অবহেলার কচু শাকের
ভিটামিন এ-এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি এবং সি-ও
বাংলাদেশে অতি পরিচিত একটি শাকপাতা হলো কচুশাক! বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কচুশাক খুবই জনপ্রিয়। কারণ বাড়ির উঠোনের কোণে, ধানের ক্ষেতে, বিলের ধারে যত্রতত্র বিনা যত্নে জন্মে বলে কচুশাক সহজেই পাওয়া যায়, কিনে খেতে হয় না।
কচুগাছ জলাভূমি ও শুকনো দু ধরনের জায়গাতেই জন্মায়। কচুরও রয়েছে নানান প্রজাতি। বেশির ভাগ কচুগাছ চাষ করতে না হলেও কিছু কিছু কচু খুব যত্ন নিয়ে চাষ করা হয়। কিছু কচুপাতা দেখতে অদ্ভুত বা রঙিন বলে সেগুলো বাগানে পাতাবাহার হিসেবেও স্থান পায়।
কচুর ইংরেজি হলো Taro এবং কচুগাছের ইংরেজি হলো Taro tree। ধারণা করা হয় কচুগাছের আদি নিবাস ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। প্রায় দু হাজার বছর আগেও কচু চাষ করা হতো। কচুগাছের পাতাকেই শাক হিসেবে খাওয়া হয়। কচুগাছের মূলত সবকিছুই ভক্ষণযোগ্য।
কচুগাছের মূলেই আসলে কচু থাকে। এটাকে সাধারণত কচু মুখী বা মুখী কচু বলা হয়ে থাকে। কচুগাছের মূল ও পাতা ছাড়াও এর ডাল, কান্ড, ফুল, লতি – সবই খাওয়া হয়। ইলিশ ও চিংড়ি মাছ দিয়ে কচুর তরকারি বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়।
এছাড়াও ভর্তা ও ভাজি করেও কচুগাছের বিভিন্ন অংশ খাওয়া হয়। কচুশাক বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়। তবে কচুপাতা ভর্তা ও ডাল বেশি জনপ্রিয়।
কচুশাকের উপকারিতার কথা বলতে গিয়ে টিএমএমএস মেডিকেল কলেজ (বগুড়া)-এর প্রভাষক মাহবুবা আকতার তানিয়া বলেন, ‘কচুশাককে আমরা ভিটামিন এ-এর খুব ভালো উত্স হিসেবে জানি। রাতাকানা রোগসহ ভিটামিন এ-এর অভাবে হওয়া সকল ধরনের রোগ প্রতিরোধে কচুশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন এ-এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি এবং সি-ও। তাই মুখ ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধেও কচুশাক সমান ভূমিকা রাখে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়’।
যেখানে সেখানে জন্মে এবং খুব বেশি সহজলভ্য বলে কচুশাককে অনেকেই গুরুত্ব দিতে চান না। কিন্তু এই কচু শাকই আপনার দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অনেকখানি পূরণ করতে পারে। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে রয়েছে –
খাদ্যশক্তি- ৪২ কিলোক্যালরি
শর্করা- ৬.৭ গ্রাম
চিনি- ৩ গ্রাম
খাদ্যআঁশ- ৩.৭ গ্রাম
চর্বি- ০.৭৪ গ্রাম
আমিষ- ৫ গ্রাম
ভিটামিন এ- ২৪১ আইইউ
বিটা ক্যারোটিন- ২৮৯৫ আইইউ
থায়ামিন- ০.২০৯ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লেভিন- ০.৪৫৬ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন- ১.৫১৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬- ০.১৪৬ মিলিগ্রাম
ফোলেট- ১২৬ আইইউ
ভিটামিন সি- ৫২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে- ১০৮.৬ আইইউ
ক্যালসিয়াম- ১০৭ মিলিগ্রাম
আয়রন- ২.২৫ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম- ৪৫ মিলিগ্রাম
ম্যাংগানিজ- ০.৭১৪ মিলিগ্রাম
ফসফরাস- ৬০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম- ৬৪৮ মিলিগ্রাম
জিংক- ০.৪১ মিলিগ্রাম
নানান গুণের আধার কচুশাক আমাদের শরীরকে সুস্থ্য ও সবল রাখার জন্য বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পাদন করে। যেমন –
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, যা দেহের বৃদ্ধি ও কোষ গঠনে ভূমিকা রাখে। এর বিভিন্ন ভিটামিন কোষের পুনর্গঠনে সহায়তা করে
কচুশাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যআঁশ, যা অন্ত্রের বিভিন্ন রোগ দূরে রাখে, পরিপাকক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
এর আয়রন ও ফোলেট রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অক্সিজেন সংবহনও পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্ত জমাটবাঁধার সমস্যা প্রতিরোধ করে।
কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাংগানিজ। দাঁত ও হাড় গঠনে ও ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে এসব উপাদানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাতকানা, ছানিসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে কচুশাক অতুলনীয়।
No comments: