গরমের রূপচর্চা শরীরটাকে ঠিক রাখার জন্য আমাদের উচিত ভালোভাবে শরীরের যত্ন নেওয়া
গরমের রূপচর্চা শরীরটাকে ঠিক রাখার জন্য আমাদের উচিত ভালোভাবে শরীরের যত্ন নেওয়া
গত ১০ বছরের নিরিখে এই বছর সবথেকে বেশি গরম পড়েছে৷ নাজেহাল অবস্থা শহরবাসীর৷ শরীরের অবস্থা দিনে দিনে কাহিল হয়ে পড়ছে৷ এই অবস্থায় শরীরটাকে ঠিক রাখার জন্য আমাদের উচিত ভালোভাবে শরীরের যত্ন নেওয়া৷ প্রচুর ফল ও জল খাওয়া উচিত এবং বাইরের ফাস্টফুড না খাওয়াই ভালো৷ শরীরকে যেমন ভেতর থেকে সুস্থ রাখা দরকার তেমনই বাইরে থেকেও৷ ত্বক,চুল হাত-পায়ের যত্ন ও যথার্থ মেক-আপ করলেই শরীর ও মন দুটোই চনমনে থাকবে৷ তাই কীভাবে যত্ন নেবেন তার কিছু টিপস থাকল আপনাদের জন্য৷
চুল:
১. চুলের গোড়া ঘেমে গেলে বাইরে থেকে ঘরে ফিরে পাখার ঠান্ডা বাতাসে চুলটা শুকিয়ে নিতে হবে। কোনোভাবেই ঘামে ভেজা চুল বেঁধে রাখা যাবে না। এতে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় এবং চুল পড়া বাড়ে। ধুলোবালি ও ঘামের কারণে চুল নিষ্প্রাণ হয়ে গেলে প্রয়োজনে প্রতিদিন শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে শ্যাম্পু করার পর চুলের গোড়ায় যেন বাড়তি শ্যাম্পু না লেগে থাকে।
২. যাঁদের খুশকির প্রবণতা বেশি, তাঁরা খুশকিনাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। তবে এর আগে মাথায় স্ক্যাল্পে হালকা করে গরম তেল ম্যসাজ করে নিন। এটি আপনাকে প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের সুফল দেবে৷
৩. চুলের পরিচর্যার জন্য টক দই, মেহেন্দি পাতা, মেথি গুঁড়ো ও কাগজি লেবুর কয়েক ফোঁটা রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এটি চুলে ৩০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন। টক দই করবে ময়েশ্চারাইজারের কাজ। মেথির গুঁড়ো খুশকি দূর করবে এবং চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়াবে কাগজি লেবুর রস। এভাবে মাসে অন্তত এক দিন যত্ন নিন।
৪. চুল পড়া কমাতে আমলকীর রস ও ক্যাস্টর অয়েল চুলের গোড়ায় হালকা করে মাসাজ করুন। এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
এ সময় চুলটা আঁটসাঁট করে না বেঁধে পাঞ্চ ক্লিপে হালকা করে আটকে নিন। ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই চুলের এমন কোনো কাট দিন, যেটি গরমের সময় আরামদায়ক।
৫. প্রখর রোদে বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করুন।
ত্বক:
বাতাসে উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সূর্যের তাপ এবং ধুলোবালির কারণে এ সময়ে ত্বকের জন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্ন ৷
গরমের সময়ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার বন্ধ করবেন না। কারণ ময়েশ্চারাইজার ত্বকে আর্দ্রতা জোগানোর পাশাপাশি ত্বককে নরম রাখে। তবে গরমের সময় ওয়াটার বেজ ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন ত্বকের যত্নে৷
গরমের সময় ত্বকের মরা কোষ দূর করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য ত্বককে এক্সফোলিয়েট করা জরুরি। কারণ এ সময় ধুলোময়লা জমে ত্বক অপরিচ্ছন্ন হয় বেশি। চার-পাঁচ চামচ বেসনের সাথে এক চামচ হলুদ, পাঁচ-ছয় ফোঁটা গোলাপজল ও দুধ মিশিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। আধঘণ্টা পর ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন।
বেসন ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে খুব কার্যকর। বেসনের সাথে টক দই ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। রোদে পোড়া দাগ দূর করতে লেবুর রস ভালো কাজ করে। পেঁপে প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে ভালো কাজ করে। তাই ত্বক পরিষ্কার করতে দুই টেবিল চামচ চটকানো পেঁপের সাথে এক চা চামচ মধু ও একটা ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
গরমে ত্বক শীতল রাখা খুব প্রয়োজন। এক টেবিল চামচ কোরানো শসার সাথে এক টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। খুবই সতেজ অনুভব করবেন। এ ছাড়া পুষ্টিকর খাবার, ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম ত্বক ভালো রাখার জন্য খুবই জরুরি
হাত ও পায়ের যত্ন: শরীরের অন্য যেকোনো এলাকার ত্বকের থেকে হাতের ত্বক থেকে খুব দ্রুত আর্দ্রতা চলে যায়। এ কারণে হাতের ত্বকে ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করা জরুরী। হ্যান্ড ক্রিম এবং লোশন ব্যবহার করুন এর জন্য। শিয়া বাটার, অলিভ অয়েল, ভিটামিন- ই, ম্যাকাডেমিয়া নাট অয়েল এসব উপাদান আছে এমন ক্রিম হাতের ত্বকে তারুণ্য ধরে রাখবে। হাত ধোয়ার পর পরই এসব ক্রিম মেখে নিন। এছাড়াও মুখে অ্যান্টিএজিং ক্রিম মাখার সময়ে হাতেও একটু মেখে নিতে দোষ নেই। আই ক্রিম ম্যাসাজ করলেও অনেকটা উপকার পাবেন।
পাকা কলা চটকে আপনার পায়ের গোড়ালিতে লাগান। এটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং এরপর হালকা গরম জল দিয়ে আপনার পা ধুয়ে ফেলুন।
এই মাস্কের বিশেষত্ব হচ্ছে যাদের পায়ের গোড়ালি ফাটা বা খসখসে তারা এই ফুট মাস্ক ব্যবহার করার ফলে পা ফাটা থেকে মুক্তি পাবেন ও পায়ের গোড়ালি নরম কোমল আর সুন্দর হয়ে উঠবে। কারণ কলা আপনার পায়ের জন্য ভালো ফুট ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে।
মেক-আপ:
প্রথমে ফেসওয়াশ এবং ক্লিনজার দিয়ে ত্বক খুব ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। কারণ মুখ পরিষ্কার ও ধোয়া না হলে তেলতেল
ভাব রয়ে যায়, এতে করেও মেকআপ গলে যাওয়ার ভয় থাকে।
১.২-৩ টুকরো বরফ নিয়ে মুখের পুরো ত্বক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে করে মেকআপ অনেকটা সময় ত্বকে সেট থাকে।
২. অবশ্যই ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ ব্যবহার করবেন গরমকালে।
৩. এমন মেকআপ ও কসমেটিকস ব্যবহার করুন যা পুরোপুরি অয়েল ফ্রি। এতে মেকআপ গলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। প্রয়োজনে নিজের অন্যান্য মেকআপ বাদ দিন গরমকালের জন্য, নিয়ে আসুন অয়েল ফ্রি মেকআপ।
৪. টোনার দিয়ে মুখ ভালো করে মুছে নেবেন এবং ভালো সানস্ক্রিন লোশন লাগিয়ে নেবেন। এতে অতিরিক্ত তেল দূর হবে ত্বক থেকে এবং মেকআপ সেট থাকবে অনেকটা সময়।
৫. প্রথমে মেকআপ প্রাইমার লাগিয়ে নেবেন এটি মেকআপ গলে যাওয়া রোধ করবে।
৬. খুব অল্প পরিমাণে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন। এবং লিক্যুইডের চাইতে সেমি-লিক্যুইড বা পাউডার ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে মেকআপ গলার সম্ভাবনা কম থাকে।
৭. ল্যুজ পাউডার চেপে দিয়ে ত্বকের উপরে মেকআপ সেট করে নিন। এতে বাড়তি তেল পাউডার শুষে নেওয়ার কাজ করবে অনেকটা সময় এবং মেকআপ গলবে না।
গরমে এই বিষয়গুলোর খেয়াল রাখলেই নিজেকে সুন্দর ও চনমনে রাখা যাবে৷
No comments: