Sponsor



Slider

বিশ্ব

জাতীয়

মেহেরপুর জেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

মেহেরপুর সদর উপজেলা

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » কিংবদন্তী মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলীর জীবন।। ঢাকা বিমানবন্দরে সেদিন জনতার ঢল নেমেছিল




  কিংবদন্তী মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলীর জীবন

      তরুণ ক্যাসিয়াস ক্লে

১৯৪২-এর ১৭ই জানুয়ারি আমেরিকায় কেনটাকি অঙ্গরাজ্যের লুইভিলে জন্মগ্রহণ করেন মুহাম্মদ আলী। তখন তাঁর নাম ছিল ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে। ১২ বছর বয়সে তিনি মুষ্টিযুদ্ধ শুরু করেন এবং রোমে ১৯৬০ সালের অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েটে স্বর্ণপদক জয় করেন।


১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে ১৮ বছর বয়সে তিনি মুষ্টিযুদ্ধকে পেশা হিসাবে নেন। ১৯৬৩ সালের জুনে প্রথম পেশাদার সফরে তিনি আসের লন্ডনে। তার আগেই তিনি ১৮টি মুষ্টিযুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে জিতেছেন। লন্ডনে আসার আগে তিনি বলেছিলেন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা হেনরি কুপারকে তিনি পঞ্চম রাউন্ডেই হারাবেন।


স্থানীয় হিরো হেনরি কুপার ক্যাসিয়াস ক্লে-কে চতুর্থ রাউন্ডে ধরাশায়ী করেছিলেন। কিন্তু আমেরিকান অতিথি প্রমাণ করেন তার কথা শুধু মুখের কথা নয়। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ৫৫ হাজারের বেশি দর্শকের সামনে পঞ্চম রাউন্ডে তিনি পরাজিত করেন প্রতিপক্ষ হেনরি কুপারকে।


ক্লে-র প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জয় ১৯৬৪-র ফেব্রুয়ারি মাসে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান সনি লিস্টনকে পরাজিত করে প্রথম বিশ্ব খেতাব আসে তাঁর ঝুলিতে। পরাজিত লিস্টন আগেই বুঝেছিলেন এ লড়াই সহজ হবে না। তিনি বলেছিলেন: “আমার মনে হচ্ছে জিততে গেলে ছেলেটাকে রীতিমত জখম করতে হবে।”


লড়াইয়ের আগে বেশির ভাগ বক্সিং বিশেষজ্ঞই তাঁর জয়ের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মায়ামিতে ক্লে অসাধারণ লড়াইয়ে লিস্টনকে পরাজিত করেন ষষ্ঠ রাউন্ডের আগেই। ষষ্ঠ রাউন্ডের লড়াই শুরুর আগেই হার মেনে নেন লিস্টন। ২২ বছর বয়সে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ানের শিরোপা জেতেন ক্লে।


ক্লে-র কাছে লিস্টনের পরাজয় সেইসময় - এবং আজও মুষ্টিযুদ্ধের ইতিহাসে একটা যুগান্তকারী ঘটনা। সেই অপ্রত্যাশিত জয়ের অনুভূতিতে ক্লে-র কন্ঠে ছিল আরও অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ের সুর: “আমি সর্বসেরা! আমি সর্বসেরা! আমি বিশ্বের রাজা!”


সনি লিস্টনকে প্রথমবার হারানোর পর তাঁর ইসলাম ধর্মগ্রহণের ঘোষণা দেন তিনি এবং তিনি নতুন নাম নেন মুহাম্মদ আলী।


লিস্টনের সঙ্গে মেইন অঙ্গরাজ্যের লিউইসটনে আলীর এক লড়াই ছিল বির্তকিত। প্রথম রাউন্ডের প্রথম মিনিটেই লিস্টনকে ধরাশায়ী করেন আলী। এখনও অনেকের বিশ্বাস লিস্টন ওই খেলায় শুরুতেই হাল ছেড়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মুহাম্মদ আলী সবসময়েই বলে গেছেন ‘ভূতে তো ওকে ঘুঁষি মারে নি!


১৯৬৫র নভেম্বর মাসে সাবেক চ্যাম্পিয়ান ফ্লয়েড প্যাটারসনকে হারিয়ে নিজের শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখেন মুহাম্মদ আলী। আলীর রাজনৈতিক আদর্শ ও ধর্ম নিয়ে তাঁকে কটাক্ষ সবসময় করেছেন প্যাটারসন।


আলী হেনরি কুপারের সঙ্গে লড়তে আবার আসেন লন্ডনে ১৯৬৬ সালের মে মাসে। তাঁর প্রথম লড়াইয়ের সময় ব্রিটিশ ভক্তরা তাঁকে নিয়ে কোনো মাতামাতি করে নি। কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় সফরের সময় ভক্তদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মত।


১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমেরিকান সেনা বাহিনীতে যোগ দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানালে তাঁর শিরোপা কেড়ে নেওয়া হয়। এর আরও তিন বছর পর আবার তিনি ফিরে আসেন বক্সিং রিং-এ।


তাঁর প্রথম পরাজয় ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে নিউ ইর্য়কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন্সে জো ফ্রেজিয়ারের কাছে। দুই অপ্রতিরোধ্য হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ান সেই প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিলেন বক্সিং রিং-এ।


১৯৭৪ সালে জর্জ ফোরম্যানকে হারিয়ে আবার তিনি বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ান হন ৩২ বছর বয়সে। কঙ্গোর কিনশাসায়া ১৯৭৪ সালে হওয়া এই প্রতিযোগিতার আরেকটি জনপ্রিয় নাম ছিল ‘রাম্বল ইন দা জাঙ্গল’। মুষ্টিযুদ্ধের ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি এই শিরোপা হারিয়ে আবার জিতে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।


১৯৭৮ সালে লিওন স্পিংক্সের কাছে হেরে আলী তাঁর শিরোপা হারালেও ওই একই বছর স্পিংক্সের কাছে থেকেই আবার সেই খেতাব ছিনিয়ে নেন আলী। এর নয় মাস পর মুহম্মাদ আলী বক্সিং থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন। ১৯৮০ সালে নতুন চ্যাম্পিয়ান ল্যারি হোমসকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আবার রিং-এ ফেরেন তিনি। কিন্তু হোমসের কাছে পরাজয় এবং আরও একটি লড়াইয়ে হেরে ৪০ বছর বয়সে তিনি পুরো অবসরে যান।


১৯৮৪ সালে দুরারোগ্য পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হন বিশ্বখ্যাত এই মুষ্টিযোদ্ধা। ১৯৯৬ সালে আটলান্টা অলিম্পিকে মশাল প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে আবার বিশ্বব্যাপী মানুষ তাঁকে দেখেন।


আলীর কন্যা লায়লা ১৫ বছর বয়সে মুষ্টিযুদ্ধে নামেন, ১৯৯৯ সালে তিনি পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা হয়ে ওঠেন এবং জো ফ্রেজিয়ারের কন্যা জ্যাকি ফ্রেজিয়ার লাইড-কে হারিয়ে দেন ২০০১ সালে। ২০০২ সালে লায়লা সুপার মিডলওয়েট শিরোপা জেতেন এবং মুষ্টিযুদ্ধ থেকে অবসর নেন ২০০৭ সালে।


২০১১ সালে তাঁর নামে একটি দাতব্য অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ আলীকে দেখা যায় খুবই দুর্বল চেহারায়- ৭০ বছরে তখন পা দিতে যাচ্ছেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে জীবন সম্পর্কে এক দার্শনিক মন্তব্যে তিনি বলেছিলেন “হয়ত এই পারকিনসন্স রোগ দিয়ে ঈশ্বর আমাকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোন্‌টি।”


মুহাম্মদ আলী (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়) এরপর ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কীমুন (বাঁদিক থেকে দ্বিতীয়) এবং দৌড়বিদ হাইলি গেব্রাসেলাসি (সর্ববামে)।







 

        বিদায় মোহাম্মদ আলী (১৯৪২-২০১৬)
সবার চেয়ে আলাদা অনন্য আলী
বাংলাদেশে এসেছিলেন জিনেদিন জিদান। ঘুরে গেছেন লিওনেল মেসি। কিন্তু যত ব্যক্তিত্ব আসুন না কেন, ‘শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ’ হিসেবে চিহ্নিত তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন বক্সার মোহাম্মদ আলীর মতো এত বড় ব্যক্তিত্ব আর আসেননি। কিংবদন্তি এই বক্সারের ঢাকা সফর নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক -

দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে মোহাম্মদ আলী। দু’জনই আজ প্রয়াত ফাইল -ছবি
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাঙালি এক ভদ্রলোকের জন্যই কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী ঢাকায় এসেছিলেন। তখন বিশ্বজুড়ে সবাই এক নামে চেনে আলীকে। এমন একজন ক্রীড়া তারকাকে বাংলাদেশ সফরে রাজি করানোর পর নিউইয়র্ক প্রবাসী ওই ভদ্রলোক সহযোগিতা চাইলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তৎকালীন সরকার থেকে মিলল সবুজ সংকেত। ঢাকায় এলেন মোহাম্মদ আলী। বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখা তিনিই প্রথম বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের বড় তারকা। সালটা ছিল ১৯৭৮। ঢাকার মাটিতে মোহাম্মদ আলীর পা রাখার অনেক আগেই আমরা ছুটে গিয়েছিলাম বিমানবন্দরে। ক্রীড়া সাংবাদিকতা তখন আজকের মতো ছিল না। বেশির ভাগ পত্রিকাতেই খেলাধুলার জন্য আলাদা পাতা বরাদ্দ থাকত না। সাংবাদিক হিসেবে যারা সেদিন বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছিলেন, তাদের বেশির ভাগই



আলীকে একনজর দেখার জন্য

ঢাকা বিমানবন্দরে সেদিন জনতার ঢল নেমেছিল। কী রকম, সেটা এই প্রজন্মের ক্রীড়ামোদিদের বলে বোঝানো মুশকিল। আলীর আগমনের দিনও একই অবস্থা হয়েছিল ঢাকার। তাকে একনজর দেখার জন্য রাস্তার দুই ধারে ঢল নেমেছিল মানুষের। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল ঢাকা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাঙানো হয়েছিল বড় বড় ব্যানার। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বের করা হয়েছিল বিভিন্ন স্যুভেনির। ঢাকার পুরনো বিমানবন্দরে এক লাখ দর্শক তাকে যে অভূতপূর্ব সংবর্ধনা জানায়- আলী আর কোথাও তা পেয়েছেন কিনা সন্দেহ। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তার হোটেল ও অন্য স্থানে তার সংবাদ কভারের জন্য কোনো কোনো পত্রিকা চারজন থেকে ছয়জন সাংবাদিক নিয়োগ করে। বক্সার আলী বেছে বেছে প্রশ্নের উত্তর দেন। এত বড় মাপের একজন ক্রীড়াবিদকে সামনে পেয়ে কেউ কেউ সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে। হাসির খোরাক জোগায়, এমন প্রশ্নও করা হলো তাকে, ‘মে আই নো, হাউ মেনি কাউস অ্যান্ড গোটস ইউ হ্যাভ ইটেন ইন ব্রেকফাস্ট।’ আমার স্পষ্ট মনে আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন আলী।

আমারও প্রশ্ন করার সৌভাগ্য হয়েছিল। সে সময় তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী জো ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে প্রথম লড়াইয়ে হেরে গিয়েছিলেন। পরে টানা দুবার হারিয়েছিলেন ফ্রেজিয়ারকে।

: তুমি কি আবারও ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে রিংয়ে নামতে চাও?

: না। তার সঙ্গে আর কখনোই লড়ব না আমি।

ঢাকায় আসার আগের দিন নিউইয়র্কে এক লড়াইয়ে রিংয়ে নেমেছিলেন আলী। প্রতিপক্ষ ছিলেন লিওন স্পিংকস। দুর্ভাগ্য, পয়েন্টের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন। সে লড়াইয়ের ছাপ ছিল মুখাবয়বে। কালচিটে দাগ ছিল কোথাও কোথাও। কিন্তু সেসব ছাপিয়েও ঢাকার আতিথেয়তায় মুগ্ধতা ফুটে উঠেছিল তার অভিব্যক্তিতে। পরদিন ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হল মোহাম্মদ আলীকে। সেখানেও জনতার ঢল। সে সময়ের ঢাকার মেয়র ছিলেন ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত। তিনি সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়ে বরণ করে নেন অতিথিকে। পল্টনে আজ যে মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম দেখতে পাই, সেটির উদ্বোধন করেন খোদ আলীই। সম্মান দেখিয়েই তার নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়। বক্সিং স্টেডিয়ামের উদ্বোধনের দিন গ্লাভস পরে রিংয়ে নেমেছিলেন আলী। প্রতিপক্ষ হিসেবে এক কিশোরকে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল রিংয়ে। যতক্ষণ রিংয়ে ছিলেন আলী বেশ আনন্দ দিয়ে যাচ্ছিলেন দর্শকদের। কিশোর ওই বক্সারের পাঞ্চে একবার মেঝেতেও পড়ে গেলেন আলী! আলীকে ঘিরে ঢাকার দর্শকদের যে উন্মাদনা ও স্বতঃস্ফূর্ততা, তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতেই যেন পেশাদারির খোলস ভেঙে রিংয়ে আলীর ওই পড়ে যাওয়া। এখানেই আলী অনন্য, সবার চেয়ে আলাদা।

-






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply