দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের তাগিদ দিলেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেন তারা।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েডোর বাসভবনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বিদেশী কূটনীতিকরা সংলাপের তাগিদ দেন। জবাবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, আগে বিএনপি-জামায়াতের মানুষ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও, নৈরাজ্য বন্ধ করতে হবে। কূটনীতিকদের সংলাপের প্রস্তাবের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে শনিবার সরকারের অবস্থান জানানো হবে বলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, বিদেশী কূটনীতিকরা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। এই অবস্থায় সংকটজনক পরিস্থিতির একটা সুষ্ঠু সমাধানের আশা করেন তারা। কিভাবে সমাধান করা যায় সেটিও জানতে চেয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, তারাও সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চান। কিন্তু যে কোনো সমাধানের পূর্বেই মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে। সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে, সংকট নিরসনে কূটনীতিকদের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সংলাপে বসানোর চেষ্টা করা হবে। শনিবার এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানার পর বিএনপির সঙ্গেও কূটনীতিকরা বৈঠক করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছে একটি সূত্র।
বৈঠকে বিদেশী কূটনীতিকরা বলেছেন, বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতি লাভ করছে। এই দেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তারা চান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক। কিন্তু সহিংসতা চলতে থাকলে তাতে বড় সমস্যা হবে। সহিংসতা গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ দরকার। কিভাবে সমাধান করা যায় সেটা জানতে চান তারা। জবাবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা বর্তমান নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির জন্যে বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেন। তবে সংলাপ করা যাবে কিনা সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য জানাননি নেতারা। তারা বলেছেন, আগে মানুষ হত্যা বন্ধ হোক, জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ হোক। এসব বন্ধ না হলে শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপায় বের করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা ছাড়া তারা সংলাপের ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছেন না বলেও জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এবং জাতীয় পার্টির নেতা জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। আর কূটনীতিকদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, বৈদেশিক সহায়তা আইন নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়ে আলোচনা করতেই তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপরও আলোচনা হয়। বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিবাদ বিস্তার করছে। এই সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রম আগে বন্ধ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না।
আবদুল মতিন খসরু বলেছেন, বৈঠকে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশে চলমান সংঘাত ও সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা সমস্যা সমাধানে কি উপায় আছে সেই সম্পর্কে জানতে চান।
তিনি আরও বলেন, দেশে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে সন্ত্রাস ও সহিংসতা, নৈরাজ্য, জ্বালাও-পোড়াও করছে সেটা আগে বন্ধ করতে হবে। কেননা বিএনপি-জামায়াত এই দেশটাকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে চায়। এদিকে বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, কূটনীতিকরা বৈঠকে নেতাদের জানান যে, বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে উন্নয়ন সহায়তায় পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্প কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শি ব্লুম বার্নিকাট ঢাকায় এসেই ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে সমস্যার সমাধানের পক্ষে উভয় দেশের কূটনীতিক মতামত ব্যক্ত করেছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, বার্নিকাট বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কাজ করবেন বলে জানান। তবে এই বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে মোদি-ওবামা বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়। জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে দুই নেতা কথা বলেছেন।
-
No comments: