দিল্লিকে ১ রানে হারাল গুজরাট, জয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন রায়না
সুরেশ রায়না ও ক্রিস মরিস
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ২৩তম ম্যাচে ক্রিস মরিসের ৩২ বলে অপরাজিত ৮২ রানের সুবাদে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও মাত্র ১ রানে হেরে গেছে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। এর ফলে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করল সুরেশ রায়নার গুজরাট লায়ন্স।
দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৭২ রান গুজরাট। জবাবে, ক্রিস মরিসের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের পরেও ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭১ রানে থামতে হয় দিল্লিকে।
১৭৩ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১৬ রানের মাথায় টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় জহির খানের দল। কুইন্টন ডি কক (৫), সঞ্জু স্যামসন (১) ও করুন নায়ারকে (৯) ফিরিয়ে দেন ধবল কুলকার্নি। এরপর রিশব পান্থ ২০ রান করেন। দলীয় ৫৭ রানের মাথায় চার উইকেটের পতনের পর জুটি গড়েন জেপি ডুমিনি আর ক্রিস মরিস। ঝড়ো গতিতে রান তুলে তারা যোগ করেন ৩৯ বলে ৮৭ রান। ১৮তম ওভারে ক্যারিবিয়ান ডানহাতি ফাস্ট বোলার ডোয়াইন ব্রাভোর বলে আউট হওয়ার আগে ডুমিনি করেন ৪৩ বলে ৪৮ রান।
তবে, ব্যাট ঝড় তোলা ক্রিস মরিস মাত্র ১৭ বলে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করে দলকে জয়ের পথে নিতে থাকেন। টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ার সেরা রান করার পথে তিনি ৮২ রানে অপরাজিত থাকেন। তার এই দুর্দান্ত ইনিংসটি সাজানো ছিল ৩২ বলে ৪টি চার আর ৮টি ছক্কায়।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য দিল্লির প্রয়োজন ছিল ১৪ রান, হাতে ছিল ৫ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার ক্রিস মরিস ব্রাভোর করা শেষ ওভারের প্রথম বলেই চার হাঁকান। দ্বিতীয় বলে সিঙ্গেল নিলে তৃতীয় বলে পবন নেগি এক রান দিয়ে মরিসকে স্ট্রাইকে পাঠান। চতুর্থ বলে মরিস দুই রান নেন। পঞ্চম বলে আবারো ডাবলস নিলে শেষ বলে চার রানের প্রয়োজন হয়। ইনিংসের শেষ বলে মরিস আরেকবার ডাবলস নিলে দিল্লির দলীয় সংগ্রহ ১৭১ রানেই থেমে যায়।
গুজরাটের হয়ে ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট দখল করেন কুলকার্নি। ফকনার আর ব্রাভো একটি করে উইকেট লাভ করেন। ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিলেও উইকেটশূন্য থাকেন প্রভীন কুমার।
এর আগে টসে হেরে গুজরাটের হয়ে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামে ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার ডোয়াইন স্মিথ ও সাবেক কিউই অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। দুর্দান্ত ব্যাটিং করে তারা ১১২ রানের নির্ভরযোগ্য জুটি গড়ে তোলেন। ১০ তম ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার ইমরান তাহিরের ঘূর্ণিতে ধরাশায়ী হনডোয়াইন স্মিথ। তিনি মাত্র ৩০ বল খেলে ৫টি চার ও ৩টি ছয়ে ৫৩ রানের ইনিংস সাজান। আর ম্যাককালাম ৩৬ বলে ৬টি চার আর তিনটি ছক্কার সাহায্যে করেন ৬০ রান।
এছাড়া, দলপতি রায়না ২, দিনেশ কার্তিক ১৯, রবীন্দ্র জাদেজা ৪, ইশান কিষান ২ রান করে বিদায় নেন। ক্যারিবীয় তারকা ডোয়াইন ব্রাভো ৭ ও জেমস ফকনার ১৩ বলে ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন।
দিল্লির হয়ে ৪ ওভারে ২৩ রান খরচায় সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট দখল করেন ইমরান তাহির। আর ৪ ওভারে ৩৫ রানের বিনিময়ে দুটি উইকেট পান ক্রিস মরিস। এক ওভারে ৪ রান খরচায় একটি উইকেট নেন জেপি ডুমিনি।
শ্বাসরুদ্ধকর এ ম্যাচে ৩২ বলে ৮২ রান করার পাশাপাশি বল হাতে উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা পুরস্কার পান ক্রিস মরিস। ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আসলে এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। তবে আমি খুশি যে আমি দলের হয়ে কিছু করতে পেরেছি। আমি আসলেই ভাগ্যবান। আজকে এমন একটি রাত ছিল যেখানে সব কিছুই আমার পক্ষেই যাচ্ছিল। আমার টাইমিং বেশ ভালো ছিল এবং বল ব্যাটের মাঝ বরাবর আসছিল। দুই মাস ধরে আমি আমার ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছি। নেটে বেশ অনুশীলন করেছি ব্যাটিং নিয়ে আর তার ফল আজকে পেয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ব্যাটিংয়ে যাওয়ার আগে দ্রাবিড়ের কাছে পরামর্শ নিয়েছিলাম। সে বলল নিজের মতন করে খেল, আমাকে চাপ নিতে মানা করেছিল সে। এরকম ম্যাচ সবসময় সবাই জিততে চায়, আমরা অনেক কাছাকাছি এসেও জয় পেলাম না। তবে আমার খেলা সেরা ম্যাচের মধ্যে এটি একটি।”
ম্যাচ শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে গুজরাট অধিনায়ক সুরেশ রায়না জানান, মরিস যখন মারকুটো ব্যাটিং করছিলেন তখন প্রায় জয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি, তবে সব কৃতিত্ব তিনি তার বোলারদের দিয়েছেন যারা শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি বের করে আনতে পেরেছে।
রায়না বলেন, “অসাধারণ একটি ম্যাচ ছিল এটি। আমি এক পর্যায়ে জয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। তবে মরিস চমৎকার ব্যাটিং করেছে। ১৫তম ওভার থেকেই মনে হচ্ছিল এই বুঝি ম্যাচটি ফসকে গেল। প্রবীণ তার সেরা বোলিং করেছে, ব্রাভো শেষ ওভারে অসাধারণ বল করেছে। কিন্তু আমি বলতে চাই ফকনার ওভারটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সে একটি ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছে প্যান্টকে আউট করে।”
এদিকে, এই হারে একদম হতাশ নন দিল্লির অধিনায়ক জহির খান। তিনি মনে করেন এই ম্যাচ থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে। তিনি বলেন, “অসাধারণ একটা ম্যাচ ছিল, এই ম্যাচ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। বেশ কিছু ভালো দিক রয়েছে যা আমাদের দল পরবর্তী ম্যাচে কাজে লাগাতে পারবে। ম্যাককালাম এবং স্মিথ অসাধারণ ব্যাটিং করেছে বটে, তবে আমাদের বোলাররাও শেষ দশ ওভারে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ম্যাচটি যেকোনো পক্ষই জিততে পারত আসলে, ভাগ্যটা আমাদের সাথে ছিল না শুধু।”
তিনি আরও বলেন, “শুরুটা আমাদের ধীরগতিতে হলেও পরে আমরা খেলায় ফিরে এসেছিলাম। ডুমিনি চমৎকার ব্যাটিং করেছে আর মরিস তো অসাধারণ একজন খেলোয়াড়। শুধু ব্যাটিংয়ে নয় সে বোলিংয়েও পারদর্শী। তার করা একটি ওভারই আমাদের ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিল। মাঠে আমরা কিছু সুযোগ তৈরি করেছিলাম কিন্তু কিছু জিনিস আমাদের মন মতন যায়নি। আশা করি সামনের ম্যাচ গুলোতে আমরা আরও ভালো ক্রিকেট উপহার দেব।”
উল্লেখ্য, চলতি আইপিএলে ৫ ম্যাচে ৩ জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। #
No comments: