কেন বিয়ের আগে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ জানা প্রয়োজন
তবে বিয়ের আগে বর ও কনের ব্লাড গ্রুপ পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। কেন এটা এত জরুরী? আসুন, জেনে ও বুঝে নেই সেই বিষয়টি।
বিয়ের আগে আমরা দুই পরিবারের বংশ, আত্মীয় স্বজন ইত্যাদি নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকি এবং এই সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাবলী জানার চেষ্টা করি। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হই না। আজ আমরা দি ঢাকা টাইমসের পাঠকদের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে তুলে ধরবো কেন এটি আমাদের জানা খুব বেশি প্রয়োজন?
্রথমে জেনে নেওয়া যাক রক্তের গ্রুপ বা ব্লাড গ্রুপ কি?
>আমাদের শরীরের রক্তের গ্রুপটি নির্ণীত হয়ে থাকে দুটি প্রক্রিয়ায় প্রথমটিকে বলা হয় ABO System। যা মূলত রক্তের গ্রুপ যেমন, A, B, AB ও O। এরপর দ্বিতীয়টি হলো Rh factor বা রেসাস ফ্যাক্টর। এখানে দুটি ভাগ রয়েছে Rh+ বা আরএইচ পজেটিভ এবং Rh- বা আরএইচ নেগেটিভ। রক্তের ABO system এর সাথে রেসাস ফ্যাক্টর যুক্ত হয়ে তবেই নির্ণীত হয় রক্তের গ্রুপ। অর্থাৎ রক্তের ABO এর সাথে রেসাস ফ্যাক্টর যুক্ত হয়ে নির্ধারিত হয় রক্তটি কি পজেটিভ নাকি নেগেটিভ। এবার দেখা যাক যদি এক গ্রুপের রক্ত অন্য গ্রুপের শরীরে দেওয়া হয় তবে কি ঘটবে?
প্রাথমিকভাবে কিছুই ঘটবে না। তবে এই ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির শরীরে একটি অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। ফলে ভবিষ্যতে ব্যক্তিটি যদি আবার বিপরীত ধরনের রক্ত শরীরে গ্রহণ করে তবে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। রক্তের রক্ত কোষ বা ব্লাড সেল ভেঙ্গে যাবে, ফলে ব্যক্তির আকস্মিক মৃত্যু ঘটতে পারে। একে বলা হয় ABO incompatibility। তাই কারো রক্ত যদি পজেটিভ হয় তবে তাকে পজেটিভ রক্তই দেওয়া হয়ে থাকে আর নেগেটিভ হলে নেগেটিভ রক্ত। সাধারণত O গ্রুপের রক্তকে বলা হয় সার্বজনীন দাতা। অর্থাৎ এই রক্ত সকল গ্রুপকে দেওয়া যেতে পারে তবে তা অবশ্যই পজেটিভ এবং নেগেটিভ মিলতে হবে। আর AB কে বলা হয় সার্বজনীন গ্রহীতা।
তাহলে স্বামী স্ত্রীর রক্ত কেমন হওয়া উচিত?
স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি পজেটিভ হয়ে থাকে তবে স্ত্রীর রক্তের গ্রুপও পজেটিভ হওয়া প্রয়োজন। আর স্বামীর রক্তের গ্রুপ যদি নেগেটিভ হয়ে থাকে তবে স্ত্রীর পজেটিভ কিংবা নেগেটিভ একটা হলেই হবে। কিন্তু অবশ্যই স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজেটিভ হলে স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পজেটিভ হতে হবে। তা না হলে কি সমস্যা হতে পারে?
স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজেটিভ আর স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ যদি নেগেটিভ হয় তবে লিথাল জিন বা মারণ জিন নামের একটি জিন তৈরি হয় যা তাদের মিলনে তৈরি জাইগোটকে মেরে ফেলে। ফলে মৃত বাচ্চার জন্ম হয়ে থাকে। স্বামীর ব্লাড গ্রুপ পজেটিভ হলে সন্তানের রক্তের গ্রুপও পজেটিভ হয়ে থাকে। স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজেটিভ কিন্তু স্ত্রীর নেগেটিভ হয়ে থাকলে স্ত্রী পজেটিভ গ্রুপের একটি ফিটাস বা ভ্রূণ ধারণ করে থাকে। ডেলিভারির সময় পজেটিভ ফিটাসের ব্লাড, প্লাসেন্টাল ব্যারিয়ার বা সাধারণ বাংলায় ভ্রূণফুল displacement ঘটবে। এর ফলে স্ত্রীর শরীরে নতুন ব্লাড গ্রুপের একটি আরএইচ এন্টিবডি তৈরি হবে। তা প্রথম সন্তানের জন্মের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা তৈরি করবে না। কিন্তু দ্বিতীয়বার সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পূর্বের সন্তানের জন্মের সময় তৈরি হওয়া আরএইচ এন্টিবডি শরীরের ভ্রূণের প্লাসেন্টাল ব্যারিয়ারকে ভেঙ্গে ফেলতে পারে। ফলে দ্বিতীয় সন্তান জন্মের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ কিংবা মৃত সন্তানের জন্ম হতে পারে। একে মেডিক্যাল ভাষায় বলা হয় আরএইচ
বিয়ের আগে অবশ্যই স্বামী-স্ত্রীর Blood Group জেনে নিন ! কিন্তু কেন?
অনেক প্রেমিক-প্রেমিকাকেই দেখা যায় পরস্পরের ব্লাড গ্রুপ নিয়ে চিন্তিত হতে। বেশিরবাগ মানুষেরই ধারণা বর ও কনের ব্লাড গ্রুপ মিলে গেলে হতে পারে নানান রকম সমস্যা? আসলেই কি তাই? না, ধারণাটি একদম ভুল। ব্লাড গ্রুপ মিলে গেলে কোনো সমস্যা নেই।
জেনে নেয়া যাক এই বিষয়ে জরুরী কিছু তথ্যঃ
স্বামী-স্ত্রীর ব্লাড গ্রুপ কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার আগে প্রথমে আমাদের ব্লাড গ্রুপ সম্পর্কে কিছু কথা জানা দরকার। প্রধানত ব্লাড গ্রুপ কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটা হল ABO system (A, B, AB & O), আরেকটা হল Rh factor {Rh positive(+ve) & Rh negative(-ve)}. অর্থ্যাৎ Rh factor ঠিক করবে ব্লাডগ্রুপ পজেটিভ হবে না নেগেটিভ হবে।
ব্লাড গ্রুপগুলো হলঃ
A+ve, A-ve, B+ve, B-ve, AB+ve, AB-ve O+ve, O-ve. জেনে নেয়া যাক, যদি অন্য গ্রুপের ব্লাড কারো শরীরে দেওয়া হয় তাহলে কী হবে?
কেন টেস্ট করাবেন?
যখন কোনো Rh নেগেটিভ গ্রুপের ব্যক্তিকে Rh পজেটিভ গ্রুপের ব্লাড দেয়া হয় তখন প্রথমবারে সাধারণত কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু এর বিরুদ্ধে রোগীর শরীরে এন্টিবডি তৈরী হবে। ফলে রোগী যদি আবার কখনও পজেটিভ ব্লাড শরীরের নেয় তাহলে তার ব্লাড cell গুলো ভেঙ্গে যাবে, এবং মারাত্মক সমস্যা দেখা দেবে। যেমন জ্বর, কিডনি ফেইলিউর, হঠাৎ মৃত্যু ইত্যাদি। এই সমস্যাকে মেডিকেল টার্ম এ বলা হয় Rh incompatibility।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর ব্লাডগ্রুপ কী রকম হওয়া দরকার?
যদি স্বামীর ব্লাডগ্রুপ blood group নেগেটিভ হয় তাহলে স্ত্রীর ব্লাডগ্রুপ পজেটিভ বা নেগেটিভ যে কোনো একটি হলেই হবে।
কিন্তু স্বামীর ব্লাডগ্রুপ যদি পজেটিভ হয়, তাহলে স্ত্রীকেও পজেটিভ ব্লাড গ্রুপের একজন হতে হবে। কোনোভাবেই স্ত্রীর ব্লাডগ্রুপ নেগেটিভ হওয়া চলবে না। অর্থাৎ একজন নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের নারী কেবলই একজন নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের পুরুষকে বিয়ে করাই নিরাপদ।
যদি স্বামীর ব্লাডগ্রুপ পজেটিভ হয় আর স্ত্রীর ব্লাডগ্রুপ নেগেটিভ হয় তাহলে কী সমস্যা হবে?
রক্তের গ্রুপ মিলে গেলে কোন সমস্যা হয় না। তবে ভিন্ন ব্লাড গ্রুপে স্ত্রী যদি নেগেটিভ হয় আর স্বামী যদি পজিটিভ হয়, তাহলে সন্তান জন্মের সময়ে ‘লিথাল জিন’ বা ‘মারন জিন’ নামে একটি জিন তৈরি হয় যা পরবর্তীতে জাইগোট তৈরিতে বাঁধা দেয় বা জাইগোট মেরে ফেলে। সে ক্ষেত্রে মৃত বাচ্চার জন্ম হয়।
যদি স্বামীর ব্লাড গ্রুপ পজেটিভ হয় তাহলে সাধারনত বাচ্চার ব্লাডগ্রুপও পজেটিভ হবে। যখন কোনো নেগেটিভ ব্লাডগ্রুপের মা ধারন করবে পজেটিভ Fetus(ভ্রুন), তখন সাধারনত প্রথম বাচ্চার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু ডেলিভারির সময় পজেটিভ Fetus এর ব্লাড, placental barrier ভেদ করে এবং placental displacement এর সময় মায়ের শরীরে প্রবেশ করবে। মায়ের শরীরে ডেলিভারির সময় যে ব্লাড প্রবেশ করবে, তা ডেলিভারি হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মায়ের শরীরে Rh এন্টিবডি তৈরী করবে। এবং সমস্যা হবে দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে।
যখন মা দ্বিতীয় সন্তান বহন করবে, তখন যদি তার fetus এর ব্লাডগ্রুপ পুনরায় পজেটিভ হয় তাহলে মায়ের শরীরে আগে যেই Rh এন্টিবডি তৈরী হয়েছিলো সেটা placental barrier ভেদ করে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করবে। আর যখন fetus এর শরীরে Rh antibody ঢুকবে তখন fetal এর RBC এর সাথে agglutination হবে, যার ফলে RBC ভেঙে যাবে। একে মেডিকেল টার্ম এ “Rh incompatibility” বলে। অর্থাৎ শিশুটি মারা যাবে।
অর্থাৎ পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের পুরুষ নেগেটিভ গ্রুপের মহিলাকে বিয়ে করলে তাঁদের একটিই সন্তান থাকার সম্ভাবনা বেশি। কোন কারণে প্রথম সন্তানটি জন্ম না নিলে পরবর্তীতে তারা নিঃসন্তান থেকে যাবার সম্ভাবনাও অত্যন্ত বেশি।
-
No comments: