Sponsor



Slider

দেশ - বিদেশ

মেহেরপুর জেলা খবর

মেহেরপুর সদর উপজেলা


গাংনী উপজেলা

মুজিবনগর উপজেলা

ফিচার

খেলা

যাবতীয়

ছবি

ফেসবুকে মুজিবনগর খবর

» » » হার্টের কথা জানি, কতটুকু জানি ১২ টি টিপস এর ফিচার দেয়া হলো জেনে নিন





হার্টের কথা জানি, কতটুকু জানি ১২ টি টিপস এর ফিচার দেয়া হলো জেনে নিন


1 হার্টের কথা জানি, কতটুকু জানি
2 হার্ট অ্যাটাক কেন হয়
3 হৃদরোগের চিকিৎসায় চিলেশন থেরাপি
4 উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ সংগ্রহ
5 সুস্থ হার্ট, কর্মক্ষম জীবন বিশ্বজুড়ে সংগ্রহ
6 মন ভালো তো হৃদযন্ত্র ভালো
7 এক বিশ্ব এক ঘর এক হৃদযন্ত্র
8 উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগ (হাইপারটেনশন)
9 হার্টের বাইপাস অপারেশন
10 হার্টের বাইপাস অপারেশন
11 ভাল্ভের রোগ (Valvular Disease)
12 ইশকেমিক (Ischaemic) হার্ট ডিজিজ

হার্টের কথা জানি, কতটুকু জানি


হার্ট স্মার্ট বলে কথা। হার্ট সম্পর্কে অনেকেই জানেন অনেক কিছু। আবার কিছু কিছু জিনিস জানার বাইরেও রয়ে যায়।
* কেউ বলেন, হার্ট অ্যাটাকের সময় হূদ্স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়, এটা ঠিক নয়। হার্ট অ্যাটাকের সময় হূদ্যন্ত্র স্পন্দিত হতে থাকে, তবে হার্টের টিস্যুতে রক্ত সরবরাহ রোধ হয়; মৃত্যু ঘটে টিস্যুর। আর হার্ট হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দিলে একে বলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।
* হার্ট অ্যাটাকে নারীদের চেয়ে পুরুষের মৃত্যু বেশি হয়, এ-ও ঠিক নয়। পুরুষের ক্ষেত্রে অবশ্য এটি দেখা দেয় আগে। কিন্তু ঋতুবন্ধের পর নারীরা বেশ কাবু হন হূদেরাগে, মৃত্যু হয়ও এতে। তাই প্রায় সমান বিপর্যয় ঘটে বললেই ঠিক হবে। যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ১ নম্বর ঘাতক হলো হূদেরাগ। এরপর স্তন ক্যানসার।
* হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, এমন সন্দেহ হলে দেরি করা ঠিক নয়। শুয়ে-বসে বা বিশ্রাম নিয়ে সময় কাটানো বোকামি। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডাকা উচিত।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ নিয়ে নানা কথা
 যদিও হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে সচরাচর উপসর্গ হলো বুক ব্যথা বা অস্বস্তি। তবে এটি সব সময় একমাত্র উপসর্গ নয়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বমি ভাব, ঘাম হওয়া, মাথা হালকা লাগা, শরীরের ওপরের অংশে যেমন—পিঠ, পেট, গলা, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
 ‘মন ভেঙে গেলে হার্টেও ভাঙন’—এটি কেবল কথার কথা। ‘ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম’ সমস্যা বটে।
মানুষের মনে শোক, দুঃখ এসব থেকে হার্টের সমস্যা হয়। মনের প্রচণ্ড ক্ষোভ, দুঃখ এসবের কারণে সমবেদী স্নায়ুতন্ত্র হয় উদ্দীপ্ত। ‘লড়াই করো, নয়তো পালিয়ে যাও’—এমন বোধ হয় শরীরে। হঠাৎ করে রাসায়নিক বস্তু যেমন—এড্রিনালিনের প্লাবন বয়, স্তব্ধ হয় হূদেপশি: সাময়িকভাবে হার্ট পাম্প করতে পারে না। উপসর্গ একরকম হলেও হার্ট অ্যাটাক নয় এটি। সুসংবাদ হলো, হূদ্যন্ত্র সহজেই উতরে যেতে পারে এ দুর্যোগ।
বেশ কয়েকটি কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে। যেমন: স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, উচ্চমানের কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস ও শরীরচর্চা না করা।
পথ্যবিধি একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রচলিত খাদ্যবিধি হূদেরাগের ঝুঁকি কমাতে ফলপ্রসূ। ২০০৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২৯ শতাংশ ঝুঁকি এতে হ্রাস পায়। রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল মানের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
শরীর খুব পাতলা, সঠিক খাই, ব্যায়াম করি—এ জন্য হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি একেবারে নেই, তা বলা যাবে না। তবে এতে ঝুঁকি অনেক কমে, তা ঠিক। তাই এমন জীবনাচরণ হলো হূদ্বান্ধব।
লবণ খাওয়া কমালে হূদেরাগের ঝুঁকি বেশ কমানো যায়। দিনে এক হাজার ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ কখনো নয়। ভিটামিন-ই ও ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট এখনো প্রমাণিত হিতকারী নয়। প্রাকৃতিক উৎস থেকে নেওয়াই শ্রেয়।



হার্ট অ্যাটাক কেন হয়


হূৎপিণ্ড বুকের মাঝখানে ও বাঁ পাশের কিছু অংশজুড়ে থাকে। সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনের কাজ করে থাকে। হার্ট একমাত্র অঙ্গ, যা সারাক্ষণ কাজ করে, কখনোই বিশ্রাম নেয় না।

হার্টের রক্তনালির কাজ
সারাক্ষণ হার্টের কাজ করার জন্য প্রয়োজন হয় অক্সিজেন ও পুষ্টি। এই অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহের জন্য রয়েছে হার্টের নিজস্ব রক্তনালি। মূলত তিনটি রক্তনালি তাদের শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ করে থাকে হার্টের মাংসপেশিতে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু এই তিনটি রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই হয়।

হার্ট অ্যাটাক কীভাবে হয়
তিনটি রক্তনালির যেকোনো একটি যদি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে হার্ট অ্যাটাক হয়। রক্তনালি যদি আস্তে আস্তে অনেক দিন ধরে বন্ধ হয়, তাহলে হার্ট অ্যাটাক নাও হতে পারে, কিন্তু হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলে অবশ্যই হার্ট অ্যাটাক হবে।
অনেকের শরীরে বিভিন্ন রক্তনালিতে চর্বি জমে এবং রক্তনালি সরু হতে থাকে। ফলে বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমতে থাকে। হঠাৎ করে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাবে কি না, তা নির্ভর করে রক্তনালির মধ্যে জমে থাকা চর্বির ভেতরের দিকের যে আবরণ থাকে, তার ধরনের ওপর। ভেতরের দিকের আবরণ ফেটে গেলে সেখানে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালির সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়। ফলে হার্টের মাংসপেশি নষ্ট হতে থাকে এবং এটাকেই হার্ট অ্যাটাক বলা হয়। তবে আট ঘণ্টার মধ্যে যদি রক্তনালি খুলে দেওয়া যায়, তাহলে হার্টের মাংসপেশিকে রক্ষা করা সম্ভব। গবেষণায় বিভিন্ন ফ্যাক্টরকে রক্তনালির ওপরের আবরণ ফেটে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে, যেমন—
 অতিরিক্ত পরিশ্রম করা, যে পরিশ্রমে শরীর অভ্যস্ত নয়।
 অতিরিক্ত খাওয়া ও খাওয়ার পরপর শারীরিক পরিশ্রম করা।
 একসঙ্গে অতিরিক্ত ধূমপান করা।
 নিদ্রাহীনতা।
 অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা।
 হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া বা রেগে যাওয়া।
 শরীরে যেকোনো ধরনের ইনফেকশন।

হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ কী?
সাধারণত বুকের মাঝখানে ব্যথা হয়। কখনো কখনো বুক চেপে আসা, বুক ভারী লাগা, বুক জ্বলে যাওয়া এ রকম উপসর্গ হতে পারে। বসা, শোয়া অবস্থায়ও ব্যথা হয়, ব্যথাটা বাঁ হাতে, গলায়, পেছনে ছড়িয়ে যেতে পারে। ব্যথার সঙ্গে ঘাম, বমি হওয়া ও শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে পারে।

হার্ট অ্যাটাক কীভাবে এড়িয়ে চলা যায়?
 যেসব কারণে রক্তনালির আবরণ ফেটে যায়, সেগুলোকে এড়িয়ে চলা।
 নিয়মিত হাঁটা। হাঁটলে হার্টে নতুন নতুন রক্তনালি তৈরি হয়।
 যাঁদের বয়স ৪০ বছর পার হয়ে গেছে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি, তাঁরা নিয়মিত অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খেতে থাকলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমে যায়।
 কোলস্টেরল কমানোর ওষুধগুলো রক্তে কোলস্টেরলের মাত্রা কমানো ছাড়াও রক্তনালির ওপর জমে থাকা চর্বির আবরণ শক্ত করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
আসুন, আমরা সবাই সচেতন হই এবং হার্ট অ্যাটাক এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি।




হৃদরোগের চিকিৎসায় চিলেশন থেরাপি


হৃদরোগ হিসেবে অ্যানজিনা পেকটোরিস সংক্ষেপে ‘বুকব্যথা’ হিসেবে পরিচিত। হৃদযন্ত্রের ধমনিতে ব্লকেজ থাকলে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয় বলে বুকে এই ব্যথা অনুভূত হয়। করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি বা গ্রাফটিং হলো সেই পদ্ধতি, যার মাধ্যমে রোগীর পায়ের শিরা কেটে নিয়ে হার্টের ব্লক হয়ে যাওয়া ধমনির বিকল্প পথ তৈরি করে দেওয়া হয়, যাতে হৃৎপিণ্ডের ধমনিতে রক্ত চলাচল অব্যাহত থাকে। হৃদরোগ চিকিৎসায় বেলুনিং বা এনজিওপ্লাস্টি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাইপাস বা এনজিওপ্লাস্টি ছাড়াও ভিন্ন উপায় আছে, যা অত্যন্ত নিরাপদ ও স্বল্পব্যয়ী। এর নাম চিলেশন থেরাপি। একবার এই থেরাপিতে অভ্যস্ত হওয়ার পর বহু হৃদরোগীই আর অপারেশনে সম্মতি দেন না। সে প্রয়োজনই আর হয়নি। বাইপাস সার্জারির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এমন কিছু রোগীকে, যাদের অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটেছে বা যাদের তাৎক্ষণিক ঝুঁকি ছিল, হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তাই হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য চিলেশন থেরাপিকে অনেকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। যারা একবার অপারেশন করিয়েছেন তাদের যেন দ্বিতীয়বার অপারেশন করতে না হয়, সে কারণেও এই থেরাপির কথা জোরালোভাবে বলা হয়।
এক বা দুই ব্লকেজের জন্য এনজিওপ্লাস্টি এবং একাধিক ব্লকেজের জন্য বাইপাস সার্জারির চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু যখন সেই ব্লকেজের সংখ্যা অনেক হয় তখন? ব্যথা হলে আমরা এসপিরিন গ্রহণ করে থাকি। বাইপাস সার্জারি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এক সার্জিক্যাল এসপিরিনের সঙ্গে তুলনীয়। যন্ত্রণা দূর হয় বটে, কিন্তু রোগ নির্মূল হয় না।
‘আমি কোনটা বেছে নেব?’ এটা রোগীদের একটা সাধারণ প্রশ্ন। ডাক্তারের আর কোনো পরামর্শ নেই।
ধমনিতে মিশে যেতে পারে এমন ওষুধ, যেমন নাইট্রোগ্লিসারিন এনজিনা বা বুকের ব্যথা সারাতে সাহায্য করে। তবে রক্ত যাদের পাতলা, অর্থাৎ হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম, তাদের জন্য এটা বিপদ ডেকে আনতে পারে। বেটা ব্লকারস ও ক্যালসিয়াম এন্টাগনিস্ট কিছু উপকারে আসে, যদিও এর গ্রহণযোগ্যতা শাশ্বত নয়। আর সত্যি বলতে কি, এর ভেতর সবচেয়ে শক্তিশালী যেটি-চিলেশনের নাম কেউ উল্লেখই করেন না।
চিলেশন থেরাপি বিনা অপারেশনের একটি চিকিৎসা-পদ্ধতি, যা মেটাবলিকের উন্নতি ঘটায় এবং নানাভাবে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখে। একই সঙ্গে দেহে ধাতব আয়নে সামঞ্জস্য নিয়ে আসে, ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়। এই থেরাপির জন্য ব্যয়বহুল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগে না, ডাক্তারের চেম্বারেই গ্রহণ করা সম্ভব।
সম্ভবত চিকিৎসাবিজ্ঞানে যেসব বিষয় অত্যন্ত গোপন রাখা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে চিলেশন থেরাপি অন্যতম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেসব রোগী হৃদরোগের বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে এই চিলেশন থেরাপি গ্রহণ করেছে, তাদের সাফল্যের হার খুবই সন্তোষজনক। এই থেরাপি লাখ লাখ মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে, যারা বয়সজনিত বিভিন্ন ব্যাধিতে ভুগছিলেন।
বিজ্ঞানীরা একপর্যায়ে এই থেরাপির ফলে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, বেটা ক্যারোটিনসহ অন্যান্য উপাদানের সংযুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেন, তখন এসবের বায়োলজিক্যাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বিষয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করলেন। এই সব গবেষণার ফল এল ইতিবাচক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সংক্রান্ত বিবেচনায় চিলেশন থেরাপির গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত হলো। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই থেরাপি কেবল হৃদযন্ত্রের আশপাশের ধমনির জন্যই কার্যকর ভূমিকা রাখে না, দেহের অন্যান্য অংশের ধমনি, এমনকি হাত-পায়ের আঙ্গুল ও মস্তিষ্কের ধমনির জন্যও উপকার বয়ে আনে।
প্রতিবছর ৬০ হাজারের মতো মানুষ তাদের পা হারায় গ্যাংগ্রিনে, ধমনিতে ব্লকেজ সৃষ্টি হয়ে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যায় বহু লোক। ঘাড়-মাথা-পায়ের ধমনিতে বাইপাস সার্জারি এখন সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। এর প্রতিটি ক্ষেত্রে কম খরচে ও ঝুঁকিহীনভাবে চিকিৎসা করতে পারে চিলেশন থেরাপি।


উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ

উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের সম্পর্ক কী?
উচ্চ রক্তচাপ বা অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ দীর্ঘ সময় থাকলে হৃদপিণ্ডের রক্তনালিতে চর্বির আস্তর জমে ব্লকেজ হতে পারে এবং রক্তপ্রবাহ বাধা পাওয়ার ফলে Ischemic heart disease হতে পারে, যা হৃদপিণ্ডের একটি ভয়াবহ রোগ।

 উচ্চ রক্তচাপে হৃদপিণ্ডের কী কী ধরনের হূদেরাগ হয়?
উচ্চ রক্তচাপে হৃদপিণ্ডের রক্তনালিতে চর্বির আস্তর পড়ে Ischemic heart disease ছাড়াও হৃদপিণ্ডের দেয়াল মোটা হয়ে হাইপারটেনসিভ হার্ট ডিজিজ, হার্ট ফেইলর হতে পারে।

 রক্তচাপ কী?
রক্ত চলাচলের সময় রক্তনালিতে যে চাপ দেয়, তাকেই রক্তচাপ বলে।

 উচ্চ রক্তচাপ কী?
রক্তচাপ ধমনি, শিরা তথা রক্তনালির আকারের ওপর নির্ভর করে, আর রক্তনালি সংকীর্ণতর হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে একই পরিমাণে রক্ত সরবরাহের জন্য হৃদপিণ্ডকে অপেক্ষাকৃত বেশি কাজ করতে হয়। এ রকম অবস্থায় হৃদপিণ্ডকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাপ দিয়ে রক্ত সরবরাহ বজায় রাখতে হয়। আর এ বেশি চাপ দেওয়ার অবস্থাকেই উচ্চ রক্তচাপ বলে।

 উচ্চ রক্তচাপ কী কী কারণে হতে পারে?
৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সে সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। পুরুষের উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা ও প্রকটতা নারীদের চেয়ে বেশি। গর্ভকালীন ও জন্মনিরোধক ওষুধ গ্রহণকালে নারীদের উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। যাঁদের ওজন উচ্চতার তুলনায় বেশি, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। পরিবারে কোনো আত্মীয়ের (যেমন: বাবা-মা) উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও উচ্চ রক্তচাপ রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

 উচ্চ রক্তচাপ আমাদের শরীরে কী ক্ষতি করে?
উচ্চ রক্তচাপ জীবনের হুমকিস্বরূপ। উচ্চ রক্তচাপ আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে যেসব সমস্যা হয় তা হলো—১. স্ট্রোক (মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ), ২. হার্ট অ্যাটাক, ৩. হার্ট ফেইলর, ৪. কিডনির ফেইলর হওয়ার আশঙ্কা থাকে, ৫. চোখের রক্তনালির ক্রমাগত চাপ বাড়ে ও তা স্ফীত হয়ে যায়, ৬. রক্তনালির বাইরে দেয়ালে ক্ষত সৃষ্টি ও শক্ত হওয়া, ৭. রক্তনালির ভেতরের দেয়ালে চর্বি ও অন্যান্য পদার্থ জমে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং ৮. যৌনকাজে অক্ষমতা।

 উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কী কী?
৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা যায় না এবং অন্য কারণে চিকিত্সকের কাছে গিয়ে প্রেশার মাপার পর সহসা উচ্চ রক্তচাপের উপস্থিতি জানা যায়—১. মাথাব্যথা: তীব্র মাথাব্যথা, সকালের দিকে হয়, অল্প কয়েক দিন ধরে হয়, বমি বমি ভাব, ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে আসে; ২. মাথা ঝিমঝিম ভাব; ৩. ঘুম কম হওয়া; ৪. শ্বাসকষ্ট এবং ৫. নাক দিয়ে রক্ত পড়া।

 উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জীবনব্যবস্থায় কী কী পরিবর্তন করতে হয়?
আজীবন চিকিত্সা চালিয়ে যেতে হবে। সুস্থবোধ করলেই চিকিত্সা বাদ দেওয়া যাবে না। ওজন কমাতে হবে। খাদ্যতালিকায়—অতিরিক্ত সোডিয়াম লবণ, চর্বিযুক্ত মাংস, কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাদ্য বর্জন করতে হবে। বিশ্রাম নিতে হবে—ঘুমের মাধ্যমে, যোগব্যায়ামের মাধ্যমে কিংবা সবকিছু সহজভাবে গ্রহণ করে বিশ্রাম নেওয়া যাবে। ব্যায়াম করতে হবে, তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম করা যাবে না এবং ক্লান্ত হওয়ার আগেই ব্যায়াম বন্ধ করতে হবে। নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে, ডায়াবেটিস থাকলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর পর চিকিত্সকের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে হবে, ধূমপান বন্ধ করতে হবে।

 উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কি প্রতিদিন প্রেশার মাপতে হবে?
না, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে প্রতিদিন প্রেশার মাপার প্রয়োজন নেই। প্রেশার অনিয়ন্ত্রিত থাকলে প্রথম দিকে এক দিন পর পর, পরে সপ্তাহে এক দিন এবং পরবর্তী সময়ে দুই সপ্তাহে একবার বা মাসে একবার প্রেশার মাপা উচিত।

 উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কী কী পরীক্ষার প্রয়োজন আছে?
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে উচ্চ রক্তচাপের কারণ নির্ণয় করার জন্য এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রভাব দেখার জন্য কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন আছে।

 উচ্চ রক্তচাপের কারণে হূদেরাগ হলে কী কী পরীক্ষার প্রয়োজন?
উচ্চ রক্তচাপের কারণে হূদেরাগ হলে হূদেরাগের মাত্রা নিরূপণের জন্য ইসিজি, ইকো (কালার ডপলার) ইটিটি, সিএক্সআর, পি/এ ভিউ পরীক্ষাগুলো করা প্রয়োজন।

 উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে হূদেরাগ থাকলে কী কী ওষুধ ব্যবহার করা যায়?
উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে অর্থাত্ হৃদপিণ্ডের রক্তনালিতে ব্লক থাকলে আমরা অ্যাসপিরিন-জাতীয় ওষুধ, বিটা ব্লকার ওষুধ, নাইট্রেট-জাতীয় ওষুধ স্ট্যাটিন গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করি।

 উচ্চ রক্তচাপ ও হূদেরাগ, যেমন—হাইপারটেনসিভ হার্ট ডিজিজ অর্থাত্ হৃদপিণ্ডের দেয়াল মোটা হলে কী কী ওষুধ ব্যবহার করা যায়।
উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে হৃদপিণ্ডের দেয়াল মোটা হলে আমরা এসিই ইনহিবিটর বা এ আর বি গ্রুপের ওষুধ দিই।


সুস্থ হার্ট, কর্মক্ষম জীবন বিশ্বজুড়ে


সারা বিশ্বে হৃদরাগের প্রকোপ প্রতিদিনই বাড়ছে মহামারির মতো। সে জন্য বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন ১০ বছর ধরে হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য গণসচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার বিশ্ব হার্ট দিবস পালন করা হতো শতাধিক দেশে। এ বছর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পালন করা হবে। প্রতিবছর এর নির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে প্রতিপাদ্য (মূল স্লোগান) ঠিক করা হয়। এবার করা হয়েছে আই ওয়ার্ক উইথ হার্ট (এক পৃথিবী, এক ঘর, এক হূদযন্ত্র)।

পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ হার্ট-সংক্রান্ত রোগে মারা যায়। আর এ-সংক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। অথচ এই মৃত্যুর ৮০ শতাংশ কমানো সম্ভব প্রতিরোধের মাধ্যমে। হৃদরোগের প্রভাব যেমন রয়েছে ব্যক্তিজীবনে, তেমনি রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে। কারণ, অধিকাংশ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয় জীবনের সবচেয়ে কর্মক্ষম সময়ে।

বাংলাদেশে হৃদরোগীর সংখ্যা দেড় কোটির বেশি। শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত—সবারই হৃদরোগ হতে পারে। যদিও বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ রয়েছে। এর মধ্যে করোনারি হার্ট ডিজিজ, শিশুদের হৃদরোগ (কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ), রিউমেটিক হার্ট ডিজিজ, পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ উল্লেখযোগ্য।

বিভিন্ন কারণে হৃদরোগ হলেও প্রধান কারণগুলো হচ্ছে: ধূমপান (ধূম্র বা ধূম্রবিহীন), ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া হৃদরোগ। এ ছাড়া জীবনযাত্রা, যেমন—কম কায়িক পরিশ্রম, অপুষ্টিকর খাদ্য, মোটা হয়ে যাওয়া, উত্তেজনা-উত্কণ্ঠা হৃদরোগের অন্যতম কারণ।

হৃদপিণ্ড হচ্ছে শরীরের চালিকাশক্তি। হৃদপিণ্ডের মাধ্যমেই অক্সিজেন ও পুষ্টিকর পদার্থ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে রক্তের মাধ্যমে। হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকলে শরীর ভালো থাকে।

‘সুস্থ হার্ট, সুস্থ কর্মক্ষম জীবন’। আর শরীর সুস্থ থাকলে কর্মক্ষমতা বাড়ে, কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতির হার বাড়ে, চিকিত্সার খরচ কমে যায়, মনোবল অটুট থাকে এবং চাকরিচ্যুতির আশঙ্কা কম থাকে। সচেতন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এর পুরোপুরি সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। তারা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুস্থ জীবনযাত্রা সম্পর্কে সচেতন করছে নিজেদের স্বার্থেই।

নিজের জীবনকে সুন্দর করে গোছানোর দায়িত্ব নিজের। একটু মনোযোগ দিলে, একটু জীবনযাত্রা পরিবর্তন করলে রোগবালাই কমে যাবে। কয়েকটি সহজ নিয়ম মেনে চললে হৃদরোগ আপনা থেকে দূরে থাকবে; যেমন—পরিমিত খাবার গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রম বাড়ানো, যেকোনো ধরনের ধূমপান বর্জন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপানমুক্ত কাজের পরিবেশ, বাসস্থান, উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা ও উত্তেজনা কমিয়ে আনা।

ওপরের সব নিয়মকানুন এক দিনে শুরু করা হয়তো কারও কারও জন্য কঠিন। তবে আজ যেকোনো একটি দিয়ে শুরু করুন, দেখবেন, কয়েক দিনের মধ্যেই ধীরে ধীরে সব পালন করা শুরু করেছেন। কারণ, শুরু করার দিন থেকেই সুস্থবোধ করছেন শারীরিক ও মানসিকভাবে। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন, সুস্থ কর্মক্ষম থাকুন আপনার জন্য, আপনার পরিবারের জন্য এবং আপনার সমাজের জন্য।
বাংলাদেশে কার্ডিওলজিস্টের সংখ্যা ৩০০ জনের কিছু বেশি, কার্ডিয়াক সার্জনের সংখ্যা ৮০ জনের মতো, আর কার্ডিয়াক অ্যানেসথেসিস্ট ও পারফিউশনিস্ট আছেন হাতেগোনা কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বেসরকারি খাতে কর্মরত। এই অল্পসংখ্যক জনশক্তি নিয়ে দেশব্যাপী কার্ডিয়াক সার্ভিস বা হৃদরোগের সেবা দেওয়া দুরূহ, তবে অসম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে সারা দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে সরকারিভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হৃদরোগের সেবার আওতায় আনা সম্ভব।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো হচ্ছে গ্রামবাংলার চিকিত্সার প্রাণকেন্দ্র। অনেক উপজেলা হাসপাতালে কার্ডিওলজিস্টের পদ থাকলেও জনবলের অভাবে এ রোগের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, আনুষঙ্গিক জনবল নিয়োগের মাধ্যমে মেডিসিন স্পেশালিস্টকে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের মাধ্যমে প্রাথমিক হৃদরোগের চিকিত্সা দেওয়া সম্ভব। জটিল হৃদরোগীদের উপজেলা পর্যায়ে চিকিত্সা দেওয়া সম্ভব না হলে সরাসরি কাছের জেলা হাসপাতালের জরুরি কার্ডিয়াক কেয়ার সেন্টারে স্থানান্তর করা যেতে পারে। এ জন্য জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক সুবিধাসহ করোনারি কেয়ার ইউনিট স্থাপন করা দরকার। দেশে বর্তমানে কার্ডিওলজিতে প্রশিক্ষিত যে জনবল রয়েছে, তাতে সহজেই জেলা হাসপাতালগুলোতে হৃদরোগের জরুরি ও রুটিন চিকিত্সাসেবা দেওয়া যেতে পারে।

যেসব রোগীর এনজিওগ্রাম বা অন্য ইনভেসিভ পরীক্ষার দরকার হবে, তাদের কাছের হাসপাতালে পাঠানো যেতে পারে, যেখানে এনজিওগ্রাম বা এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। পুরোনো জেলা হাসপাতালগুলোতে সরকারি উদ্যোগে পর্যায়ক্রমে এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ‘ক্যাথ ল্যাব’ স্থাপন করা যেতে পারে। দেশে ১৪টি কার্ডিয়াক সার্জিক্যাল হাসপাতালের মধ্যে ১৩টি ঢাকায় অবস্থিত। দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় এসে হূদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচার করা রোগীর চিকিত্সা নেওয়া তার ও তার আত্মীয়স্বজনের জন্য ব্যয়বহুল, অসুবিধাজনক ও ভোগান্তির। এ জন্য বিভাগীয় সদরে বা পুরোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন করা দরকার। এসব হাসপাতালে বয়স্ক রোগী, শিশু ও কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের হূদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে। তবে জটিল শিশু হৃদরোগীদের অস্ত্রোপচারের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালে দুটি পৃথক ইউনিট খোলা হয়েছে, যেখানে সারা দেশের জটিল শিশু হৃদরোগীরা সেবা পেতে পারে। তবে প্রতিকারের পাশাপাশি হৃদরোগ প্রতিরোধের ওপরও জোর দিতে হবে। আর এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে



মন ভালো তো হৃদযন্ত্র ভালো


হৃদয় বা মন, এর সঙ্গে হৃদ্‌যন্ত্রের সত্যিকারের যোগাযোগ কতটুকু, তা নিয়ে যতই বিতর্ক আর গবেষণা চলুক, এ কথা আজ নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত যে মনের সমস্যার সঙ্গে হৃদরোগের একটা সম্পর্ক রয়েছে। ব্যক্তিত্বের ধরন, মনের অসুখ, চাপ, উৎকণ্ঠা, বিষণ্নতা ইত্যাদি মানসিক অবস্থা হৃদরোগের অন্যতম কারণ বলে আবিষ্কৃত হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী বহু গবেষণা হচ্ছে, মনের সমস্যার সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক এখন প্রমাণিত সত্য, কিন্তু বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এইচ এফ ডাম্বার তাঁর ইমোশন অ্যান্ড বডিলি চেঞ্জ গ্রন্থে এ বিষয়ে গবেষণাপ্রসূত তথ্য দেন।
তিনি বলেন, আবেগের নানা রকম সমস্যা, মানসিক চাপ ও ব্যক্তিত্বের ধরন হৃদরোগের অন্যতম একটি কারণ। তিনি সর্বপ্রথম ‘করোনারি পারসোনালিটি’ নামে ব্যক্তিত্বের প্রকরণ ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন, এ ধরনের মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তির হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেশি। এ ধরনের ব্যক্তিত্বের আচরণকে পরে ১৯৬০ সালে ফ্রাইডম্যান ও রোসেনম্যান ‘টাইপ-এ আচরণ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
পরবর্তী আরও গবেষণায় ১৯৭৫ সালে ফ্রাইডম্যান ও তাঁর সহযোগীরা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করেন, যাদের মধ্যে টাইপ-এ আচরণ দেখা যায় বা যারা করোনারি পারসোনালিটির অধিকারী, তাদের হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি! কেমন আচরণ হয় করোনারি পারসোনালিটির মানুষের, আর টাইপ-এ আচরণই বা কী?
গবেষণায় এ ধরনের ব্যক্তিত্বের যে বৈশিষ্ট্য ও আচরণগুলো বের হয়ে এসেছে, তা হলোঃ
ক্রমাগত আবেগের সমস্যায় থাকা, সামান্য মনখারাপের বিষয়ে বেশি ভেঙে পড়া বা কোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অত্যধিক আবেগ প্রকাশ করা। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে আশপাশের মানুষের চেয়ে সুবিধাবঞ্চিত থাকা। অতিরিক্ত কাজের চাপ ও কর্মপরিধির মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে মানসিক চাপ বোধ করা। কোনো কারণ ছাড়াই পারিপার্শ্বিকতার প্রতি বৈরী ভাব পোষণ করা (যেমন-এ দেশের সবাই খারাপ, সব মানুষ লোভী, কেউ ভালো নয়, সবাই আমার শত্রু ইত্যাদি মনে করা)।
সব সময় একটা প্রতিযোগিতামূলক আচরণ করা, বেশি পরিমাণে উচ্চাভিলাষী হওয়া (যেমন-অমুকের চেয়ে আমার এ বিষয়ে ভালো করতেই হবে, ওর আগে আমার প্রমোশন হতেই হবে, আমার সন্তানকে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেতেই হবে ইত্যাদি মনোভাব)। কারণে-অকারণে সব কাজে তাড়াহুড়ো করা। সব সময় একটা পূর্বনির্ধারিত ‘ডেডলাইন’ মাথায় রাখা যে এ সময়ের মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তি হতে হবে, সময়মতো না হলে তীব্র মানসিক চাপে ভোগা। হুট করে রেগে যাওয়া, অধৈর্য হওয়া, খিটখিটে আচরণ করা। এ ধরনের আচরণ আর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিরা আক্রান্ত হতে পারে হৃদ্‌যন্ত্রের যেকোনো রোগে, বিশেষত রক্ত সরবরাহ-সংক্রান্ত জটিলতায় (ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ), যার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে বুকে ব্যথা আর পরিণতিতে মৃত্যু।
এ তো গেল আচরণ আর ব্যক্তিত্বের কথা। এদিকে কিছু মানসিক রোগের সঙ্গেও সরাসরি হৃদরোগের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা।
যেমন উৎকণ্ঠা (অ্যাংজাইটি) আর অনিয়ন্ত্রিত রাগের কারণে হতে পারে এনজিনা বা ব্যথাযুক্ত হৃদরোগ। তীব্র বিষণ্নতা ও উৎকণ্ঠার যদি চিকিৎসা করা না হয়, তবে এ দুটি রোগ থেকে হতে পারে ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’ নামের মারাত্মক হৃদরোগ, যাতে মৃত্যুঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। এ ছাড়া আরেকটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়াসহ নানা রকম মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত দু-একটি ওষুধ হৃদ্‌যন্ত্রের ওপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া করতে পারে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত কোনো কোনো ওষুধ বিষণ্নতাসহ আরও কিছু মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে।
সম্প্রতি আরেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যাদের সফলভাবে করোনারি বাইপাস সার্জারি বা হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ পরবর্তী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে মাঝারি থেকে তীব্র বিষণ্নতা ও মানিয়ে চলার সমস্যায় (অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিজঅর্ডার) আক্রান্ত হতে পারে, যা তাদের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেয় ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।
সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে এসব রোগীকে অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি নিয়মিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হচ্ছে। হৃদরোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় কেবল খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ব্যায়াম আর ওষুধ সেবনই যথেষ্ট নয়; জীবনযাত্রার পরিবর্তন, আচরণের পরিবর্তন এবং সঠিক মানসিক সাম্যাবস্থাও প্রতিরোধ করতে পারে জীবনবিনাশী হৃদরোগ। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে সবাইকে।



এক বিশ্ব এক ঘর এক হৃদযন্ত্র


পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় ঘাতক রোগ যে হৃদযন্ত্রের রোগ, তা এখন বলছেন বিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞজনেরা। প্রতিবছর এক কোটি ৭৩ লাখ লোকের প্রাণ হরণের কারণ হলো হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ।
হৃদযন্ত্রের রোগ ও স্ট্রোক—দুটিই ঘাতক রোগ। ঝুঁকিগুলো হলো—উচ্চ রক্তচাপ, উঁচুমান কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজ, ধূমপান, ফল ও শাকসবজি কম খাওয়া, শরীরের বেশি ওজন এবং শরীরচর্চা না করা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা, স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোও।
এবার ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন মিলে এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। ১০০টির বেশি দেশে তা পালিত হবে বলে ধারণা।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা, হাঁটার কর্মসূচি, দৌড় ও ফিটনেস সেশন, আলোচনা ও টক শো, মঞ্চাভিনয়, বৈজ্ঞানিক সম্মেলন, প্রদর্শনী, কনসার্ট, খেলাধুলা—এসব অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে এই দিবসকে ঘিরে।
বিশ্ব হার্ট দিবসের থিম হবে—এক বিশ্ব, এক ঘর ও এক হৃদয়।
পৃথিবীজুড়ে বাড়ছে অসংক্রামক রোগ। হৃদযন্ত্রের রোগ এগুলোর মধ্যে প্রধান। এবার সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো এ নিয়ে আয়োজন করছে উচ্চপর্যায়ের সভা। প্রয়োজন হয়ে পড়েছে আমাদের ঘরকে কী করে হৃদবান্ধব করা যায় তা জানা।
নিজের ও পরিবারের অন্যদের হৃদেরাগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কী করে কমানো যায়, তা জানাও জরুরি হয়ে পড়েছে।

‘এক বিশ্ব, এক ঘর ও এক হৃদয়’—এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে এসব বিষয় জোরেশোরে আলোচিত হবে।
বিশ্ব হার্ট দিবসের সূচনা হয়েছিল ২০০০ সালে, বিশ্বজুড়ে লোকদের জানানোর উদ্দেশ্যে, হৃদেরাগ ও স্ট্রোক হলো প্রধান ঘাতক রোগ।
সদস্যদের সঙ্গে মিলে বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন এ তথ্য প্রচারে উদ্যোগী যে হৃদেরাগ ও স্ট্রোকের ৮০ শতাংশ অকালমৃত্যু ঠেকানো যায়। প্রয়োজন প্রধান ঝুঁকিগুলো এড়ানো—ধূমপান ও তামাক গ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও শরীরচর্চা না করা হলো মূল ঝুঁকি। এগুলো পরিহার করা, নিয়ন্ত্রণ করাই শ্রেয় আমাদের সবার জন্য।
প্রতিবছর এ জন্য পালিত হয় বিশ্বজুড়ে বিশ্ব হার্ট দিবস। বিশ্বজুড়ে যত লোকের মৃত্যু হয় প্রতিবছর, এর ২৯ শতাংশ ঘটে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগের জন্য। তাই এটি হয়ে উঠেছে প্রধান ঘাতক রোগ।
বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা তাই অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধি, যেমন—ক্যানসার, ক্রনিক শ্বাসযন্ত্রের রোগ ও ডায়াবেটিসের সঙ্গে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করছেন। এর গুরুত্ব বিবেচনা করে সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো অসংক্রামক ব্যাধির ওপর উচ্চপর্যায়ের সভা আহ্বান করেছে।
তবে এ কথা ঠিক, কেবল সভা-সম্মেলন করে এবং নীতিনির্ধারক ও বিশ্বনেতাদের উদ্যোগেই এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়যুক্ত হওয়া যায় না। পৃথিবীর প্রতিটি লোক ব্যক্তিপর্যায়ে হৃদেরাগের এ বড় বোঝাকে লঘু করার জন্য এ অভিযানে যোগ দেবেন, আর এ জন্য প্রত্যেকে জানবেন হার্টের রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে, নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকিহ্রাসের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
পারিবারিক কাজকর্মের কেন্দ্রস্থল গৃহ। প্রত্যেক লোকের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু নিজের গৃহকোণ। হূত্স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কাজ শুরু হয় এখানেই। এ জন্যই এ বছর বিশ্ব হার্ট দিবসে, বিশ্ব হর্ট ফেডারেশন ও সদস্য সংস্থাগুলো সব প্রচেষ্টার কেন্দ্র করেছে গৃহকোণকে। নিজ ঘরে পরিবারের সদস্যরা হিতকরী কিছু আচরণে অভ্যস্ত হলে জগত্জুড়ে মানুষ হার্টের রোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে পাবেন পরিপূর্ণ দীর্ঘ জীবন।
এ বছর তাই বিশ্ব হার্ট দিবসে বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন পরিবারের হূত্স্বাস্থ্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে বলছে। এ জন্য কিছু কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
১. ঘরে ধূমপান নিষিদ্ধ করুন। নিজের ও শিশুদের হৃদস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ঘরে ধূমপান বন্ধ করুন। আসলে যেকোনো স্থানই হোক, ধূমপান বর্জন করা অবশ্যকর্তব্য। (প্রতিটি সিগারেট জ্বালানোর জন্য জরিমানা দিতে হবে—এমন বিধি করা ভালো।)
২. ঘরে থাকবে স্বাস্থ্যকর খাবার। দিন শুরু হোক এক টুকরো ফল খেয়ে। দুপুরের খাবার তৈরি করুন নিজ ঘরে, যাতে খাবার হয় স্বাস্থ্যকর। নিশ্চিত করুন যে প্রতিদিন সন্ধ্যার খাবারে থাকবে প্রতিজনের জন্য সবজি।
৩. সক্রিয় হন। টিভি দেখার সময় দুই ঘণ্টার কম করা উচিত। পরিবারের সদস্যদের জন্য নানা ধরনের শরীরচর্চার আয়োজন করা উচিত, যেমন—সাইকেল চালানো, বেড়ানো, খেলাধুলা। যখন সম্ভব, মোটরগাড়ি না চড়ে সাইকেলে চলুন বা বাড়ি থেকে হেঁটে যান গন্তব্যে।
৪. জানুন নিজের সংখ্যাগুলো: একজন চিকিত্সকের কাছে গিয়ে জেনে নিন নিজের রক্তচাপ মান, গ্লুকোজ মান এবং কোমর; নিতম্ব অনুপাত ও বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স)। হৃদেরাগের সার্বিক ঝুঁকি থেকে থাকলে এবং তা জেনে নিলে হৃদস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা যায়।

একটি হৃদয়
আগেই বলেছি, প্রতিবছর এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারায় হৃদেরাগে। আর ৮২ শতাংশ মৃত্যু ঘটে নিম্ন আয় ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে।
বাংলাদেশেও হৃদেরাগের চিত্র উল্লেখযোগ্য। প্রাপ্তবয়স্কদের ১৫ শতাংশ ভুগছে হৃদেরাগে। সাধারণ মানুষ হৃদেরাগ চিকিত্সার পুরোপুরি আওতায় নেই। ২০১০ সালে স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিনে দেখা যায়, হৃদেরাগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে।
স্বাস্থ্য বুলেটিন ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশে হৃদেরাগে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। এসব দেশে হৃদেরাগীর সংখ্যা বৃদ্ধি দুঃখের ব্যাপার। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম ও ধূমপান বর্জন করলে অধিকাংশ মৃত্যুই এড়ানো সম্ভব।
তবে সব ধরনের হৃদেরাগ যে প্রতিরোধযোগ্য, তা-ও নয়। ঘরে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঘটনা ঘটলে কী করা উচিত তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের কোনো সদস্যের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়েছে সন্দেহ হলে অবিলম্বে চিকিত্সা-সহায়তা চাইতে হবে।
৭০ শতাংশেরও বেশি কার্ডিয়াক বা শ্বাসযন্ত্রের রোগের ইমার্জেন্সি ঘটে নিজ ঘরে, যখন আক্রান্ত রোগীকে সাহায্য করার মতো আত্মীয়স্বজন উপস্থিত থাকেন।

জানা ভালো হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো
০ বুকে অস্বস্তি: বুকের মাঝখানে দুটি স্তনের মধ্যে বা উরঃফলকের পেছনে মোচড় দিয়ে ব্যথা।
০ অস্বস্তি বা ব্যথা বুক থেকে ছড়িয়ে যায় দেহের অন্যত্র, দুই বাহুতে বা পিঠে, ঘাড়ে, চোয়ালে বা পেটে।
০ শ্বাসকষ্ট, অথচ বুকে অস্বস্তি নেই।
অন্য আরও লক্ষণ: দুর্বলতা বা ক্লান্তিবোধ, যার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। বদহজম বা পেটে গ্যাস হওয়ার মতো অনুভূতি, ঠান্ডা ঘাম বের হওয়া। বমি ভাব, মাথা হালকা হয়ে যাওয়া বা মূর্ছা যাওয়া।

স্ট্রোকের সতর্কসংকেত
০ মুখমণ্ডল, বাহু বা পায়ে হঠাত্ দুর্বলতা, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শরীরের এক পাশে।
০ হঠাত্ বিহ্বলতা, কথা বলতে বা বুঝতে অসুবিধা ও জড়তা।
০ হঠাত্ এক চোখে বা দুই চোখে দেখতে সমস্যা।
০ হঠাত্ হাঁটতে অসুবিধা, মাথা ঝিমঝিম, ভারসাম্যহানি, টলমল অবস্থা।
০ হঠাত্ প্রচণ্ড মাথা ধরা, অকারণে।
এমন সব লক্ষণ দেখলে ডাকুন ইমার্জেন্সি অ্যাম্বুলেন্স। যাবেন জরুরি বিভাগে। চটজলদি।

হৃদযন্ত্রের রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি
০ উচ্চ রক্তচাপ
০ শরীর ভারী হয়ে যাওয়া
০ রক্তে উচ্চমান কোলেস্টেরল
০ ধূমপান বা তামাকের অভ্যাস
০ শরীরচর্চার অভাব
০ ডায়াবেটিস

এবার আরও বলা হচ্ছে, রেড অ্যালার্ট নারীদের হৃদস্বাস্থ্যের ব্যাপারে। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ৩১ লাখ নারীর মৃত্যু হয় হৃদেরাগ ও স্ট্রোকে।
সব ধরনের ক্যানসার, যক্ষ্মা, এইচআইভি/এইডস এবং ম্যালেরিয়ায় একত্রে যত নারী মারা যান, তার চেয়ে বেশি নারী মারা যান হৃদরোগ ও স্ট্রোকে। অথচ বেশির ভাগ হৃদেরাগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য।
তাই বিশ্ব হার্ট ফেডারেশন এই লাল সংকেত দিয়েছে নারীদের জন্য, তাঁরা যেন হৃদেরাগ সম্পর্কে আরও অবহিত হন, ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানেন হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের, পদক্ষেপ নেন একে প্রতিরোধে এবং অর্জন করেন সজীব, হূত্সুখকর জীবন।
হৃদয় ও হৃদপিণ্ড নিয়ে বড় অবহেলা নারীদের। নারীদের হৃদয় ও হৃদপিণ্ড নিয়ে অবহেলা চিকিত্সকদেরও। এ বড় অন্যায়।




হার্টের বাইপাস অপারেশন


..

জটিল হৃদরোগ হলে বাইপাস অপারেশন করাতে হয় একথা এখন সবারই জানা। অনেকে আবার একে ওপেন হার্ট সার্জারি হিসেবে চেনে। যাই জানা থাকনা কেনো সব ধরনের জটিল হৃদ্ররোগে বাইপাস অপারেশন লাগে না তেমনি বাইপাস অপারেশন আর ওপেন হার্ট সার্জারি কথাটাও একই অপারেশন বুঝায় না। বাইপাস সার্জারি বলতে আমরা যা বুঝি তাকে মেডিকেলের ভাষায় বলে সি,এ,বি,জি (CABG- Coronary Artery Bypass Graft) সার্জারি। হার্টে ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ অর্থাৎ এর ধমনীতে ব্লক হলে তা যদি স্টেন্ট / রিং পরিয়ে বা এনজিওপ্লাস্টি করে ভালো করার সম্ভাবনা না থাকে তবে সি,এ,বি,জি বা বাইপাস অপারেশন করাতে হয়। সি,এ,বি,জি সার্জারির ফলাফল স্টেন্ট পরানোর চেয়ে ভালো এই অর্থে যে একবার সি,এ,বি,জি করালে তা অনেকদিন দীর্ঘ হয় এবং এমন ধমনীতে সি,এ,বি,জি করা যায় যেখানে কখনো স্টেন্ট পরানো সম্ভব নয়।

সি,এ,বি,জি’র মুল সমস্যা হলো এজন্য রোগীর বুক কাটতে হয় এবং শরীরে বড় কাটা দাগ থাকে এবং এই অপারেশনটি পুরো অজ্ঞান করে করা হয় আর এতে ঝুকির সুযোগও বেশী। এই অপারেশনে রোগীর বুকের মাঝখানের হাড়টিকে ইলেক্ট্রিকাল করাত (saw) দিয়ে কাটা হয় এরপর হার্টের ধমনীর যেসব জায়গায় ব্লক আছে তার পরবর্তী স্থানে আরেকটি রক্তনালী লাগিয়ে দেয়া হয়। ফলে ব্লকের সামনে ও পিছন, ধমনীতে স্বাভাবিক হারে রক্তপ্রবাহ চলমান থাকে। এই নতুন রক্তনালীটি বুকের ভেতর থেকে নেয়া হয়। পায়ের মোটা শিরাটি দিয়েই এই নতুন রক্তনালী তৈরী করা হয়, হাতের ধমনীকেও এই কাজে ব্যাবহার করা হয়। এজন্য সি,এ,বি,জি অপারেশনের রোগীর পা এবং হাতে কাটা দাগ থেকে যায়।

বাইপাস অপারেশন হার্ট স্পন্দিত অবস্থায় বা বিটিং হার্টে (Beating heart) করা যায় একে অপক্যাব (OPCAB)সার্জারি বলে।তবে বর্তমানে উন্নত বিশ্বে হৃদস্পন্দন বন্ধ করেই (Arrested heart) বেশীর ভাগ সি,এ,বি,জি সার্জারি করা হয়, এই ধরনের অপারেশনকেই ওপেন হার্ট সার্জারি (Open heart surgery) বলা হয়। ওপেন হার্ট সার্জারিতে হার্টকে পুরোপুরি থামিয়ে দেয়া হয় এবং অপারেশনকালীন হার্ট-লাং মেশিন (Heart-Lung machine) হার্ট ও ফুসফুসের কাজ চালিয়ে নেয়।

..

বুকের মাঝখানে কাটা ছাড়াও বামপাশে ছোটো করে কেটেও সি,এ,বি,জে অপারেশন করা যায়। একে বলা হয় মিডক্যাব (MIDCAB) সার্জারি। Robot আবিস্কার হবার পর রোবোট দিয়েও সিএবিজি সার্জারি (Robotic surgery) করা হচ্ছে, এর ফলে এখন সার্জন একদেশে বসে অন্য দেশের রোগীর সিএবিজি সার্জারি করতে পারেন। রোবোটিক সার্জারি’তে রোগীর গায়ে খুবই সামান্য একটু কাটা দাগ থাকে এবং খুব দ্রুত রোগী বাড়ি চলে যেতে পারে।

সিএবিজি বা বাইপাস সার্জারি সেইঅর্থে এখন আর কোনো ভীতিকর সার্জারি নয়, এমনকি এখন পুরোপুরি অজ্ঞান না করেও এ অপারেশন করা যাচ্ছে। এর উত্তরোত্তর সাফল্যে মানুষের হৃদরোগে মৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে।


হার্টের বাইপাস অপারেশন


জটিল হৃদরোগ হলে বাইপাস অপারেশন করাতে হয় একথা এখন সবারই জানা। অনেকে আবার একে ওপেন হার্ট সার্জারি হিসেবে চেনে। যাই জানা থাকনা কেনো সব ধরনের জটিল হৃদ্ররোগে বাইপাস অপারেশন লাগে না তেমনি বাইপাস অপারেশন আর ওপেন হার্ট সার্জারি কথাটাও একই অপারেশন বুঝায় না। বাইপাস সার্জারি বলতে আমরা যা বুঝি তাকে মেডিকেলের ভাষায় বলে সি,এ,বি,জি (CABG- Coronary Artery Bypass Graft) সার্জারি। হার্টে ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ অর্থাৎ এর ধমনীতে ব্লক হলে তা যদি স্টেন্ট / রিং পরিয়ে বা এনজিওপ্লাস্টি করে ভালো করার সম্ভাবনা না থাকে তবে সি,এ,বি,জি বা বাইপাস অপারেশন করাতে হয়। সি,এ,বি,জি সার্জারির ফলাফল স্টেন্ট পরানোর চেয়ে ভালো এই অর্থে যে একবার সি,এ,বি,জি করালে তা অনেকদিন দীর্ঘ হয় এবং এমন ধমনীতে সি,এ,বি,জি করা যায় যেখানে কখনো স্টেন্ট পরানো সম্ভব নয়।

সি,এ,বি,জি’র মুল সমস্যা হলো এজন্য রোগীর বুক কাটতে হয় এবং শরীরে বড় কাটা দাগ থাকে এবং এই অপারেশনটি পুরো অজ্ঞান করে করা হয় আর এতে ঝুকির সুযোগও বেশী। এই অপারেশনে রোগীর বুকের মাঝখানের হাড়টিকে ইলেক্ট্রিকাল করাত (saw) দিয়ে কাটা হয় এরপর হার্টের ধমনীর যেসব জায়গায় ব্লক আছে তার পরবর্তী স্থানে আরেকটি রক্তনালী লাগিয়ে দেয়া হয়। ফলে ব্লকের সামনে ও পিছন, ধমনীতে স্বাভাবিক হারে রক্তপ্রবাহ চলমান থাকে। এই নতুন রক্তনালীটি বুকের ভেতর থেকে নেয়া হয়। পায়ের মোটা শিরাটি দিয়েই এই নতুন রক্তনালী তৈরী করা হয়, হাতের ধমনীকেও এই কাজে ব্যাবহার করা হয়। এজন্য সি,এ,বি,জি অপারেশনের রোগীর পা এবং হাতে কাটা দাগ থেকে যায়।

বাইপাস অপারেশন হার্ট স্পন্দিত অবস্থায় বা বিটিং হার্টে (Beating heart) করা যায় একে অপক্যাব (OPCAB)সার্জারি বলে।তবে বর্তমানে উন্নত বিশ্বে হৃদস্পন্দন বন্ধ করেই (Arrested heart) বেশীর ভাগ সি,এ,বি,জি সার্জারি করা হয়, এই ধরনের অপারেশনকেই ওপেন হার্ট সার্জারি (Open heart surgery) বলা হয়। ওপেন হার্ট সার্জারিতে হার্টকে পুরোপুরি থামিয়ে দেয়া হয় এবং অপারেশনকালীন হার্ট-লাং মেশিন (Heart-Lung machine) হার্ট ও ফুসফুসের কাজ চালিয়ে নেয়।

বুকের মাঝখানে কাটা ছাড়াও বামপাশে ছোটো করে কেটেও সি,এ,বি,জে অপারেশন করা যায়। একে বলা হয় মিডক্যাব (MIDCAB) সার্জারি। Robot আবিস্কার হবার পর রোবোট দিয়েও সিএবিজি সার্জারি (Robotic surgery) করা হচ্ছে, এর ফলে এখন সার্জন একদেশে বসে অন্য দেশের রোগীর সিএবিজি সার্জারি করতে পারেন। রোবোটিক সার্জারি’তে রোগীর গায়ে খুবই সামান্য একটু কাটা দাগ থাকে এবং খুব দ্রুত রোগী বাড়ি চলে যেতে পারে।

সিএবিজি বা বাইপাস সার্জারি সেইঅর্থে এখন আর কোনো ভীতিকর সার্জারি নয়, এমনকি এখন পুরোপুরি অজ্ঞান না করেও এ অপারেশন করা যাচ্ছে। এর উত্তরোত্তর সাফল্যে মানুষের হৃদরোগে মৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে।


ভাল্ভের রোগ (Valvular Disease)

হৃদপিন্ডের ভাল্ভ এর কাজ অনেকটা দরজার মতো, এরা কেবল এক দিকে খোলে এবং এভাবে হৃদপিন্ডের ভেতরে রক্ত কেবল এক দিকে প্রবাহিত হয়। ভাল্ভের রোগ হলে এই একমুখি রক্ত প্রহাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। হার্টে মোট ৪ টি ভাল্ভ রয়েছে। এর মধ্যে মাইট্রাল ও এওরটিক ভাল্ভ দুটি ই বেশী রোগাক্রান্ত হয় এবং তখন সমস্যাগুলো ও প্রকট হয়। সেই তুলনায় ট্রাইকাসপিড বা পালমোনারি ভাল্ভ রোগাক্রান্ত হবার সুযোগ অপেক্ষাকৃত অনেক কম এদের প্রকটতা ও কম।


মাইট্রাল ভাল্ভের রোগ


মাইট্রাল স্টেনোসিস (মাইট্রাল ভাল্ভ সরু হয়ে যাওয়া)

একজন স্বাভাবিক পরিণত মানুষের মাইট্রাল ভাল্ভের ব্যাস ৪-৬ বর্গ সেন্টি মিটার, এটা কখনো ২ বর্গ সেন্টি মিটার এর চেয়ে কমে আসলে তাকে মাইট্রাল স্টেনোসিস বলা হয়। বলতে গেলে এর একমাত্র কারণ হলো রিউমেটিক ফিভার বা বাত জর।দুর্বল লাগা, শ্বাস কষ্ট, কফ কাশি, কফের সাথে রক্ত যাওয়া, বুক ধরফর করা, পায়ে পানি আসা ইত্যাদি এই রোগের লক্ষন। ইকোকার্ডিওগ্রাম করে এটা নিশ্চিত করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ঔষধে নিয়ন্ত্রন করা গেলেও এক পর্যায়ে ইন্টারভেনশন করে বেলুন ভাল্ভোপ্লাস্টি করতে হয়। তবে এই রোগের চুড়ান্ত বা শেষ চিকিৎসা হলো সার্জারি করে ভাল্ভ বদলে ফেলা (ভাল্ভ রিপ্লেসমেন্ট)। ভাল্ভ রিপ্লেসমেন্ট জটিল অপারেশন হলেও নিয়ম মেনে চললে এর পর রোগী চল্লিশ বছর পর্যন্ত সুস্থ্য থাকতে পারে।



মাইট্রাল রিগারজিটেশন

মাইট্রাল ভাল্ভ এর পাপড়ির মত কপাটিকা গুলো ঠিক মতো বন্ধ হতে না পারলেই তাকে মাইট্রাল রিগার্জিটেশন বা মাইট্রাল ভাল্ভ প্রলাপ্স রোগ বলা হয়। হার্ট এর মধ্যে রক্ত সবসময় এট্রিয়াম থেকে ভেন্ট্রিকল অর্থাৎ এক দিকে প্রবাহিত হয়। এই রোগে কিছু রক্ত উলটো পথে চলে যায়। এর ফলে শ্বাস কষ্ট, কফ কাশি, কফের সাথে রক্ত যাওয়া, বুক ধরফর করা, পায়ে পানি আসা ইত্যাদি উপসর্গ গুলো দেখা দেয়। এই রোগ ও ইকোকার্ডিওগ্রাম করে নিশ্চিত করা যায়। বাত জর ছাড়াও অন্য রোগের জটিলতা হিসেবে এই রোগ হতে পারে। সার্জারিই এই রোগের একমাত্র চুড়ান্ত চিকিৎসা।


এওরটিক ভালভের রোগ


এওরটিক স্টেনোসিস

এর অর্থ এওরটিক ভাল্ভ সরু হয়ে যাওয়া। এই রোগ হলে হৃদপিন্ড থেকে ধমণীতে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। একজন স্বাভাবিক পরিণত মানুষের এওরটিক ভাল্ভের ব্যাস ২-৪ বর্গ সেন্টি মিটার, এটা কখনো ০.৮ বর্গ সেন্টি মিটার এর চেয়ে কমে আসলে তাকে এওরটিক স্টেনোসিস বলা হয়। এর প্রধান কারণ হলো ভাল্ভের গায়ে ক্যালসিয়াম জমা, এছাড়া জন্মগত কিছু ত্রুটি এবং রিউমেটিক ফিভার বা বাত জর ও এর কারণ হিসেবে পরিচিত। অল্প একটু পরিশ্রম করলেই শ্বাস কষ্ট হওয়া বা বুকে ব্যথা হওয়া, হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি এই রোগের লক্ষন। এই রোগে এমনকি হঠাৎ করেও কারো মৃত্যু হতে পারে, তাই রোগ নির্ণয় এর পর রোগী কে অবশ্যই বিশ্রামে থাকতে হবে। ইকোকার্ডিওগ্রাম করে এই রোগের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। উপসর্গ দেখা দিলে সার্জারি করে ভাল্ভ বদলানোই (ভাল্ভ রিপ্লেসমেন্ট) এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা। ভাল্ভ রিপ্লেসমেন্ট এর পর নিয়ম মানলে রোগী অনেক বছর ভালো থাকতে পারে।


এওরটিক রিগারজিটেশন

এওরটিক ভাল্ভ এর পাপড়ির ন্যায় কাস্প গুলো কোনো কারণে একই সাথে বন্ধ হতে না পারাটাই এওরটিক রিগার্জিটেশন। এর ফলে হৃদপিন্ড থেকে পাম্প করে পাঠানো রক্ত ধমণী থেকে আবার হৃদপিন্ডে ফিরে আসে। ভাল্ভে ক্যালসিয়াম জমা, রিউম্যাটিক রোগ, জন্মগত ত্রুটি, কিছু প্রদাহ জনিত রোগ, ব্যাক্টেরিয়াল এন্ডকার্ডাইটিস সহ এই রোগের বহুবিধ কারন রয়েছে। এওরটিক স্টেনোসিস এর মতই পরিশ্রম করলে শ্বাস কষ্ট হওয়া বা বুকে ব্যথা হওয়া, হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি এই রোগের লক্ষন। এই রোগের উপস্থিতি ও ইকোকার্ডিওগ্রাম করে নিশ্চিত করা হয়। উপসর্গ দেখা দিলে সার্জারি করে ভাল্ভ বদলানোই (ভাল্ভ রিপ্লেসমেন্ট) এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা। ভাল্ভ রিপ্লেসমেন্ট এর পর নিয়ম মানলে রোগী অনেক বছর ভালো থাকতে পারে।
0 হার্ট ডিজিজ
ইমেইল প্রিন্ট পিডিএফ
হার্ট ব্লক হয়েছে বললেই আমাদের মনে যে রোগটির ছবি ফুটে উঠে তা হলো আসলে ইশকেমিক ডিজিজ। হার্ট ব্লক নামক প্রচলিত শব্দটি কিন্ত এই রোগের ক্ষেত্রে ভুল নামকরণের শিকার, কারণ হার্ট ব্লক নামে সত্যিই একটি হৃদ রোগ আছে যার সাথে এই রোগের মিল খুব সামান্যই। তবে হার্ট এর ধমণী তে ব্লক (করোনারি আরটারী স্টেনোসিস) হয়েছে বললে সেটা কিন্ত এই রোগটিকেই বোঝায়। তাই পাঠক এই ক্ষেত্রে একটু যত্নবান হবেন বলে আশা রাখবো। মেডিকেল পরিভাষায় একে করোনারি আর্টারি ডিজিজ বলা হয়।

ধমণীর ব্লক কীঃ হৃদপিন্ড শরীরের সর্বত্র রক্ত সরবরাহ করে, এই প্রবাহিত রক্তের কাজ খুব সহজ করে বললে হবে সর্বত্র পুষ্টির যোগান দেয়া। হৃদপিন্ডের নিজেরও পুষ্টির প্রয়োজন আছে আর তা আসে মোটামুটি মাঝারী মাপের তিনটি ধমণীর সাহায্যে। এদের নাম যথাক্রমে ডান পাশে আর,সি,এ (রাইট করোনারি আরটারি), মাঝে এল,এ,ডি (লেফট এন্টেরিয়র ডিসেন্ডিং), এবং যেটি হৃদপিন্ড কে ঘুড়ে আসে তার নাম এল,সি,এক্স (লেফট সারকামফ্লেক্স) আরটারি। কোনো কারণে যদি এসব ধমণী সরু হয়ে যায় বা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে করোনারি আরটারীর স্টেনোসিস হয়েছে বা ব্লক হয়েছে শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ধমণীর গায়ে চর্বি জমে তা ক্রমান্বয়ে সরু হতে থাকে। এটা যদি শতকরা ৫০ ভাগ এর বেশি হয়ে যায় সেক্ষেত্রে হৃদপিন্ডের রক্ত প্রবাহ মাত্রাতিরিক্ত কমে যেতে থাকে এবং রোগী সামান্য পরিশ্রমেই বুকে ব্যথা অনুভব করতে পারেন।

হার্ট এটাক/এমআই/??স্ট্রোকঃ হার্ট এটাক রোগটিকে ভুলবশত স্ট্রোক বলা হয়ে থাকে। স্ট্রোক মস্তিস্কের রক্তক্ষরণ জাতীয় রোগ আর হার্ট এটাক হৃদপিন্ডের একটি রোগ, যার মেডিকেল পরিভাষা হল মায়কার্ডিয়াল ইনফার্কশন, ছোট্ট করে একে বলা হয় এম,আই। হার্ট এর ধমণী গুলো সরু হয়ে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত প্রবাহ আশংকা জনক হারে কমে যায় এবং হার্টের কোষ গুলো মৃত্যু বা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়- এর ই নাম ইশকেমিয়া। কেতাবী নাম মায়কার্ডিয়াল ইশকেমিয়া। ইশকেমিয়া হলে বুকে তীব্র চাপ ও ব্যাথা অনুভুত হয় তখন এই সমস্যাটিকে বলে এনজাইনা পেক্টোরিস। এনজাইনা শব্দের বাংলা অর্থ ব্যাথা আর পেক্টরিস এর অর্থ বুক। যদি ইশকেমিয়া চলতেই থাকে তবে হার্ট এর কোষ গুলো একসময় মারা যায়, এই অবস্থাটির নামই মায়কার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা এম,আই- যা আমরা প্রচলিত অর্থে হার্ট এটাক হিসেবে চিনি।


লক্ষনঃ ইশকেমিয়া হলে রোগীর বুকের বাম দিকে প্রচন্ড ব্যাথা বা এনজাইনা হয় এবং রোগী বুকে তীব্র চাপ অনুভব করে। অনেক রোগীই অভিযোগ করে যে তার বুকের উপর ভীষন ভারী একটা কিছু চেপে বসে আছে। ব্যাথার তীব্রতা বুকে বেশী থাকলেও এটা বুক থেকে গলা, গাল, মাড়ি, কান, বাম হাত এবং আশে পাশে ছড়িয়ে পরতে পারে। একে রেফার্ড পেইন বলা হয়। বুকের ব্যাথা ১ থেকে ৩ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, তবে এটা কখনই ৩০ সেকেন্ড সময়ের কম দৈর্ঘের হয়না। আবার ১৫ মিনিটের বেশী স্থায়ী হওয়ার নজিরও খুব কম। এনজাইনা বা ব্যাথা শুরু হয় সাধারণত কোনো একটা পরিশ্রমের কাজ করার সময় যেমন দৌড়ানো বা জোরে হাটা ইত্যাদি। তবে পেট ভরে খাবার খাওয়া, যৌন ক্রিয়া এমনকি হঠাৎ রেগে যাওয়া বা উত্তেজিত হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ও এনজাইনা শুরু হয়ে যেতে পারে। ব্যাথার সাথে রোগীর অন্য উপসর্গ যেমন শ্বাসকষ্ট, পেট ফাপা লাগা, অস্থির লাগা, বুক ধড়ফর করা ইত্যাদিও থাকতে পারে। পরিশ্রম বন্ধ করে বিশ্রাম নিলে এই ব্যথা সাথে সাথে সাময়িক ভাবে কমে যেতে পারে।

রোগ নির্ণয়ঃ বুকের ব্যাথার কারণ হিসেবে এনজাইনা বা এম,আই সন্দেহ হলে প্রথম যে পরীক্ষাটি করা হয় তা হলো একটি ১২ লিডের ইসিজি। ব্যাথার শুরুর দিকে ইসিজি স্বাভাবিক ও আসতে পারে, এজন্য পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকবার ইসিজি করা লাগতে পারে। এর পর ও যদি ইসিজি স্বাভাবিক আসে এবং এনজাইনা হবার সন্দেহ থাকে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হার্ট এর এনজাইম এর মাত্রা দেখে এই রোগ নিশ্চিত করেন। প্রধানত ট্রপনিন আই এবং সি,কে,এম,বি এনজাইম দুটো দেখা হয়, এছাড়া অন্য এনজাইম ও দেখার প্রয়োজন হতে পারে। এনজাইনা বা এম,আই এর কারণ জানার চুড়ান্ত পরীক্ষা হলো এনজিওগ্রাম করা। সিটি স্ক্যান করে (সিটি এনজিওগ্রাম) অথবা পা কিংবা হাতের ধমনীতে বিশেষ ধরনের ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে- দুভাবেই এনজিওগ্রাম করা যায়। তবে শেষের পদ্ধতিই বেশী কার্যকর। কোনো কোনো রোগী আছেন যাদের মাঝে মাঝে কাজের মধ্যে বুকে ব্যাথা হয় কিন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় হয়না এবং ইসিজি করলেও ধরা পড়েনা তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রেস টেস্ট বা ইটিটি পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করতে হয়।

চিকিৎসাঃ করোনারি আর্টারি ডিজিজ বা ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ এর চিকিৎসা অবশ্যই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ (কার্ডিওলজিস্ট) এর তত্ত্বাবধানে করা উচিত। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ কেবল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞই রোগীর সঠিক অবস্থা বিবেচনা করে আদর্শ চিকিৎসা দিতে পারেন। সহজ করে বললে এনজাইনা জাতীয় রোগে তারা প্রথমেই যে ঔষুধ গুলো দিয়ে থাকেন তার মধ্যে একটি হলো নাইট্রোগ্লিসারিন যা স্প্রে করে, শিরায় অথবা ট্যাবলেট হিসেবেও দেয়া হয়। এছাড়াও রক্তের প্লাটেলেট বিরোধী এসপিরিন বা ক্লোপিডোগ্রেল, উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনের অসুধ, মরফিন জাতীয় শক্তিশালী ব্যাথা নাশক এবং রক্ত তরলকারি হেপারিন বা ইনোক্সাপারিন ও দেয়া হয়। কার্ডিওলজিস্ট অনেক সময় রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে রক্ত তরলকারি ইনজেকশন স্ট্রেপটোকাইনেজ বা এল্টেপ্ল্যাজ জাতীয় অসুধ ও ব্যবহার করে থাকেন। তবে ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ এর চুড়ান্ত চিকিৎসা হলো প্রথমে এনজিওগ্রাম করে কোন ধমনীতে স্টেনোসিস আছে তা নির্ণয় করা এবং সেই অনুযায়ী এনজিওপ্লাস্টি করা বা ব্লক সরিয়ে সে স্থানে স্টেন্ট বসিয়ে দেয়া(যা প্রচলিত আছে রিং পরানো নামে)। অনেক সময়ই স্টেন্ট বসানো সম্ভব হয়না অথবা যৌক্তিক হয়না সেক্ষেত্রে অবশ্যই সিএবিজি বা বাইপাস অপারেশন (প্রকৃত নাম CABG- Coronary Artery Bypass Graft) করে রোগীর স্থায়ী রোগ মুক্তি ঘটান হয়।






«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply