ব্রাসেলসে আবদেসালাম আটকের প্রতিশোধ
ব্রাসেলসে আবদেসালাম আটকের প্রতিশোধ
বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়ে ব্রাসেলস বিমানবন্দরে কাতরাচ্ছেন দুই যাত্রী। একজন মোবাইলে স্বজনদের খবর দিয়ে সাহায্য চাচ্ছেন। স্থানীয় সময় সোমবার ব্রাসেলসে তিন দফা বোমা হামলায় কয়েক ডজন নিহত হয়েছে।
আরও একটি সন্ত্রাসী হামলায় কেঁপে উঠল ইউরোপ। ব্রাসেলসের মেট্রোরেল ও বিমানবন্দরে বোমা বিস্ফোরণে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন। হামলার পরপরই নানা প্রশ্ন উঠেছে বিশেষজ্ঞদের কাছে। কেন হঠাৎ ব্রাসেলসে হামলা?
আইএসের দায় স্বীকার এবং ব্রাসেলস বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া তিন জঙ্গির ছবি থেকে এ ধারণা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। তিন জঙ্গির দু’জন (কালো পোশাকে ছিল) আÍঘাতী বোমায় নিহত হয়েছে বলেই প্রাথমিক তথ্যে জানিয়েছে পুলিশ। আরেকজন সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য কোনো তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ। নিহত দু’জনই আবদেসালামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং প্যারিস হামলায় জড়িত ছিল।
গত শুক্রবার ব্রাসেলসের মলেনবিক থেকে আটক করা হয় প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার প্রধান আসামি ও মাস্টারমাইন্ড সালাহ আবদেসালামকে। গত বছরের নভেম্বরে প্যারিসের বিভিন্ন স্থানের ওই হামলায় অন্তত ১৩০ জন নিহত হয়েছিলেন। ব্রাসেলসের হামলা কি আবদেসালামকে আটকের প্রতিশোধ? ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর অদক্ষতা-ব্যর্থতার প্রমাণ? আবদেসালামের নেটওয়ার্ক এখনও সক্রিয়? নাকি গোয়েন্দাদের কাছে সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে পুরো ধারণা নেই।
ব্রাসেলসের হামলার মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে- এটা স্পষ্টতই সন্ত্রাসী হামলা। প্রথমত. এ হামলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, ইউরোপে জঙ্গিবাদের হুমকি বাড়তে পারে, কিংবা কমতে পারে। কিন্তু একক কোনো ব্যক্তির আটকের কারণে তা থেমে থাকে না। নীতিনির্ধারকরা শুক্রবারে আবদেসালামের আটককে ‘বিরাট ঘটনা’ বলে উল্লেখ করলেও এখন প্রমাণিত হল- ওটা ‘সামান্য ঘটনা’।
দ্বিতীয়ত. সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাস প্রতিরোধকারী উভয় গ্র“পের জন্য আক্রমণটাই প্রধান। এর ব্যবহারিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক রয়েছে। কাউন্টার টেররিজম এজেন্সিরা চায় তথ্য উদ্ঘাটন ঘরে অভিযানের মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের আটক করে হামলা প্রতিরোধ করতে। সন্ত্রাসীরা চায়, নতুন হামলা করে নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, তারা এখনও হামলা পরিচালনা, সন্ত্রাসবাদের নেতৃত্ব ও সহিংসতার মেরুকরণ ঘটাতে পারে। এটা শুধু প্রতিশোধ নয়, অব্যাহত হামলা চালানোর সক্ষমতার প্রমাণ। সন্ত্রাসীরা দুর্বল হয়েছে হয়তো, কিন্তু নির্মূল হয়নি। বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিদিয়ের রেন্ডার্স রোববার বলেছিলেন, ‘তদন্তকারীদের কাছে আবদেসালাম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন যে, ব্রাসেলসে হামলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ হামলা বাস্তবে রূপান্তরিত হতে পারত, কেননা আমরা বহু অস্ত্র উদ্ধার করেছি। এ ছাড়া ব্রাসেলসে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের প্রাথমিক তথ্য পেয়েছি।’ কিন্তু সেই নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়ার আগেই ব্রাসেলসের মেট্রোরেল ও বিমানবন্দর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল। বেলজিয়ামের নেটওয়ার্ক সন্ত্রাসী হামলা চালাতে সক্ষম, কারণ প্যারিস হামলার অন্যতম দু’জন সন্দেহভাজন এখনও অধরা। গত নভেম্বরের পর থেকে তাদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর একজন মোহাম্মদ আবরিনি (৩১)। তিনি মরক্কো বংশোদ্ভূত একজন বেলজিয়ান। প্যারিস হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও লজিস্টিক সরবরাহকারী তিনি। এ ছাড়া আবরিনি আবদেসালামের বাল্যবন্ধু। চার মাস আগে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বলা হয়, তিনি অত্যন্ত বিপজ্জনক ও সম্ভবত সশস্ত্র। এ ছাড়া পুলিশ সুফিয়াসে কায়াল নামের আরেকজনকে খুঁজছে। আবদেসালাম ও মোহাম্মদ বেলকাইদের (৩৫) সঙ্গে তিনি ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্ত পার হয়েছিলেন। এর মধ্যে বেলকাইদ গত মঙ্গলবার পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছেন। আবদেসালামের এই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কে আরও অনেকেই আছেন, যাদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।
No comments: