চট্টগ্রামে এসপি’র স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা, সন্দেহের তীর জঙ্গিদের দিকে
মাহমুদা খানমের রক্তাক্ত মরদেহ (ইনসেটে) ফাইল ছবি
জঙ্গিবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক উপ-কমিশনার ও পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে (৩২) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার জানিয়েছেন, আজ (রোববার) সকালে শিশুসন্তান আক্তার মাহমুদ মাহিদকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের উদ্দেশে রওনা হন মিতু। বাসা থেকে ৫০ গজ দূরে রাস্তায় মোটরসাইকেলে করে তিন দুর্বৃত্ত প্রথমে মিতুকে ধাক্কা দেয়। পরে তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। এর পর মাথার পেছনে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। খবর পেয়ে তিনিসহ পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তাঁরা মিতুকে চিনতে পারেন।
ইকবাল বাহার আরো জানান, বাবুল আক্তার ও মাহমুদা খানম মিতু দম্পতির ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহিদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। তাবাসসুম তাসনিম নামের এক মেয়েও রয়েছে এ দম্পতির।
হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতীতে বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিলেন। এতে সংশ্লিষ্টরা সংক্ষুব্ধ হতে পারেন। এর জের ধরে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা করছি আমরা। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুনি, কারণ ইত্যাদি বেরিয়ে আসবে।’
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বশির আহমেদ জানান, সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু’র মতো খুব ছোট আকারের পিস্তল থেকে নিখুঁত নিশানায় গুলি করা হয়েছে। মুখের বাম পাশে কপালের নিচে এক গুলিতেই মৃত্যু নিশ্চিত করেই পালিয়ে গেছে খুনিরা। ঘটনাস্থল থেকে মোট চারটি কার্তুজ উদ্ধার করেছি। এর মধ্যে একটি ব্যবহৃত, তিনটি অব্যবহৃত। প্রাথমিকভাবে নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। বিস্তারিত ময়নাতদন্ত রিপোর্টে জানা যাবে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মোক্তার আহমদ বলেন, ‘এরইমধ্যে পুলিশ তদন্তকাজ শুরু করে দিয়েছি। শিগগির খুনিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে এ হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিরাই জড়িত। কারণ বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন।’
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত অবস্থায় পুলিশ কর্মকতা বাবুল আক্তার
গত বছরের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘের মিশন শেষে বাংলাদেশে ফিরে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) এডিসির দায়িত্ব নেন বাবুল আক্তার।দায়িত্ব নেয়ার পর চার মাসের মধ্যেই চট্টগ্রামে বায়জীদ বোস্তামীর মাজারে জোড়া খুন এবং সদরঘাটে ছিনতাইয়ের সময় গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা দুটির সুরাহা করেন তিনি। মাঝে দেড় মাস দেশের বাইরে ট্রেনিংয়েও ছিলেন তিনি। সর্বশেষ হাটহাজারীর আমানবাজারের জঙ্গি আস্তানা সন্ধানের মাধ্যমে শেষ হয় তার বছর।
সম্প্রতি পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন বাবুল আক্তার। দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সিএমপি ছেড়ে পুলিশ সদর দফতরে যোগদানের জন্য বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকায় আসেন। স্ত্রী ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে নগরীর জিইসি এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। এসপি বাবুল আক্তার চট্টগ্রামে জেএমবির সামরিক প্রধান জাবেদসহ বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতারের পাশাপাশি দেশে নতুন করে জঙ্গিবাদের উত্থানটি আবিষ্কার করেছিলেন। সম্প্রতি তাকে হত্যার একাধিক হুমকিও দেয়া হয়েছে।
স্ত্রীর দুঃসংবাদ শোনার পর থেকে বাবুল আক্তারের ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যাচমেট র্যাব-১ এর কর্মকর্তা এসএম তানভীর আরাফাত।#
No comments: