গত ৫ জানুয়ারি থেকে এযাবৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম-খুন হওয়া বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের একটি তালিকা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ ঢাকায় বিদেশী দূতাবাসে পাঠিয়েছে বিএনপি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ওই তালিকা অনুযায়ি এ বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আগামী সাপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখতে ঢাকায় আসছে। এরকম প্রেক্ষাপটে বিএনপির পক্ষ থেকে এই তালিকা দেয়া হলো বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘৫ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে যৌথ অভিযানের নামে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের অসংখ্য নেতাকর্মীর গ্রেপ্তারের পাশাপাশি কথিত বন্দুক যুদ্ধে সাজানো নাটকের মাধ্যমে হত্যাকান্ডে ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সরকারের কঠোর সেন্সরশিপের মধ্যেও এ বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকেও খবর প্রকাশিত হয়েছে।’
গত ৫ জানুয়ারি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ সাদা পোশাকে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হাতে ৭৮ জন প্রাণ হারিয়েছে, যার মধ্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীর সংখ্যা ৪৩ জন বলে দাবি করা হয়েছে।
এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রংপুর, কুড়িগ্রাম, রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী, বরিশালে উজিরপুর, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী ও সাধারণ জনসাধারণ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তালিকায় আরো বলা হয়েছে, গত এক মাসে ১৮ হাজার নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে। মামলায়
আসামি করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখের অধিক নেতাকর্মী। এর বাইরে মামলায় অজ্ঞাত সংখ্যাক লোককে আসামি তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। অজ্ঞাত এই তালিকায় পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের আসামি হিসেবে অন্তভুর্ক্ত করা হচ্ছে।
৫ জানুয়ারির পর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কথিত ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও ট্রাকের নিচে ফেলে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি পুলিশি হেফাজতে নেতা-কর্মীদের পায়ে গুলি করে পঙ্গু করার কথাও উল্লেখ করেন শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
এ পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতাকর্মী-সমর্থক যারা হত্যার শিকার হয়েছেন তাদের নাম ও ঠিকানার পাশাপাশি হত্যার
বিবরণও দেয়া হয়েছে।
অপহরণ ও গুমের বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০ দলীয় জোটের অনেক নেতাকর্মীর সন্ধান মিলছেন না। তাদের পরিবারের সদস্যরাও নানাভাবে খোঁজখবর নিচ্ছেন। কিন্তু নিরাপত্তার দিকটা বিবেচনায় রেখে ওই তালিকা দেয়া হয়নি।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, নির্বাচিত ঢাকা সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর চৌধুরী আলমসহ ২০১২ সালে গুম-খুনের বিষয়গুলো উল্লেখ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী।
No comments: