রাতকানা রোগ
মুখের কোনায় ঘাঁ
ম্যারাসমাস বা হাড্ডিসার রোগ
রাতকানা রোগ
রাতকানা (নাইট ব্লাইন্ডনেস)
রাতকানা শিশুদের একটি প্রধান রোগ। বাংলাদেশের ব্যপক সংখ্যক শিশু রাতকানায় ভোগে। ৬ মাস থেকে ৬ বৎসর বয়সী শিশুদের মধ্যে রাতকানার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। ৬ বৎসরের নীচের শিশুদের মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ শিশু প্রতি বছর রাতকানায় ভোগে এবং প্রায় ৩০,০০০ শিশু প্রতি বছর পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়, যাদের প্রায় অর্ধেকই আবার আমিষ শক্তি অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম বছরই মারা যায়।
রাতকানার লক্ষণঃ
রাতে বা কম আলোতে চোখে কম দেখাকেই রাতকানা রোগ বলে। রাতকানা হওয়ার পূর্বে এবং পরে কতগুলো লক্ষণ পর্যায়ক্রমে দেখা দেয়, যেমন-
১) চোখের সাদা অংশের রং পরিবর্তন হয়ে বাদামী হয়ে যায়;
২) চোখের পানি কমে গিয়ে সাদা অংশ শুষ্ক হয়ে যায়;
৩) চোখ লাল হয়ে যায়;
৪) অল্প আলোতে চোখে ঝাপসা বা কম দেখে;
৫) উজ্জ্বল আলোর দিকে সরাসরি তাকাতে পারে না;
৬) চোখে ফুলি পড়ে (বিটট স্পট); এবং
৭) চোখের মনিতে ঘা হয়ে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়।
কারণঃ
ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাতকানা হয়। শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ালে, বাড়তি খাবারে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাদ্য কম বা না থাকলে, শিশুর স্বাভাবিক খাবারে ভিটামিন ‘এ’ জাতীয় খাদ্য কম পরিমাণে থাকলে ভিটামিন ‘এ’ এর ঘাটতি হয়ে শিশু রাতকানায় আক্রান্ত হয়।
প্রতিকারঃ
রাতকানা হলে শিশুকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন-কলিজা, মাছের তেল, ডিম, মাখন এবং গাঢ় রঙ্গিন শাক সবজি ও ফলমূল খাওয়াতে হবে। শাক সবজি রান্নায় অবশ্যই তেল ব্যবহার করতে হবে। তার সাথে সাথে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। ক্যাপসুল খাওয়ানোর নিয়ম প্রথম দিন ১টি, দ্বিতীয় দিন ১টি এবং চৌদ্দ দিন পর আরও একটি খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন শাক সবজি ও ফলমূল খেলে এবং ৬ মাস পর পর একটি করে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ালে শিশুদের রাতকানা প্রতিরোধ করা যায়।
সূত্রঃ
সমন্বিত ফলিত পুষ্টি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট (বারটান-BIRTAN), খামারবাড়ী, ঢাকা। পৃষ্টা-৩১-৩২।
রক্তসল্পতা
রক্তসল্পতা (নিউট্রিশনাল এনিমিয়া)
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলেই রক্তসল্পতা রোগ হয়। বাংলাদেশের প্রায় ৭০ জন লোকই রক্তসল্পতায় ভোগে। গর্ভবতী, প্রসূতি মহিলা এবং ছোট শিশুরাই এ রোগের সহজ শিকার। এ রোগের ফলে শরীর নিস্তেজ হয়ে আসে, কর্মক্ষমতা লোপ পায় এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগ সহজেই দেহকে আক্রমন করতে পারে।
রক্তাল্পতার লক্ষণঃ
১) শরীর বিশেষত মুখমন্ডল ফ্যাকাশে বা সাদা হয়ে যায়;
২) সামান্য কাজ করলেই ক্লান্ত হয়ে যায় এবং হাঁপাতে থাকে;
৩) বুক ধড়ফড় করে;
৪) শ্বাস কষ্ট হয়;
৫) শরীর দুর্বল হয়ে যায় বলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘুরায় এবং বমি ভাব হয়;
৬) জিহ্বা মসৃন এবং সাদা হয়ে যায়;
৭) চোখের কোটরির উপরের শিরাগুলোর রক্ত হালকা লাল রং এর দেখা যায়; এবং
৮) মারাত্বক রক্তসল্পতায় হাতের নখ চা চামচের ন্যায় উপরের দিকে উল্টে যায় এবং শরীরে পানি জমা হতে পারে।
কারণঃ
যদি খাবারে প্রধানত লৌহের ঘাটতি হয় এবং সাথে সাথে আমিষেরও ঘাটতি হয় তবে শরীরে প্রয়োজন মত রক্ত তৈরি হতে পারে না ফলে রক্তাল্পতা হয়। কৃমিতে আক্রান্ত হলে, দুর্ঘটনায় অত্যধিক রক্তক্ষরণ হলে, গর্ভাবস্থায় এবং বাচ্চা প্রসবের পর ঠিকমত লৌহ সমৃদ্ধ খাবার না খেলেও রক্তসল্পতা রোগ হয়।
প্রতিকারঃ
এ রোগের প্রাথমিক অবস্থায় প্রচুর পরিমাণে লৌহ সমৃদ্ধ ও আমিষ জাতীয় খাদ্য এবং সাথে সাথে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ টক জাতীয় ফল খেতে হবে। এর সাথে কৃমিরও চিকিৎসা করাতে হবে। মারাত্বক অবস্থায় লৌহ ও আমিষ সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শমত লৌহ ঘটিত ঔষধও খেতে হবে। পরিষ্কার পরিছন্ন পরিবেশে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণ শাক সবজি তথা সুষম খাদ্য খেলে রক্তাল্পতা রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
সূত্রঃ
সমন্বিত ফলিত পুষ্টি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট (বারটান-BIRTAN), খামারবাড়ী, ঢাকা। পৃষ্টা-৩৩।
অপুষ্টিজনিত রোগ
বাংলাদেশে অপুষ্টি একটি মারাত্মক জাতীয় সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত। দারিদ্র্য, খাদ্য ঘাটতি, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং নানা রকম কুসংস্কার ছাড়াও বিভিন্ন আর্থ- সমাজিক কারণে দেশের অধিক সংখ্যক মানুষ, গর্ভবতী ও প্রসুতি মহিলা এবং বাড়ন্ত শিশুরা সহজেই অপুষ্টিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার খাদ্য তথা পুষ্টি উপাদানের অভাবের ফলে বিভিন্ন বয়সের লোকদের মধ্যে নানা রকম অপুষ্টিজনিত রোগ দেখা দেয়। এ সমস্ত রোগের সময়মত সঠিক চিকিৎসা না হওয়ার ফলে নানা রকম দৈহিক ও মানসিক বিপর্যয়ের সৃস্টি হয়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরণের অপুষ্টিজনিত রোগের মধ্যে আমিষ ও শক্তির ঘাটতিজনিত অপুষ্টিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমিষ ও শক্তির ঘাটতির সাথে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানেরও ঘাটতি হয়ে থাকে, ফলে অপুষ্টি প্রকট আকার ধারণ করে। নিম্নলিখিত বিভিন্ন অপুষ্টজনিত রোগ আমাদের দেশে দেখা যায়।
১। আমিষ শক্তির ঘাটতিজনিত অপুষ্টি (প্রোটিন এনার্জি ম্যালনিউট্রিশন)
ক) ম্যারাসমাস বা হাড্ডিসার রোগ
খ) কোয়াশিয়রকর বা গা ফোলা রোগ
২। রাতকানা (নাইট ব্লাইন্ডনেস)
৩। মুখের বা ঠোঁটের কোনায় ঘা ( এঙ্গুলার ষ্টামাটাইটিস)
৪। রক্তাল্পতা( নিউট্রিশনাল এনিমিয়া)
ম্যারাসমাস বা হাড্ডিসার রোগ
ম্যারাসমাস বা হাড্ডিসার রোগের লক্ষণঃ
সাধারণত এক বৎসরের নীচের বয়সী শিশুদের মধ্যেই এ রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায়। এ রোগ হলে শরীর ক্রমশঃ রোগা হয়ে শীর্ণকায় বা হাড্ডিসার বা কঙ্কালসার হয়ে যায়। ম্যারাসমাসের লণ হলঃ
শিশুর শরীর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, অর্থাৎ বয়স অনুপাতে বৃদ্ধি হয় না।
শরীরের ওজন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
শরীরের মাংস পেশী শুকিয়ে কঙ্কালসার হয়ে যায়, মনে হয় যেন শরীরে শুধু হাড় ও চামড়া আছে। ফলে মুখমন্ডল বানরের মত হয়ে যায়। চামড়ার নীচে চর্বি শুকিয়ে যায় ফলে চামড়া ঢিলা বা কুচকে যায়।
পেট বড় হয়ে যায়।
শিশুর মেজাজ খিট খিটে হয়ে যায়।
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।
কোন কোন ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতাও দেখা দিতে পারে এবং
শিশুর ক্ষুধা খুব বেশী হয়, কেবল খেতে চায়।
কারণঃ
হাড্ডিসার রোগের মুল কারণ তাপ ও শক্তিদায়ক এবং শরীর গঠন ও বৃদ্ধিকারী খাদ্য সঠিক মানের ও পরিমাণে না খাওয়ানোর ফলে শক্তি এবং আমিষের মারাত্মক ঘাটতি হয়, ফলে শরীর শুকিয়ে হাড্ডিসার হয়ে যায়। আনুষঙ্গিক কারণের মধ্যে রয়েছে- অকালে মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা বা দীর্ঘদিন যাবৎ শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানো, অপরিস্কার বোতলে দুধ খাওয়ানোর ফলে শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়া, আর্থিক কারণে শিশুর বাড়তি খাবার যোগাড় করতে না পারা এবং নানা কুসংস্কাররের ফলে শিশুকে সঠিক খাদ্য ঠিকমত না খাওয়ানো ইত্যাদি।
প্রতিকারঃ
ম্যারাসমাস রোগে আক্রান্ত শিশুকে, শরীরের ওজন বাড়ানো এবং দ্রম্নত বৃদ্ধির জন্যে প্রচুর পরিমাণে উচ্চ পুষ্টিমানের শক্তিদায়ক এবং আমিষ জাতীয় খাদ্য উপযোগী করে বারে বারে খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া বা কৃমি বা অন্যান্য সংক্রামক রোগ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শমত খাবার স্যালাইন বা অন্যান্য ঔষধও খাওয়াতে হবে। মারাত্মক অবস্থায় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাতে হবে। একবার রোগী ভাল হওয়ার পর পুনরায় যাতে আক্রান্ত হতে না পারে, সে জন্যে পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মুখের কোনায় ঘাঁ
মুখের বা ঠোঁটের কোনায় ঘা (এংগুলার ষ্টোমাটাইটিস)
লক্ষণঃ
বাংলাদেশে শীতকালে বিশেষতঃ গ্রামাঞ্চলে অনেকেরই ঠোঁটের কোনায় এবং জিহব্বায় ঘা হয়ে থাকে। এ রোগের লক্ষণ হল-
১) ঠোঁট লাল হয়ে ফেটে যায়; মুখের বা ঠোঁটের দুই কোনায় ঘা হয়, কস পরে এবং হা করা যায় না;
২) জিহব্বায় ঘা হয়, লাল হয়ে ফুলে যায়, ব্যথা হয় এবং খেতে অসুবিধা হয়।
কারণঃ
দৈনন্দিন খাবারে ভিটামিন ‘বি২’ বা রাইবোফ্লাভিনের ঘাটতি হলে ঠোঁটের কোনায় ঘা হয়। দুধ, ডিম, ডাল, কলিজা, সিদ্ধচাল এবং শাক সবজি প্রয়োজনীয় পরিমাণে না খেলে এ রোগ হয়।
প্রতিকারঃ
মুখে বা ঠোঁটের কোনায় ঘা হলে প্রচুর দুধ, ডিম এবং শাক সবজি খেতে হবে। মুখে বেশী ঘা হলে খাদ্যের সাথে সাথে ভিটামিন ‘বি২’ ট্যাবলেট একটি করে দিনে ৩ বার খেতে হবে। প্রতিদিন দুধ, ডিম ও শাক সবজি প্রয়োজনীয় পরিমাণে খেলে ঠোঁটের কোনায় ঘা হবে না।
সূত্রঃ
সমন্বিত ফলিত পুষ্টি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট (বারটান-BIRTAN), খামারবাড়ী, ঢাকা। পৃষ্টা-৩২-৩৩।
স্কার্ভি
স্কার্ভি
স্কার্ভি সব বয়সী লোকেরই হতে পারে। বাংলাদেশে এ রোগের প্রকোপ খুব কম।
লক্ষণঃ
১) দাঁতের মাড়ি লাল হয়ে ফুলে যায়;
২) সামান্য আঘাতেইয়ে র দাঁতের গোড়া দিক্ত ঝরে;
৩) দাঁতের গোড়া মাড়ি থেকে আলগা হয়ে যায় ফলে দাঁত নড়ে, মাড়িতে ঘা ও পুঁজ হয়; এবং
৪) চামড়ার নীচে রক্তক্ষরণ দেখা দেয়।
কারণঃ
দীর্ঘদিন যাবৎ খাবারে ভিটামিন ‘সি’ এর ঘাটতি থাকলে স্কার্ভি রোগ হয়। অর্থাৎ অনেকদিন যাবৎ কাঁচা শাক সবজি ও ফল না খেলে স্কার্ভি রোগ হয়।
প্রতিকারঃ
স্কার্ভি হলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে। যদি দাঁতের মাড়িতে বেশি ঘা হয় এবং বেশি রক্ত ঝরে তাহলে ফল খাওয়া ছাড়াও ভিটামিন ‘সি’ ট্যাবলেট খেতে হবে। স্কার্ভি প্রতিরোধ করতে হলে দৈনিক সুষম খাবারের সাথে অন্তত দুই একটি ফল অবশ্যই খেতে হবে।
সূত্রঃ
সমন্বিত ফলিত পুষ্টি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট (বারটান-BIRTAN), খামারবাড়ী, ঢাকা। পৃষ্টা-৩৪-৩৫।
কোয়াশিয়রকর/গা ফোলা রোগ
কোয়াশিয়রকর বা গা ফোলা রোগঃ
এক থেকে তিন বৎসর বয়সী শিশুদের মধ্যেই কোয়াশিয়রকর রোগটি বেশী দেখা যায়। শিশুর যখন মায়ের দুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়ে অন্য খাবার খেতে শুরম্ন করে তখনই সাধারণত এ রোগটি বেশী হয়। একটি শিশু মায়ের দুধ খাওয়া অবস্থায় আরেকটি শিশুর জন্ম হলে প্রথম শিশুটি স্বভাবতই মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে একদিকে মায়ের দুধের উৎকৃষ্ট আমিষ থেকে বঞ্চিত হয়, অপরদিকে দারিদ্রতার কারণে নিম্ন মানের অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ এবং শিশুর ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের দরুণ ঐ শিশুর খাদ্যে মারাত্মক আমিষের ঘাটতি হয়। এরকম অবস্থাতেই শিশুটি কোয়াশিয়রকর রোগে আক্রান্ত হয়।
কোয়াশিয়রকর রোগের লক্ষণঃ
শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়।
সমস্ত শরীর বিশেষতঃ হাত,পা এবং মুখমন্ডলে পানি বা রস জমা হয়ে ফুলে যায়, মুখমন্ডল দেখতে গোলাকার এবং ফ্যাকাশে দেখায়।
মাথায় চুল খুব পাতলা ও বাদামী হয়ে যায় এবং চুল উঠে যায়।
মাংশ পেশী শুকিয়ে ওজন কমে যায়।
শিশুর মানসিক বৈকল্য দেখা দেয়, শিশু সর্বদাই বিসন্ন, নিস্পৃহ এবং উদাসীন থাকে, কোন কিছুতেই তার আগ্রহ থাকে না বরং বিরক্ত হয়।
স্থানে স্থানে লালচে ( ফ্লাকী পেইন্ট) চর্মরোগের সৃষ্টি হয়।
রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
যকৃত বা কলিজা কিছুটা বড় হয়ে যায়। এবং
প্রায়ই ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয় এবং মলে খুব দুর্গন্ধ হয়।
কারণঃ
শিশুর খাবারে শুধুমাত্র শরীর গঠন ও বৃদ্ধিকারী অর্থাৎ আমিষ জাতীয় খাদ্যের মারাত্মক ঘাটতি হল কোয়াশিয়রকর রোগের মূল কারণ।
প্রতিকারঃ
কোয়াশিয়রকর রোগে আক্রান্ত শিশুকে আমিষের ঘাটতি পূরণের জন্য উৎকৃষ্ট আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন- দুধ, ডিম, ননী তোলা গুড়াদুধ ইত্যাদি অধিক পরিমানে উপযোগী করে খাওয়াতে হবে। তবে আমিষ সমৃদ্ধ খাবার এমন হতে হবে যেন শিশু প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য তা থেকে ৩০২ গ্রাম আমিষ উপাদান পেতে পারে। শিশুর ডায়রিয়া থাকলে খাবার স্যালাইন এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগ থাকলে ডাক্তারের তত্বাবধানে বা হাসপাতালে ভর্তি করে জরুরী চিকিৎসা করাতে হবে।
ম্যারাসমিক-কোয়াশিয়রকর পর্যায়ের রোগীকে প্রচুর পরিমাণে শক্তিদায়ক এবং আমিষ জাতীয় খাদ্য উপযোগী করে খাওয়াতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শমত চিকিৎসা করাতে হবে। ম্যারাসমাস, কোয়াশিয়রকর এবং ম্যারাসমিক- কোয়াশিয়রকর ইত্যাদি রোগ থেকে শিশুদেরকে রক্ষা করতে হলে প্রথম থেকেই প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য জন্ম থেকেই দুই বৎসর বয়স পর্যন্ত অবশ্যই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং শিশুর ৫ মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শক্তি ও আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে উপযোগী করে খাওয়াতে হবে।
রিকেটস
রিকেটস
বাংলাদেশে রিকেটস রোগের প্রকোপ খুব কম। ঘনবসতি বা বস্তি এলাকায় সেখানে মানুষ সূর্যের আলো কম পায় এবং সাথে সাথে ভিটামিন ‘ডি’ এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্যও কম খায়, সে এলাকায় বিশেষতঃ ছোট শিশুদের রিকেটস রোগ বেশী হয়।
লক্ষণঃ
১) শিশু ঠিকমত এবং সময়মত বসতে, উঠতে, হামাগুড়ি দিতে, দাঁড়াতে এবং হাঁটতে পারে না;
২) শিশুর দাঁত উঠতে দেরী হয়;
৩) শিশুর হাড়ের গঠন ঠিকমত হয় না এবং হাত ও পায়ের হাড় বাকা হয়ে যায়;
৪) শিশু প্রায়ই কাঁদে এবং অস্থির থাকে।
কারণঃ
ভিটামিন ‘ডি’এর অভাব হলে এবং ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে ক্যালসিয়াম শরীরে শোষিত হতে না পারলে রিকেটস হয়।
প্রতিকারঃ
প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাদ্য এবং সাথে সাথে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্যও খেতে হবে। তাছাড়া শিশুর শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করার জন্য দৈনিক কিছু সময়ের জন্যে তাকে খালি গায়ে রৌদ্রে রাখতে হবে।
সূত্রঃ
সমন্বিত ফলিত পুষ্টি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট (বারটান-BIRTAN), খামারবাড়ী, ঢাকা। পৃষ্টা-৩৫।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে মাড়ি রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। টাইপ-১ এবং টাইপ-২ উভয় ধরনের ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে মাড়ির নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। তবে তুলনামূলকভাবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে মাড়ি নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। তবে তুলনামূলকভাবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে মাড়ি রোগের বিভিন্ন জটিলতা বেশি দেখা যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে ডায়াবেটিক রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় জীবাণু সংক্রমন দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এসব কারণে মাড়ি রোগ সৃষ্টি হলে সেখানে পেরিওডন্টাল পকেট সৃষ্টি হয় তারপর ধীরে ধীরে পেরিওডন্টাল পকেটে খাদ্য দ্রব্য জমা হয়ে মাড়ি ফুলে যেতে পারে। সেখান থেকে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে পেরিওডন্টাল লিগামেন্টগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং একসময় দেখা যায় দাঁত নড়তে শুরু করে। রোগীর মুখে শুকনো ভাব থাকে। মাঝে মাঝে স্যালাইভারী গ্যান্ড বা লালাগ্রন্থি ফুলে যেতে পারে যা সায়ালেসিস নামে পরিচিত। এটি সাধারণত স্বয়ংক্রিয় নিউরোপ্যাথির কারণে হতে পারে। জিহ্বার প্রদাহ দেখা যেতে পারে বা জিহ্বার ফিলিফরম প্যাপিলার পরিবর্তন আসতে পারে। ফলে খাবারের স্বাদ গ্রহণে সমস্যা হতে পারে। খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করার সময় জিহ্বায় অনেক সময় ঝাল ঝাল অনুভব হতে পারে। ক্লোরপ্রোপামাইড ব্যবহারের কারণে মুখের মিউকোসাতে লাইকেনয়েড রিঅ্যাকশন দেখা যেতে পারে। অন্যান্য এন্টিবায়োটিক ওষুধের কারণেও এমনটি হতে পারে। ক্লোরপ্রোপামাইডের কারণে ফেসিয়াল ফ্লাসিং হতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ যদি দুর্বল হয় তাহলে ওরাল ক্যান্ডিডোসিসের সৃষ্টি হতে পারে। ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসের ক্ষেত্রে দন্তচিকিৎসা বিদ্যায় সাধারণত তেমন সমস্যা হয় না মুখের শুষ্কতা ছাড়া। ক্ষণস্থায়ী ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হেড ইনজুরির জটিলতা হিসেবে দেখা যায়। কার্বামাজেপেইন ওষুধ যা ব্যবহার করা হয় ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়াতে সেটির নেশাকারী কার্যকারিতা থাকতে পারে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে মাড়ি রোগে সামান্য আঘাতে মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হয়। মাড়ি স্পঞ্জের মতো নরম তুলতুলে হয়ে যায়। দাঁত নড়ে যেতে পারে। দাঁত শিরশির করা ছাড়াও মাড়ি থেকে পুঁজ বের হতে পারে। মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়া ছাড়াও খাবার গ্রহণের সময় দাঁতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ডায়াবেটিস হলে কোনোভাবেই মাড়ির রোগকে অবহেলা করা যাবে না। আপনার দাঁতে যদি পাথর থাকে তাহলে অবশ্যই স্কেলিং করিয়ে নিতে হবে। তাছাড়া নিয়মিত দাঁতব্রাশ করা ছাড়া মাঝে মাঝে মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। তবে সঠিক মাউথওয়াস ব্যবহার না করলে অনেক সময় মুখে আলসার বা ঘাঁ থাকলে তা সহজে ভালো হয় না। সর্বোপরি যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে জীবনযাপন করতে হবে।
No comments: