শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করতে সাহায্য করে গোলমরিচ ও নানা গুন
শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করতে সাহায্য করে গোলমরিচ ও নানা গুন
গোল মরিচ, যা আমরা সকলেই চিনি। বিশ্বের প্রায় সব ধরণের কুইজিনেই এই মশলাটির কম বেশি ব্যবহার রয়েছে। এর রয়েছে বেশ তীক্ষ্ণ ঝাঁঝালো স্বাদ। অনেক ক্ষেত্রে আস্ত গোলমরিচ ব্যবহার করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টাটকা গোলমরিচ এর গুঁড়ো টাই বেশি প্রচলিত। রান্নায় গোলমরিচ ব্যবহার করা উচিত রান্নার একদম শেষে। নাহলে এটি রান্নায় ব্যবহৃত তেলকে বাস্পে পরিণত করে এবং রান্নার আসল স্বাদটাই নষ্ট করে ফেলে। আর রান্নার শেষ মুহূর্তে একটু খানি টাটকা গোলমরিচের গুঁড়ো রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে তোলে অনেকখানি। স্বাদবর্ধকের পাশাপাশি এর রয়েছে অ্যানটিব্যাকটেরিয়াল, অ্যানটিঅক্সিডেন্টাল ও অ্যানটিইনফ্ল্যামাটরি প্রপার্টি, যা এটিকে পরিণত করেছে একটি আরোগ্যকর ভেষজ মশলায়।
গোলমরিচে রয়েছে পিপেরিন নামক একটি বিশেষ উপাদান। এর পাশাপাশি এই মশলাটি আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ, জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, ভিটামিন এ ও সি এবং অন্যান্য উপাদানে ভরপুর।
এবার চলুন দেখি, ছোট এই মশলাটি আপনার কীকী কাজে লাগতে পারে।
শীতের সময় সর্দি-কাশির সমস্যা খুবই সাধারন। শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে গোলমরিচ। এছাড়াও জ্বরের সময় ঘাম ঝরিয়ে জ্বর কমাতে সাহায্য করে গোলমরিচ। গলা ব্যাথা কমাতেও গোলমরিচ বেশ কার্যকর। তাই ঠাণ্ডা লাগলে এক বাটি গরম সুপে ছিটিয়ে দিন টাটকা গোলমরিচের গুঁড়ো।
গোলমরিচে উপস্থিত পিপেরিন নামক উপাদান স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
গোলমরিচের পিপেরিন শরীরের নিউট্রিশন অ্যাবজর্ব করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
গোলমরিচ ফ্যাট সেল ভেঙে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর সাথে সাথে গোলমরিচ অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার জন্য এনার্জিও সরবরাহ করে।
মুখের অরুচি দূর করতে আয়ুর্বেদে গোলমরিচ খেতে বলা হয়। এজন্য আধা চাচামচ গোলমরিচ গুঁড়োর সাথে এক টেবিল চামচ গুড় মিশিয়ে খেতে হবে।
খাবার হজমেও সাহায্য করে গোলমরিচ। গোলমরিচ জিভের টেস্টবাডসগুলোকে সক্রিয় করে বলে পাকস্থলি থকে হাইড্রোক্লরিক এসিড নিঃসৃত হয়ে খাবার হজমে সাহায্য করে।
গ্যাস্ট্রিক বা পেট ফাঁপার সমস্যা থাকলে খাবারে শুকনো মরিচের ব্যবহার কমিয়ে গোলমরিচ ব্যবহার করুন। এছাড়াও একচিমটি জিরে গুঁড়ো, গোলমরিচ গুঁড়ো ও বিটলবন মিশিয়ে খেতে পারেন। তারপরে অবশ্যই এক গ্লাস পানি খেতে হবে।
গোলমরিচে রয়েছে ডায়রিয়া, কলেরা ও আথ্রাইটিস প্রতিরোধের ক্ষমতা। এটি সারকুলেশন বৃদ্ধি করে জয়েন্ট পেইন কমাতে সাহায্য করে।
গোলমরিচের পিপেরিন সেরেটোনিন বৃদ্ধি করে বলে এটি ডিপ্রেশন কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পিপেরিন ব্রেনের বেটা-এন্ডরফিন্স বৃদ্ধি করারসাথেসাথে মেনটাল ক্ল্যারিটি বৃদ্ধি করে। তাছাড়াও এন্ডরফিন প্রাকৃতিক পেইন কিলার ও মুড এলিভেটর হিসেবেও কাজ করে। এতে করে স্ট্রেস ও টেনশন দূর হয়।
দাঁতে ব্যাথা, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, মুখের দুর্গন্ধ এসবের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হিসেবে খেতে পারেন গোলমরিচ। পানির মধ্যে গোলমরিচ ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে, পানিটা ঠাণ্ডা করে নিন। এরপরে এই পানি দিয়ে কুলকুচি করুন।
গোলমরিচে থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেনট প্রি-ম্যাচিউর স্কিন এজিং যেমন- ফাইন লাইন, রিঙ্কল, ডার্ক স্পট প্রতিরোধ করে। তাই দামি ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স এর পেছনে গাদা গাদা টাকা খরচ না করে আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখুন গোলমরিচ।
শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করতে সাহায্য করে গোলমরিচ।
রান্নায় গোলমরিচ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে জেনে নিন কয়েকটি ঝটপট উপায়।
স্টেক জাতীয় খাবার কোটিং এর সময় একটু গোলমরিচ ছিটিয়ে দিন এক্সট্রা ক্রাঞ্চের জন্য।
অলিভ অয়েল, গোলমরিচ, লেবু আর এক চিমটি লবন মিশিয়ে বানাতে পারেন দারুন স্বাদের সালাদ ড্রেসিং।
খাবার টেবিলেই রাখুন একটি মিনি গ্রিনডার আর খাবারে ছিটিয়ে দিন টাটকা গোলমরিচ গুঁড়ো।
হজমশক্তি বৃদ্ধিতে গোলমরিচ, পিপুল ও আদা
ডা. আলমগীর মতি: ‘ত্রিকটু’ একটি সংস্কৃত শব্দ, যার মানে হলো তিন কটুর মিশ্রণ। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ‘ত্রিকটু’ বলতে তিনটি ঝাঁঝালো বা কটু স্বাদযুক্ত ভেষজের মিশ্রণকে বোঝানো হয়। আর এ ভেষজ তিনটি হলো গোলমরিচ, পিপুল ও আদা। বহু প্রাচীন তথা হাজার বছরের পুরনো ‘আয়ুর্বেদিক মেটারিকা মেডিকো’ গ্রন্থে ত্রিকটুর ভেষজ তিনটির বিবিধ ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এবং অসংখ্য ওষুধ তৈরিতে ত্রিকটু ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদিক ওষুধের ওপর পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রায় ২১০টি বা তারও বেশি ওষুধ তৈরিতে ত্রিকটু বা এর উপাদান ভেষজের (গোলমরিচ, পিপুল ও আদা) ব্যবহার হয়। পিপুল Piperaceae পরিবারভুক্ত এক প্রকার সুগন্ধি লতা জাতীয় গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম (Piper longum)। এর ভেষজ গুণসম্পন্ন ফল আকারে ছোট এবং কালচে লাল বর্ণের হয়ে থাকে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এ গাছের ফলের প্রকৃতি ঝাঁঝালো, উষ্ণ ও হালকা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি হজমশক্তি বৃদ্ধিকারক, ক্ষুধা বৃদ্ধিকারক, কাম-উদ্দীপক এবং টনিকের গুণসম্পন্ন। তাই কাশি, শ্বাসকষ্ট, কুষ্ঠ, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস, পেট ব্যথা, বদহজম, অর্শ, চর্মরোগ, এনিমিয়া, দীর্ঘকালীন জ্বর, টাইফয়েড, ক্ষুধামন্দা এবং আন্ত্রিক পরজীবীর চিকিৎসায় এর ফল ব্যবহার করা হয়। সাম্প্রতিককালে পরিচালিত এক গবেষণায় খুবই চমকপ্রদ তথ্য আবিষ্কৃত হয়। গবেষণায় প্রমাণ করা হয় যে, পিপুল শিশুদের অ্যাজমাজনিত শ্বাসকষ্ট কমায় এবং বিষক্রিয়ার ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত লিভার বা কলিজার হেপাটিক কোষসমূহের পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে লিভারকে সুস্থ করে।
গোলমরিচ
উদ্ভিদের নাম : গোলমরিচ, Gol Morich
স্থানীয় নাম : গোলমরিচ
ভেষজ নাম : Piper nigrum Linn,
ফ্যামিলি: piperaceae.
ব্যবহার্য অংশ : পাতা, ফল, লতা মূল
রোপনের সময় : এই গোলমরিচ লতানে গাছ হলেও অন্য গাছের আশ্রয় ভিন্ন এরা বাড়ে না। এই গণের লতাজাতীয় কয়েকটি গাছের প্রতি পর্বে শিকড় বেরোয় এবং ঐ শিকড়গুলি গাছকে আকঁড়ে ধরে রাখে। এই লতাগাছ ৫/৭ বৎসরের হলেও বড়জোর আঙ্গুলের মত মোটা হয়। পাতা আকারে প্রায় মিঠে পানের মত। উত্তোলনের সময় : মরিচ ফল ডাঁসা অবস্থায় (পাকার পূর্বাবস্থায়) সংগ্রহ করা হয়, তাপর তাকে রৌদ্র বা মৃদু উত্তাপে শুকিয়ে নিলেই প্রচলিত গোলমরিচের অবস্থায় এসে যায়। সা মরিচ (সাদা মরিচ) মরিচফল পাকলে লাল হয়, সেই পাকা মরিচগুলি জলে র’গড়ে ওপরের খোসাগুলিকে তুলে দেওয়া হয় এবং রৌদ্রে শুকানো হয়। অনেক সময় ক্লোরিনের জলে একে ধুয়ে সাদা করা হয়। তবে এটা ঠিক, সাদা মরিচ অপেক্ষাকৃত ঝাল কম।
আবাদী/অনাবাদী/বনজ : পূর্বে বোম্বাই প্রদেশের কানাড়া জেলার জঙ্গলে গোলমরিচ আপনা-আপনিই হয়ে থাকতে দেখা গেলেও তার পূর্ব থেকেই ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ঐসব অঞ্চলে চাষ হয়ে আসছে, এ ভিন্ন মাদ্রাজের পশ্চিম উপকূলভাগে আর্দ্র ভূমির অঞ্চলে এর চাষ করা হয়ে থাকে, তাছাড়া মালাবারেও ব্যাপকভাবে একে উৎপন্ন করা হয়।
চাষের ধরণ : চাষের পদ্ধতিঃ- আম, কাঁঠাল, কাজু বাদাম, মাদার, সুপারি প্রভৃতি গাছের তলার মাটিতে মরিচ লতার ডগা (শিকড় সমেত পর্ব) বসানো হয়। আস্তে আস্তে পাতা গজিয়ে ঐ লতা বেড়ে যেতে থাকে, ঐ পাতার ও লতার পর্ব থেকে শিকড় বেরিয়ে গাছকে আঁকড়ে ধরে উঠে যায়। এই ভাবে ২৫/৩০ ফুট পর্যন্তও উঠতে পারে, তবে ১০/১২ ফুটের বেশী উচুতে এদের উঠতে দেওয়া হয় না। ৩/৪ বৎসর পরে এইসব গাছে গোলমরিচ হতে শুরু হয়, তারপর থেকে ৩/৪বৎসর বেশী পরিমান গোলমরিচ জন্মে, ফল হওয়া কমে গেলে ওগুলিকে কেটে ফেলে আবার নতুন গাছ ঐ গাছের তলায় লাগানো হয়। উদ্ভিদের ধরণ: লতাজাতীয় গাছ,
পরিচিতি: এই গোলমরিচ লতানো গাছ হলেও অন্য গাছের আশ্রয় ভিন্ন এরা বাড়ে না। এই লতাজাতীয় গাছের প্রতি পর্বে শিকড় বেরোয় এবং ঐ শিকড়গুলি গাছকে আকঁড়ে ধরে রাখে। এই লতাগাছ ৫/৭ বৎসরের হলেও বড়জোর আঙ্গুলের মত মোটা হয়। পাতা আকারে প্রায় মিঠে পানের মত।
ঔষধি গুনাগুন :মরিচ প্রধানতঃ- কাজ করে রসবহ স্রোতে এবং অগ্ন্যাশয়ে বা পচ্যমানাশয়ে।
১। কাসিতেঃ যে কাসিতে সর্দি উঠে যাওয়ার পর একটু উপশম হয়, অথবা জল খেয়ে বমি হয়ে গেলে যে কাসির উদ্বেগটা চলে যায়, বুঝতে হবে এই কাসি আসছে অগ্ন্যাশয়ের বিকৃতি থেকে, যেটাকে আমরা সাধারনে বলে থাকি পেট গরমের কাসি। সেক্ষেত্রে গোলমরিচ গুড়ো করে, কাপড়ে ছেকে নিয়ে, সেই গুড়ো এক গ্রাম মাত্রায় নিয়ে একটু গাওয়া ঘি ও মধু মিশিয়ে, অথবা ঘি ও চিনি মিশিয়ে সকাল থেকে মাঝে মাঝে একটু একটু করে ৭/৮ ঘন্টার মধ্যে ওটা চেটে খেতে হবে। এর দ্বারা ২/৩ দিনের মধ্যে ঐ পেট গরমের কাসিটা প্রশমিত হবে।
২। আমাশয়ঃ- এই আমাশয় আম বা মল বেশী পড়ে না কিন্তু শুলুনি ও কোঁথানিতে বেশী কষ্ট দেয়, এক্ষেত্রে মরিচ চুর্ণ এক বা দেড় গ্রাম মাত্রায় সকালে ও বৈকালে দুবার জলসহ খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ আমদোষ ২/৩ দিনের মধ্যেই চলে যাবে।
৩। ক্ষীন ধাতুতেঃ- এখানে কিন্তু শুক্র সর্ম্পকীয় ধাতুর কথা বলা হচ্ছে না, এটা আমাদের সমগ্র শরীরে যে রস, রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা ও শুক্র আছে সেই সম্পধাতু সর্ম্পকে বলা হচ্ছে।
৪। ভুক্তপাকেঃ- লোভও সামলানো যায় না, খেয়েও হজম হয় না, একটু তেল ঘি জাতীয় গুরুপাক কিছু খেলেই অম্বলের ঢেকুর, গলা-বুক জ্বালা, তারপর বমি হলে স্বস্তি। যদি কোন সময় এই ক্ষেত্র উপস্থিত হয়, তাহলে খাওয়ার পরই গোল মরিচের গুড়ো এক গ্রাম বা দেড় গ্রাম মাত্রায় জলসহ খেয়ে ফেলবেন, এর দ্বারা সেদিনটার মত নিস্কৃতি পাবেন, তবে, রোজই অত্যাচার করবো আর রোজই মরিচ খাবো, এটা করলে চলবে না।
৫। নাসা রোগেঃ- এই রোগের নামটি তো ক্ষুদ্র, রোগটি কিন্তু এতটা লঘু নয়, এই রোগের মূল কারন রসবহ স্রোতের বিকার, আর তার লীলাক্ষেত্র হলো গলা থেকে উপরের দিকটায়। এর লক্ষণ হলো প্রথমে নাকে সর্দি তারপর নাক বন্ধ, কোন কোন সময় কপালে যন্ত্রনা, ঘ্রানশক্তির হ্রাস এবং দুর্গন্ধও বেরোয়, এমনকি আহারের রুচিও কমে যায়, কারও কারও ঘাড়ে যন্ত্রনা হতে শুরু করে, নাক দিয়ে রক্তও পড়ে এক্ষেত্রে পুরানো (পুরাতন) আখের গুড় ৫ গ্রাম, গরুর দুধের দই (এই দই বাড়ীতে পেতে নিলে ভাল হয়) ২৫ গ্রাম, তার সঙ্গে এক গ্রাম মরিচের গুড়ো মিশিয়ে সকালে ও বৈকালে দুবার খেতে হবে। এর দ্বারা ৩/৪দিন পর থেকে ঐ সব উপসর্গ কমতে শুরু করবে।
৬। ক্রিমি রোগেঃ- অগ্ন্যাশয় বিকারগ্রস্ত, তারই পরিনতিতে রসবহ স্রোতের বিকার, এই দুটি বিকারের ফলে যে ক্রিমির জন্ম হবে, সেটার লক্ষণ হলো পেটের উপরের অংশটায় (দু’ধারের পাঁজরের হাড়গুলির সংযোগস্থলের নিচেটায়) মোচড়ানি ব্যাথা, এটা ২ থেকে ৭/৮বৎসর বয়সের বালক-বালিকাদেরই হয়। এই ক্রিমির কবলে পড়লে মাথাটা একটু হেড়ে (বড়) হতে থাকে, এদের মুখ দিয়ে জল ওঠে না, প্রায়ই যখন তখন পেটে ব্যথা ধরে এই ক্ষেত্রে বালক-বালিকাদের জন্য ৫০ মিলিগ্রাম মাত্রায় মরিচের গুড়োয় একটু দুধ মিশিয়ে খেতে দিতে হবে। দরকার হলে সকালে বৈকালে ২ বার খেতে দিতে পারা যায়।
৭। শিশুদের ফুলো বা শোথেঃ- ঠান্ডা হাওয়া লাগানো বা প্রস্রাবের উপর পড়ে থাকা, শীতকালে উপযুক্ত বস্ত্রের অভাবে যেসব শিশু ফুলে যায়, সেখানে টাটকা মাখনের সঙ্গে ৫০ মিলিগ্রাম মরিচের গুড়ো মিশিয়ে রাখতে হবে, সেটা একটু একটু করে জিভে লাগিয়ে চাটিয়ে দিতে হবে।
৮। গনোরিয়াঃ- এই রোগকে আর্য়ুবেদে বলা হয় ঔপসর্গিক মেহ। এই রোগে প্রস্রাবের সময় বা পরে অথবা অন্য সময়েও টিপলে একটু পুজের মত বেরোয়, এক্ষেত্রে মরিচ চূর্ণ ৮০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় দুবেলা মধুসহ খেতে হবে। প্রথমে ২/৩দিন একবার করে খাওয়া ভাল।
৯। মুত্রাবরোধেঃ- প্রস্রাব একটু একটু হতে থাকে এবং থেমেও যায়, পূর্ব থেকে এদের হজমশক্তিও কমে গিয়েছে ধরে নিতে হবে। এরা গোলমরিচ ২ গ্রাম নিয়ে চন্দনের মত বেটে, একটু মিশ্রি বা চিনি দিয়ে শরবত করে খাবেন।
১০। ফিক্ ব্যথায়ঃ- কি কোমরে, কি পাঁজরে এবং কি ঘাড়ে ফিক্ ব্যাথা ধরেছে ঝাড়ফুকও করতে হবে না, আর মালিশও করতে হবে না, শুধু গোলমরিচের গুড়ো এক বা দেড় গ্রাম মাত্রায় গরম জল সহ সকালে ও বৈকালে ব্যবহার করবেন, এটাতে ঐ ফিক্ ব্যথা ছেড়ে যাবে।
বাহ্য প্রয়োগ:-
১১। ঢুলুনি রোগেঃ কথা কইতে মনের অগোচরে মাথা নেমে যাচ্ছে, চেষ্টা করেও সামলানো যাচ্ছে না, এক্ষেত্রে মুখের লালায় গোলমরিচ ঘষে চোকে কাজলের মত লাগাতে হবে, এর দ্বারা ঐ ঢুলুনি রোগ সেরে যাবে। এটি একটি তান্ত্রিক যোগ।
১২। নিদ্রাহীনতায়ঃ- এই অনিদ্রা রোগ যাঁদের হয় সাধারনতঃ এরা একটু মেদস্বী বা স্থুলদেহী। এরা কুলেখাড়ার (Asteracantha Longifolia) মূল শুকিয়ে নিয়ে তার ১০ গ্রাম ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে সন্ধ্যেবেলা খেতে হবে। আর একটি গোলমরিচ নিজের মুখের লালায় ঘষে কাজলের মত চোখে লাগালে এর দ্বারা ঐ নিদ্রাহীনতা চলে যাবে। এটাও একটি তান্ত্রিক প্রক্রিয়া, দেখা যাচ্ছে রোগ ভেদে তার ক্রিয়া বিপরীতধর্মী হয়েছে।
১৩। বিষাক্ত পোকার জ্বালায়ঃ- বোল্তা, ভীমরুল, কাঁকড়াবিছে, ডাঁস যেসব কীট পতঙ্গ কামড়ালে বা হুল ফোটালে জ্বালা করে, সেই জ্বালায় গোলমরিচ জলে ঘষে, তার সঙ্গে ২/৫ফোঁটা ভিনিগার মিশিয়ে ঐ দস্টস্থানে বা হুলবিদ্ধ জায়গায় লাগালে জ্বালাটা কমে যাবে।
১৪। টাক রোগেঃ- এ রোগ শুধু যে মাথায় হয় তা নয়, ভ্রু, গোঁফ প্রভৃতি যেখানেই লোমশ জাযগা, সেখানেই তার বসতি। একে বৈদ্যকের ভাষায় ইন্দ্রলুপ্ত বলে। এই ক্ষেত্রে প্রথমে ছোট ধানি পেঁয়াজের রস ঐ ব্যাধিতস্থানে লাগাতে হবে, তারপর ঐ জায়গায় গোলমরিচ ও সৈন্ধব লবন একসঙ্গে বেটে ওখানে লাগিয়ে রাখতে হবে। ব্যবহারের কয়েকদিন বাদ থেকে ওখানে নতুন চুল গজাতে থাকবে।
No comments: