ড সেই বাতাসকে অক্সিজেনযুক্ত করে সারা দেহে পাঠায়। যেকোনো একটা (বাঁ বা ডান পাশের) ফুসফুসকে বলে ‘লাং’ (খৎষব)। আর দুটো ফুসফুসকে একসঙ্গে বলে ‘লাংস’। আর চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ব্রংকাস বলে। শ্বাস নিলে ফুসফুস বেলুনের মতো ফুলে যায়। আর নাক ও মুখ দিয়ে বাতাস বের করাকে বলে প্রশ্বাস। প্রশ্বাসের সময় ফুসফুস চুপসে যায়। আকারে ছোট হয়ে আসে। গঠনপ্রকৃতি বেলুনের মতো হওয়ায় ফুসফুসকে বলা হয় ‘দেহের বেলুন’। হৃৎপিণ্ডের মতো ফুসফুসও বিরামহীন গতিতে কাজ করতেই থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায়ও চলতে থাকে ফুসফুসের পরিশ্রম। প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি মিনিটে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় ১২ থেকে ১৮ বার। আর শিশুরা নেয় ২০ থেকে ৩০ বার। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানসিক অবস্থার জন্য এই পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে।
আমাদের শ্বাস নিতে লাগে দুই সেকেন্ড আর প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজন তিন সেকেন্ড। ফুসফুসের মধ্যে পাতা ঝরে যাওয়া গাছের ডালপালার মতো দেখতে অসংখ্য ছোট নালি রয়েছে। এই নালিগুলোর মাধ্যমে বাতাস ফুসফুস ও সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। প্রশ্বাসের সময় কার্বন ডাই-অক্সাইড ও সামান্য পরিমাণে পানিসহ আরও কিছু গ্যাস শরীরের বাইরে বের হয়ে যায় (কিছু ক্ষতিকর গ্যাস, যা শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ)।
হৃৎপিণ্ড বাঁ পাশে থাকায় বাঁ ফুসফুস ডান ফুসফুসের তুলনায় ছোট। হৃৎপিণ্ড সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে ফুসফুসের কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। কারণ হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের অবস্থান পাশাপাশি এবং এদের কার্যপ্রণালীও পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
ফুসফুসের কাজ
– মস্তিষ্কে বিশুদ্ধ বায়ু প্রেরণে ভূমিকা রাখে।
– নাকের মাধ্যমে ঢুকে যাওয়া অপ্রয়োজনীয় বস্তুকে দেহের বাইরে বের করে দেয়।
ফুসফুসের যত্নে যা করবেন
– ধূমপায়ীদের ফুসফুসের শিরা ও নালিগুলোয় বর্জø দ্রব্য জমে যায় অতি দ্রুত। ফলে বাতাস সঠিকভাবে চলতে পারে না। বছরের পর বছর বর্জø জমে মারাত্মক পরিণতির সৃষ্টি হয়। তাই মাদক ও ধূমপান কখনোই নয়।
– প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগান, এতে পরিবেশে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়বে। ফলে ফুসফুস ও পরিবেশ দুটোই হবে উপকৃত।
– চামড়া, লোহার দোকান বা কারখানার কাছাকাছি বাসায় থাকবেন না।
– ঘরে সূর্যের আলো ও বাতাস প্রবেশের পর্যাপ্ত সুযোগ রাখুন।
– টয়লেটের দরজা সব সময় বন্ধ রাখুন। রান্নাঘর ও টয়লেট থেকে নির্গত গ্যাস বের হওয়ার জন্য সঠিক ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
– রান্নাঘরের ময়লা ফেলার পাত্রে অবশ্যই ঢাকনা ব্যবহার করুন।
– সুযোগ হলেই গাছপালাময় সবুজ পরিবেশে বুকভরে দীর্ঘ সময় শ্বাস নিন। কাজে ব্যস্ত থাকলে আমাদের মাথা জ্যাম মনে হয়। সম্ভব হলে কাজ শেষে খোলা আকাশের নিচে ৩০ মিনিট হাঁটুন। এতে মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে রক্ত ও অক্সিজেনের মাত্রা বাড়বে। ফলে মস্তিষ্ক ও ফুসফুস হবে বেশি কর্মক্ষম।
– অ্যাজমা রোগীরা সব সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।
বাসতন্ত্র বিকল হলে
মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন ব্যবহার করে শ্বসতন্ত্রের বৈকল্য বা রেসপিরেটরি ফেইল্যুর রোগীকে বাঁচানো হয়। মারাত্মক জটিল হাঁপানী, ক্রনিক ব্রংকাইটিস সহ ভয়ংকর ধরনের আঘাতজনিত কারণে এই শ্বাসতন্ত্রের বৈকল্য ঘটতে পারে। তখন জীবন বাঁচানোর সর্বশেষ প্রচেষ্টা নেয়া হয় মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনের সাহায্য নিয়ে। ভেন্টিলেটর কাজ করে দু’ভাবে; যেমন গ্যাসকে ফুসফুসের ভেতরে পাম্প নিয়ে (যাকে পজেটিভ প্রেসার মেশিন বলে) অথবা বুকের চারদিকে একটি ঋণাত্বক চাপ সৃষ্টিও করে যাতে শ্বাস নেয়া যায়। বেশীর ভাগ পজেটিভ প্রেসার মেশিনে গ্যাসকে প্রদান করা হয় রোগীর কাছে একটি নন কিং টিউব দিয়ে যাকে ইন্সপিরেটরি লিম্ব বলে। গ্যাসগুলোকে তাপ দেয়া এবং আর্দ্র করা হয় একটি পানির আধারের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করা মাধ্যমে। একটি জীবাণুর জন্য ছাকটি এবং একটি অক্সিজেন বিশ্লেষক এ এনালাইজার এই যন্ত্রে থাকে। গ্যাস যখন চালিত হয় তখন ইন্সপিরেটরি লিম্বে এর চাপের বৃদ্ধি ঘটে এবং এই শ্বাস পথের চাপকে মাপা হয় একটি ম্যানোমিটার দিয়ে। শ্বাস ছাড়ার সময় গ্যাস গুলো ফিরে যায় এক্সপিরেটরির লিম্ব দিয়ে। যেখানে প্রতিটি প্রশ্বাসের আয়তনকে মাপা হয় এবং দেখানো হয়। বিপদ সংকেত পদ্ধতিও জড়িত করা হয় যা উত্তর দেয় যখন শ্বাস পথের চাপ অথবা প্রশ্বাসের আয়তনে কোন ব্যতিক্রম ঘটে। যে কোন ধরনের রেসপিরেটরি ফেইল্যুর বা শ্বাসতন্ত্রের বৈকল্যে আক্রান- রোগীর চিকিৎসায় মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন পড়তে পারে। এটা সাধারণত করা হয় একটি কাফড এনডোট্রোকিয়াল টিউব রোগীর মুকগহব্বর অথবা নাকের ভিতর দিয়ে সাধারণ অজ্ঞান করার মাধ্যমে। ইন্টারমিটেন্ট পজেটিভ প্রেসার ভেন্টিলেশনকে এখন পর্যন- সবচেয়ে প্রচলিত ধরনের মেকানিক্যাল ভেন্টিলেসন হিসাবে গণ্য করা হয়। শ্বাসতন্ত্রের বৈকল্যের এক নম্বর ধরনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিইইএফ (পজেটিভ এ্যান্ড এক্সপিরেটরি প্রেসার) কে একটি কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হয় বায়ু চলাচল বা ভেন্টিলেশন এবং রক্ত প্রবাহের মাঝে বিতরণের তারতম্য ঠিক রাখার জন্য। শক্তিশালী ভেন্টিলেটর যে গুলো নির্ধারিত আয়তনের গ্যাস প্রদান করে সেগুলো দুই নম্বর ধরনের শ্বাসতন্ত্রের বৈকলে ব্যবহার করা হয়, যেখানে শ্বাসনালীতে বাধাজনিত শ্বাসকষ্ট থাকে। বাতাসের আয়তন এবং অক্সিজেনের ঘনত্ব যেটাকে ভেন্টিলেটর দিয়ে প্রবাহিত করা হয় সেটাকে সুবিন্যস- করা হয় রক্তের অক্সিজেনের চাপ এবং কাবর্ন-ডাই-অক্সাইডের চাপকে স্বাভাবিক মাত্রায় নেবার জন্য এবং যদি সম্ভব হয় বায়ু চলাচলের সাহায্যকে কমাতে হবে যেই মাত্র শ্বাসতন্ত্রের চিকিৎসাকে সার্থকভাবে করা যায়।
মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনের জটিলতা:
০ উচ্চ মাত্রায় পিইইএফ-এর ফলে ফুসফুসের পর্দায় অথবা বক্ষের অভ্যন-রে বাতাস জমতে পারে। ক্স জীবাণু সংক্রমণের আশংকা বেশী থাকে। ক্স অনেকক্ষণ এই যন্ত্র থাকার ফলে শ্বাসনালীর উপরের অংশ অর্থাৎ ট্রেকিয়াতে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। ক্স শ্বাসতন্ত্রের বৈকল্যের দুই নম্বর ধরনের রোগীদের বেলায় এই পদ্ধতি থেকে সরে আসতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
০ শিশুদের ক্ষেত্রে ব্রংকোপালমোনা ডিসপ্লাসিয়া দেখা দিতে পারে। এতসব জটিলতার কথা ভাববার অবকাশ থাকে না যখন একজন মৃত্যুপথযাত্রী রোগী চিকিৎসকের কাছে আসে। শ্বাসতন্ত্রের বৈকল্য বা রেসপেটরি ফেউল্যুর এর আক্রান- মুমূর্ষ রোগীদের চিকিৎসা মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন খুবই প্রয়োজনীয় একটি জীবন বাঁচানো পদক্ষেপ।
সিস্টিক ফাইব্রোসিস
সিস্টিক ফাইব্রোসিস একটি বংশগত রোগ যা প্রধানত শ্বসন ও পরিপাকতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এটি একটি মারাত্মক জীবনঘাতী রোগ। যখন কোন দম্পতি উভয়েই সিস্টিক ফাইব্রোসিসের একটি করে জিন বহন করেন তখন তাদের সন্তানের মাঝে এই রোগ প্রকাশ পায়। সাধারনত বাবা-মার মাঝে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ইউরোপ, আমেরিকার শেতাঙ্গদের মাঝে এর প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি। প্রধানত ফুসফুস, অগ্নাশয়, যকৃত, অন্ননালী, জননতন্ত্র এ রোগে আক্রান্ত হয়।
কীভাবে হয়?
মিউকাস বা শ্লেষ্মা একধরনের পিচ্ছিল তরল যা আমাদের দেহে উৎপন্ন হয়। শ্লেষ্মা আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গের নালীসমূহকে রাখে আর্দ্র এবং নানা জীবাণু থেকে মুক্ত।
সিস্টিক ফাইব্রোসিসে আক্রান্ত রোগীদের দেহে এই শ্লেষ্মা আরও অধিক ঘন হয়। এই বেশি ঘন শ্লেষ্মা তাদের শ্বাসনালীতে আটকে গিয়ে নালীকে জ্যাম করে রাখে, ফলে রোগ-জীবাণু বাসা বাধে এবং শুরু হয় শ্বাসতন্ত্রের মারাত্নক সংক্রমণ।
সিস্টিক ফাইব্রোসিসে মৃত্যুর মূল কারন বারবার শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন হওয়া। একসময় ফুফফুস তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে রোগীকে নিয়ে যায় মৃত্যুর দিকে।
আমাদের অগ্নাশয়ের পাচকরসের রাস্তা বন্ধ করে সিস্টিক ফাইব্রোসিস দেহের বিপাকে বেশ ভালো বিঘ্ন ঘটায়। পাচক রসের অভাবে খাদ্য ঠিকমতো হজম হয় না আর তৈরি করে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস ও প্রচুর মল।
আক্রান্ত পুরুষদের সন্তান দানে অক্ষমতা এই অসুখের আরেকটি ক্ষতিকর প্রভাব। মহিলাদের ক্ষেত্রেও গর্ভধারণে সমস্যা দেখা যায়।
রোগের লক্ষণসমূহ
জন্মের ২-৩ বছরের মধ্যেই সিস্টিক ফাইব্রোসিসের লক্ষনসমূহ প্রকাশ পেতে শুরু করে। অনেকের বেলায় আরও দেরিতে প্রকাশ পায়।
নবজাতকের ক্ষেত্রেঃ
দেহের আকার ও ওজন কম হওয়া
জন্মের ২-৩ দিনের মাঝে মল ত্যাগ না করা
পেট ফুলে যাওয়া ও অতিরিক্ত কান্নাকাটি করা
ঘামে লবণের পরিমাণ বেশি থাকা
শিশু-কিশোরদের মধ্যে আরও দেখা যায়ঃ
শ্বসনতন্ত্রঃ
কাশি ও শ্বাসকষ্ট যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে
ঘন কফ বা শ্লেষ্মা
কাশির সাথে রক্ত যাওয়া
নাক বন্ধ থাকা
জ্বর
বুকে ব্যথা
বারবার নিউমোনিয়া হওয়া
পরিপাকতন্ত্রঃ
বয়স অনুযায়ী বৃদ্ধি না হওয়া
দুর্গন্ধময় ও পরিমানে বেশি মলত্যাগ করা
কোষ্ঠকাঠিন্য
অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদন(flatulence)
স্ফীত উদর
পরবর্তীতে আরও হতে পারেঃ
অগ্নাশয়ে প্রদাহ(Pancreatitis)
প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা(infertility)
শ্বসনতন্ত্রের তীব্র প্রদাহ বা ইনফেকশন
লিভার সিরোসিস
গলব্লাডারে পাথর
আর্থ্রাইটিস ও অস্থি ক্ষয়
ডায়াবেটিস
[Xray of chest in cystic fibrosis]
Xray of chest in cystic fibrosis
চিকিৎসাঃ
সিস্টিক ফাইব্রোসিসের ক্ষেত্রে যত দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা হবে ততই রোগীর আয়ু বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশনের জন্য মূল চিকিৎসা এন্টিবায়োটিক থেরাপি।
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
প্রচুর পানি পান
ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ
সপ্তাহে ২-৩ দিন হাল্কা ব্যায়াম
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ইসবগুলের ভুসি ব্যবহার
প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে খাবারে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা ও অগ্নাশয়ের এনজাইম গ্রহণ করা।
উন্নত বিশ্বে আধুনিক চিকিৎসার সহায়তায় এখন এই রোগে আক্রান্তরা গড়ে ৩৭ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সকল সুবিধা না থাকায় গড় আয়ু আরও কম হয়।
যেহেতু সিস্টিক ফাইব্রোসিস এমন একটি অসুখ যা আমরা এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিরাময় করতে পারিনি তাই এর সাথে যুদ্ধ করে কিভাবে ভালো থাকা যায় সেটাই এই রোগের চিকিৎসার মূলমন্ত্র। আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার পরিজনের এ বিষয়ে সচেতনতা ও রোগীর নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন দিতে পারে তাকে এই সুন্দর পৃথিবীতে অধিক সময় বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা।
0
আকর্ষণীয় মেম্বার সুবিধা
সর্বশেষ প্রশ্ন ও উত্তর
0
মন্তব্য
পাঁয়ে প্রচুর ব্যাথা ও রগে টান খাচ্ছি, হাটতে প্রচুর সমস্যা হচ্ছে
শুরু করেছেন: একজন অতিথি সদস্য
0
মন্তব্য
পায়ের মাংশ পেশিতে ব্যাথা।
শুরু করেছেন: একজন অতিথি সদস্য
1
মন্তব্য
রাতে জ্বর
শুরু করেছেন: একজন অতিথি সদস্য
0
মন্তব্য
Abdominal pain
শুরু করেছেন: একজন অতিথি সদস্য
0
মন্তব্য
আমি গ্যাসট্রিকের রোগী
শুরু করেছেন: একজন অতিথি সদস্য
সাম্প্রতিক দেশী সংবাদ
শিশুটি কি অটিজমের আশংকা মুক্ত?
স্বাস্থ্য বাংলা ধূমপান মুক্তি কিট
ব্রিটেন থেকে জটিল রোগের ২য় মতামত নিন
মদপানে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি
ডেঙ্গু এর টিকা পরিক্ষাতে সফল প্রমাণিত
সাম্প্রতিক বিদেশী সংবাদ
'ডায়েট' কোমল পানীয় ও ওজন বাড়ায়
জাপানে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যে সম্মেলন
পপুলার রোগ
কিশোরীর স্তন বিশাল বড় হয়ে যাওয়া
কোমর ব্যথা বা ব্যাকপেইন
নীরব ঘাতক হেপাটাইটিস বি ভাইরাস
স্তনের বোটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া
পুরুষের যৌন দূর্বলতা
পপুলার টিপস্
পুরুষত্বে সমস্যা – ঘরোয়া সমাধান
শারীরিক মিলনের নানা দিক
মুখ ও দাঁতের যত্ন নেবেন কিভাবে
ঠোঁটের পরিচর্যা
স্বাস্থ্যকর ভালোবাসা
কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা
সমস্যাঃ আমার বয়স ২৩ বছর। উচ্চতা পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি, ওজন ৬১ কেজি। আমি বেশ কয়েক বছর ধরে ঠান্ডার সমস্যায় ভুগছি। একটু ঠান্ডা লাগলেই নাক দিয়ে পানি পড়ে, হাঁচি হয়। যখন খুব বেশি ঠান্ডা লাগে তখন শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বুকের ভেতর চাপ অনুভব করি। অনেক সময় কাশি ও শ্বাসকষ্টের জন্য রাতে ঘুমাতেও কষ্ট হয়। বছরের এ সময় কষ্টের তীব্রতা বেড়ে যায়। আমার খাবারে কিছুটা অ্যালার্জি আছে। যেমন-চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ খেলে আমার হাঁচি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় এবং ত্বকে লাল র্যাশ হয়। সমস্যাগুলোর জন্য আমি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়েছি। কিন্তু ঠান্ডা লাগা কমছে না। কীভাবে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠব? অ্যালার্জি ও ঠান্ডার সমস্যা কি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব?
নিয়াজ আহমেদ
ধামরাই, ঢাকা।
পরামর্শঃ আপনি সম্ভবত অ্যালার্জিজনিত রোগ অ্যালার্জিক রাইনাইটিস ও ব্রংকিয়াল অ্যাজমা রোগে ভুগছেন। তবে এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনাকে কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। যেমন-কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, টোটাল ইয়োসনোফিল কাউন্ট, স্পিউটাম ইয়োসনোফিল কাউন্ট, স্কিন টেস্ট ফর অ্যালার্জি, সেরাম আইজিই, লাং ফাংশন টেস্ট বা স্পাইরোমেট্রি এবং বুকের এক্স-রে। তবে পরীক্ষাগুলো অবশ্যই একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করাবেন। অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের জন্য প্রথমে আপনাকে যে কাজটি করতে হবে, তা হলো যে যে কারণে আপনার এই সমস্যাটা বাড়ে, তা চিহ্নিত করা এবং যতটুকু সম্ভব তা এড়িয়ে চলা। নিয়মিত লং অ্যাকটিং অ্যান্টিহিস্টামিন, যেমন-লরাটাডিন, ডিসলরাটাডিন ট্যাবলেট, মাস্টসেল স্টেবিলাইজার, কিটোটিফেন ট্যাবলেট, স্টেরয়েড নাকের স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যাজমার জন্য রোগ প্রতিরোধকারী স্টেরয়েড ইনহেলার, যেমন-বেকলো মিথাসন, ফ্লটিকাসন, লং অ্যাকটিং থিয়ো ফাইলিন, মনটিলুকাস্ট ট্যাবলেট ও উপশমকারী ইনহেলার সালবিউটামল ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধের প্রকার, সঠিক মাত্রা এবং কত দিন নিতে হবে জেনে নেবেন। যদি আপনার রোগটি অ্যালার্জিক রাইনাইটিস ও অ্যাজমা হয়, সে ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাময়ও সম্ভব।
ফুসফুসের ফোঁড়া
ফুসফুসের মধ্যে যদি কোনো কারণে পুঁজ জমে তবে তাকে ফুসফুসের ফোঁড়া বলা হয়। ফুসফুসের ফোঁড়া বহুবিদ কারণে সৃষ্টি হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া রোগ ঠিক সময়মতো চিকিৎসা না হলে তা থেকে ফুসফুসে পুঁজ জমে বা ফোঁড়া হতে পারে। কখনো কখনো এ ফোঁড়া থেকে পুঁজ বের হয়ে যেতে পারে তখন শুধু ক্যাভিটি থাকে। নাক, মুখ বা গলায় অপারেশন করার সময় জীবাণু ফুসফুসে ঢুকে ফোঁড়া সৃষ্টি করতে পারে। দেহের অন্য কোনো স্থানের সংক্রামক পীড়ার জীবাণু ফুসফুসে বাহিত হয়ে ফোঁড়া সৃষ্টি করতে পারে। ফুসফুসের ফোঁড়া হঠাৎ বা ধীরে ধীরে শুরু হতে পারে। বুকে ব্যথ্যা সাধারণত থাকেই। জ্বর, বুকে ব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি লক্ষণ নিয়ে শুরু হয়। কাশির সাথে প্রচুর কফ বের হয়, কফ পচা, দুর্গন্ধযুক্ত, হলুদ। কখনো কখনো রক্ত মিশ্রিত হতে পারে। ফোঁড়া শ্বাসনালীর সাথে সংযুক্ত হয়ে ফেটে গেলে একত্রে প্রচুর পরিমাণ পুঁজ রক্ত বের হয়। ভীষণ জ্বর ও তার সাথে খুব খারাপ শারীরিক অবস্থা কখনো কখনো হাতের আঙুলের অগ্রভাগ মোটা হয়ে (ক্লাবিং) লক্ষ করা যায়।
অনেক সময় ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে ফুসফুসের পর্দায় প্রদাহ, পুঁজ জমা এমনকি মস্তিষ্কেও বাহিত হয়ে ফোঁড়ার সৃষ্টি করতে পারে। রোগের লক্ষণ, বুকের এক্স-রে করা হলে সহজেই ফুসফুসের ফোঁড়া বোঝা যায়। এ ছাড়াও কফ ও রক্তের সাধারণ পরীক্ষা করে ফুসফুস কোডা নির্ণয় করা যায়। কফ বা রক্তের কালচার এবং সেনসিটিভিটি রিপোর্ট অনুযায়ী নির্দিষ্ট এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে ফুসফুসের ফোঁড়ার চিকিৎসা করা উচিত। গুরুতর অবস্থায় এন্টিবায়োটিক মুখে খেতে না দিয়ে ইনজেকশন আকারে দিতে হবে। আর একটি ব্যাপার মনে রাখতে হবে ফুসফুসের ফোঁড়ায় এন্টিবায়োটিক স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক দীর্ঘমেয়াদি দিতে হবে। কখনো কখনো ৪-৬ সপ্তাহ পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ফুসফুসের ফোঁড়া চিকিৎসায় দ্রুত ও কার্যকর ফল পাওয়ার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি বা পশ্চুরাল ড্রেনেজ-এর ভূমিকা অনেক বেশি।
শ্বাসনালীর হঠাৎ প্রদাহ
শ্বাসনালীর হঠাৎ প্রদাহ অসুখ প্রায় সর্বক্ষেত্রেই ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাস জীবাণু আক্রমণের ফলে হয়ে যায়। শিশু ও বয়স্করা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। শ্বাসনালী ও তার শাখা-প্রশাখার ক্ষুদ্র ঝিল্লি আক্রান্ত হওয়াই এ রোগের কারণ। হঠাৎ শ্বাসনালীর প্রদাহ রোগ সাধারণ সর্দি লাগার ফলেই হয়ে থাকে। সর্দি কণ্ঠনালী হতে নিচের দিকে প্রসারিত হয়ে বায়ুনালীগুলোকে আক্রমণ করলেই তার নাম হয় হঠাৎ শ্বাসনালীর প্রদাহ। যে ঋতুতে আবহাওয়া ঘন ঘন পরিবর্তিত হয় অর্থাৎ শরৎকাল ও বসন্তকালের প্রারম্ভেই রোগটি সাধারণত প্রকাশ পায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্বল দেহ, উপযুক্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য হতে বঞ্চিত এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হয় এ ধরনের ব্যক্তিকে এ রোগ আক্রমণ করে। সাধারণত যে কারণগুলো থেকে রোগটি জন্মে তার মধ্যে শরীরে অত্যধিক পানি লাগানো, অত্যন্ত ঠাণ্ডা পানিতে গোসল অথবা শরীর তপ্ত হওয়ার পরক্ষণেই অনাবৃত দেহে ঠাণ্ডা বায়ু লাগানো, গান গাওয়া, বক্তৃতা করা প্রভৃতির পর ঠাণ্ডা বা আর্দ বায়ু সেবন, অপর্যাপ্ত পোশাকাদি পরে মোটরগাড়ি প্রভৃতিতে ভ্রমণ।
উল্লেখযোগ্য আরো যেসব কারণে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হয় তার মধ্যে ঠাণ্ডা, আর্দ্রতা, কুয়াশা এবং ধূলিময় আবহাওয়া, ধূমপান ইত্যাদি। যারা দিনরাত ঘরের মধ্যে বসে কাজ করেন এবং অত্যধিক গরম পোশাক ব্যবহার করেন, সবসময় গরম পানি দিয়ে গোসল করেন বা আদৌ গোসল করেন না তাদেরও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার একটি প্রবণতা থাকে এবং সামান্য ঠাণ্ডা লাগলেই তারা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ জন্য শিশুদের গরম ঘরের মধ্যে রাখা অনুচিত। জীবনের উভয়প্রান্তে অর্থাৎ শৈশব ও বার্ধক্যে মানুষের প্রতিরোধ শক্তি কম থাকে, এ জন্য তাদের পক্ষেই রোগ আক্রমণ সহজ হয়। এ রোগের প্রথম অবস্থায় বিরক্তিকর ও বেদনাদায়ক শুষ্ক খুসখুসে কাশি, সর্দি শিরঃপীড়া, গলাব্যথা, বক্ষব্যথা, সময় সময় স্বরভঙ্গ প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর সাথে দেহের উত্তাপ অল্প পরিমাণে বাড়ে (১০১ ডিগ্রি-১০২ ডিগ্রি ফা.)। রোগের প্রকৃতির ওপরই উত্তাপের বৃদ্ধি নির্ভর করে। রোগীর শুষ্ক কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসে সামান্য কষ্ট থাকে, অধিকসংখ্যক বায়ুনালী আক্রান্ত হলে রোগীর বুকের মধ্যে টাটানি ও টানটানভাব অনুভব করে। প্রবল শুষ্ক কাশিতে বুকে ব্যথা লাগে, শ্বাস-প্রশ্বাসের দ্রুততা বৃদ্ধি পায়। দেহের উত্তাপ বাড়ে। ক্রমে শ্লেষ্মা সরল হতে থাকে এবং অল্প কাশিতেই থোকা থোকা কফ উঠে বুক পরিষ্কার হয়ে যায়। সাধারণত সুস্থ যুবকদের পক্ষে হঠাৎ শ্বাসনালীর প্রদাহ কখনোই মারাত্মক হয় না। কিন্তু শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে অবস্থাভেদে এ রোগ অথবা এ রোগ বিস্তৃত হয়ে অন্য উপসর্গের সৃষ্টি করলে বিপদের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। উপযুক্ত সময়ে রোগ প্রশমিত না হলে তা পুরাতন আকার ধারণ করে, তখন তাকে পুরাতন বা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসনালীর প্রদাহ বলে।
চিকিৎসা
জ্বর থাকলে রোগীকে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই হঠাৎ আক্রান্ত প্রদাহ কয়েক দিনের মধ্যেই আরোগ্য হলেও, কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে কিছুতেই আরোগ্য হতে চায় না এবং ক্রমেই নতুন নতুন উপসর্গ সৃষ্টি করতে থাকে। বুকে অত্যধিক ব্যথা থাকলে সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ নিতে হবে। সাধারণ ক্ষেত্রে পেনিসিলিন জাতীয় জীবাণু ধ্বংসকারী ওষুধ দেয়া হয়। রোগ প্রবল হলে এমপিসিলিন, টেট্রাসাইক্লিন, কোট্রাইমঅক্সাজল জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। এ ওষুধগুলো সাধারণত ৭-১০ দিন পর্যন্ত দিতে হয়। কাশি ও কফের জন্য বেঞ্জিন বা মেথানল মিশ্রিত জলীয়বাষ্প শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে দিনে তিনবার করে ১০ মিনিট ধরে নিলে খুব উপকার পাওয়া যায়। শ্বাসনালীর সংকীর্ণতার ফলে শ্বাসকষ্ট হলে সালবিউটামল, ইফিড্রিন জাতীয় উপশমকারী ওষুধ দেয়া হয়। রাতে কাশি বন্ধ করার জন্য ফোলকোডিনযুক্ত ওষুধ ব্যবহার করা যায়।
ফুসফুস : শরীরের বেলুন
ফুসফুস শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে সাহায্য করে। আমাদের বুকের বাঁ দিকে রয়েছে হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ডের দুপাশে এদের অবস্থান। এরা সংখ্যায় এক জোড়া।
পেটের ওপর থেকে বুকের সামনের দিকে এদের বিস্তৃতি। আমাদের মেরুদণ্ডের সঙ্গে অসংখ্য ছোট হাড় যুক্ত আছে বুকের সামনের দিকে। এই হাড়গুলোর সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে বক্ষপিঞ্জর। বক্ষপিঞ্জরের মধ্যেই ফুসফুসের অবস্থান। বক্ষপিঞ্জরের ছোট হাড়গুলো ফুসফুসকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। ফুসফুস লালচে বাদামি বর্ণের। অর্ধকোণাকৃতির বেলুনের মতো এদের গঠন। এদের দেহ স্পঞ্জের মতো। আমরা পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত বাতাস নিই। সেই বাতাস নাকের মাধ্যমে ট্রাকিয়ায় (গলার ভেতরে অবস্থিত) যায়। ট্রাকিয়া থেকে ফুসফুসে পৌঁছায়।
ফুসফুস থেকে বাতাস হৃৎপিণ্ডে যায়। হৃৎপিণ্ড সেই বাতাসকে অক্সিজেনযুক্ত করে সারা দেহে পাঠায়। যেকোনো একটা (বাঁ বা ডান পাশের) ফুসফুসকে বলে ‘লাং’ (খৎষব)। আর দুটো ফুসফুসকে একসঙ্গে বলে ‘লাংস’। আর চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ব্রংকাস বলে। শ্বাস নিলে ফুসফুস বেলুনের মতো ফুলে যায়। আর নাক ও মুখ দিয়ে বাতাস বের করাকে বলে প্রশ্বাস। প্রশ্বাসের সময় ফুসফুস চুপসে যায়। আকারে ছোট হয়ে আসে। গঠনপ্রকৃতি বেলুনের মতো হওয়ায় ফুসফুসকে বলা হয় ‘দেহের বেলুন’। হৃৎপিণ্ডের মতো ফুসফুসও বিরামহীন গতিতে কাজ করতেই থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায়ও চলতে থাকে ফুসফুসের পরিশ্রম। প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি মিনিটে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় ১২ থেকে ১৮ বার। আর শিশুরা নেয় ২০ থেকে ৩০ বার। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানসিক অবস্থার জন্য এই পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে।
আমাদের শ্বাস নিতে লাগে দুই সেকেন্ড আর প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজন তিন সেকেন্ড। ফুসফুসের মধ্যে পাতা ঝরে যাওয়া গাছের ডালপালার মতো দেখতে অসংখ্য ছোট নালি রয়েছে। এই নালিগুলোর মাধ্যমে বাতাস ফুসফুস ও সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। প্রশ্বাসের সময় কার্বন ডাই-অক্সাইড ও সামান্য পরিমাণে পানিসহ আরও কিছু গ্যাস শরীরের বাইরে বের হয়ে যায় (কিছু ক্ষতিকর গ্যাস, যা শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ)।
হৃৎপিণ্ড বাঁ পাশে থাকায় বাঁ ফুসফুস ডান ফুসফুসের তুলনায় ছোট। হৃৎপিণ্ড সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে ফুসফুসের কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। কারণ হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের অবস্থান পাশাপাশি এবং এদের কার্যপ্রণালীও পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
ফুসফুসের কাজ
– মস্তিষ্কে বিশুদ্ধ বায়ু প্রেরণে ভূমিকা রাখে।
– নাকের মাধ্যমে ঢুকে যাওয়া অপ্রয়োজনীয় বস্তুকে দেহের বাইরে বের করে দেয়।
ফুসফুসের যত্নে যা করবেন
– ধূমপায়ীদের ফুসফুসের শিরা ও নালিগুলোয় বর্জø দ্রব্য জমে যায় অতি দ্রুত। ফলে বাতাস সঠিকভাবে চলতে পারে না। বছরের পর বছর বর্জø জমে মারাত্মক পরিণতির সৃষ্টি হয়। তাই মাদক ও ধূমপান কখনোই নয়।
– প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগান, এতে পরিবেশে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়বে। ফলে ফুসফুস ও পরিবেশ দুটোই হবে উপকৃত।
– চামড়া, লোহার দোকান বা কারখানার কাছাকাছি বাসায় থাকবেন না।
– ঘরে সূর্যের আলো ও বাতাস প্রবেশের পর্যাপ্ত সুযোগ রাখুন।
– টয়লেটের দরজা সব সময় বন্ধ রাখুন। রান্নাঘর ও টয়লেট থেকে নির্গত গ্যাস বের হওয়ার জন্য সঠিক ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
– রান্নাঘরের ময়লা ফেলার পাত্রে অবশ্যই ঢাকনা ব্যবহার করুন।
– সুযোগ হলেই গাছপালাময় সবুজ পরিবেশে বুকভরে দীর্ঘ সময় শ্বাস নিন। কাজে ব্যস্ত থাকলে আমাদের মাথা জ্যাম মনে হয়। সম্ভব হলে কাজ শেষে খোলা আকাশের নিচে ৩০ মিনিট হাঁটুন। এতে মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে রক্ত ও অক্সিজেনের মাত্রা বাড়বে। ফলে মস্তিষ্ক ও ফুসফুস হবে বেশি কর্মক্ষম।
– অ্যাজমা রোগীরা সব সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।
বাসতন্ত্র বিকল হলে
মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন ব্যবহার করে শ্বসতন্ত্রের বৈকল্য বা রেসপিরেটরি ফেইল্যুর রোগীকে বাঁচানো হয়। মারাত্মক জটিল হাঁপানী, ক্রনিক ব্রংকাইটিস সহ ভয়ংকর ধরনের আঘাতজনিত কারণে এই শ্বাসতন্ত্রের বৈকল্য ঘটতে পারে। তখন জীবন বাঁচানোর সর্বশেষ প্রচেষ্টা নেয়া হয় মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনের সাহায্য নিয়ে। ভেন্টিলেটর কাজ করে দু’ভাবে; যেমন গ্যাসকে ফুসফুসের ভেতরে পাম্প নিয়ে (যাকে পজেটিভ প্রেসার মেশিন বলে) অথবা বুকের চারদিকে একটি ঋণাত্বক চাপ সৃষ্টিও করে যাতে শ্বাস নেয়া যায়। বেশীর ভাগ পজেটিভ প্রেসার মেশিনে গ্যাসকে প্রদান করা হয় রোগীর কাছে একটি নন কিং টিউব দিয়ে যাকে ইন্সপিরেটরি লিম্ব বলে। গ্যাসগুলোকে তাপ দেয়া এবং আর্দ্র করা হয় একটি পানির আধারের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করা মাধ্যমে। একটি জীবাণুর জন্য ছাকটি এবং একটি অক্সিজেন বিশ্লেষক এ এনালাইজার এই যন্ত্রে থাকে। গ্যাস যখন চালিত হয় তখন ইন্সপিরেটরি লিম্বে এর চাপের বৃদ্ধি ঘটে এবং এই শ্বাস পথের চাপকে মাপা হয় একটি ম্যানোমিটার দিয়ে। শ্বাস ছাড়ার সময় গ্যাস গুলো ফিরে যায় এক্সপিরেটরির লিম্ব দিয়ে। যেখানে প্রতিটি প্রশ্বাসের আয়তনকে মাপা হয় এবং দেখানো হয়। বিপদ সংকেত পদ্ধতিও জড়িত করা হয় যা উত্তর দেয় যখন শ্বাস পথের চাপ অথবা প্রশ্বাসের আয়তনে কোন ব্যতিক্রম ঘটে। যে কোন ধরনের রেসপিরেটরি ফেইল্যুর বা শ্বাসতন্ত্রের বৈকল্যে আক্রান- রোগীর চিকিৎসায় মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন পড়তে পারে। এটা সাধারণত করা হয় একটি কাফড এনডোট্রোকিয়াল টিউব রোগীর মুকগহব্বর অথবা নাকের ভিতর দিয়ে সাধারণ অজ্ঞান করার মাধ্যমে। ইন্টারমিটেন্ট পজেটিভ প্রেসার ভেন্টিলেশনকে এখন পর্যন- সবচেয়ে প্রচলিত ধরনের মেকানিক্যাল ভেন্টিলেসন হিসাবে গণ্য করা হয়। শ্বাসতন্ত্রের বৈকল্যের এক নম্বর ধরনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিইইএফ (পজেটিভ এ্যান্ড এক্সপিরেটরি প্রেসার) কে একটি কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হয় বায়ু চলাচল বা ভেন্টিলেশন এবং রক্ত প্রবাহের মাঝে বিতরণের তারতম্য ঠিক রাখার জন্য। শক্তিশালী ভেন্টিলেটর যে গুলো নির্ধারিত আয়তনের গ্যাস প্রদান করে সেগুলো দুই নম্বর ধরনের শ্বাসতন্ত্রের বৈকলে ব্যবহার করা হয়, যেখানে শ্বাসনালীতে বাধাজনিত শ্বাসকষ্ট থাকে। বাতাসের আয়তন এবং অক্সিজেনের ঘনত্ব যেটাকে ভেন্টিলেটর দিয়ে প্রবাহিত করা হয় সেটাকে সুবিন্যস- করা হয় রক্তের অক্সিজেনের চাপ এবং কাবর্ন-ডাই-অক্সাইডের চাপকে স্বাভাবিক মাত্রায় নেবার জন্য এবং যদি সম্ভব হয় বায়ু চলাচলের সাহায্যকে কমাতে হবে যেই মাত্র শ্বাসতন্ত্রের চিকিৎসাকে সার্থকভাবে করা যায়।
মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনের জটিলতা:
০ উচ্চ মাত্রায় পিইইএফ-এর ফলে ফুসফুসের পর্দায় অথবা বক্ষের অভ্যন-রে বাতাস জমতে পারে। ক্স জীবাণু সংক্রমণের আশংকা বেশী থাকে। ক্স অনেকক্ষণ এই যন্ত্র থাকার ফলে শ্বাসনালীর উপরের অংশ অর্থাৎ ট্রেকিয়াতে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। ক্স শ্বাসতন্ত্রের বৈকল্যের দুই নম্বর ধরনের রোগীদের বেলায় এই পদ্ধতি থেকে সরে আসতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
০ শিশুদের ক্ষেত্রে ব্রংকোপালমোনা ডিসপ্লাসিয়া দেখা দিতে পারে। এতসব জটিলতার কথা ভাববার অবকাশ থাকে না যখন একজন মৃত্যুপথযাত্রী রোগী চিকিৎসকের কাছে আসে। শ্বাসতন্ত্রের বৈকল্য বা রেসপেটরি ফেউল্যুর এর আক্রান- মুমূর্ষ রোগীদের চিকিৎসা মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন খুবই প্রয়োজনীয় একটি জীবন বাঁচানো পদক্ষেপ।
নিউমোনিয়া কি
নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগ। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমনের কারণে নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হাল্কা থেকে জীবন হানিকরও হতে পারে। নিউমোনিয়ার ফলে ফ্লু এর সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে।
নিউমোনিয়া হয়েছে কি করে বুঝবেন
নিউমোনিয়ার উপসর্গগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। এটা নির্ভর করে শারীরিক অবস্থা কি ধরনের জীবাণু নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়েছে তার উপর।
নিউমোনিয়া হলে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দেয়:
জ্বর
কাশি
শ্বাস কষ্ট
ঘাম হওয়া
কাঁপুনি
বুকে ব্যাথা যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে উঠা নামা করে
মাথা ব্যথা
মাংসপেশীতে ব্যাথা
ক্লান্তি অনুভব করা
কখন ডাক্তার দেখাবেন
অস্বাভাবিক জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, বুকে ব্যথা হওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
এছাড়া
যারা বৃদ্ধ এবং শিশু
যারা ধূমপান করেন
যারা ফুসফুসে কোন আঘাত পেয়েছেন
যাদের কেমোথেরাপি (ক্যান্সারের চিকিৎসা) অথবা অন্য কোন ঔষধ খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে
তাদের যদি উপরোক্ত লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তাদেরকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তা না হলে নিউমোনিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে
চিকিৎসার জন্য কোথায় যোগাযোগ করতে হবে
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
জেলা হাসপাতাল
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বেসরকারী হাসপাতাল
কি ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা
বুকের এক্স-রে
রক্ত এবং কফ/শ্লেষ্মা (Mucus) পরীক্ষা
কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে
মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়ে থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে শিরাপথে এ্যান্টিবায়োটিক এবং অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অক্সিজেনের প্রয়োজন না হলে বাড়িতে থেকেও মুখে এ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যেতে পারে তবে এক্ষেত্রে বাড়িতে ভালোভাবে রোগীর প্রতি যত্ন নিতে হবে।
কি ধরনের চিকিৎসা আছে
এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন
ভাইরাস প্রতিরোধী ঔষধ সেবন
পর্যাপ্ত পরিমান বিশ্রাম
তরল খাদ্য গ্রহণ
জ্বর এবং ব্যথা কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবনের পাশাপাশি নিয়মিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্রাম,পথ্য ও বাড়তি সতর্কতা
প্রচুর বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে
প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ এবং পানি পান করতে হবে
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঠিকমত ঔষধ সেবন করতে হবে
ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হবে
নিউমোনিয়া কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
ভালোভাবে পরিস্কার করে হাত ধুতে হবে
নিজের প্রতি যত্ন নিতে হবে
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে
ধূমপান করা যাবে না
অন্যের সামনে হাঁচি/কাশি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হাঁচি/কাশি দেয়ার সময় মুখ হাত দিয়ে ঢাকতে হবে বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে
কিছু কমন জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন .১. নিউমোনিয়া কেন হয় ?
উত্তর. ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারা ফুসফুসে সংক্রমণের মাধ্যমে নিউমোনিয়া হয়ে থাকে।
প্রশ্ন.২. নিউমোনিয়া কয় ধরনের হয়ে থাকে?
উত্তর. নিউমোনিয়ার কারণের উপর ভিত্তি করে নিউমোনিয়াকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।
পারস্পরিক সংস্পর্শ থেকে (Community-acquired Pneumonia) হওয়া নিউমোনিয়া
হাসপাতাল থেকে হওয়া নিউমোনিয়া (Hospital-acquired Pneumonia)
এ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া(Aspiration Pneumonia)
সুযোগ সন্ধানী জীবানু দিয়ে হওয়া নিউমোনিয়া (Pneumonia Caused by Opportunistic Organisms)
অন্যান্য জীবাণু দ্বারা ঘটিত হওয়া নিউমোনিয়া (Other Pathogens)
প্রশ্ন. ৩. কাদের নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে ?
উত্তর. যাদের নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তারা হলেন
ছোট্ট শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা
বহুদিন ধরে ভুগছে এমন কোন রোগ থাকলে যেমন : বহুমূত্র (Diabetes), হৃদরোগ, ফুসফুসের অন্য কোন রোগ ,এইডস ইত্যাদি থাকলে
যাদের অন্য কোন কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে যেমন-ক্যান্সারের চিকিৎসা নিলে,স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন করলে
যারা ধূমপান করেন
প্রশ্ন .৩. নিউমোনিয়া হলে কি ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে?
উত্তর. নিউমোনিয়ার ফলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে:
রক্তপ্রবাহে (Blood Stream) জীবাণুর সংক্রমণ
ফুসফুসের চারপাশে তরল জমা এবং সংক্রমণ (Fluid accumulation and indection around lungs)
ল্যাং এ্যাবসেস (Long Abscess)
তীব্র শ্বাসকষ্ট বা একিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনেড্রাম (Acute respiratory distress syndrome)
হাড় জোড়ের সমস্যার ফিচার সহ টিপস দেয়া হলো
কোমর ব্যথা বা ব্যাকপেইন
কোমর ব্যথা বা ব্যাকপেইন
বেশীরভাগ মানুষই জীবনের কোনো না-কোন সময় কোমর ব্যথাজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। আমাদের দেশে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে চার জন জীবনের কোন না-কোন সময়ে এই সমস্যায় ভুগেন।
কোমর ব্যথার কারণ:
কোমর ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ ভাগ হচ্ছে ‘মেকানিক্যাল সমস্যা’। মেকানিক্যাল সমস্য বলতে মেরুদন্ডের মাংসপেশি, লিগামেন্ট মচকানো, আংশিক ছিড়ে যাওয়া, দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক সমস্যা, কশেরুকার অবস্থানের পরিবর্তন ও মেরুদন্ডের নির্দিষ্ট বক্রতার পরিবর্তনকে বোঝায়। চলাফেরা, জীবিকার ধরন, খুব বেশী ভার বা ওজন বহন, মেরুদন্ডের অতিরিক্ত নড়াচড়া, একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে কোনো কাজ করা, মেরুদন্ডে আঘাত পাওয়া সর্বোপরি কোমরের অবস্থানগত ভুলের জন্য হয়ে থাকে। অন্যান্য কারণের মধ্যে বয়সজনিত মেরুদন্ডে ক্ষয় বা বৃদ্ধি, অস্টিওআথ্রাইটিস বা গেঁটে বাত, অস্টিওপোরোসিস, এনকাইলজিং স্পনডাইলোসিস, মেরুদন্ডের স্নায়বিক সমস্যা, টিউমার ক্যান্সার, বোন টিবি, কোমরের মাংসপেশির সমস্যা, পেটের বিভিন্ন ভিসেরার রোগ বা ইনফেকশন, বিভিন্ন স্ত্রীরোগজনিত সমস্যা, মেরুদন্ডের রক্তবাহী নালির সমস্যা, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, মেদ বা ভুঁড়ি অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি।
উপসর্গ
কোমরের ব্যাথা আস্তে আস্তে বাড়তে পারে বা হঠাৎ প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। নাড়াচড়া বা কাজকর্মে ব্যাথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। ব্যাথা কোমরে থাকতে পারে বা কোমর থেকে পায়ের দিকে নামতে পারে অথবা পা থেকে কোমর পর্যন্ত উঠতে পারে। অনেক সময় কোমর থেকে ব্যাথা
মেরুদন্ডের পেছন দিক দিয়ে মাথা পর্যন্ত উঠতে পারে। রোগী অনেকক্ষণ বসতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ব্যাথার সঙ্গে পায়ে শিন-শিন বা ঝিন- ঝিনজাতীয় ব্যথা নামতে বা উঠতে পারে, হাঁটতে গেলে পা খিচে আসে বা আটকে যেতে পারে, ব্যথা দুই পায়ে বা যেকোনো এক পায়ে নামতে পারে। অনেক সময় বিছানায় শুয়ে থাকলে ব্যাথা কিছুটা কমে আসে। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে রোগীর কোমর ও পায়ের মাংসপেশির ক্ষমতা কমে আসে এবং শুকিয়ে যেতে পারে, সর্বোপরি রোগী চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
যেহেতু আধুনিক এই যুগেও কোমর ব্যথা একটি আন্তর্জাতিকভাবে ¯^xK…Z ¯^v¯’¨ সমস্যা; তাই এ সমস্যার সমাধানে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
প্রতিকার
মেডিসিন: চিকিৎসকরা রোগীকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সাধারণত ব্যথানাশক এনএসএআইডিএস গ্রুপের ওষুধ, মাসল্ রিলাক্সজেন ও সেডেটিভজ- জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করে থাকেন। অনেক সময় মেরুদন্ডের ভেতর স্টেরয়েড- জাতীয় ওষুধও প্রয়োগ করে থাকেন। যেহেতু ওয়ুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে সেজন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করা আবশ্যক। এই চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসক রোগীকে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন,12pt; line-height: 130%; font-family: 'Siyam Rupali'"> আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, jv¤^vi ট্রাকশন ও বিভিন্ন ব্যায়াম দিয়ে থাকেন। তা ছাড়া চিকিৎসা চলা অবস্থায় কোমরে নির্দিষ্ট অর্থোসিস বা ব্রেস প্রয়োগ করে থাকেন। তবে এই জাতীয় চিকিৎসা যেখানে সেখানে না করাই ভাল।
সার্জারি: যদি দীর্ঘদিন মেডিসিন চিকিৎসা চালানোর পরও রোগীর অবস্থার পরিবর্তন না হয় রোগীকে অবস্থা অনুযায়ী কোমর-মেরুদন্ডের অপারেশন বা সার্জারীর প্রয়োজন হয়। এ জাতীয় সার্জারী সাধারণত নিউরো বা অর্থোসার্জন করে থাকেন। সার্জারীর পরবর্তীতে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশমত নির্দিষ্ট ব্যায়াম দীর্ঘ দিন চালিয়ে যেতে হয়।
প্রতিরোধ: কোমর ব্যথা উপরে উল্লিখিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে ভালো হওয়ার পরও আবার দেখা দিতে পারে। যেহেতু কোমর ব্যথা বারবার দেখা দিতে পারে বা যারা এখনো এ জাতীয় সমস্যায় ভোগেননি, তারা নিচের পরামর্শ মেনে চলতে পারেন। তবে ব্যায়াম করার আগে আপনার জন্য কী ব্যায়াম, তার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ ভুল ব্যায়ামের কারণে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম শুরুর আগে কিছু স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
¨ পায়ের কাফ মাসল্ বা মাংসপেশির স্ট্রেচিং:
দেয়ালের কোণে গিয়ে এক পা সামনে এক পা পেছন দিয়ে দাঁড়ান। পেছনের হাঁটু সোজা রেখে সামনে ঝুঁকে দুই হাত দিয়ে সামনের দুই পাশের দেয়ালে ধাক্কা দিন। এতে পায়ের কাফ মাসল্ে টান পড়বে।
¨ কোয়াড্রিসেপস বা উরুর সামনের মাংসপেশির স্ট্রেচিং:
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যেকোনো এক হাঁটু ভাঁজ করে ওই পায়ের গোড়ালি wbZ‡¤^i সঙ্গে লাগাতে চেষ্টা করুন। এতে ঊরুর সামনের মাংসপেশিতে টান পড়বে।
¨ হ্যামস্ট্রিং বা ঊরুর পেছনের মাংসপেশি স্ট্রেচিং:
টুল বা বেঞ্চের ওপর এক পা সোজা করে রেখে পায়ের পাতা এক হাত দিয়ে নিজের দিকে টানতে হবে। এতে ঊরুর পেছনের মাংসপেশিতে টান লাগবে।
¨ নিতম্ব বা হিপের সামনের মাংসপেশির স্ট্রেচিং:
ডান হাঁটু ভাঁজ করে বসে বাম পায়ের পাতা সোজাভাবে ফ্লোরে রাখুন। এরপর সামনে ঝুঁকুন। একইভাবে অন্য পায়ের জন্য করুন। এতে wbZ‡¤^i সামনের মাংসপেশি টান হবে।
¨ ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ড স্ট্রেচিং:
এক পায়ের সামনে অন্য পা ক্রস করে চাপ দিন। এতে ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ডে টান পড়বে।
অবস্থাগত কোমর ব্যথা সায়াটিকা রোগ বা ডিস্ক প্রলেপস রোগের ব্যায়াম:
প্রথমে সতর্কতার সঙ্গে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার কনুইয়ের ওপর ভর করে বুক ও মাথা খুব ধীরে ধীরে ওপরে ওঠান। প্রতিবেলায় ছয় বার করুন।
উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এ অবস্থা থেকে দুই হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে মাথা ও বুক তুলুন, যেন তলপেট বিছানায় লাগানো থাকে। পাঁচ সেকেন্ড এভাবে থাকুন ব্যায়ামটি ১০ বার করুন।
উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটি কোমরের পেছনে রাখুন। এ অবস্থায় নিচের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে মাথা ও বুক ওপরের দিকে ওঠান। পাঁচ সেকেন্ডে রাখুন। আস্তে আস্তে নামান। দিনে দুই বেলা পাঁচ থেকে ১০ বার করুন।
উপড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। বুক ও মাথা মেঝের সঙ্গে লাগিয়ে রাখুন। এবার দুই হাত একসঙ্গে দু-তিন ইঞ্চি উঠিয়ে কয়েক সেকেন্ড রাখুন। এবার ডান হাত ও বাম পা একসঙ্গে উঠিয়ে কয়েক সেকেন্ড রাখুন, এবার নামিয়ে ফেলুন। একইভাবে বাম হাত ও ডান পা উঠিয়ে নামিয়ে ফেলুন।
স্পন্ডাইলসিস, মাংসপেশি বা লিগামেন্টজনিত সমস্যা, স্নায়বিক সমস্যাজনিত ব্যায়াম:
চিৎ হয়ে শুয়ে হাত দুটো ভাঁজ করে বুকের ওপর রাখুন, হাঁটু দুটি ভাঁজ করুন। এবার আস্তে আস্তে মাথা, কাঁধ ও পিঠ ফ্লোর বা বিছানা থেকে ওপরে তুলুন, বেশি ওপরে তুলবেন না। (যাদের ঘাড়ে ব্যাথা আছে তারা ও ব্যায়ামটি করার সময়ে মাথার পেছনে হাত রাখুন)।
চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার ডান পা ভাঁজ করে বুকের কাছে নিয়ে আসুন, পা সোজা করে আস্তে আস্তে নামিয়ে ফেলুন। একইভাবে অন্য পায়ের জন্য করুন।
তৃতীয় ব্যায়ামটি আগের ব্যায়ামের মতো একটি ব্যায়াম। সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে পেছনে ঝুঁকুন। এবার ধীরে ধীরে সোজা হন।
অ্যারোবিক ব্যায়াম:
স্ট্রেচিং ব্যায়াম ও নির্দিষ্ট ব্যায়াম ছাড়াও মেরুদন্ডের সুস্থতা ও কোমর ব্যথার জন্য প্রয়োজন অ্যারোবিক ব্যায়াম। যেমন-
সাঁতার কাটা।
নিয়মিত হাঁটা।
আস্তে আস্তে দৌড়ানো।
দৈনন্দিন কাজে সতর্কতা
নিচ থেকে কিছু তোলার সময়:
কোমর ভাঁজ করে কিংবা ঝুঁকে তুলবেন না। হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন।
কোন কিছু বহন করার সময়:
ঘাড়ের ওপর কিছু তুলবেন না।
ভারী জিনিস শরীরের কাছাকাছি রাখুন।
পিঠের ওপর ভারী কিছু বহন করার সময় সামনের দিকে ঝুঁকে বহন করুন।
দাঁড়িয়ে থাকার সময়:
১০ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
হাঁটু না-ভেঙে সামনের দিকে ঝুঁকবেন না।
দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে বা দাঁড়াতে হলে উঁচু হিল পরবেন না।
অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হলে কিছুক্ষণ পর পর শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে নিন।
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ছোট ফুট রেস্ট ব্যবহার করুন।
যানবাহনে চড়ার সময়:
গাড়ি চলানোর সময় স্টিয়ারিং হুইল থেকে দূরে সরে বসবেন না। সোজা হয়ে বসুন।
ভ্রমণে ব্যাথা সময় jv¤^vi করসেট ব্যবহার করুন।
বসে থাকার সময়:
আপনার চেয়ারটি টেবিল থেকে বেশি দূরে নেবেন না।
সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না।
কোমরের পেছনে সাপোর্ট দিন।
এমনভাবে বসুন যাতে ঊরু মাটির সমান্তরালে থাকে।
নরম গদি বা সিপ্রং যুক্ত সোফা বা চেয়ারে বসবেন না।
শোয়ার সময়:
উপুড় হয়ে শোবেন না। ভাঙা খাট, ফোম বা সিপ্রংয়ের খাটে শোবেন না।
সামন তোশক ব্যবহার করুন।
বিছানা শক্ত, চওড়া ও সমান হতে হবে। শক্ত বিছানা বলতে সমান কিছুর ওপর পাতলা তোশক বিছানোকে বোঝায়।
মেয়েরা যেসব নিয়মকানুন মেনে চলবেন:
অল্প হিলের জুতো বা স্যান্ডেল পরুন, বিভিন্ন জুতোর হিলের উচ্চতা বিভিন্ন না হওয়াই উচিত।
তরকারি কাটা, মসলা পেষা, কাপড় কাচা ও ঘর মোছার সময় মেরুদণ্ড সাধারণ অবস্থায় এবং কোমর সোজা রাখুন।
কোমর ঝুঁকে বাচ্চকে কোলে নেবেন না। ঝাড় দেওয়া, টিউবওয়েল চাপার সময় কোমর সোজা রাখবেন।
পানি ভরা কলস বা বালতি, ভারী আসবাবপত্র তুলতে প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করে বসবেন এবং কোমর সোজা রাখবেন।
মার্কেটিং বা শপিংয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট দাঁড়ানো বা হাঁটার পরে বিশ্রামের জন্য একটু বসবেন।
বিছানা গোছানোর সময় কোমর ভাঁজ না-করে বরং হাঁটু ভেঙে বসা উচিত।
কোমর ব্যথা বেশি হলে বিছানা থেকে শোয়া ও ওঠার নিয়ম:
চিৎ হয়ে শুয়ে এক হাঁটু ভাজ করুন।
এবার অন্য হাঁটুটি ভাজ করুন। হাত দুটি বিছানায় রাখুন।
এবার ধীরে ধীরে এক পাশ কাত হোন।
পা দুটি বিছানা থেকে ঝুলিয়ে দিন, এবার কাত হওয়া দিকের হাতের কনুই এবং অপর হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসুন।
দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে বসুন এবং মেঝেতে পা রাখুন।
এবার দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে সামনে ঝুঁকে দাঁড়ান।
ওজন কমান:
খাদ্যাভাস পরিবর্তন করুন:
গরু, খাসির মাংস, ডালজাতীয় খাবার, মিষ্টিজাতীয় খাবার, তৈলাক্ত খাবার খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে শাকসবজি, তরিতরকারি, ফলমূল খাদ্য তালিকায় বেশি করে রাখুন।
ফ্রোজেন শোল্ডার (Frozen shoulder)
স্কন্ধ বা শোল্ডার জয়েন্ট এ ব্যথা বয়স্ক মানুষের খুব পরিচিত একটি সমস্যা। ফ্রোজেন শোল্ডার এর কারনেও এমনটি হতে পারে। সাধারণত ৫০ উর্ধ্ব মহিলারা এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয় তবে পুরুষ রোগীর সংখাও একদম কম নয়। যাদের ডায়াবেটিস এবং থাইরয়েডের সমস্যা থাকে তাদের মাঝে এই রোগের প্রকোপ বেশী।
ফ্রোজেন শোল্ডার হলে স্কন্ধ বা শোল্ডার জয়েন্ট এ ব্যথা হওয়াটাই মুল উপসর্গ, এছাড়াও রোগীর হাত বা বাহু নড়াচড়া করতে সমস্যা হয়; বিশেষ করে শরীর থেকে বাহুকে বেশী দূরে সরানো যায়না, হাত নাড়ানোর পরিধি ছোট হয়ে আসে। এই সমস্যা গুলো হঠাৎ করেই একদিন শুরু হতে পারে আবার কাধে বা স্কন্ধে সামান্য ব্যথা পাবার পরও শুরু হতে পারে। শুরুটা যে কারনেই হোক না কেন আর সমস্যা আর যাই থাকুক রোগীকে সাধারণত তীব্র ব্যথা নিয়েই চিকিৎসকের কাছে আসতে দেখা যায়।
ফ্রোজেন শোল্ডার সমস্যাটি ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এরপর নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। তাই অনেক সময়ই এর কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না। তবে ব্যথার জন্য শক্তিশালী ব্যথা নাশক ব্যবহারের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। অনেক সময় চিকিৎসকেরা স্টেরয়েড জাতীয় অসুধ ব্যবহারেরও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ফিজিওথেরাপীও এই রোগে কিছু প্রশমন দেয়। কোনো কারনে যদি হাত একদম জমে যায় এবং বছর তিনেক পরেও সমস্যার কোনো উন্নতি না হয় তাহলে অপারশনের প্রয়োজন হতে পারে। অর্থোপেডিক সার্জন বা হাড় ও সন্ধি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ এই চিকিৎসা করে থাকেন।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস
বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিসের মধ্যে সবচেয়ে কমন হচ্ছে- অস্টিওআর্থ্রাইটিস। অন্যনাম ডিজেনারেটিভ আর্থ্রাইটিস। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে হাড়ের শেষ প্রান্তে যে কার্টিলেজ থাকে তা একটা কুশনের মতো কাজ করে। ক্রমাগত মুভমেন্টের ফলে জয়েন্টর হাড়ের মধ্যে ঘর্ষণ হয়। এই ঘর্ষণের কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে কার্টিলেজ। নানা কারণে এই ক্ষয় হতে হতে এই কার্টিলেজের টোটাল ক্ষতি হয়। এর ফলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয়, জয়েন্টে ব্যথা হয় ও মাবিলিটি কমতে থাকে। জয়েন্ট মার্জিনে নতুন হাড় তৈরী হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিস স্পাইনে হলে বলা হয় স্পন্ডাইলোসিস। যেমন: ঘাড়ে হলে সারভাইকেল স্পন্ডাইলোসিস বা কোমরে হলে লাম্বার স্পনডাইলোসিস।
শরীরের কোথায় অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয়:
হাঁটু, কোমর, হাত ও পায়ের আঙ্গুল, স্পাইন, কনুই, রিস্ট, এংকেল প্রভৃতি স্থানে সচরাচর অস্টিও আর্থ্রাটিস হয়।
কাদের এবং কোন বয়সে বেশি হয়:
* যাদের শরীর মোটা এবং ভারি।
* ৪০ বছর বয়সের পর।
* বংশগতভাবে অর্থাৎ কারও পরিবারে এই রোগ থাকলে তাদের হবার সম্ভাবনা বেশি।
* পুরুষের তুলনায় মহিলাদের বেশী হয়।
* যাদের পেশা জীবনে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তাদের বেশী হয়।
* কিছু ক্ষেত্রে বংশগত কারণে হয়ে থাকে।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস হওয়ার কারণ:
ক) বয়সের কারণে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্রমাগত ব্যবহারে কার্টিলেজের ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে এবং এই প্রটেক্টিভ কভার হারিয়ে যাবার কারণে জয়েন্টের দু’দিকে হাড়ের ঘর্ষণে ব্যথা হয়।
খ) স্থুলতার কারণে
স্থুলতার ফলে শরীরের ওয়েট বিয়ারিং জয়েন্ট অর্থাৎ যে জয়েন্টে শরীরের ভার বহন করে- সেগুলোর উপর চাপ বাড়তে থাকে। বেশি শরীরিক ওজনের কারণে হাঁটুতে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
গ) অন্যান্য কারণ
উল্লেখিত দু’টি কারণের পাশাপাশি আরো কিছু কারণে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হতে পারে। যেমন:
বারবার জয়েন্টে আঘাত লাগা বা অপারেশন করা।
জয়েন্টে বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি।
জয়েন্টে ইনফেকশন হওয়া।
ডায়াবেটিস থাকা।
অতিরিক্ত ইউরিক এসিড ও বাত থাকা।
রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ:
বিশ্রামের সময় অথবা হাঁটাচলা বা কাজ কর্ম করার সময় ব্যথা।
হাঁটু, হাত ও পায়ের আঙ্গলের জয়েন্ট ফুলে যাওয়া, কোমর ব্যথা, গাঢ় ব্যথা বা শিরদ্বারা ব্যথা।
ডিফরমিটি বা বিকৃতি (যেমন: হাঁটু বাইরের দিকে বেঁকে যাওয়া)।
খুড়িয়ে চলা।
মুভমেন্টের সময় শব্দ হওয়া।
মুভমেন্ট কমে যাওয়া।
ব্যথা নির্দিষ্ট জোড়ার হতে পারে,অনেক সময় শিন শিন জাতীয় ব্যথা হাতে বা পায়ে উঠানা নামে করতে পারে, এটা মেরুদন্ডে হয়ে থাকে।
রোগ নির্ণয়:
জয়েন্টের এক্স-রে- জয়েন্টের মাঝের স্পেস কমে যায়, জয়েন্টের মার্জিনে নতুন হাঁড় পাওয়া যায়। অনেক সময় জয়েন্ট থেকে স্পাইনাল নিডলের সাহায্যে ফ্লুয়িড বের করে এনালাইসিস করা হয়, এতে বাত বা ইনফেকশনের কারণে ব্যথা হচ্ছে কি না- তা বুঝা যায়।
অন্যান্য রক্তের পরীক্ষা।
এম আর আই বা সিটি স্কেন।
তাছাড়া চিকিৎসক নির্দিষ্ট কিছু ফিজিকেল পরীক্ষা করে থাকেন।
চিকিৎসা:
ফার্মাকোথেরাপি- এনএসএআইডিএস, কর্টিলেজ প্রটেকটিংড্রাগ ইত্যাদি।
ফিজিওথেরাপি- ব্যায়াম, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, হাইড্রোথেরাপি ইত্যাদি।
উপদেশ:
* খুব বেশি ব্যথা হলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম।
* শারীরিকভাবে স্থুল রোগীর ক্ষেত্রে ওজন কমানো।
* বিপরীত হাতে লাঠিতে ভর করে হাঁটা ।
* হাঁটু মুড়ে উবু হয়ে বসা যাবেনা, উঁচু স্থানে বসতে হবে।
* হাই কমোড ব্যবহার করতে হবে।
* ডাক্তারের পরামর্শে সঠিক নিয়মে ব্যথার ওষুধ খেতে হবে।
সার্জারি:
আর্থেস্কোপি করে জয়েন্ট স্মুথ করা হয়।
এছাড়াও গুরুতর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের জন্য টোটাল হিপ বা টোটাল নি রিপ্লেসমেন্ট করা যায়,
তবে সার্জারির আগে ও পরে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।
ফিজিওথেরাপি : কী কেন এবং কীভাবে
ফিজিওথেরাপি
ফিজিও (শারীরিক) এবং থেরাপি (চিকিত্সা) শব্দ দুটি মিলে ফিজিওথেরাপি বা শারীরিক চিকিত্সার সৃষ্টি। ফিজিওথেরাপি আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানের এক অন্যতম এবং অপরিহার্য শাখা। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিত্সক স্বাধীন এবং স্বতন্ত্রভাবে রোগীর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা (প্রধানত বাত-ব্যথা, আঘাতজনিত ব্যথা, প্যারালাইসিস ইত্যাদি) নির্ণয় সহকারে পরিপূর্ণ চিকিত্সা সেবা প্রদান করে থাকেন।
ফিজিওথেরাপির সূচনা
ফিজিওথেরাপি চিকিত্সা নতুন কোনো চিকিত্সা পদ্বতি নয়। প্রাচীন গ্রিসে হিপোক্রেটাস ম্যাসাজ ও ম্যানুয়াল থেরাপি দ্বারা ফিজিওথেরাপি চিকিত্সার সূচনা করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০ সালে হেক্টর ফিজিওথেরাপি চিকিত্সার একটি শাখা ব্যবহার করতেন যাকে বর্তমানে হাইড্রোথেরাপি বলা হয়। তথ্য-উপাত্ত অনুসারে ১৮৯৪ সালে ফিজিওথেরাপি চিকিত্সার বর্তমান ধারা অর্থাত্ ম্যানুয়াল থেরাপি, ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি, এক্সারসাইজ থেরাপি, হাইড্রোথেরাপি, ইলেকট্রোথেরাপি ইত্যাদি প্রবর্তন করা হয়। নিউজিল্যান্ডে ১৯১৩ এবং আমেরিকাতে ১৯১৪ সালে ফিজিওথেরাপি চিকিত্সা শুরু হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিত্সার সূচনা হয়।
কেন এই ফিজিওথেরাপি?
আমরা যদি শরীরের বিভিন্ন রোগের কথা চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাব, শুধু ওষুধ সব রোগের পূর্ণ সুস্থতা দিতে পারে না। বিশেষ করে যেসব রোগের উত্স বিভিন্ন মেকানিক্যাল সমস্যা, সেসব ক্ষেত্রে ওষুধের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কম। যেমন : বাত, কোমর ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, আঘাতজনিত ব্যথা, হাড় ক্ষয়জনিত রোগ, জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, মুখ বেঁকে যাওয়া, সেরিব্রাল পালসি, স্পোর্টস ইনজুুরি ইত্যাদি। তাহলে এসব রোগ থেকে পরিপুর্ণ সুস্থতা লাভের উপায় কী?
মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম
বর্তমানে উন্নত বিশ্বে সব ধরনের শারীরিক সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে চিকিত্সা বিজ্ঞানে এক নতুন ধারার প্রবর্তন হয়েছে। যাকে বলা হয় মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম। এই টিমে থাকেন সার্জন, মেডিসিন স্পেশালিস্ট, জেনারেল ফিজিশিয়ান, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, নার্স, কাউন্সেলর এবং সোশ্যাল ওয়ার্কার। রোগীর শারীরিক সমস্যা দূর করে কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিস্টের ভূমিকা অপরিসীম।
যেসব ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি দরকার
— বাত-ব্যথা, কোমর ব্যথা, ঘাড় ব্যথা অথবা হাত ব্যথা, হাঁটু অথবা গোড়ালির ব্যথা।
— স্পোর্টস ইনজুুরি, আঘাতজনিত ব্যথা।
— হাড় ক্ষয়জনিত রোগ, জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া।
— স্ট্রোক অথবা প্যারালাইসিস জনিত সমস্যায়।
— মুখ বেঁকে যাওয়া বা ফেসিয়াল পালসি।
— হৃদরোগ অথবা ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যায়।
— বিভিন্ন ধরনের অপারেশন পরবর্তী সমস্যায়।
— আইসিইউ-তে অবস্থানকারী রোগীর জন্য।
— পা বাঁকা (ক্লাব ফিট)।
— সেরিব্রাল পালসি (প্রতিবন্ধী শিশু)
— বার্ধক্যজনিত সমস্যা ইত্যাদি চিকিত্সার ক্ষেত্রে ও পুনর্বাসন সেবায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অপরিসীম।
ফিজিওথেরাপি চিকিত্সা পদ্ধতি
একজন ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর রোগ বর্ণনা, ফিজিক্যাল টেস্ট, ফিজিওথেরাপিউটিক স্পেশাল টেস্ট, প্রয়োজন সাপেক্ষে বিভিন্ন রেডিওলজিক্যাল এবং প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিস করে থাকেন। এরপর রোগীর সমস্যানুযায়ী চিকিত্সার পরিকল্পনা করেন এবং সেই অনুযায়ী নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে ফিজিওথেরাপি সেবা প্রদান করে থাকেন। ফিজিওথরাপির বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে— ম্যানুয়াল থেরাপি, ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি, মোবিলাইজেশন, মুভমেন্ট উইথ মোবিলাইজেশন, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, ইনফিলট্রেশন বা জয়েন্ট ইনজেকশন, পশ্চারাল এডুকেশন, আরগোনমিক্যাল কনসালটেন্সি, ইলেকট্রোথেরাপি বা অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে চিকিত্সা, হাইড্রোথেরাপি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ড্রাগ্স বা ওষুধ প্রভৃতি অন্যতম।
ফিজিওথেরাপি যেখানে দেয়া হয়
বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ ফিজিওথেরাপি চিকিত্সার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এর মধ্যে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিত্সা পায় না এবং অপচিকিত্সার শিকার হন। (সূত্র : বিপিএ-২০০৯)।
— সিআরপি’র শাখাগুলো : ঢাকার সাভার, মিরপুর-১৪, নবাবগঞ্জ, সিলেটের মৌলভীবাজার, চট্টগ্রামের কালুরঘাট।
— এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিক এবং চেম্বারে ফিজিওথেরাপি চিকিত্সা সেবা পাওয়া যায়। তবে মানসম্পন্ন ফিজিওথেরাপি চিকিত্সা ও পুনর্বাসন সেবার জন্য সিআরপি অন্যতম হিসেবে পরিচিত।
ফিজিওথেরাপি চিকিত্সা একটি বিজ্ঞানসম্মত ও সুপ্রতিষ্ঠিত চিকিত্সা পদ্ধতি হলেও কোয়ালিফাইড ফিজিওথেরাপিস্ট ছাড়া এ সংক্রান্ত পরামর্শ দেয়ার কারণে সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিত্সা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
ফ্রোজেন শোল্ডার এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
ঘটনা ১: সালাম সাহেব রিক্সা থেকে পরে গিয়ে বাম ঘাড়ে ব্যথা পেয়েছিলেন। অতঃপর ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খাওয়া শুরম্ন করলেন এবং ব্যথার কারনে হাত নাড়ানো বন্ধ রাখলেন। ৩ সপ্তাহ পর যখন তিনি হাত নাড়ানোর চেষ্টা করলেন, দেখলেন বাম হাতের নাড়ানোর ক্ষমতা ডান হাতের তুলনায় অনেক কমে গেছে।
ঘটনা ২: সামিরা বেগম ইদানিং খেয়াল করেছেন, ডান হাত দিয়ে চুল আচড়ানোর সময় হাতের সাথের ঘাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হচ্ছে। অথচ তিনি কোন আঘাত পাননি। তাই ভেবেছিলেন ব্যথাটা হয়তো এমনিতেই চলে যাবে। কিন্তু দিন দিন ব্যথাটা বেড়েই যাচ্ছিল। ব্যথার ঔষধ খাওয়া শুরম্ন করলেন তিনি। কিছুদিন পর দেখলেন, এখন আর তিনি ডান হাত দিয়ে চুল আচড়ানো বা পিঠ মুছতে পারছেন না।
উপরের আলোচিত দুই ব্যাক্তির সমস্যার সূচনা ভিন্ন হলেও, দুই জনই ফ্রোজেন শোল্ডার নামক সমস্যায় ভুগছেন। আসুন তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক ফ্রোজেন শোল্ডার কি এবং এই রোগের কি ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন।
ফ্রোজেন শোল্ডার: ফ্রোজেন শোল্ডারকে বাংলায় বলতে পারি, হাতের সাথের ঘাড়ের জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া। এটি ঘাড়ের জয়েন্টের প্রদাহজনিত রোগ। এ ক্ষেত্রে জয়েন্টের মধ্যকার সাইনোভিয়াল ফ্লুইড নামক এক ধরনের তরল পদার্থ কমে যেতে থাকে। ফলে শোল্ডার জয়েন্ট ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যেতে থাকে। ফ্রোজেন শোল্ডারকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় শোল্ডার অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিস বলা হয়। এই রোগ ৪০-৬০ বছর বয়স এবং মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে।
উপসর্গ সূমহ:
হাতের সাথের ঘাড়ের জয়েন্টে ব্যথা
জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া
জয়েন্টের নাড়ানোর ÿমতা কমে যাওয়া
আক্রান্ত্ম পাশে শুতে না পারা
হাতে দূর্বলতা চলে আসা ইত্যাদি
ফ্রোজেন শোল্ডার কেন হয়: এই রোগের প্রধান কারন এখন পর্যন্ত্ম জানা যায়নি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন-
ডায়াবেটিস মেলাইটাস
ঘাড়ের জয়েন্টে আঘাত পেলে
কোন কারনে জয়েন্ট অনেকদিন নাড়ানো না হলে
ফুসফুস, হূদপিন্ডের বা হাতের অপারেশন পরবর্তিতে
থাইরয়েডের রোগ থাকলে
চিকিৎসা পদ্ধতি: ফ্রোজেন শোল্ডার রোগীর কাছে ব্যথা প্রধান সমস্যা মনে হলেও, তার আসল সমস্যা হলো জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া। রোগী যত ব্যথার ভয় করে হাত নাড়ানো বন্ধ রাখবে, তার জয়েন্ট তত বেশি শক্ত হয়ে যাবে। তাই রোগীকে বুঝাতে হবে, ব্যথার ঔষধের চেয়ে হাত নাড়ানোর চিকিৎসা করা বেশি জরম্নরি। এ ক্ষেত্রে রোগীর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রেখে হাত নাড়ানোর ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি হলো সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা।
ফ্রোজেন শোল্ডারের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা:
একজন ফিজিওথেরাপিষ্ট রোগীর রোগ বর্ণনা, ফিজিক্যাল টেষ্ট, ফিজিওথেরাপিউটিক স্পেশাল টেষ্ট এবং রেডিওলজিক্যাল টেষ্ট এর মাধ্যমে রোগীর জয়েন্টের সমস্যা সূমহ নির্ণয় করে থাকেন। অত:পর রোগীর সমস্যানুযায়ী চিকিৎসার পরিকল্পনা বা ট্রিটমেন্ট প্লান করেন এবং সেই প্লান অনুযায়ী নিন্মোক্ত পদ্ধতিতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন।
ম্যানুয়াল থেরাপি
মোবিলাইজেশন
মুভমেন্ট উইথ মোবিলাইজেশন
থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ যেমন: স্পাইডার এক্সারসাইজ, পুলি এক্সারসাইজ, পেন্ডুলার এক্সারসাইজ ইত্যাদি।
ইনফিলট্রেশন বা জয়েণ্ট ইনজেকশন
ইলেকট্রোথেরাপি বা অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে চিকিৎসা (যেমন: IRR, UST) ইত্যাদি।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ড্রাগ্স বা ঔষধ
রোগীর জয়েন্টের সমস্যা দুর করে হাত নাড়ানোর ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকা অপরিসীম। তবে ফিজিওথেরাপি'র নামে শুধূমাত্র মেশিন যেমন: হিট, ভাইব্রেশন, ইলেকট্রিক্যাল ষ্টিমুলেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে যে চিকিৎসা দেয়া হয় তা অপচিকিৎসার সামিল। সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন, ব্যাথামুক্ত জীবন যাপন করম্নন।
কোমর ব্যাথা ও সেক্স এর ওপর এর প্রভাব
আমরা আজকে 'কোমর ব্যাথা ও সেক্স এর ওপর এর প্রভাব' এই বিষয় টি নিয়ে আলোচনা করব। এক জীবনে কোমর ব্যাথায় আক্রান্ত হন না এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর, তা যত কম'ই হোক, অথবা বেশি। কোমর ব্যাথা যে কারনেই হোক না কেন, নারী ও পুরুষের যৌন জীবন কোমর ব্যাথার জন্য মারাত্তক ভাবে ব্যাহত হতে পারে। কিন্তু এটা এমন একটা বিষয় যা নিয়ে রোগীরা চরম অসস্থিতে ভুগে এমনকি এই বিষয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতেও অনেকেই লজ্জা বোধ করে।
অনেকে এমনকি তার সঙ্গি অথবা সঙ্গিনির সাথেও তাদের এই সমস্যার কথা টা নিয়ে আলোচনা করেন না। যার কারনে ব্যাথায় ভুগে অনেকের যখন সেক্স এর প্রতি একটি ভিতি জন্মে যায়, তখন দেখা দেয় বিভিন্ন প্রকার দাম্পত্ত কলহ। অনেকেই মনে করেন, আমার প্রতি তার মনোযোগ কমে গ্যাছে অথবা আমার সঙ্গি বা সঙ্গিনি অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে।
কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে, ও কিছু পজিসন পরিবর্তন করে সহজেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়। এর জন্য আপনাকে আপনার ফিজিওথেরাপিস্ট এর সাথে খোলামেলা ভাবে আলোচনা করতে হবে। তিনি আপনার কোমর ব্যাথার ধরন এর ওপর ভিত্তি করে আপনাকে বিশেষ কিছু থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ও আপনার জন্য উপযোগী পজিসন প্রেস্ক্রাইব করে দেবেন।
তবে আমি আপনাদের সুবিধার জন্য কিছু পজিসন নিয়ে আলোচনা করবঃ
কোমর ব্যাথার ধরনঃ
খুবি কমন ২ টি কোমর ব্যাথার ধরন নিয়ে আলোচনা করব প্রথমে, কারন আপনার পজিসন গুল এই কোমর ব্যাথার ধরনের ওপর নির্ভর করবে। প্রথম ধরন টি হল, কোমরের ডিস্ক এর সমস্যার জন্য সৃষ্ট কোমর ব্যাথা। এই ধরনের কোমর ব্যাথায় সাধারনত দাড়িয়ে পেছন দিকে কোমর বাঁকা করলে ব্যাথা উপশম হয়।
আর অন্য আরেক ধরনের কোমর ব্যাথার কারন হল স্পাইনাল স্টেনসিস বা মেরুরজ্জু বা নার্ভ যাবার রাস্তা সরু হয়ে যাওয়া। এই ধরনের কোমর ব্যাথার জন্য দাড়িয়ে সামনের দিকে কোমর বাঁকা করলে বা ঝুঁকলে ব্যাথা উপশম হয়।
তবে মনে রাখবেন, এটা বের করতে গিয়ে যদি কোন ভাবে আপনার ব্যাথা বেড়ে যায়, সাথে সাথে তা বন্ধ করে আপনার ফিজিওথেরাপিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করবেন।
যাদের সোজা হয়ে দাঁড়ালে বা পেছন দিকে কোমর বাঁকা করলে ব্যাথা কমেঃ
পুরুষঃ আপনার জন্য ভাল পজিসন হচ্ছে মিসনারি পজিসন অর্থাৎ, আপনার সঙ্গিনি নিচে এবং আপনি উপরে দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে। খেয়াল রাখবেন আপনার কোমর যেন পেছন দিকে বেশি বেকে থাকে। এ ছাড়া ও আপনি চিত হয়ে শুয়েন কোমরের নিচের দিকে একটা বালিশ দিয়ে শুবেন। আপনার সঙ্গিনি থাকবে আপনার উপরে। অথবা আপনি একটি মজবুত হাতল বিহিন চেয়ারে বসেও সেক্স করতে পারেন।
মহিলাঃ আপনার যদি এই ধরনের কোমর ব্যাথা থাকে, তাহলে আপনি বুকের নিচে ১ টা বালিশ দিয়ে উপুর হয়ে শোবেন। আপনার সঙ্গি পেছন থেকে প্রবেশ করবে। অথবা আপনি উপরে থেকে চেয়ারে বসার মত করে বসে সেক্স এ অংশ নিতে পারেন। তবে আপনি ও মিশনারি বা প্রথাগত পজিসন এ নিচে চিত হয়ে শুয়ে সেক্স করতে পারেন, তবে কোমরের নিচের দিকে একটি তয়ালে বা পাতলা বালিশ দিয়ে নেবেন। তবে মনে রাখবেন, হাঁটু যাতে ভাজ করে বেশি বুকের দিকে না চলে আসে।
যাদের সামনের দিকে ঝুঁকলে ব্যাথা কম মনে হয়ঃ
পুরুষঃ এ ক্ষেত্রে আপনার সঙ্গিনি কে হামাগুরি দিতে বলবেন, আর আপনি সামনের দিকে ঝুঁকে পেছন থেকে প্রবেশ করবেন। অথবা সঙ্গিনি কে হামাগুরি দিতে বলবেন বিছনার কোণায়, আর আপনি বিছনার বাইয়ে থেকে দাড়িয়ে সামনে ঝুঁকে প্রবেশ করবেন। এছাড়া পাশা পাশি শুয়ে, পেছন থেকে আপনার সঙ্গিনি এর সাথে সেক্স করতে পারেন।
মহিলাঃ যে সব মহিলারা এ ধরনের কোমর ব্যাথাই ভুগেন, তাদের জন্য মিশনারি বা প্রথাগত পজিসন'ই ভাল, তবে চেষ্টা করবেন হাঁটু ভাজ করে যতোটা সম্ভব হাত দিয়ে তা বুকের কাছে টেনে ধরতে। তাহলে ব্যাথা হবার সম্ভাবনা কম।
পরিশেষে বলা যায়, সেক্স হল একটি পারস্পরিক বঝাপরার ব্যাপার। আপনার সমস্যার কথা লজ্জা না পেয়ে আপনার সঙ্গি অথবা সঙ্গিনি কে বলুন। প্রয়োজন হলে আপনার ফিজিওথেরাপিস্ট এর সাথে কথা বলুন। আশা করি ভাল থাকবেন।
স্লিপ ওয়াকিং বা ঘুমিয়ে হাঁটা।।
ম্যাস হিস্টিরিয়া বা গণমনস্তাত্বিক অসুস্থতা
শবনমকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তার রুমমেটরা। ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে এখনো ঘুমের ঘোরে রুমের বাইরে চলে যায়, নিজের মনে কথা বলে, কাঁদে, আবার ঘুমিয়ে পড়ে আপনাতেই।
এইদিকে ছোট্ট মেয়ে হৃদির বাবা মায়েরও হয়েছে এমন দুশ্চিন্তা, সে ঘুমের মাঝে হেটে বাড়ির বাইরে চলে যায়, ঘুমিয়ে পড়ে যেখানে সেখানে। আবার ঘুম থেকে উঠে তার কিছুই মনে থাকে না, কি করেছে, কোথায় গিয়েছে কিছুই সে মনে করতে পারে না। কি বিপদ এখন বাড়ির সবার!
শবনম বা হৃদির যে সমস্যার জন্য তাদের বাবা-মা উদ্বিগ্ন তার একটি সুন্দর নাম দিয়েছেন মনোবিদেরাঃ সমনাবুলিজম(Somnambulism) বা ঘুমিয়ে হাঁটা, ইংলিশে স্লিপ ওয়াকিং। আমরা অনেকেই এই শব্দটির সাথে পরিচিত, হয়তো হরহামেশাই ব্যবহার করে ফেলছি শব্দটি কিন্তু জানা হচ্ছে না স্লিপ ওয়াকিং এর মূল বিষয় সম্পর্কে।
যদিও মনোবিদ্যায় স্লিপ ওয়াকিং এর একটি গাল ভরা নাম সমনাবুলিজম(Somnambulism) দেয়া হয়েছে, তবে আমরা একে স্লিপ ওয়াকিং বলেই আলোচনা করবো আজ। সাধারনত ছোটদের মাঝে দেখা গেলেও বড়রাও আক্রান্ত হয় এটা দ্বারা।
ঘুমের মাঝে হাঁটা যেহেতু তাই আগে ঘুম নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। আমাদের ঘুমের প্রধান দুটি ধাপ রয়েছে। র্যাপিড আই মুভমেন্ট(REM) এবং নন র্যাপিড আই মুভমেন্ট(Non REM)
ঘুমের প্রথমে আসে নন রেম ঘুম। এটা ৪টি পর্যায়ে বিভক্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে আসে রেম ঘুম যার দুটি উপ-পর্যায় রয়েছে।
রেম ঘুমে চোখের পেশীর সংকোচন বাড়ে, চোখ নাড়াচাড়া করতে থাকে এসময়, নন রেম ঘুমে চোখের পেশীর নাড়াচাড়া কমে আসে। মানুষ স্বপ্ন দেখে রেম ঘুমের সময়, যখন দেখবেন কারো ঘুমের মাঝে তার চোখ নড়ছে, চোখের পাতা কাঁপছে বুঝে নেবেন সে স্বপ্ন দেখছে ওই সময়ে।
আমাদের আলোচ্য স্লিপ ওয়াকিং ঘটে ঘুমের নন রেম পর্যায়ের ৩য় ও ৪র্থ ধাপে।
যারা স্লিপ ওয়াকিং করে থাকেন তারা আর সকলের মতোই ঘুমোতে যান বিছানায়, ঘুমিয়ে পড়েন ঠিক মতোই। কয়েক ঘন্টার মাঝেই শুরু হয় আসল খেলা!! তারা কথা বলা শুরু করেন আপন মনে, হয়তো কাঁদেন বা চিৎকার করেন, উঠে পড়েন ঘুম থেকে। চোখ খুলে তাকান, কিন্তু চেহারা থাকে ভাবলেশহীন, অভিব্যক্তিহীন। কারণ তারা তো আসলে জেগে নেই, চোখ খুলেছেন ঠিকই কিন্তু তার মস্তিস্ক রয়ে গেছে ঘুমের রাজ্যে। তিনি কি করছে, কি বলছেন, কোথায় যাচ্ছেন সব করছেন নিজের অজান্তে।
হয়তো ঘরের মাঝে হাঁটছে সে, দরজা খুলে যাইরে চলে যাচ্ছে, যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ছে নিজের অগোচরে, কাপড় পরছে বা খুলছে, প্রাত্যহিক অন্যান্য কাজ ও করছে; সবই সেই নন রেম ঘুমের মাঝেই।
এমন সময় তাদেরকে সজাগ করতে গেলে হয়তো অনেকে প্রচণ্ড বিক্ষিপ্ত আচরন করেন, চিৎকার করেন, ধাতস্থ হতে সময় লাগে তাদের।
সকলের মাঝে একটা বিষয়ে মিল থাকে যে তারা ঘুম ভেঙ্গে আর মনে করতে পারেন না ঘুমের মাঝে কি কি করেছেন বা বলেছেন।
কেন হয় এমন আজব ব্যাপার? ঘুমের মাঝে হাটা? আমাদের তো হচ্ছে না, তবে কিছু মানুষের কেন হবে?
এ ব্যাপারে কিছু কারণের কথা বলা হয়েছেঃ
খুব ক্লান্ত দেহে বিছানায় গেলে, সারাদিন অধিক খাটখাটুনি হলে,
উত্তেজনা, ভয়, মানসিক অস্থিরতা থাকলে,
প্রতিদিনের ঘুম যদি হয় অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত,
স্লিপ এপনিয়া বা ঘুমের মাঝে বিশেষ ধরনের শ্বাস বদ্ধতা থাকলে,
কিছু ঔষধের কারণেও ঘটতে পারে এমন ব্যাপার।
আবার পরিবারে কারো থেকে থাকলে অর্থাৎ বাবা বা মার থেকে থাকলে সন্তানদেরও স্লিপ ওয়াকিং করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
চোখের সামনে কাউকে স্লিপ ওয়াকিং করতে দেখলে অথবা পরিচিত কারো এমন সমস্যা হলে তার থেকে নিষ্ক্রান্ত হওয়ার উপায় জানতে চায় না মন? ধরুন বাড়িতেই কারো ধরা পড়লো এমন ব্যাপার, তাহলে? জেনে রাখা ভালোঃ
প্রথমেই হতে হবে সতর্ক, একা থাকতে দেয়া ঠিক হবে না এদেরকে। অনেকে দরজা খুলে বাইরে চলে যায়, রেলিং টপকে পরে যায় নীচে অথবা রাস্তায় নেমে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এদের জন্য ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করার সাথে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন যেন বাইরে যেতে না পারে।
হাঁটতে দেখলে তাদেরকে বিছানায় নিয়ে যান, আবার শুইয়ে দিন মমতা মিশিয়ে। প্রয়োজনে ডেকে দিতে পারেন, ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিতে পারেন, এতে বারণ নেই ডাক্তারের।
অনেকের প্রয়োজন হতে পারে কিছু ওষুধের তার ঘুমকে নিয়ন্ত্রনের জন্য, কিছু ওষুধ খেলে স্লিপ ওয়াকিং হতে পারে, এসব ড্রাগ ব্যবহার বন্ধ করে দেখা যায়।
স্লিপ এপনিয়া একটা শ্বাসবদ্ধতার সমস্যা যা ঘুমের মাঝে হয়। স্লিপ এপনিয়ার চিকিৎসা করলে অনেকের স্লিপ ওয়াকিং সমস্যার সমাধান হয় বলে গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে।
জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তন এ ব্যাপারে কাজে আসতে পারে বলে জানা যায়।
ঘরে রাখা যাবে না কোন ধরনের ধারালো বস্তু, ছুরি, কাঁচি ইত্যাদি। অনেক বাসায় বাচ্চারা বাঙ্ক বিছানায় ঘুমায়, এসব ক্ষেত্রে বাঙ্কে দেয়া যাবে না, শুতে হবে সাধারণ খাটে। বাঙ্কে দিলে উপরে থেকে পড়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
বিছানায় যেতে হবে বেশ আগেই। ঘুম কম হলে অনেকের এমন সমস্যা হতে পারে, তাই শান্তির ঘুমের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঘুমের জন্য রাখতে হবে পর্যাপ্ত সময়। প্রতিদিন একই সময়ে বিছানায় যাবার অভ্যাস করতে হবে।
বাচ্চাদের বাবা মায়েরা একটা ডাইরি করতে পারেন, প্রতিদিন বাচ্চা কখন ঘুমোতে যাচ্ছে এবং কখন তার সমস্যার শুরু হচ্ছে সেটা লিপিবদ্ধ শুরু করুন। কিছু দিন গেলে দেখা যাবে একটা প্যাটার্ন মানছে আপনার বাচ্চা। সেই প্যাটার্ন অনুযায়ী স্লিপ ওয়াকিং শুরু হওয়ার ১০-১৫ আগে তাকে উঠিয়ে দিন, ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিন। ৫ মিনিট জাগিয়ে রেখে আবার ঘুম পড়িয়ে দিন। এভাবে অভ্যাস পরিবর্তনের ফলে কাজ হতে পারে।
এত কিছু লেখা দেখে মোটেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। স্লিপ ওয়াকিং খুব কম মানুষেরই হয় এবং এটা মোটেও মারাত্নক কিছু নয়। শুধুমাত্র সচেতনতা এবং যত্নবান হলেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। একসময় নিজে থেকেই ভালো হয়ে যাবে আমাদের শবনম, হৃদির মতো আরো অনেক স্লিপ ওয়াকার। তারাও উপভোগ করবে শান্তির ঘুম, মধুর ঘুম। নিদ্রাদেবীর আশীর্বাদে তাদের কপালেও চাঁদ মামা দিয়ে যাবে টিপ।
ম্যাস হিস্টিরিয়া বা গণমনস্তাত্বিক অসুস্থতা
ম্যাস হিস্টিরিয়া নামটি সংবাদপত্রের কল্যাণে এখন আমাদের অনেক পরিচিত একটি নাম। প্রায়শই আমরা বিভিন্ন খবরের কাগজে দেখতে পাই দেশের বিভিন্ন স্কুলের একদল ছেলেমেয়ে বিশেষ করে মেয়েরা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যায় ক্লাসে বা মাঠে। শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘুরানো,অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে হসপিটালে নেবার পরে এরা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠে বাড়ি ফিরে যায়। আপাতদৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর মনে হওয়া এটা প্রকৃত পক্ষে একধরনের মানসিক রোগ যার থেকে মুক্তি আছে আমাদেরই হাতের মুঠোয়।
ম্যাস হিস্টিরিয়া কি জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে হিস্টিরিয়া কি।
তবে চলুন জেনে নেই হিস্টিরিয়া কাকে বলেঃ
গ্রিক শব্দ ‘হিস্টেরা’ বা জরায়ু থেকে উৎপত্তি হয়েছে ‘হিস্টিরিয়া’ শব্দের। একসময় মনে করা হতো নারীর জরায়ুর কোন অস্বাভাবিক অবস্থার কারনেই হিসটিরিয়ার সৃষ্টি। পরবর্তীতে একে মানব মনের একধরণের সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে একে কনভার্সন ডিসঅর্ডার বলা হয়। মানুষের মনের অবদমিত দ্বন্দ্ব থেকেই হিস্টিরিয়ার জন্ম। আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের মানসিক ঝক্কি ঝামেলা, সামাজিক ধকলের মাঝ দিয়ে যাই। এসবের সাথে মানিয়ে নিয়ে, নিজেদের দুঃখ কষ্টের সাথে লড়াই করেই আমরা সমাজে বাস করি। অনেকে এসব দ্বন্দ্ব সংঘাতের সাথে যুদ্ধে পেরে ওঠেন না, প্রতিদিনের ঝামেলা মোকাবেলা করতে করতে ভেঙ্গে পড়েন। একসময় সকল কষ্ট, বেদনা সহ্য করতে না পেরে মন বিদ্রোহ করে বসে, অবদমিত ব্যথা প্রকাশিত হয় শারীরিক লক্ষণের মাধ্যমে।
এদেশে নারীরা এমনিতেই সামাজিক ভাবে নানা সময় লাঞ্ছনা, অবহেলা বা শারীরিক অত্যাচারের স্বীকার হন যার ফলে প্রধানত মহিলাদেরকেই এতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
এখন দেখা যাক ম্যাস হিস্টিরিয়া কি জিনিস:
যখন একদল মানুষ একে অপরের দেখাদেখি হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হয় তখন তাকে ম্যাস হিস্টিরিয়া বলা হয়। আমাদের দেশের স্কুল গুলোতে কেউ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেলে ক্লাসের বা সমগ্র স্কুলেই এই ধরনের সমস্যা ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্তদের মাঝে যার হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হবার ইতিহাস আছে বা সম্ভাবনা আছে সেই সবার আগে আক্রান্ত হয় এবং তাকে দেখা দেখি বাকি সকলেও আক্রান্ত হতে শুরু করে।
এ সমস্যার লক্ষণগুলোর মাঝে আছে:
মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব বা বমি করার চেস্টা করা
বুকে ব্যাথা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসা বা শক্ত হয়ে যাওয়া বা ঝিম ঝিম করা
খিঁচুনি দেয়া হঠাৎ করে কানে না শোনা বা দেখতে না পারা অথবা কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া
ঢোক গিলে না পারা
প্রস্রাব করতে না পারা
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি
খেয়াল করলে দেখা যাবে হিস্টিরিয়ায় আক্রান্তদের কারো প্রকৃত খিঁচুনি রোগীদের মতো কাপড়ে প্রস্রাব হয়ে যায় না, ঠোঁট বা জিহ্বা কেটে যায় না। এটা সাধারণত সকলের সামনে শুরু হয়, কেউ একাকী থাকাকালীন বা ঘুমানোর সময়ে হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হয় না।
জেনে নেই ম্যাস হিস্টিরিয়াতে কি চিকিৎসা দিতে হবে:
আক্রান্তদেরকে আশ্বাস দেয়া তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা যে তারা কোন খারাপ রোগে আক্রান্ত হয় নি
আক্রান্তদেরকে কথা বলতে দেয়া, তাদের সমস্যাগুলো মন দিয়ে শোনা
রোগীকে হাটা চলা করতে দেয়া বা হাঁটানোর ব্যবস্থা করা
অসুস্থদেরকে দ্রুত আলাদা করে ফেলা যেন বাকিরা তাদেরকে দেখে আক্রান্ত হতে না পারে
তাদের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করা
আক্রান্তদের সামনে আতংকিত না হওয়া, এমন কিছু না করা যা তাদেরকে অ্যারও অসুস্থ করে তুলবে
পর্যাপ্ত আলোবাতাসের ব্যবস্থা করা
এই রোগে ওষুধের ভুমিকা খুবই সীমিত। প্রয়োজনবোধে বিষণ্ণতা বা আতংক কমানর ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে গ্রুপ ডিসকাশন বা কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা; সর্বোপরি পারিবারিক কাউসেলিংয়ের মাধ্যমে রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়া আনা।
ম্যাস হিস্টিরিয়া প্রতিরোধে আমাদের কি করণীয়:
স্কুল কলেজ গুলোতে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা
সংবাদপত্র, টেলিভিশন ইত্যাদি মিডিয়ার মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়া
অভিভাবক, শিক্ষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা
আক্রান্ত স্থানে দ্রুত মেডিকেল টীম পাঠিয়ে ঘটনার সত্য তুলে ধরা ও
আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা পাঠ্যবইয়ে এ সংক্রান্ত শিক্ষামূলক লেখা অন্তর্ভুক্ত করা
অতিরঞ্জিত করে এসব খবর প্রকাশ না করে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরা
পরিশেষে এটা মনে রাখতে হবে হিস্টিরিয়া তথা ম্যাস হিস্টিরিয়া কিন্তু কোন অভিনয় বা ভান নয়। এটা একধরনের মানসিক রোগ যার সমাধান আছে। সচেতনতা ও সমাজের সকলের অংশগ্রহণই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে।
পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যাঃ দৈত্যাকার ও দানবাকার মানব
পরিমল বর্মণের কথা মনে আছে? ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার বাংলাদেশী তরুন যে তৎকালীন সময়ে বিশ্বের উচ্চতম ব্যক্তি ছিলেন যার উচ্চতাই হয়েছিলো তার মরণের কারণ। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। অত্যধিক লম্বা হওয়া অথবা দানবাকৃতির হওয়াও যে একটি শারীরিক সমস্যা তা বোধকরি আমরা অনেকেই জানি না। যদিও সমাজে এটা বিরল তবু চলুন আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত মনে হওয়া এই সমস্যার অন্দরমহলের ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
জীবনের প্রথম দিকে মানুষ উচ্চতায় বৃদ্ধি পায় যা ১৮-২০ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। এরপরে উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়, মানুষ বাড়তে থাকে দেহের দুপাশে। শরীরের মাংশপেশীর আয়তন বাড়ে, দেহে জমে মেদ। এই সবরকম বৃদ্ধিই নিয়ন্ত্রিত হয় আমাদের মস্তিস্কের মাঝে অবস্থিত অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রন্থির মাধ্যমে যার নাম দেয়া হয়েছে 'পিটুইটারি গ্রন্থি'।
পিটুইটারি নিঃসৃত রসের প্রভাবেই আমরা আকারে বাড়ি, এই রস কম নিঃসৃত হলে আমরা হই বামন আর পরিমাণের থেকে বেশি নিঃসৃত হলেই ঘটে সর্বনাশ!!
তরুণ বয়সে যখন আপনি আমি উচ্চতায় বাড়ছি তখন যদি পিটুইটারি গ্রন্থি অধিক নিঃসরণ করে তবে আমাদের উচ্চতা ধেই ধেই করে বেড়ে যাবে।
'তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে,
সব গাছ ছাড়িয়ে,
উকি মারে আকাশে'র মতো আপনি আশেপাশের সকলের থেকে লম্বা হয়ে পড়বেন, লম্বা হতেই থাকবেন, থামাতে পারবেন না। দৈত্যের মতো হয়ে পড়বেন। ঠিকমতো দাঁড়াতে পারবেন না, ভারসাম্য থাকবে না, পায়ে লাগবে বিশেষ সাইজের জুতো, গায়ে লাগবে বিশেষ সাইজের পরিধেয়। সাথে থাকবে নানা রকম শারীরিক সমস্যা যা আপনার আয়ুকে করে দেবে সীমিত। এই অবস্থাকে বলে দৈত্যাকৃতি বা Gigantism.
যদি উচ্চতা বৃদ্ধি থেমে যাবার পরে পিটুইটারি পাগলামো শুরু করে? তখন তো আর আমরা উচ্চতায় বাড়তে পারবো না, আমাদের অস্থিগুলো পূর্ণতা পেয়ে গিয়েছে ততদিনে, আর বাড়বে না লম্বায়, তবে কি হবে তখন? আমরা বাড়বো পাশে, আমাদের গায়ের মাংসপেশিগুলো বাড়বে, অস্থি বাড়বে আকারে, দৈর্ঘ্যে নয়। আমাদের হাত, পায়ের আঙ্গুল বাড়বে আকারে, আঙ্গুল ফুলে কলা গাছের মতো অনেকটা, চোয়াল বেড়ে সামনে এগিয়ে আসবে, চেহারা হয়ে পড়বে অনেকটা গরিলার ন্যায়। একে দানবাকৃতী বলতে পারি আমরা। ইংলিশে বলে Acromegaly.
জানতে ইচ্ছে করেনা কেন এমন হয়? পিটুইটারি গ্রন্থিতে হতে পারে একধরনের টিউমার যার নাম পিটুইটারি এডেনোমা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো ক্যান্সার নয়। এই টিউমারের কারনেই পিটুইটারি অধিক পরিমাণে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত করে সকল সমস্যার সৃষ্টি করে।
হাত-পায়ের আকার বাড়ে, ত্বক হয় অমসৃণ, নাক ও চোয়াল বেড়ে যায় আকারে। জিহ্বা মোটা হয়ে পড়ে, গলার স্বর হয় গভীর ও ভরাট। বাড়তে পারে ঘামের পরিমাণ ও ঘুমের মাঝে শ্বাসবদ্ধতা।
শরীরের মধ্যে হৃদয়, ফুসফুস, কলিজা, বৃক্ক ও প্লীহা বৃদ্ধি পায় আকারে। সাহসী ব্যক্তিদেরকে বলা হয় তাদের কলিজা বড়, উদার ব্যক্তিকে আমরা বলি তার হৃদয় বড়। এই রোগে বাস্তবিকই রোগীর কলিজা ও হৃদয় বেড়ে যায়। ফুলতে পারে পায়ের পাতা, গোড়ালি, হতে পারে গিঁটে গিঁটে ব্যাথা।
অধিক উচ্চতা ও অধিক শারীরিক বৃদ্ধির কারনে হৃদয়ের ওপরে চাপ পড়ে, তাকে বেশি কাজ করতে হয় অধিক উঁচুতে রক্ত পাম্প করে পাঠাতে। তাই দ্রুতই রোগীর উচ্চরক্তচাপ থেকে শুরু করে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয় হৃদয়ে এবং দুঃখের বিষয় হচ্ছে রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণই হলো হৃদযন্ত্রের বৈকল্য।
হতে পারে ডায়াবেটিস, দৃষ্টির সীমানা হয়ে আসতে পারে সীমিত। সাথে থাকে মাথা ব্যথা। রক্তে বাড়তে পারে কোলেস্টেরলের পরিমাণ।
আগেই বলেছি সমাজে বিরল তার পরেও আসুন জেনে নেই কারো হয়ে গেলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে।
রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে পরে আসে চিকিৎসার প্রশ্ন। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য টিউমারটিকে আকারে ছোট রাখা ও গ্রোথ হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
রয়েছে বিভিন্ন মুখে খাবার ঔষধ, রয়েছে টিউমার অপসারনের সার্জারি। একেবারেই কাজ না হলে রয়েছে রেডিয়েশন থেরাপি।
রোগটি বিরল তাতে সন্দেহ নেই, মাঝে মাঝে রাস্তা ঘাটে বামন দেখলেও দৈত্যাকার মানব খুব কমই দেখা যায়। আমরা চাই না এমন সমস্যা কেউ পড়ুক, আমরা চাই একটি সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন যেখানে থাকবে না কোন অস্বাভাবিকতা, অসামঞ্জস্যতা। সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুখে থাকুন।
ডেন্টাল ক্যারিজ- সহজভাবে সহজ কথা
দাঁত ব্যথার অন্যতম কারণ হল ক্যারিজ বা দন্তক্ষয়। অনেকের কাছে এই রোগটি দাঁতের পোকা নামে পরিচিত। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানে যার কোন ভিত্তি নেই। দাঁতের সব রোগের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি হয়।চারটা কারণে এই রোগ হতে পারে :
১. দাঁতে বা দাঁতের ফাঁকে খাবার জমতে পারে এমন জায়গা।
২. ক্যারিজ তৈরিকারী জীবাণু।
৩. রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট বা চিনিজাতীয় খাবার
৪. বেশিদিন ধরে যদি উপরের তিনটা কারণ একইসঙ্গে চলতে থাকে।
আমাদের দাঁতে অনেক খাঁজ (Pits and Fissure) আছে, যেগুলোতে বেশি ক্যারিজ হয়। ক্যারিজ বেশি হয় দুই দাঁতের মাঝে। তবে সত্যি কথা হচ্ছে ডেন্টাল ক্যারিজ দাঁতের যে কোনো জায়গায় হতে পারে। ক্যারিজ বা দন্তক্ষয়ের শুরুতে তেমন কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। তবে গর্ত আস্তে আস্তে বড় হলে দাঁতে শিরশির করা, কিছু খেলে গর্তে ঢুকে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।
একসময় দাঁতের গর্ত আরও বড় হয়। আর তা মজ্জার কাছাকাছি চলে যায়। ফলে মাঝেমধ্যে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে এই ব্যথাটা থেমে থেমে হয়। কান, মাথা ও চোখসহ ব্যথা করতে পারে। ডেন্টাল ক্যারিজের এই পর্যায় পর্যন্ত সাধারণ ফিলিং করেই ক্যারিজের পরিসমাপ্তি টানা যায়। এতে খরচও কম লাগে, সময়ও কম নষ্ট হয়। আর রোগীর কষ্টও কম হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী এই সময় ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে কিছুদিন নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে থাকেন। এরপরই শুরু হয় প্রচণ্ড ব্যথা। কোনো একদিন রাতে, যখন বাইরে গিয়ে ওষুধ কেনা প্রায় অসম্ভব তখনই এটা শুরু হয়। পরদিন সকালে ওষুধ খাওয়ার পর ব্যথা কমে। আর ঠিক বিকেলে আবার ব্যথা শুরু হয়। তখনই বেশিরভাগ রোগীর বোধোদয় হয়। তারা ডেন্টিস্টের কাছে যান। তবে অনেকেরই বোধোদয় হয় না। কেউ কেউ এই অবস্থায়ও অ্যান্টিবায়োটিক আর ব্যথার ওষুধ একসঙ্গে চালাতে থাকেন।
ইতিমধ্যে দাঁতের যতটুকু ক্ষতি হয়, সেখান থেকে দাঁতটি জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব না। তবে মৃতভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ এই সময় রুট ক্যানেল চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ উপশম করা যায়। যারা এই অবস্থাতেও ডাক্তারের কাছে যান না, তারা মাঝেমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক আর ব্যথানাশক ওষুধ খান। এতে তীব্র ব্যথার অনুভূতি একসময় কমে গেলেও ডেন্টাল ক্যারিজ কিন্তু থেমে থাকে না। কিছুদিনের মধ্যে জীবাণুর সংক্রামণে দাঁতের মজ্জা পুরোপুরি পচে যায়। পচা অংশগুলো দাঁতের গোড়া দিয়ে হাঁড়ের মধ্যে চলে যায়। সেখানে পুঁজ তৈরি করে। এই অবস্থায় যে ব্যথাটা হয় তা কোনো ওষুধেই কমে না।
দেখা গেছে রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই অবস্থাতেই ডেন্টিস্টের কাছে আসেন। এ ক্ষেত্রে অনেকের দাঁত রুট ক্যানেল চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। আর অনেকের দাঁত ফেলে দিতে হয়।
কেউ কেউ আছেন এই অবস্থাতেও ব্যথা সহ্য করতে থাকেন। ডেন্টিস্টের কাছে না আসার জন্য মনস্থির করেন। তাদের দাঁত আস্তে আস্তে মাড়ির সঙ্গে মিশে যায়। এ সময় মাঝেমধ্যে ব্যাথা হয়। তখন তারা আবার ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খান।
এই পর্যায় থেকে দুই রকম ব্যাপার ঘটতে পারে:
১. ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সেলুলাইটিস, লাডউইগ্স অ্যান্জাইনা ইত্যাদি। লাডউইগ্স অ্যান্জাইনা হলে পুঁজ জমে রোগীর গলা ফুলে যায়। চিকিৎসা না করালে রোগী নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে।
২. সিস্ট, টিউমার ও ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে।
সামান্য দাঁতের ব্যথা থেকে কত কিছু হতে পারে। তাই দাঁত ব্যথা হলে সামান্য দেরি না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অন্তত ৬ মাস পর পর দন্ত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁত পরীক্ষা করানো উচিত। তাহলে দাঁতে যদি সামান্য কোনো সমস্যাও থাকে, সেগুলো নিমিষেই দূর করা সম্ভব হয়। আর ভবিষ্যতে দাঁতের বড় রকমের সমস্যায় পড়তে হয় না।
বাচ্চাদের ডেন্টাল ক্যারিজ
ডেন্টাল ক্যারিজ (দাঁতের ক্ষয় রোগ) খুব সাধারণ একটি সমস্যা যা যে কোনো বয়সেই হতে পারে। ছোট বাচ্চাদের ডেন্টাল ক্যারিজ সাধারণত ২-৫ বছর বয়সে দেখা যায়। কারণ এই বয়সে বাচ্চারা চকলেট, মিষ্টি, চিপস ইত্যাদি খাবার বেশি খায় কিন্তু এগুলো খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার করে না। বাচ্চাদের মাঝে সবসময়ই দাঁত না মাজার একটি প্রবণতা দেখা যায়। যার ফলে তারা নিজেরাও ব্রাশ করেনা, বাবা-মাকেও করতে দিতে চায় না।
২-৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের দাঁতের ক্যারিজ হওয়ার আরও বড় একটা কারণ হচ্ছে এ বয়সে অনেক বাচ্চা ঘুমের মধ্যে ফিডার খায়। আবার অনেক বাবা মা আছেন যারা বাচ্চাকে ঘুমের মধ্যে ফিডার খাওয়াতে পছন্দ করেন কারণ জেগে থাকলে বাচ্চা খেতে চায় না। এই ঘুমের মধ্যে খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাচ্চাদের ডেন্টাল ক্যারিজ হওয়ার সম্ভাবনা ৯০শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।
বাচ্চাদের ডেন্টাল ক্যারিজ অনেক বাবা মা গুরুত্ব দেন না, তারা মনে করেন এই দাঁত তো দুধ দাঁত; কিছুদিন পর পড়ে যাবে, এর পর আবার নতুন দাঁত উঠবে। কিন্ত এই দুধ দাঁতের যদি ঠিক মত যত্ন না নেওয়া হয়, সমস্যা হলে চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তার যে স্থায়ী দাঁত উঠবে তার অনেক সমস্যা হতে পারে। যেমন, কারো দুধ দাঁত ক্যারিজ থাকায় সময়ের আগেই পড়ে গেলে বা ফেলে দেয়া হলে স্থায়ী দাঁত আঁকাবাঁকা বা উঁচু নিচু হতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
রোগ তো রোগই তা যে বয়সেই হোক না কেন। যে কোন রোগের ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করা যায়, তত দ্রুত রোগ ভাল হয়। তাই বাচ্চাদের ডেন্টাল ক্যারিজ নিয়ে উদাসীন না থেকে অবশ্যই তাদের ক্যারিজের দ্রুত চিকিৎসা করা উচিৎ, যাতে ভবিষ্যতে তাদের দাঁতের সমস্যা কম হয়।
দুর্ঘটনা বা আঘাতে দাঁত পড়ে গেলে করণীয় কি?
যে কোন দুর্ঘটনায় আপনার দাঁত পড়ে গেলে এরকম চিন্তার কোন কারণ নেই যে "হায়! আমি একটা দাঁত হারালাম।" কেননা, সেই দাঁত খুব সহজেই আপনার মুখে পুন:স্থাপন করা যেতে পারে। আপনাকে শুধু কিছু কথা জেনে রাখতে হবে :-
১.দাঁত যেখানে পড়বে সেখান থেকে তুলে এনে ট্যাপকল বা পানির নিচে এনে দাঁতের উপরে থাকা আলগা ময়লা গুলো ধুয়ে ফেলতে হবে।
২.কিন্তু সাবধান। দাঁতের গোড়ার জায়গা স্পর্শ করা যাবে না। কারণ দাঁতের গোড়ায় কিছু বিশেষ ধরনের লিগামেন্ট থাকে যেগুলোকে পেরিওডন্টাল লিগামেন্ট বলে - এই লিগামেন্ট গুলো দাঁতকে তার কোটরে ধরে রাখতে সাহায্য করে, গোড়া এগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হলে দাঁতকে তার কোটওে পুনঃস্থাপিত করা সম্ভব নয়।
৩.এবার দাঁতকে দুধ অথবা স্যালাইন পানি অথবা ডাবের পানির মধ্যে করে অবশ্যই প্রথম ১ ঘন্টার মধ্যে নিকটস্থ ডেন্টিষ্ট এর শরণাপন্ন হতে হবে। এই সময়ের মধ্যে আনতে পারলে চিকিৎসা সফল হওয়ার নিশ্চয়তা অনেক গুন বেড়ে যায়।
৪.তবে প্রথম ১ ঘন্টার মধ্যে ডাক্তারের কাছে না পৌঁছাতে পারলেও চিকিৎসা আছে, ডাক্তারকে দাঁত পড়ে যাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।
৫.ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দাঁত পুনঃস্থাপনের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট করে নিতে হবে। তবে ১০ - ১২ বছরের বচ্চাদেও ক্ষেত্রে এই ট্রিটমেন্ট না করলেও চলে, কারণ তাদের দাঁতগুলো গোড়া থেকে প্রচুর পরিমানে রক্ত সরবরাহ পায়, বড়দের ক্ষেত্রে সেটা বন্ধ হয়ে যায়।
উপরোক্ত নিয়মগুলো মনে রাখতে পারলে দুর্ঘটনায় আপনার পড়ে যাওয়া দাঁতটি আপনার মুখে পুনঃস্থাপিত হতে পাওে নির্বিঘ্নে; সেই দাঁত আপনার জন্য কাজ করে যাবে আরও বহুদিন।
শিশুর দাঁতের যত্ন
এক. কখন থেকে যত্ন নেওয়ার শুরু
দাঁত না ওঠার অর্থ এই নয় যে এগুলো ওখানে নেই। গর্ভকালীন দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সময়ে দাঁত গঠিত হতে শুরু করে। জন্মের সময়ে শিশুর মাড়িতে ২০ প্রাইমারি দন্ত থাকে তার অনেকগুলো চোয়ালে পরিপূর্ণভাবে গজিয়ে যায়। সুতরাং প্রথম দন্ত কৌমুদী প্রস্ফুটনের আগে শিশুর দাঁতের পরিচর্যা করা উত্তম।
শিশুকে খাওয়ানোর পরে পরিচ্ছন্ন জলে পাতলা কাপড় ভিজিয়ে দাঁতের মাড়ি পরিষ্কার করা যায়। এতে ব্যাকটেরিয়া ওখানে জমাট বাঁধতে পারে না। আর যখনই কয়েকটা দাঁত মুকুলিত হবে তখনই দিনশেষে নরম টুথব্রাশ কিংবা গজ পিস দিয়ে তা পরিষ্কার রাখা যায়।
দুই. ফ্লুরাইড এবং জল
শিশুর দাঁতের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় শুধু দৈনিক দাঁত ব্রাশ করাটাই যথেষ্ট। শিশুকে যে জলপান করানো হয় সে জলে যদি স্বাভাবিক মাত্রায় ফ্লুরাইড থাকে তবে তা শিশু দন্ত বিকাশে এবং দাঁতে ক্ষয়রোগ রোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
তিন. শিশুর দাঁত বনাম জুস পান
যেন ‘জুস-ই জীবন’ অনেক বাচ্চার মধ্যে এরূপ তাড়না দেখা যায়। অনেক মা-বাবা, অভিভাবক এ নিয়ে তেমন গা করেন না। ফ্রুট জুইসের সুগার দাঁতের এনামেল খেয়ে নেয়, বিশেষত যেসব শিশু সারা দিন বা ঘুমোতে যাওয়ার আগে বোতলে, কাপে নিরবধি জুস পান করে চলেছে। গবেষণার তথ্য—শিশুর দাঁতে কেরিজ তৈরি হয় তখন যখন বেশি সময় ধরে জুস দাঁতের চারপাশে প্রবাহিত হয়। দুধভর্তি ফিডার ধরিয়ে যেসব মা বাচ্চাকে ঘুমিয়ে দেন সে ক্ষেত্রে এমন ফলাফল ঘটে।
সে কারণে শিশু বয়সে জুস ড্রিংকস ও অন্যান্য সুগার পানীয় নিয়ন্ত্রণে রেখে খাওয়ানো উচিত। কখনো বোতল বা ফিডার মুখে দিয়ে শিশুকে ঘুম পাড়ানোর কৌশল অবলম্বন না করা।
তৃতীয়ত শিশুর সঠিক দাঁতের যত্নে প্রথম বছর পুরোলে দন্তবিশেষজ্ঞের পরামর্শ চেয়ে নেওয়া।
টাইফয়েড বা সান্নিপাতিক জ্বর
টাইফয়েড জ্বর এখন আমাদের জন্য আর তেমন ভয় জাগানিয়া কিছু নয় আগের মতো। উন্নত চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসম্মত পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে টাইফয়েডকে একসময় অনেকটাই বশ মানিয়ে আনা হয়েছিলো যদিও আবার সেটি ফিরে আসছে মারাত্নক রুপে। চলুন আজ জেনে নেই টাইফয়েড সম্পর্কে সাধারন কিছু কথা।
টাইফয়েড বা সান্নিপাতিক জ্বর এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয় যার নাম 'সালমোনেলা টাইফি'। এটি একটি পানি বাহিত রোগ। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও খাদ্যনালীতে এই জীবাণু অবস্থান করে এবং প্রস্রাব ও মলের মাধ্যমে পরিবেশে উন্মুক্ত হয় যা পরবর্তীতে পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। টাইফয়েড জীবাণু সংক্রমিত পানি পান করার মাধ্যমে পুনরায় অন্য আরেকজন আক্রান্ত হন। পানি ছাড়াও জীবাণু দ্বারা দূষিত দুধ কিংবা দুগ্ধজাত সামগ্রী, নারিকেল, চিংড়ি, মাছ, ডিম, কাচা সবজি, সালাদ, লেটুস প্রভৃতি থেকেও জীবানুটি মানুষের মাঝে ছড়াতে পারে। মাছি মানুষের মলমুত্র খেয়ে জীবনধারণ করে। মানুষ যখন মাছিতে বসা খাবার খায় তখন সেটি মানুষে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়া, মল ত্যাগের পরে হাত না ধোয়া ইত্যাদি কারনেও এটা ছড়াতে পারে।
একবার শরীরে প্রবেশ করার পরে জীবাণু অন্ত্র থেকে রক্তে প্রবেশ করার মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
যেকোনো বয়সেই টাইফয়েড হতে পারে তবে আমাদের দেশে সাধারণত শিশু থেকে তরুণদের মাঝেই এটা বেশি হতে দেখা যায়।
টাইফয়েড জীবাণু দেহে প্রবেশের ১০-১৪ দিন পরে রোগের উপসর্গ ও লক্ষণসমূহ প্রকাশ পেতে শুরু করে।
প্রধানত থাকে জ্বর যা সাধারণত ১০৩ থেকে ১০৪ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়, জ্বর ক্রমেই বাড়তে থাকে, সারাক্ষণই জ্বর থাকে।
জ্বরের সাথে মাথাব্যথা, গায়ের মাংশপেশিতে ব্যাথা থাকে, থাকে দুর্বলতা।
প্রাপ্ত বয়স্কদের অনেক সময়ই কোষ্টকাঠিন্য দেখা দেয়। শিশুদের ডায়রিয়া এবং বমি হতে পারে।
খাওয়ায় থাকে না রুচি, সব লাগে বিস্বাদ, সাথে পেটে ব্যাথা।
লিভার ও প্লিহা আকারে বড় হয়ে যেতে পারে।
সপ্তাহখানেক পরে পেট এবং পিঠে গোলাপি রঙের ফুসকুড়ি হতে পারে। এই ফুসকুড়িগুলোর একটি বৈশিষ্ঠ্য হল হাতের আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওরা অদৃশ্য হয়ে যায়।
দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগীকে যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে তৃতীয় সপ্তাহের মাথায় রোগী মারাত্মক জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন।
যেসব জটিলতা হতে পারে তাদের মাঝে অন্ত্রের দেয়াল থেকে রক্তক্ষরণ এবং দুর্ভাগ্য বাড়লে অন্ত্রের দেয়ালে ছিদ্র হয়ে মারাত্নক রক্তক্ষরণ হতে পারে, যেক্ষেত্রে রোগী মারাত্নক জটিল শকে চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে।
অনেকে একবার আক্রান্ত হবার পড়ে সারা জীবনের জন্য টাইফয়েডের বাহক হয়ে পড়েন যারা জীবন্ত রোগবাহক হিসেবে আজীবন এই রোগ ছড়িয়ে দিতে থাকেন নিজের অজান্তে। এমন একজন ইতিহাস বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন ' টাইফয়েড মেরী' যাকে নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে।
এছাড়াও লিভারের ছিদ্র হওয়া, অগ্নাশয়ে বা মস্তিস্কে প্রদাহ, মায়াকার্ডাইটিস(হৃদ পেশীতে সংক্রমন), নেফ্রাইটিস(কিডনিতে সংক্রমন), হাড়ের ইনফেকশন, সেপটিসেমিয়া(রক্তে সংক্রমন) ইত্যাদি জটিলতা টাইফয়েড থেকে হতে পারে।
টাইফয়েড নির্ণয়ের জন্য রোগের উপসর্গ-লক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক টেস্ট রয়েছে
রোগের প্রথম সপ্তাহে রক্তের কালচারের মাধ্যমে,
দ্বিতীয় সপ্তাহে ভিডাল টেস্টের মাধ্যমে( যদিও এটা শতভাগ নির্ভরযপগ্য নয়)
পরবর্তী সপ্তাহে যথাক্রমে মল ও প্রস্রাবের পরীক্ষার মাধ্যমে টাইফয়েড নির্ণয় করা যায়
ক্ষেত্রবিশেষে অস্থিমজ্জা থেকেও পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা যায়
টাইফয়েডের চিকিৎসার ব্যাপারে বলতে হয় কার্যকরি এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারের পরে টাইফয়েড অনেক সহজেই বশ মানানো সম্ভব হয়েছে।
সাধারণত ১০-১৪ দিনের চিকিৎসাতেই মানুষ আরোগ্য লাভ করে যদিও একসময় এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারের পূর্বে টাইফয়েড ছিলো মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম। তবে বর্তমানে ইচ্ছামত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অযথাই এন্টিবায়োটিকের ব্যাবহারের ফলে টাইফয়েডের জীবাণু নতুন ওষুধগুলোর বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে যার ফলে সাধারন কোন এন্টিবায়োটিকে সহজে টাইফয়েড সারানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদেরকে বলা হচ্ছে MDR Typhoid বা একাধিক ড্রাগ প্রতিরোধী টাইফয়েড।
এন্টিবায়োটিকের সাথে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং প্রচুর পানি ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে কাজে লাগে।
টাইফয়েড প্রতিরোধের জন্য বাজারে এখন ভ্যাকসিন বের হয়েছে যার একটা প্রতি ৩ বছর পর পর মাংশপেশীতে নিতে হয় এবং একটি মুখে
খেতে হয় যদিও এদের কার্যকারিতা সবক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় না।
টাইফয়েড জ্বরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল বিষয় হলো সামস্টিক পরিচ্ছন্নতা এবং সচেতনতা। অর্থাৎ,
নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান
স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার
খাবার তৈরি এবং খাবার গ্রহণের পূর্বে এবং পায়খানা ব্যবহারের পর সাবান/ছাই দিয়ে হাত ধোয়া
কাঁচা বা অপরিষ্কার শাক-সবজি ও ফলমূল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা
খাবার গরম করে খাওয়া
ঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা
টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যের জন্য খাবার তৈরি থেকে বিরত থাকা
আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যবহার্য দ্রব্যাদি আলাদা করে রাখা ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে টাইফয়েডের থেকে আমরা দূরে থাকতে পারবো।
পানি বাহিত রোগঃ আমাশয়
বন্ধুদের সাথে বাইরে খেয়েছেন, ফুচকা, সালাদ, সাথে পানিও খেয়েছেন। পরের দিন অফিস বা ক্লাসে গিয়ে সুস্থির হয়ে বসতেই পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো, শুরু হল ক্রমাগত বাথরুমে যাওয়া-আসা। সাথে এলো জ্বর এবং মলের সাথে আম এবং রক্ত পড়া। খুব সাধারণ একটি দৃশ্য আমাদের দেশে এটি এবং এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি এমন বাংলাদেশী খুব কমই পাওয়া যাবে। উপরের যে সাধারণ সমস্যার কথা বলা হয়েছে তার নাম আমাশয় বা ইংরেজিতে Dysentery. এদেশের মানুষের কাছে যেটি খুব পরিচিত একটি রোগ।
আমাশয় মূলত দুই ধরণের, অ্যামিবিক এবং ব্যাসিলারি। অ্যামিবিক আমাশয়ের মূলে রয়েছে এককোষী অ্যামিবা এবং ব্যাসিলারি আমাশয়ের মূলে রয়েছে একটি ব্যাক্টেরিয়া যার নাম সিগেলা/ shigella. এই দুই ধরণের আমাশয়ই মূলত আমাদের দেহে প্রবেশ করে দূষিত পানি এবং খাবারের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তির মলের সাথে বেরিয়ে আসা জীবাণু দ্বারা দূষিত পানি দিয়ে ধোয়া খাবার যেমন ফল, সালাদ খাওয়া, অবিশুদ্ধ পানি পান এগুলো আমাশয়ে আক্রান্ত হওয়ার বড় কারণ। আক্রান্ত ব্যক্তির সঠিকভাবে হাত পরিস্কার না করে থাকলে তার কাছ থেকেও ছড়াতে পারে আমাশয়। মাছির মাধ্যমেও জীবাণু খোলা খাবারে সংক্রমিত হতে পারে।
আমাদের দেশে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের পরে আমাশয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। আমাশয়ের উপসর্গের মাঝে রয়েছে মোচড় দিয়ে পেটে ব্যাথা, বার বার মল ত্যাগ করা, মলের সাথে আম অথবা রক্ত যাওয়া, সাথে জ্বর থাকা, অ্যামিবিক আমাশয়ের ক্ষেত্রে মলে হাল্কা দুর্গন্ধ হতে পারে। ডায়রিয়ার সাথে আমাশয়ের একটা পার্থক্য হচ্ছে ডায়রিয়ায় মলে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে আর আমাশয়ে মলে পানির পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে।
মলের সাথে রক্ত গেলে তাকে বলা হয় রক্ত আমাশয়। আক্রান্ত ব্যক্তির অন্ত্রের দেয়াল যখন জীবাণু দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন ক্ষত সৃষ্টি হয়ে রোগী আম এবং রক্ত মিশ্রিত মল ত্যাগ করেন। সাধারনত জীবাণু দেহের ভেতরে প্রবেশ করার ১ থেকে ৩ দিনের মাঝেই রোগের উপসর্গ প্রকাশ পেতে শুরু করে। একসপ্তাহের মাঝেই এটি অধিকাংশ সময়ে নিরাময় হয়ে যায়।
আমাশয়ের হাত থেকে বাঁচার প্রধান উপায় আমাদের সকলেরই জানা, তার পরেও আবার মনে করিয়ে দিতে চাইঃ
১। প্রতিবার মল ত্যাগের পরে হাত সাবান দিয়ে ভালো করে পরিস্কার করা
২। স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করা
৩। না ধুয়ে কোন ফল বা অন্যান্য খাবার না খাওয়া
৪। খাবার খোলা না রাখা
৫। বাসি, পচা কোন খাবার না খাওয়া
৬। আক্রান্ত ব্যক্তিকে খাবার প্রস্তুত করতে না দেওয়া
আমাশয়ের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য দুইটিঃ বার বার পাতলা পায়খানার ফলে পানি শূন্যতার হাত থেকে রোগীকে রক্ষা করা এবং জীবাণু নাশে ঔষধের ব্যবহার করা।
পাতলা পায়খানার জন্য ওরস্যালাইন ব্যবহার করতে হবে, এটা আমরা সবাই জানি। ব্যাকটেরিয়া জনিত আমাশয়ে ৫-৭ দিনের এন্টিবায়োটিকেই কাজ হয়, বর্তমানে সিপ্রোফ্লকসাসিন বা এজিথ্রোমাইসিন খুব ভালো কাজ করে। অ্যামিবিক আমাশয়ে মেট্রনিডাজল ৫ দিনের কোর্সই যথেষ্ট।
আমাশয় এমন একটি অসুখ যা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ নিয়ম পালন করলেই চলে। তাই ব্যক্তিগত এবং সামাজিক পরিচ্ছন্নতার প্রতি সকলের নজর রাখা অতীব জরুরী এ ব্যাপারে
পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যাঃ দৈত্যাকার ও দানবাকার মানব
পরিমল বর্মণের কথা মনে আছে? ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার বাংলাদেশী তরুন যে তৎকালীন সময়ে বিশ্বের উচ্চতম ব্যক্তি ছিলেন যার উচ্চতাই হয়েছিলো তার মরণের কারণ। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। অত্যধিক লম্বা হওয়া অথবা দানবাকৃতির হওয়াও যে একটি শারীরিক সমস্যা তা বোধকরি আমরা অনেকেই জানি না। যদিও সমাজে এটা বিরল তবু চলুন আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত মনে হওয়া এই সমস্যার অন্দরমহলের ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
জীবনের প্রথম দিকে মানুষ উচ্চতায় বৃদ্ধি পায় যা ১৮-২০ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। এরপরে উচ্চতা বৃদ্ধি বন্ধ হয়, মানুষ বাড়তে থাকে দেহের দুপাশে। শরীরের মাংশপেশীর আয়তন বাড়ে, দেহে জমে মেদ। এই সবরকম বৃদ্ধিই নিয়ন্ত্রিত হয় আমাদের মস্তিস্কের মাঝে অবস্থিত অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রন্থির মাধ্যমে যার নাম দেয়া হয়েছে 'পিটুইটারি গ্রন্থি'।
পিটুইটারি নিঃসৃত রসের প্রভাবেই আমরা আকারে বাড়ি, এই রস কম নিঃসৃত হলে আমরা হই বামন আর পরিমাণের থেকে বেশি নিঃসৃত হলেই ঘটে সর্বনাশ!!
তরুণ বয়সে যখন আপনি আমি উচ্চতায় বাড়ছি তখন যদি পিটুইটারি গ্রন্থি অধিক নিঃসরণ করে তবে আমাদের উচ্চতা ধেই ধেই করে বেড়ে যাবে।
'তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে,
সব গাছ ছাড়িয়ে,
উকি মারে আকাশে'র মতো আপনি আশেপাশের সকলের থেকে লম্বা হয়ে পড়বেন, লম্বা হতেই থাকবেন, থামাতে পারবেন না। দৈত্যের মতো হয়ে পড়বেন। ঠিকমতো দাঁড়াতে পারবেন না, ভারসাম্য থাকবে না, পায়ে লাগবে বিশেষ সাইজের জুতো, গায়ে লাগবে বিশেষ সাইজের পরিধেয়। সাথে থাকবে নানা রকম শারীরিক সমস্যা যা আপনার আয়ুকে করে দেবে সীমিত। এই অবস্থাকে বলে দৈত্যাকৃতি বা Gigantism.
যদি উচ্চতা বৃদ্ধি থেমে যাবার পরে পিটুইটারি পাগলামো শুরু করে? তখন তো আর আমরা উচ্চতায় বাড়তে পারবো না, আমাদের অস্থিগুলো পূর্ণতা পেয়ে গিয়েছে ততদিনে, আর বাড়বে না লম্বায়, তবে কি হবে তখন? আমরা বাড়বো পাশে, আমাদের গায়ের মাংসপেশিগুলো বাড়বে, অস্থি বাড়বে আকারে, দৈর্ঘ্যে নয়। আমাদের হাত, পায়ের আঙ্গুল বাড়বে আকারে, আঙ্গুল ফুলে কলা গাছের মতো অনেকটা, চোয়াল বেড়ে সামনে এগিয়ে আসবে, চেহারা হয়ে পড়বে অনেকটা গরিলার ন্যায়। একে দানবাকৃতী বলতে পারি আমরা। ইংলিশে বলে Acromegaly.
জানতে ইচ্ছে করেনা কেন এমন হয়? পিটুইটারি গ্রন্থিতে হতে পারে একধরনের টিউমার যার নাম পিটুইটারি এডেনোমা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো ক্যান্সার নয়। এই টিউমারের কারনেই পিটুইটারি অধিক পরিমাণে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত করে সকল সমস্যার সৃষ্টি করে।
হাত-পায়ের আকার বাড়ে, ত্বক হয় অমসৃণ, নাক ও চোয়াল বেড়ে যায় আকারে। জিহ্বা মোটা হয়ে পড়ে, গলার স্বর হয় গভীর ও ভরাট। বাড়তে পারে ঘামের পরিমাণ ও ঘুমের মাঝে শ্বাসবদ্ধতা।
শরীরের মধ্যে হৃদয়, ফুসফুস, কলিজা, বৃক্ক ও প্লীহা বৃদ্ধি পায় আকারে। সাহসী ব্যক্তিদেরকে বলা হয় তাদের কলিজা বড়, উদার ব্যক্তিকে আমরা বলি তার হৃদয় বড়। এই রোগে বাস্তবিকই রোগীর কলিজা ও হৃদয় বেড়ে যায়। ফুলতে পারে পায়ের পাতা, গোড়ালি, হতে পারে গিঁটে গিঁটে ব্যাথা।
অধিক উচ্চতা ও অধিক শারীরিক বৃদ্ধির কারনে হৃদয়ের ওপরে চাপ পড়ে, তাকে বেশি কাজ করতে হয় অধিক উঁচুতে রক্ত পাম্প করে পাঠাতে। তাই দ্রুতই রোগীর উচ্চরক্তচাপ থেকে শুরু করে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয় হৃদয়ে এবং দুঃখের বিষয় হচ্ছে রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণই হলো হৃদযন্ত্রের বৈকল্য।
হতে পারে ডায়াবেটিস, দৃষ্টির সীমানা হয়ে আসতে পারে সীমিত। সাথে থাকে মাথা ব্যথা। রক্তে বাড়তে পারে কোলেস্টেরলের পরিমাণ।
আগেই বলেছি সমাজে বিরল তার পরেও আসুন জেনে নেই কারো হয়ে গেলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে।
রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে পরে আসে চিকিৎসার প্রশ্ন। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য টিউমারটিকে আকারে ছোট রাখা ও গ্রোথ হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
রয়েছে বিভিন্ন মুখে খাবার ঔষধ, রয়েছে টিউমার অপসারনের সার্জারি। একেবারেই কাজ না হলে রয়েছে রেডিয়েশন থেরাপি।
রোগটি বিরল তাতে সন্দেহ নেই, মাঝে মাঝে রাস্তা ঘাটে বামন দেখলেও দৈত্যাকার মানব খুব কমই দেখা যায়। আমরা চাই না এমন সমস্যা কেউ পড়ুক, আমরা চাই একটি সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন যেখানে থাকবে না কোন অস্বাভাবিকতা, অসামঞ্জস্যতা। সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুখে থাকুন।
চোখের সমস্যা নিয়ে
চোখের সমস্যা – কোনার একটি শিরা লাল
সমস্যা: আমার বয়স ২১ বছর। আমি একজন শিক্ষার্থী। আমার সমস্যা ডান চোখে। প্রায় ছয় মাস ধরে প্রায়ই আমার চোখের এক কোনার একটি শিরা লাল হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে পুরো চোখের কোনার জায়গাটি লাল হয়ে জ্বালা করে। এর জন্য বেশ কয়েকবার চক্ষু চিকিৎসককে দেখিয়েছি। কোনো সুফল পাইনি। তাঁর দেওয়া একটি ড্রপ দিচ্ছি এখনো। এ সমস্যাটি আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। পরামর্শ পেলে খুবই উপকৃত হব। উল্লেখ্য, আমি দুই চোখে মাইনাস ০.৭৫ ও ০.৫০।
রিমি
বগুড়া।
পরামর্শ: চোখ লাল হওয়ার জন্য আপনি যে ওষুধটি ব্যবহার করছেন, সেটি একনাগাড়ে বেশি দিন ব্যবহার করা ঠিক নয়।
এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। আপনি এখন অকুলোসান আই ড্রপ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এটি দিনে চার বার করে তিন সপ্তাহ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তারপর অবস্থার পরিবর্তন না হলে অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করুন।
সন্তানের চশমা পরিবর্তনে মা-বাবার করণীয়
দীপা প্রতি পরীক্ষার আগে চোখব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গে আক্রান্ত হয়। ওর ব্যথার তীব্রতা এতটা বেড়ে যায় যে কিছুতেই পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে না। পড়া শুরু করায় তেমন কোনো অসুবিধা থাকে না কিন্তু সামান্যক্ষণ পরই তার ব্যথা শুরু হয়। মা-বাবা তাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চোখ পরীক্ষা করেন। বদলিয়ে দেন চশমার পাওয়ার। চশমা বদলের পর কয়েক দিন ভালো থাকে, তারপর আবার একই সমস্যা। মাথাব্যথা, চোখব্যথা। দীপা পড়াশোনায় ভালো। ক্লাসে প্রথম দশজনের ভেতর তার অবস্থান। তবে দিন দিন চোখের পাওয়ার বৃদ্ধি ও চোখের সমস্যায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন দীপার মা-বাবা।
ওপরে দীপাকে নিয়ে যে চিত্রটা তুলে ধরলাম, আমরা প্রতিদিন কমবেশি আমাদের সন্তানদের নিয়ে এ ধরনের সমস্যায় ভুগি। স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি সন্তানের চোখের সমস্যা নিয়ে। কেবল চোখ নয়, বড় ধরনের রোগের আশঙ্কা মাথায় আসে।
চিকিৎসক হিসেবে এ ধরনের রোগী আমরা পাই। এ ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মা-বাবাদের আশ্বস্ত করছি যে আপনার সন্তানকে নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের গল্পের দীপাকে নিয়েই আলোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আতঙ্কিত মা-বাবা এক চিকিৎসক থেকে আরেক চিকিৎসকের কাছে ছোটেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে। কিন্তু তেমন কিছু পাওয়া যায় না। কেবল পরিবর্তন ঘটতে থাকে চোখের চশমার। দীপা তার এক উদাহরণ।
দীপার চোখে পাওয়ারের সমস্যা রয়েছে। তবে তা খুব বেশি মাত্রায় নয়। ওর কিছু অভ্যাস এ সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়। আবার দীপার মা-বাবার টেনশন থেকে বারবার চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়ার বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। দীপা পড়াশোনার ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সচেতন। বই চোখের খুব কাছে নিয়ে অধ্যয়নের অভ্যাস তার। পড়ার টেবিল নয়, বিছানায় শুয়েই সে পড়াশোনা করে। এভাবে পড়াশোনা করায় নিজের অজান্তে তার চোখের ওপর বেশি চাপ পড়ে।
আমরা যখন পড়াশোনা করি, তখন আমাদের চোখের বেশ কয়েকটি পেশি একত্রে কাজ করে। বিশেষ করে কাছের দৃষ্টিকর্মের জন্য পেশিগুলো অধিকমাত্রায় ক্রিয়াশীল থাকে। দেখার সামগ্রী যথা বইপত্র যত কাছে নিয়ে পড়ার অভ্যাস করা হয়, তত বেশি চোখের পেশির ওপর চাপ পড়ে। এতে একপর্যায়ে পেশিগুলো দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়। ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, মাথাব্যথার উপসর্গ দেখা দেয়। কখনো কখনো পেশির খিঁচুনি হয় এবং এ ক্ষেত্রেও উল্লিখিত উপসর্গের উৎপত্তি ঘটে। পেশিগুলো অতিমাত্রায় ক্রিয়াশীল থাকাকালে চোখের অভ্যন্তরের লেন্সের আকৃতির ওপর প্রভাব পড়ে। এতে চোখের অন্তর্নিহিত পাওয়ারের পরিবর্তন ঘটে। চোখের পাওয়ার বিশেষত মাইনাস পাওয়ার এ সময় বেড়ে যায়।
রোগীর দূরের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। ইদানীং মা-বাবা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে অধিকমাত্রায় সচেতন। তা ছাড়া মা-বাবা ছেলেমেয়েদের স্কুলের লেখাপড়ার বাইরেও বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে থাকেন। স্কুলের পর একাধিক কোচিং সেন্টারে পাঠিয়েই ক্ষান্ত হন না, বাড়িতেও টিউটর রাখেন। ছেলেমেয়েদের এভাবে পড়াশোনার চাপ দেওয়ায় তাদের চোখ বিশ্রামের সুযোগ পায় না। এর ফলে চোখের পেশিগুলোও বিশ্রাম পায় না। পরীক্ষার্থীরা মা-বাবার কাছে দূরের ঝাপসা দৃষ্টির উপসর্গের কথা বলে। মা-বাবা সন্তানকে নিয়ে ছোটেন চোখের চিকিৎসকের কাছে। চোখের বিশ্রাম না থাকায় ‘অস্বাভাবিক’ চোখের অস্বাভাবিক পাওয়ার পরিবর্তন করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চোখের পূর্ণমাত্রার বিশ্রামের পর যে পাওয়ার থাকে, বিশ্রামহীন চোখের পাওয়ার তা থেকে ভিন্ন হয়। হয়তো যে চোখে কোনো পাওয়ার লাগারই কথা নয়, সেই চোখ বিশ্রামে না থাকায় চোখের ভেতরের পেশির সংকুচিত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পাওয়ার ঘাটতির শিকার হয়।
দীপার ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মা-বাবার কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন:
ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ফাঁকে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দিন। একটানা বেশিক্ষণ পড়াশোনা করা ঠিক নয়। ২০ মিনিট পড়াশোনার পর অন্তত পাঁচ মিনিট চোখের বিশ্রাম নেওয়া ভালো।
সন্তানকে চোখের চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার আগে চোখের বিশ্রাম দিন। যেমন বিকেলে যদি চিকিৎসকের চেম্বারে নেওয়ার প্রোগ্রাম থাকে, সে ক্ষেত্রে দুপুরের আহারের পর বিশ্রামে থাকতে সাহায্য করুন।
চোখের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার ইত্যাদি থেকে বিরত রাখুন।
কোচিং সেন্টারের শিডিউল ওই দিনের জন্য পরিবর্তন করে নিন। কোচিং সেন্টার থেকে সরাসরি চোখের চিকিৎসকের কাছে যাবেন না। কেননা এ ক্ষেত্রে সন্তানের চোখের পরিমিত বিশ্রাম হয় না।
আপনার সন্তানকে পর্যাপ্ত আলোয় আরামদায়ক পরিবেশে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করে দিন। লেখাপড়া টেবিলে করা উচিত, বিছানায় শুয়ে নয়। বিশেষ করে যারা চশমা ব্যবহার করে, তাদের জন্য বিছানায় শুয়ে পড়াশোনা করা মোটেও উচিত নয়।
মোটকথা, সন্তানের চোখের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব মা-বাবার। সন্তানকে চোখের পরিচর্যায় যত্নশীল করে তোলায় মা-বাবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
বাংলাদেশে প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতির ইসিজি রেকর্ডার প্রতিস্থাপন
এই প্রথম বাংলাদেশে ক্ষুদ্রাকৃতির ইসিজি রেকর্ডার রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সৈয়দ মো. কায়সারের শরীরে পেনড্রাইভ আকৃতির ইসিজি রেকর্ডার চামড়ার নিচে মাত্র ১৫ মিনিটের স্বল্পকালীন আউট সার্জিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে মনিটরটি স্থাপন করেন স্কয়ার হাসপাতালের বিশিষ্ট হূদেরাগ বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ আল জামিল। এই ইসিজি রেকর্ডারটি তিন বছর পর্যন্ত রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ইসিজি রেকর্ড করতে থাকবে। যেসব রোগীর অনিয়মিত হূৎস্পন্দন বা ব্যাখ্যাতীত ঘন ঘন মূর্ছা যাওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই প্রতিস্থাপনযোগ্য ইসিজি রেকর্ডারটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই রেকর্ডারটির ইসিজি রেকর্ড দেখার জন্য বাইরে থেকে একটি বিশেষায়িত যন্ত্রের সাহায্য নিতে হবে। সেই যন্ত্রের সাহায্যে ইসিজি যেকোনো সময় দেখা এবং প্রিন্ট নেওয়া যাবে। যন্ত্রটির নাম REVEAL এবং বিখ্যাত আমেরিকান কোম্পানি VITATRON এবং MEDTRONIC যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশি হূদেরাগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই যন্ত্রটি বাংলাদেশে হূদেরাগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এর আগে এ ধরনের যন্ত্র লাগানোর জন্য রোগীদের উন্নত বিশ্বে পাড়ি জমাতে হতো। যন্ত্রটি লাগানো থাকা অবস্থায় এমআরআই করার জন্য কোনো সমস্যা হবে না বলে উদ্ভাবক কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান।
হারানো চোখের সৌন্দর্যে
মানুষের চোখে প্রতিফলিত হয় ব্যক্তিত্ব, দুঃখ-কষ্ট আরও কত কী। মানুষের সৌন্দর্যের একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে এই চোখ।
এই মূল্যবান চোখ যদি কোনো আঘাত, দুর্ঘটনা বা জটিল কোনো রোগের জন্য হারাতে হয় তাহলে সেই মানুষটির যে কষ্টের আর শেষ থাকে না। চোখ না থাকার কারণে হীনম্মন্যতায় ভুগে রোগী ছেড়ে দেয় লেখাপড়া, খেলাধুলা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সব সামাজিক কাজকর্ম।
সবার মাঝে নিজেকে খুব একা ও নিঃসঙ্গ ভাবতে থাকে। তাই অনেকে কালো চশমা পরে সবার মাঝ থেকে আড়াল করে রাখতে চায় নিজেকে। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের মধ্যে আশার আলো জ্বেলে দিয়েছে একটি কাসটম মেইড কৃত্রিম চোখ। এই কৃত্রিম চোখের দৃষ্টিশক্তি নেই, কিন্তু এই চোখ রোগীর হতাশা, কষ্ট আর নিঃসঙ্গতাকে মুছে দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দিতে পারে হারানো সৌন্দর্য ও একটি সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন।
তাই একটি সুন্দর ও ব্যক্তিত্বময় জীবনের কামনায় বাংলাদেশে এখন সর্বাধুনিক কাসটম মেইড কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপন করা হয়।
যে কারণে কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপন:
সময়মতো সঠিক মাপের কৃত্রিম চক্ষু ব্যবহার না করার ফলে চক্ষুকোটর চারপাশের মাংসপেশি দ্বারা সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে সঠিক মাপের কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপনের জন্য তা অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই চক্ষু হারানোর সঙ্গে সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি সঠিক মাপের ও রঙের আসল চোখের মতো দেখতে (অন্য কেউ বুঝতে পারবে না এমন) একটি কৃত্রিম চোখ প্রতিস্থাপন করা উচিত।
সর্বসাধারণের কথা চিন্তা করে রেডিমেড কৃত্রিম চক্ষু বা পাথরের চোখ তৈরি করা হয়। কিন্তু তা আলাদা আলাদা রোগীর চক্ষুকোটরের মাপমতো হয় না এবং কৃত্রিম চোখটি ছোট-বড় হয়ে যায়, যা প্রতিস্থাপন করলে কৃত্রিমই মনে হয়। কিন্তু একটি কাসটম মেইড কৃত্রিম চোখ রোগীর চক্ষুকোটরের মাপ নিয়ে তৈরি হয়, ফলে তা পাশের চোখের সমান। স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে সক্ষম এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।
প্রতিটি ব্যক্তির আইরিশ/চোখের মণির রং এবং সাইজ ভিন্ন, যা রেডিমেড কৃত্রিম চক্ষুতে হয় না। কিন্তু কাসটম মেইড কৃত্রিম চক্ষু ব্যক্তির আসল চোখের মণির রং ও সাইজ সম্পূর্ণভাবে মিলিয়ে তৈরি করা হয়।
কাসটম মেইড কৃত্রিম চক্ষু স্ক্লেরা বা সাদা অংশের রং পাশের চোখের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয়, যা ব্যক্তিবিশেষে সাদা, নীলাভ সাদা, লালাভ সাদা, বাদামি বা হলুদাভ হয়ে থাকে। রেডিমেড কৃত্রিম চক্ষু সাধারণত সাদাই হয়।
কাসটম মেড কৃত্রিম চক্ষুতে ক্যাপেলারি বা রক্তজালিকা বিন্যাস পাশের চোখের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিস্থাপন করা হয়, যা রেডিমেড চক্ষুতে তেমন পাওয়া যায় না। বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বাধুনিক কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপন বিষয়ে যেসব চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে তা হলো:
১. কাসটম মেড অকিউলার প্রোসথেসিস কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপন:
বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বাধুনিক মানের যে কৃত্রিম চক্ষু পাওয়া যায় তা শুধু নির্দিষ্ট রোগীর চক্ষুকোটরের মাপ নিয়ে আসল চোখের সমান, একই রঙের ও সাইজের আইরিশ বা চোখের মণি, রক্তজালিকা বিন্যাসসহ স্ক্লেরা বা চোখের সাদা অংশের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয়। এটা স্বাভাবিক, নড়াচড়া করতে সক্ষম ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। জার্মানি অ্যাক্রিলিক ফাইবার দ্বারা তৈরি বলে এটি হালকা ও উন্নতমানের।
২. অরবিটাল প্রোসথেসিস (কৃত্রিম চক্ষু, চোখের পাতা, চোখের পাপড়ি প্রতিস্থাপন):
দুর্ঘটনা বা ক্যানসারের জন্য চোখ, চোখের পাতা, চোখের পাপড়ি, আইভ্রু অপারেশন (এক্সেনটারেশন) করে ফেলে দিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে রোগীর ত্বকের রঙের সঙ্গে মিল রেখে (সিলিকন বেজড) চোখ, চোখের পাতা, পাপড়ি ও আইভ্রু প্রতিস্থাপন করা হয়।
৩. রেলিনেবল চিলড্রেন অকিউলার প্রোসথেসিস: শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে তাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চক্ষুকোটরও বড় হয়। তাই শিশুদের কৃত্রিম চক্ষু এমনভাবে তৈরি, যা ক্রমবর্ধমান চক্ষুকোটরের মাপমতো নতুন চক্ষু না বানিয়ে বৃদ্ধি করা যায় বছরান্তে।
ছদ্ম মায়োপিয়া
ক্রিস্টিনা তাঁর ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ছেলেটি লেখাপড়ায় ভালো। ক্লাসে প্রথম হয়। ছেলের নাম রেখেছেন চেতনা। চেতনা পরীক্ষার পড়া ছাড়াও অন্যান্য বই পড়ে। পত্রপত্রিকার প্রতিও রয়েছে তার যথেষ্ট টান।
পরীক্ষা আসার সময় হলে ছেলের মাথাব্যথা বাড়ে। দূরের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। ক্রিস্টিনা ছেলের জন্য টিউটর রেখেছেন। ছেলেকে কোচিং সেন্টারেও দিয়েছেন। পরীক্ষার ঠিক আগে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়। ডাক্তার পরিচিত, চোখের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। প্রতিবারই চেতনাকে গ্লাস বদল করতে হয়। চেতনা চতুর্থ শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে চশমা নিয়েছিল। ওই সময় ছেলের লেন্সের পাওয়ার ছিল -০.৫০ ডিএস। সে এখন ক্লাস সেভেনে পড়ছে। ইতিমধ্যে চোখের চশমার পাওয়ার বেড়ে তা দাঁড়িয়ে -৭.
০ ডিএসে। চশমার পাওয়ারের এ ধরনের ক্রমাগত বাড়তিভাব দেখে ক্রিস্টিনা খুব টেনশনে রয়েছেন। স্বামীকে তাঁর দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেনও। স্বামী ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সময় নেই ছেলেকে নিয়ে চিকিত্সকের পরামর্শের জন্য চেম্বারে যাওয়ার। ক্রিস্টিনা সমস্যার কথা বললেই বলেন, ‘চিকিত্সকের কাছে যাও। চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করিয়ে নাও।’
চশমার পাওয়ার বৃদ্ধির পর কয়েক দিন ছেলে ভালো থাকে। দূরের দৃষ্টি বাড়ে। মনের প্রসন্নতায় পড়াশোনাটাও বেড়ে যায়। কিন্তু দিন কয়েকের ভেতর আবার সেই একই সমস্যা। দূরে কিছুই দেখতে পারছে না, মাথাব্যথা হচ্ছে।
কাছে পড়তে গিয়েও চোখ সামান্য সময়ের ভেতর ঝাপসা হয়ে আসে। চশমা বদলের ধারাবাহিকতায় এখন চেতনার চোখের চশমার কাচ বেশ পুরু হয়েছে। চশমার দিকে তাকালেই বোঝা যায়, চোখের পাওয়ার অনেক। ক্রিস্টিনা ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। ছেলের পাওয়ার ক্রমাগত বাড়তে থাকলে তা কোথায় গিয়ে যে দাঁড়াবে কে জানে? ক্রিস্টিনা শুনেছেন চোখের পাওয়ার ক্রমাগত বেড়ে চোখের রেটিনা নাকি নষ্ট হয়ে যায়, চোখ নাকি অন্ধ হয়ে যায়। ওপরের চিত্রে একজন মায়ের দুশ্চিন্তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে স্কুলগামী কৃতী ছাত্রের ক্রমাগত দৃষ্টি-হ্রাসের চিত্র। এবার দেখা যাক, আসলেই কি চেতনার চোখ দিন দিনই কথিত মাত্রায় খারাপ হয়েছে?
চোখের মাইনাস পাওয়ার
দৃশ্যমান বস্তু থেকে অসংখ্য আলোকরশ্মি আমাদের চোখে আপতিত হয়। এ রশ্মি প্রতিসরিত হয়ে চোখের অভ্যন্তরে রেটিনায় প্রতিবিম্ব তৈরি করে। এই প্রতিবিম্ব দৃষ্টিস্নায়ুর সাহায্যে মস্তিষ্কে প্রেরিত হয়ে দৃশ্যমান বস্তু সম্পর্কে দৃষ্টির অনুভূতি তৈরি করে। এসব আলোকরশ্মি যখন রেটিনার সামনে প্রতিবিম্বিত হয় তখন তা স্বাভাবিক দৃষ্টির অনুভূতি তৈরি করে না। এ ক্ষেত্রে ‘মাইনাস’ লেন্স চোখের চশমায় লাগিয়ে আপতিত রশ্মিকে রেটিনায় ফেলা হলে তা সঠিক অনুভূতি তৈরি করে। মাইনাস লেন্সকে আমরা ‘মাইনাস পাওয়ার’ বলে থাকি। চোখের মাইনাস পাওয়ারের অবস্থানকে ‘মায়োপিয়া’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
ছদ্ম মায়োপিয়া
অনেক সময় স্বল্পমাত্রার চোখের পাওয়ারের অসুবিধা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে চোখ নিজস্ব প্রয়াস চালায়। চোখের অভ্যন্তরে এক ধরনের মাংসপেশি রয়েছে, যা এ ক্ষেত্রে চোখের অভ্যন্তরে লেন্সের আকৃতি পরিবর্তন করে পাওয়ারজনিত সমস্যার নিরসন করে থাকে। চোখের অভ্যন্তরে মাংসপেশির সংকোচন এ কাজটি করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় পেশির সংকোচন দীর্ঘ সময়ব্যাপী ক্রিয়াশীল থাকলে তা চোখ ব্যথাসহ মাথাব্যথার উপসর্গ তৈরি করে। কেবল তাই নয়, তা দেখার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করে। চোখ তখন দূরের জিনিস ঝাপসা দেখতে শুরু করে। এই যে চোখের অভ্যন্তরে পেশির সংকোচনের কারণে সমস্যাটির সৃষ্টি হলো, এটি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণিত স্বল্প পাওয়ারের সমস্যাকে অধিক পাওয়ারের সমস্যায় রূপান্তরিক করে। পেশির অস্বাভাবিক সংকোচন সারিয়ে তুললে এ সমস্যাটি আর থাকে না। এ ক্ষেত্রে চোখের চিকিৎসক যদি তা না করে কেবল পাওয়ারের ত্রুটি নিরসনের জন্য চশমার পাওয়ার বদল করেন তাহলে সমস্যার মূল নিসরন হয় না। সাময়িক উপশমের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নতুন সমস্যা তৈরি হয়। অর্থাত্ চোখের অভ্যন্তরে পেশির সংকোচন মাত্রাকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি এক ধরনের দুষ্টচক্র তৈরি করে। এ রকম ক্ষেত্রে মাইনাস পাওয়ারের অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। এই অবস্থানকে ‘ছদ্ম মায়োপিয়া’ বলা হয়। অনেক সময় এ অবস্থা শিশুদের চোখের একটানা অতিরিক্ত ব্যবহার থেকেও ঘটতে পারে। আমাদের গল্পের ক্রিস্টিনার ছেলে চেতনার ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। চেতনার পাওয়ারের ত্রুটি ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে কম। তার একটানা পড়ার অভ্যাস, চোখের বিশ্রাম না নিয়ে চিকিত্সকের কাছে গিয়ে পাওয়ার বদল তাকে ছদ্ম মায়োপিয়ার রোগীতে পরিণত করেছে।
এ ক্ষেত্রে যা করণীয়
ছেলেমেয়েদের কাছের কাজ (যথা পড়াশোনা, কম্পিউটার, গেম ইত্যাদি) একটানা বেশি সময় করতে দেওয়া যাবে না।
পড়াশোনার ফাঁকে চোখের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।
কম আলোতে পড়াশোনা করা থেকে বিরত রাখতে হবে।
চোখের চিকিত্সকের কাছে চোখ পরীক্ষার জন্য নেওয়ার আগে চোখের বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরও উচিত, রোগীকে সময় দিয়ে উপসর্গ শোনা ও চোখ পরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া।
চোখে ঠিকমতো দেখতে না পাওয়া
বস্তু থেকে সমান্তরাল আলোক রশ্মি চোখের কর্ণিয়া বা কালো রাজার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বেঁকে যায় এবং চোখের লেন্সের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় দ্বিতীয় বার বেঁকে চোখের রেটিনায় বস্তুর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে বিধায় আমরা ওই বস্তুটি দেখতে পাই। আলোক রশ্মির এই পথ যদি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে যে কোন গঠনগত পরিবর্তন বা কোন রোগ যদি না থাকে সে ক্ষেত্রে চশমা দিয়ে সে দৃষ্টির উন্নয়ন সম্ভব। তখন সেটাকে রিফ্রাকটিভ ইয়ব বা পাওয়ার জনিত দৃষ্টি স্বল্পতা বলা হয়। এটি সাধারণত চার ধরনের হয় মায়োপিয়া (ক্ষীণদৃষ্টি), হাইপারোপিয়া (দূরদৃষ্টি), প্রেসবায়োপিয়া বা চালশে এবং অ্যাসটিগমেটিজম।
মায়োপিয়াঃ এ ধরনের রোগীরা কাছে মোটামুটি ভাল দেখতে পারলেও দূরে ঝাপসা দেখে, তাই এদের ঋীণদৃষ্টি বলা হয়। অবতল লেন্স বা মাইনাস পাওয়ারের চশমা পড়লে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। যাদের চোখে ছয় ডায়াপটারের বেশী মাইনাস পাওয়ারের লেন্স লাগে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে চোখের পাওয়ার ও বাড়তে থাকে তখন তাকে প্যাথলজিকাল মায়োপিয়া বলা হয়। সেক্ষেত্রে চোখের দেয়াল বা স্ক্লেরা পাতলা হয়ে যায় এবং রেটিনাতে ছিদ্র সৃষ্টি হয়ে পরবর্তীতে রেটিনা আলাদা হয়ে গিয়ে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। মায়োপিয়াতে চোখের আকার বড় হওয়া কারণে চোখের দেয়াল পাতলা হয়ে যায়। সেজন্য সামান্য আঘাতেই চোখে অনেক মারত্বক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং মায়োপিয়া রোগীদের সবসময় চোখের আঘাত থেকে সাবধান থাকতে হবে এবং নিয়মিতভাবে ডাক্তারের পরামর্শে চোখের পাওয়ার পরীক্ষা এবং রেটিনার পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল।
হাইপারোপিয়াঃ এ ধরনের রোগীরা দূরে এবং কাছের উভয় দিকেই ঝাপসা দেখে এবং অফিসিয়াল কাজ করার সময় রোগীর চোখের উপর চাপ পড়ার কারণে মাথা ব্যাথার অনুভূতি হয়। স্বাভাবিক চোখের চেয়ে একটু ছোট থাকে, যদিও ওটা বোঝা যায়না। উত্তল বা প্লাস লেন্সের চশমা ব্যবহার করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।
অ্যাসটিগ ম্যাটিসমঃ এটি এক ধরনের দৃষ্টি স্বল্পতা, যাতে রুগীর কর্ণিয়ার সে কোন একদিকে (লম্বদিকে, প্রস্থে অথবা কোণাকোনি) পাওয়ার পরিবর্তন হয় বলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। এর কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, একটি জিনিসকে দুইটি দেখা এবং মাথা ব্যাথা হতে পারে। সিলিন্ডার লেন্স ব্যবহারে এ সমস্যার সমাধান হয়।
প্রেসবায়োপিয়াঃ এতে বয়সজনিত চোখের গঠনগত পরিবর্তনের কারণে চোখের লেন্সের ইলাসটিসিটি বা স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়, ফলে লেন্সের প্রয়োজনে (বিশেষ করে কাছের জিনিস দেখার জন্য) আকার পরিবর্তন করার ক্ষমতা কমে যায় এবং কাছের জিনিস ঝাপসা দেখায়। চল্লিশ বছরের পর এ সমস্যা দেখা যায় বলে একে চালসে রোগ বলা হয়। শুধু কাছের জিনিস দেখার জন্য (বিশেষ করে পড়াশুনার জন্য) উত্তল বা প্লাস লেন্স ব্যবহার করলে এ সমস্যার সমাধান হয়। বয়স বড়ার সাথে সাথে চশমার পাওয়ার ও পরিবর্তন হয়।
চিকিৎসা
০ ডাক্তারের পরামর্শে রোগের ধরণ অনুযায়ী পাওয়ার চেক করে চশমা ব্যবহার করা যেতে পারে।
০ চশমা যারা পড়তে চায়না, তারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার বিধি একটু জটিল বিধায় অনেকের পক্ষে ব্যবহার করা হয়ে ওঠেনা।
০ বর্তমানে লেজসার সার্জারীর মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। এক্সাইমার লেজসার ব্যবহার করে চোখের পাওয়ার পরিবর্তন করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। একে ল্যাসিক রিক্সাকটিভ সার্জারী বলা হয়। এর মাধ্যমে ১২ ডায়াপটার পর্যন্ত মায়োপিয়া, ৫ ডায়াপটার পর্যন্ত অ্যাসটিকমেটিসম এবং ৪ ডায়াপটার পর্যন্ত হাইপারোপিয়ার চিকিৎসা সম্ভব। সবছেয়ে বড় সুবিধা হল, ল্যাসিক করার পর সাধারণত চশমা অথবা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়েনা।
মনে রাখতে হবে
০ বাচ্চাদের দৃষ্টি স্বল্পতার তড়িৎ চিকিৎসা প্রয়োজন, না হয় অলস চোখের কারণে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে কমে যেতে পারে।
০ কাছ থেকে সে সব শিশু টেলিভিশন দেখে অথবা টেলিভিশন দেখার সময় চোখ টেরা হয়ে যায় এবং চোখ থেকে পানি পড়ে, তাদের তাড়াতাড়ি চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল।
০ মাথা ব্যাথা চোখের পাওয়ার পরিবর্তনের লক্ষণ, সুতরাং মাথা ব্যাথা হলে একবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভাল।
০ ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রন না থাকলে চশমা ব্যবহার করে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়না, কারণ এতে ঘন ঘন চোখের পাওয়ার পরিবর্তন হয়।
০ যারা নতুন নতুন চশমা ব্যবহার শুরু করবেন তাদের চশমাতে অভ্যস্ত হতে ১০-১৫ দিন সময় লেগে যায়, এ সময়ে চশমা ব্যবহার অস্বস্থি লাগলেও এটি ব্যবহার বন্ধ করা ঠিক নয়।
০ যারা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে চান, তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার বিধি মেনে ব্যবহার করবেন।
০ সব রুগীরা সবসময় ল্যাসিক করা সম্ভব হয়না, ডাক্তারের পরামর্শে ল্যাসিক সেন্টারে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চোখ ল্যাসিক যোগ্য হলেই একমাত্র ল্যাসিক সার্জারী করা হয়।
বাতব্যথায় চোখের সমস্যা
বাতরোগ হল হাঁড় এবং মাংসপেশী সম্পর্কিত। এর সাথে আবার চোখের সম্পর্ক কোথায়? ভাবতেই অবাক লাগছে তাই না? শরীরের এমন অনেক রোগ আছে যাতে চোখের সমস্যাও একটা প্রধান ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
যেসব বাতরোগে চোখের সমস্যা হয়ঃ
রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস-এতে সাধারণত হাড় এবং পায়ের ছোট জয়েন্টে প্রদাহ হয়, তার সাথে চোখের শুষ্কতা, স্ক্লেরাইটিস (চোখের সাদা অংশের প্রদাহ), কেরাটাইটিস (চোখের কর্ণিয়ার প্রদাহ) ইত্যাদি হতে পারে।
জুভেনাইল আরথ্রাইটিস হাঁটু এবং পায়ের গোড়ালিসহ ছোট বড় বিভিন্ন জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টিকারী এই রোগ সাধারণত ১৬ বছরের কম ছেলে-মেয়েদের বেশি হয়। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখে ব্যথাযুক্ত প্রদাহ বা ইউভাইটিস হতে পারে।
এনকাইলোসিং স্পনডাইলাইটিস- মাজায় ব্যথা এবং প্রদাহ সৃষ্টিকারী এই রোগে শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে চোখের সমস্যা হতে পারে। এতে চোখে ইউভাইটিস এবং স্ক্লেরাইটিস হতে পারে।
রিটার সিনড্রম- এই রোগে হাঁটু, পায়ের গোড়ালি, পায়ের আঙ্গুল ইত্যাদি অংশ হঠাৎ করে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। সাথে সাথে চোখের কনজাংকটিভা, সাদা স্কেরা, কর্ণিয়া, ইউভিয়া, দৃষ্টি স্নায়ু এমনকি রেটিনাতেও প্রদাহ হতে পারে।
চোখের সমস্যা কিভাবে বুঝবেন?
শুষ্ক চোখ- চোখে জ্বালাপোড়া, কচকচ করা, ময়লা জমা, চোখের পানি কমে যাওয়া ইত্যাদি চোখের শুষ্কতার লক্ষণ।
কর্ণিয়া ঘা- বাতরোগের সাথে সাথে কোন কোন ক্ষেত্রে চোখের কালোরাজাতে ঘা হতে পারে। চোখে ব্যথা হওয়া, পানি পড়া, আলোতে চোখ খুলতে না পারা ইত্যাদি কর্ণিয়া ঘা-এর লক্ষণ।
স্কেরাইটিস- চোখের সাদা অংশ হঠাৎ করে লাল হওয়া, প্রচন্ড ব্যথা করা, চোখ নাড়াতে অসুবিধা হওয়া এই রোগের লক্ষণ। বাতের ব্যথার সাথে সাথে আক্রান্ত চোখেও ব্যথা শুরু হয়।
ইউভাইটিস- চোখের ভেতরে রক্তনালী পূর্ণ স্তরের প্রদাহকে ইউভাইটিস বলা হয়। বাতরোগের সাথে সবচেয়ে কমন চোখের রোগ এটি। দুই চোখে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া, চোখে লাল হওয়া, আলো সহ্য করতে না পারা ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। এই রোগের কারণে কর্ণিয়ার পেছনে পূঁজ জমে এবং চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে রোগী অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
করণীয় প্রথমত ডাক্তারের পরামর্শে বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন রক্ত পরীক্ষা, জয়েন্ট এক্সরে করার মাধ্যমে বাতরোগের ধরন সনাক্ত করতে হবে। তারপর সেই রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে। ডাক্তার সাধারণত ব্যথার ওষুধ ছাড়াও বিভিন্ন ডিজিজ মডিফাইং ওষুধ, ইমুনোসাপ্রেসর ওষুধ ইত্যাদি সেবনের পরামর্শ দেন। নিয়মিত এসব ওষুধ সেবনে রুগী অনেক আরামবোধ করেন। ডাক্তারের পরামর্শে কিছু প্রয়োজনীয় ব্যায়াম করা যেতে পারে।
বাতরোগ বাড়ার সাথে সাথে চোখে সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। সময়মত চিকিৎসা শুরু করা না গেলে চোখের প্রদাহের কারণে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাধারণত একসাথে দুই চোখ, আবার একটির পর আরেকটি আক্রান্ত হতে পারে। বাতরোগের চিকিৎসার সাথে সাথে আক্রান্ত চোখের চিকিৎসা জরুরি।
এট্টোপিন আই ড্রপ কর্ণিয়ার ঘা এবং ইউভাইটিস দুইটি রোগের কার্যকরী। স্টেরইড ড্রপ-এর নিয়মতান্ত্রিক ব্যবহারে চোখের প্রদাহ অনেকাংশে কমে আসে। চোখের চাপ বেড়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিগস্নুকোমা ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। চোখের প্রদাহের কারণে লেন্সে ছানি পড়তে পারে। এতে দৃষ্টি কমে যেতে পারে। আইড্রপ ব্যবহার করে চোখের প্রদাহ কমলে ছানি অপসারণ এবং কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি অনেকাংশে ফিরে পাওয়া সম্ভব। বাতরোগের চিকিৎসায় যারা অনেকদিন ধরে স্টেরইড সেবন করেন তাদের চোখে ছানি এবং গস্নুকোমা রোগ হতে পারে। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত অনিয়ন্ত্রিত স্টেরইড সেবন করা উচিত নয়।
ছানি অপারেশনঃ কৃত্রিম লেন্সের দাম ও কার্যকারিতা
হালিমা খাতুন (ছদ্মনাম) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পঞ্চাশের ওপর বয়স। এ বয়সেই তাঁর চোখে ছানি পড়েছে। ফলে ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারেন না। তিনি জেনেছেন ছানি রোগের ভালো চিকিৎসা হচ্ছে আজকাল। আগের মতো আর অপারেশনের পর দুই দিন সটান শুইয়ে রাখা হয় না। এরপর মাস দেড়েক পর মোটা কাচের চশমা ব্যবহার করতেও হয় না। আগে হাজার পাওয়ারের ওপরে, ওই চশমা হারিয়ে গেলে নতুন চশমা না নেওয়া অবধি অচল থাকতে হতো। আজকাল আর এসব নেই। চোখে অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিম লেন্স সংযোজন করা হয়। ফলে রোগী অস্ত্রোপচার সম্পন্নের দিন থেকেই দেখতে শুরু করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক দিনের মতো চোখ ঢেকে রাখা হয়, পরের দিন থেকেই দৃষ্টি লাভ! কৃত্রিম লেন্স সংযোজনের দরুন পুরোপুরি দৃষ্টিপ্রাপ্তি সম্ভব। অর্থাৎ তরুণ বয়সের দৃষ্টিশক্তির মতোই দৃষ্টিশক্তি পাওয়া যায়। হালিমা খাতুন এসব জেনেই এসেছেন ছানির অপারেশন করাতে।
হালিমা খাতুন যথারীতি হাসপাতালে ভর্তি হন। অপারেশনের আগের দিন তাঁর চোখের লেন্সের পাওয়ারের মাপ নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে তিনি জেনেছেন, চোখে যে লেন্স সংযোজন করা হয় তা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। লেন্সের প্রকারভেদে মূল্য ২০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। হালিমা বাড়ি থেকে যে টাকা নিয়ে এসেছেন, তাতে ১৫ হাজার টাকার লেন্স সংযোজন সম্ভব নয়। সাধারণভাবেই তাঁর ধারণা, ১৫ হাজার টাকার লেন্স নিশ্চয়ই ২০০ টাকার লেন্সের চেয়ে অনেক ভালো।
তাঁর মনে দ্বিধা জন্মায়। একবার ভাবেন এযাত্রায় অস্ত্রোপচার না করিয়ে বাড়ি গিয়ে ধারদেনা করে টাকা নিয়ে এসে ওই ১৫ হাজার টাকার লেন্সই চোখে লাগাবেন। আবার ভাবেন, বেতনের টাকার বাইরে তেমন তো তাঁর আয় নেই! ধার করা টাকা পরিশোধ করতে বেতনের টাকায় বেশ কমাস লাগবে। কাজেই প্রয়োজন কী? তিনি তাঁর চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। চিকিৎসক জানান, চোখের ভেতর ঠিকমতো পৌঁছতে পারলে ১৫ হাজার টাকার লেন্স যা করবে, ২০০ টাকার লেন্স তা-ই করবে।
ওপরের ঘটনাটি থেকে বোঝা যায় যে রোগীরা আধুনিক চিকিৎসালয়ে এসে এক ধরনের বিভ্রান্তির শিকার হন। লেন্সের মূল্যের তারতম্যে এ বিভ্রান্তি আসাটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ বিদেশি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জিনিসের প্রতি দুর্বল। যুক্তরাষ্ট্রের লেন্স নিশ্চয়ই ভারতের লেন্সের চেয়ে ভালো! কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের লেন্স লাগাবেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত অনেক সময় নিয়ে ফেলেন রোগীরা।
এ ক্ষেত্রে লেন্স সম্পর্কে রোগীদের মনে সৃষ্ট এ বিভ্রান্তি নিরসনে চিকিৎসকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকেরই দায়িত্ব হলো রোগীকে বুঝিয়ে বলা যে লেন্সের মূল্যের তারতম্য লেন্সের কার্যকারিতায় তেমন কোনো ভূমিকা পালন করে না। ২০০ টাকার ভারতীয় লেন্সের সঙ্গে দুই হাজার ২০০ টাকার যুক্তরাষ্ট্রের লেন্সের কার্যকারিতায় কোনো তফাত নেই। লেন্স সংযোজনে কোনো অসুবিধা না হলে উভয় ক্ষেত্রে সমপর্যায়ের দৃষ্টিশক্তি লাভ করা যায়। তবে লেন্স পছন্দের ক্ষেত্রে রোগীর পছন্দের স্বাধীনতা অবশ্যই থাকা দরকার।
এবার আবার হালিমা খাতুনের প্রসঙ্গে আসি। হালিমা খাতুন চিকিৎসকের মন্তব্য শুনে কিছুটা আশঙ্কামুক্ত হন। তিনি তাঁর নিয়ে আসা টাকায়ই অস্ত্রোপচারের যাবতীয় খরচ নিষ্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। এর পরও তাঁর মনে একরকম খুঁত থাকে-নিশ্চয়ই ১৫ হাজার টাকার লেন্সটা হয়তো ভালো। তাঁর পাশের শয্যার ব্যবসায়ী সন্তানের মাকে ওই লেন্স লাগানো হবে। আবার তাঁর অদূরে এক পোশাকশ্রমিকের মায়ের চোখে লাগানো হবে ২০০ টাকার লেন্স।
একই দিনে তাঁদের সবার চোখে লেন্স সংযোজন হয়। একই সার্জন তা করেন। পরের দিন অস্ত্রোপচারকৃত সব রোগীর চক্ষু পরীক্ষার কক্ষে নিয়ে আসা হয়। তালিকা দেখিয়ে রোগীদের দৃষ্টি মাপা হয়। হালিমা দেখলেন তাঁর দৃষ্টি, তাঁর পাশের ব্যবসায়ীর মায়ের দৃষ্টি ও পোশাকশ্রমিকের মায়ের দৃষ্টিতে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থাৎ ১৫ হাজার টাকা, দুই হাজার ২০০ টাকা, ২০০ টাকার লেন্সের কার্যকারিতা একই স্তরের।
এবার হালিমা খাতুনের মনে আর দ্বন্দ্ব নেই। তিনি ছুটির কাগজপত্র নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হন। সঙ্গে নিয়ে যান কৃত্রিম লেন্স সম্পর্কে এক রকম ধারণা। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর পরিচিত ছানি রোগীদের এ বার্তাটাই দেবেন যে লেন্সের কার্যকারিতায় দামের পার্থক্যের তেমন কোনো ভূমিকা নেই
শিশুর চোখের সমস্যা
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। ভবিষ্যত এই প্রজন্মের সুস্থতার উপর দেশ ও দশের এগিয়ে যাওয়া অনেকাংশে নির্ভরশীল। শারীরিক ও মানষিক সুস্থতার পাশাপাশি চোখের সুস্থতাও সমান গুরুত্ব বহন করে।
গুরুত্বঃ দৃষ্টিহীন শিশুকে অন্যের উপর নির্ভর করে সারাজীবন কাটাতে হয়। এতে দেশ দুই জন মানুষের পূর্ণাঙ্গ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়াও পর নির্ভরশীলতার কারণে শিশু মানষিকভাবেও বির্পযস্ত হয়ে পড়ে।
দৃষ্টিস্বল্পতার কারণ: জন্মগত ছানি পাওয়ার জনিত দৃষ্টিস্বল্পতা কর্ণিয়ার ঘা চোখে আঘাত চোখের ক্যান্সার (রেটিনোব্লাস্টমা) চোখের প্রদাহ (ইউভাইটিস) শিশুর চোখের অন্যান্য সমস্যাগুলোর মধ্যে চোখের চুলকানী বা অ্যালার্জী এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া অন্যতম।
ছানিঃ জন্মের পর পর বা কিছুদিন পর এক বা উভয় চোখে সাদা আস্তর দেখা যাওয়া ছানিরোগের লক্ষণ। ডেলিভারীর সময় চোখে আঘাতের কারণে, গর্ভকালীন মায়ের রুবেলা জ্বর, বিভিন্ন ওষুধ সেবন এবং বংশগত কারণে শিশুর চোখের ছানি পড়তে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করে পরবর্তীতে সময়মত কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। অপারেশনের বিলম্বের কারণে চিরতরে শিশু দৃষ্টি হারাতে পারে।
পাওয়ার জনিত দৃষ্টিস্বল্পতা: ঘনঘন চোখ নড়াচড়া করা, চোখ বেঁকে যাওয়া, বস্তু অনুসরণ না করতে পারা, ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, কাছে গিয়ে টেলিভিশন দেখা, মাথাব্যাথা করা ইত্যাদি দৃষ্টিস্বল্পতা লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চশমা ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
কর্ণিয়ার ঘা: অপুষ্টি জনিত কারণে ভিটামিন এর অভাবে দুই চোখে ঘা হতে পারে। এছাড়াও ডেলিভারীর সময়ে চোখে আঘাতের কারণে এবং জন্মের পরে যে কোন সময়ে জীবানু সংক্রমনের কারণে চোখে ঘা হতে পারে। চোখে ব্যথা, আলোতে চোখ খুলতে না পারা, চোখ লাল হওয়া, কালোমনিতে সাদা দাগ পড়া এ রোগের লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শে চোখের জীবানু পরীক্ষা করে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব।
চোখের ক্যান্সারঃ বিড়ালের চোখের মত চোখ জ্বল জ্বল করা, চোখ লাল হওয়া এই রোগের লক্ষণ, চোখে ব্যথা হওয়া, চোখ বেঁকে যাওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি চোখের ক্যান্সার বা রেটিনোব্লাসটোয়ার লক্ষণ। এই সব লক্ষণ দেখামাত্র দেরী না করে চক্ষু বিশেজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। চোখের ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়লে জীবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
চোখের এলার্জী :ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, চোখ কচলানো, চোখ লাল হওয়া, শুষ্ক মৌসুমে এই রোগ রোগ বেশী দেখা যায়। বছরে ২/৩ বার চোখে অযালার্জী হতে পারে। ধুলাবালি, ধুঁয়া, বিভিন্ন খাবার এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থে শরীরে এবং চোখে অযালার্জী হতে পারে।
চোখ দিয়ে পানি পড়া: জন্মগতভাবে চোখের পানি সরে যাবার নেত্রনালী বন্ধ থাকলে চোখের পানি উপচে পড়ে। এতে চিন্তিত হবার কিছু নাই। ১-২ বছরের মধ্যে বন্ধনালী আপনাতেই খুলে গেলে চোখের পানি পড়া অনেকাংশে কমে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চোখের কোণায় মালিশ করা এবং চোখে ড্রপ ব্যবহারে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। পরিশেষে বলতে হয়, শিশুরা অনেক কিছু বলে বোঝাতে পারেনা। ফলে তাদের সমস্যাগুলো অপ্রকাশ্যই থেকে যায়। এ সকল সমস্যা শেষ পর্যন্ত শিশুর অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং শিশুর দৃষ্টি অধিকার রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।
চোখের সমস্যা – চোখ খুব চুলকায়
সমস্যা: আমার বয়স ২০ বছর। পাঁচ বছর হলো চোখের সমস্যায় ভুগছি। সমস্যা হলো, চোখ খুব চুলকায়। এই সমস্যা চোখের পাতা এবং চোখের নিচে। চোখের পাতা ফুলে গেছে এবং লাল হয়ে গেছে। চোখ ব্যথা করে এবং সব সময় জ্বর থাকে। বিশেষ করে কপালটা বেশি গরম থাকে।
চোখটা কোটরের মধ্যে বসে গেছে। ডাক্তার দেখিয়েছি, কোনো কাজ হয়নি। বেটাসন-এন মেথাসন-এন এবং সোনেক্সা ব্যবহার করে কাজ হয়নি। দেখতে কোনো অসুবিধা নেই। উল্লেখ্য, ১৫-১৬টি দাঁত ডাক্তার দিয়ে তোলা হয়েছে।
ইমরান
কুষ্টিয়া
সমাধান: আপনার সমস্যাটা চোখের পাতার রোগ হতে পারে, যেমন ব্লেফারাইটিস। চোখের পাতায় পাপড়ির গোড়ায় খুশকিজাতীয় ছোট ছোট সাদা জিনিস জমে। এর জন্য চোখ খুবই চুলকায়। এর সঙ্গে মাথায়ও খুশকি থাকতে পারে। নখ দিয়ে চুলকানোর ফলে চোখের পাতার পাপড়ির গোড়ার চামড়া উঠে যায়, পাতা ফুলে যায়, লাল হয় এবং ব্যথাও হয়। পরবর্তী সময়ে পাপড়ির গোড়ায় ঘাও হতে পারে। তবে এর সঙ্গে জ্বরের ও দাঁত তোলার কোনো সম্পর্ক নেই।
কোনো সময়ই নখ দিয়ে চোখের পাতা চুলকানো যাবে না। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে খুব ভালো করে চোখের পাতার গোড়া পরিষ্কার করতে হবে।
এ ছাড়া অ্যালার্জিজনিত কারণেও চোখ চুলকাতে পারে। চোখ চুলকানোর জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট খেতে পারেন। অবশ্যই চক্ষুবিশেষজ্ঞ দেখিয়ে পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
চোখ উঠলেই আঁতকে ওঠা নয়
চোখ ওঠা রোগকে চিকিৎসাশাস্ত্রে কনজাংটিভাইটিস বা পিংক আই বলে। রোগটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। কখনো কখনো রোগটি ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি কিংবা কেমিক্যালের কারণেও হতে পারে।
এটা এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির ধরা বস্তু ও পানির মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পাড়ে।
প্রধান উপসর্গের মধ্যে চোখ লাল হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং চোখের কোণে ময়লা জমা উল্লেখযোগ্য।
অ্যালার্জিজনিত কারণে চোখ উঠলে প্রধান চিকিৎসা হলো চোখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে। এবং এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো নন-স্টেরয়েড অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ অথবা অ্যান্টি হিস্টামিন দেওয়া যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে চোখ উঠলে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়। আর যদি রোগটি তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় অ্যান্টিবায়োটিক চোখের ড্রপ অথবা মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। ভাইরাসজনিত কারণে চোখ ওঠার নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এ ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি এবং কৃত্রিম চোখের পানি দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
কেমিক্যালের কারণে চোখ ওঠার ক্ষেত্রে রিঙ্গার ল্যাকটেট অথবা স্যালাইন পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। কোন কারণে চোখ উঠেছে নিশ্চিত হতে হলে করতে হবে সোয়াব কালচার পরীক্ষা। প্রায় ৬৫ ভাগ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই চোখ ওঠা ভালো হয়ে যায়। এবং রোগটি স্থায়ী হতে পারে দুই থেকে পাঁচ দিন। তাই এই রোগ নিয়ে সত্যিই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
চোখ উঠলেই আঁতকে ওঠা নয়
চোখ ওঠা রোগকে চিকিৎসাশাস্ত্রে কনজাংটিভাইটিস বা পিংক আই বলে। রোগটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। কখনো কখনো রোগটি ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি কিংবা কেমিক্যালের কারণেও হতে পারে।
এটা এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির ধরা বস্তু ও পানির মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পাড়ে।
প্রধান উপসর্গের মধ্যে চোখ লাল হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং চোখের কোণে ময়লা জমা উল্লেখযোগ্য।
অ্যালার্জিজনিত কারণে চোখ উঠলে প্রধান চিকিৎসা হলো চোখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে। এবং এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো নন-স্টেরয়েড অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ অথবা অ্যান্টি হিস্টামিন দেওয়া যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে চোখ উঠলে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়। আর যদি রোগটি তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় অ্যান্টিবায়োটিক চোখের ড্রপ অথবা মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। ভাইরাসজনিত কারণে চোখ ওঠার নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এ ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি এবং কৃত্রিম চোখের পানি দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
কেমিক্যালের কারণে চোখ ওঠার ক্ষেত্রে রিঙ্গার ল্যাকটেট অথবা স্যালাইন পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। কোন কারণে চোখ উঠেছে নিশ্চিত হতে হলে করতে হবে সোয়াব কালচার পরীক্ষা। প্রায় ৬৫ ভাগ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই চোখ ওঠা ভালো হয়ে যায়। এবং রোগটি স্থায়ী হতে পারে দুই থেকে পাঁচ দিন। তাই এই রোগ নিয়ে সত্যিই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
চোখের জ্বালাপোড়ায় করণীয়
কারণ কী?
চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া
চোখের অ্যালার্জি
বাতরোগ
চোখের পাপড়ির গোড়ায় প্রদাহ
চোখের অপারেশন
ঘুমের সময় চোখ বন্ধ না হওয়া
চোখের কালো মণিতে ভাইরাস সংক্রামণ
কালো ধোঁয়া, ধুলোবালি চোখে পড়লে
চোখে রাসায়নিক পড়লে। যেমন—চুন, এসিড ইত্যাদি
চোখে ওষুধের রিঅ্যাকশন হলে (স্টিভেন জনসন সিনড্রোম)
চোখের ড্রপ ব্যবহারেও প্রাথমিক অবস্থায় চোখ জ্বলতে পারে।
করণীয়
রাস্তাঘাটের কালো ধোঁয়া ও ধুলোবালি থেকে চোখ রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
চোখের পানি কমে গেলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চোখে কৃত্রিম চোখের পানি ড্রপ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণ যেমন—বাতরোগ, শোগ্রেন সিনড্রোম ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করাতে হবে।
সালফার-জাতীয় ওষুধে যাদের অ্যালার্জি আছে, তাদের তা বর্জন করতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের অ্যালার্জি এবং কর্নিয়ায় ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা করাতে হবে।
চোখ বেশিক্ষণ বন্ধ রাখলে অনেক ক্ষেত্রে চোখের জ্বালা কমে। সে জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।
চোখে কেমিক্যাল পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চোখে বেশি করে পানি দিয়ে অনেক সময় ধরে ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চোখে ড্রপ দেওয়ার কারণে চোখ জ্বললে ভয় পাবেন না। আস্তে আস্তে কমে যাবে। মূল রোগের চিকিৎসা বন্ধ করবেন না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
শিশুর চোখের সমস্যা
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। ভবিষ্যত এই প্রজন্মের সুস্থতার উপর দেশ ও দশের এগিয়ে যাওয়া অনেকাংশে নির্ভরশীল। শারীরিক ও মানষিক সুস্থতার পাশাপাশি চোখের সুস্থতাও সমান গুরুত্ব বহন করে।
গুরুত্বঃ দৃষ্টিহীন শিশুকে অন্যের উপর নির্ভর করে সারাজীবন কাটাতে হয়। এতে দেশ দুই জন মানুষের পূর্ণাঙ্গ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়াও পর নির্ভরশীলতার কারণে শিশু মানষিকভাবেও বির্পযস্ত হয়ে পড়ে।
দৃষ্টিস্বল্পতার কারণ: জন্মগত ছানি পাওয়ার জনিত দৃষ্টিস্বল্পতা কর্ণিয়ার ঘা চোখে আঘাত চোখের ক্যান্সার (রেটিনোব্লাস্টমা) চোখের প্রদাহ (ইউভাইটিস) শিশুর চোখের অন্যান্য সমস্যাগুলোর মধ্যে চোখের চুলকানী বা অ্যালার্জী এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া অন্যতম।
ছানিঃ জন্মের পর পর বা কিছুদিন পর এক বা উভয় চোখে সাদা আস্তর দেখা যাওয়া ছানিরোগের লক্ষণ। ডেলিভারীর সময় চোখে আঘাতের কারণে, গর্ভকালীন মায়ের রুবেলা জ্বর, বিভিন্ন ওষুধ সেবন এবং বংশগত কারণে শিশুর চোখের ছানি পড়তে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করে পরবর্তীতে সময়মত কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। অপারেশনের বিলম্বের কারণে চিরতরে শিশু দৃষ্টি হারাতে পারে।
পাওয়ার জনিত দৃষ্টিস্বল্পতা: ঘনঘন চোখ নড়াচড়া করা, চোখ বেঁকে যাওয়া, বস্তু অনুসরণ না করতে পারা, ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, কাছে গিয়ে টেলিভিশন দেখা, মাথাব্যাথা করা ইত্যাদি দৃষ্টিস্বল্পতা লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চশমা ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
কর্ণিয়ার ঘা: অপুষ্টি জনিত কারণে ভিটামিন এর অভাবে দুই চোখে ঘা হতে পারে। এছাড়াও ডেলিভারীর সময়ে চোখে আঘাতের কারণে এবং জন্মের পরে যে কোন সময়ে জীবানু সংক্রমনের কারণে চোখে ঘা হতে পারে। চোখে ব্যথা, আলোতে চোখ খুলতে না পারা, চোখ লাল হওয়া, কালোমনিতে সাদা দাগ পড়া এ রোগের লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শে চোখের জীবানু পরীক্ষা করে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব।
চোখের ক্যান্সারঃ বিড়ালের চোখের মত চোখ জ্বল জ্বল করা, চোখ লাল হওয়া এই রোগের লক্ষণ, চোখে ব্যথা হওয়া, চোখ বেঁকে যাওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি চোখের ক্যান্সার বা রেটিনোব্লাসটোয়ার লক্ষণ। এই সব লক্ষণ দেখামাত্র দেরী না করে চক্ষু বিশেজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। চোখের ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়লে জীবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
চোখের এলার্জী :ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, চোখ কচলানো, চোখ লাল হওয়া, শুষ্ক মৌসুমে এই রোগ রোগ বেশী দেখা যায়। বছরে ২/৩ বার চোখে অযালার্জী হতে পারে। ধুলাবালি, ধুঁয়া, বিভিন্ন খাবার এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থে শরীরে এবং চোখে অযালার্জী হতে পারে।
চোখ দিয়ে পানি পড়া: জন্মগতভাবে চোখের পানি সরে যাবার নেত্রনালী বন্ধ থাকলে চোখের পানি উপচে পড়ে। এতে চিন্তিত হবার কিছু নাই। ১-২ বছরের মধ্যে বন্ধনালী আপনাতেই খুলে গেলে চোখের পানি পড়া অনেকাংশে কমে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চোখের কোণায় মালিশ করা এবং চোখে ড্রপ ব্যবহারে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। পরিশেষে বলতে হয়, শিশুরা অনেক কিছু বলে বোঝাতে পারেনা। ফলে তাদের সমস্যাগুলো অপ্রকাশ্যই থেকে যায়। এ সকল সমস্যা শেষ পর্যন্ত শিশুর অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং শিশুর দৃষ্টি অধিকার রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।
No comments: