মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান কলাবাগানের নিজ বাসায় দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের আহবান জানিয়ে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৯ টায় জন কেরি প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
প্রায় ১৬ মিনিটের কথোপকথনে জন কেরি কুশল বিনিময়ের পর জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানান কেরি। এর উত্তরে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে টেলিফোন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর পরিশ্রম করছে। কিছু ক্লু পাওয়া গেছে। আশা করি, অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যেকোনো ধরনের হত্যাকাণ্ডকে আমরা ঘৃণা করি। কলাবাগানে যে দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের একজন আমার সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়। তাছাড়া আমার পরিবারের সকল সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার। আজ শেখ জামালের জন্মদিন। আমার এই ছোট্ট ভাইকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের সাথে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর দুজন হত্যাকারী এখনো যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। এ সময়, বঙ্গবন্ধুর দুই হত্যকারীকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে জন কেরির প্রতি অনুরোধও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে কাউন্টার টেরোরিজম বিষয়ে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। এই সহযোগিতার আওতায় এফবিআই বাংলাদেশে এসেছে। আমি আশা করি কাউন্টার টেরোরিজম বিষয়ক সহযোগিতার ক্ষেত্র অব্যাহত থাকবে। কোন তথ্য পেলে তা শেয়ার করা হবে।
এ পর্যায়ে জন কেরি বলেন, কাউন্টার টেরোরিজম সংক্রান্ত সহযোগিতা আরও এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেসাই বিসওয়ালকে তিনি বাংলাদেশে পাঠাবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে যারা প্রকাশ্যে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তারাই এই হত্যাকারীদের মদদ যোগাচ্ছে। হত্যাকারীরা হত্যার ক্ষেত্রে সফট-টার্গেটে আগাচ্ছে। তারা ইমাম, পুরোহিত, পাদ্রিদের টার্গেট করছে। এ সবগুলোই ঠাণ্ডামাথার হত্যাকাণ্ড। এ সময়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে একই পরিবারের আট জনকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানান তিনি। এছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়ায় বাংলাদেশি দম্পতির হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জন্য জন কেরির প্রতি অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জুলহাজ ও তার বন্ধু তনয় হত্যার ঘটনায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকার সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘরে ঢুকে এক বাংলাদেশি দম্পতি খুনের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের দেশেও হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। কিন্তু সে বিষয়ে ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো মাথা ব্যথা নেই। যতটা মাথাব্যাথা বাংলাদেশকে নিয়ে। তিনি কলাবাগানে একটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করছেন। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার বসে নেই। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কোনো হত্যাকারীকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
জুলহাজ হত্যায় উদ্বেগ জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন করাকে স্বাভাবিক মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক এম. শাহীদুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন স্বাভাবিক ঘটনা। যেহেতু জুলহাজ মান্নান মার্কিন দূতাবাসের চাকরি করতো এবং তার চিন্তা চেতনা মার্কিন সমর্থক, তাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ফোন করতেই পারেন। এটা প্রমাণ করে জুলহাজ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিল। আর হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। তাই এ ধরনের ফোন চাপ নয়, ব্যক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ।
এ বিশ্লেষকের মতে, জুলহাজ যে চিন্তা চেতনা লালন করতেন, তা মার্কিন সংস্কৃতি বা জীবনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কারণে একটা দায়বোধ তৈরি হয়। আর যে কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তা দেশটির সংস্কৃতিতে স্বাভাবিক ঘটনা, জীবনের অংশ। তাই এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ তারা করতেই পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান।#
No comments: