বড় দুটি দল ও জোটের নেতাদের অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতায় আটকে আছে বহুল কাঙ্ক্ষিত সংলাপ। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সব মহল থেকে সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনের দাবি তোলা হলেও অহমবোধের (ইগোর) সূক্ষ্ম বাধায় দল দুটি এখনও একসঙ্গে বসার অবস্থায় পৌঁছতে পারেনি। বরাবরই পরিবেশ তৈরি না হওয়ার অজুহাতে দল দুটি সংলাপকে পাশ কাটিয়ে চলেছে। চলমান অস্থিতিশীলতায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপিকে নাশকতা বন্ধ করতে হবে। বিএনপি প্রথম থেকেই বলছে, সুনির্দিষ্ট এজেন্ডার ভিত্তিতে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত সংলাপে বসেনি দুই দল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি নিয়ে দুই দলের বক্তব্যই নিপুণ বাগচাতুর্যে ভরা। তাদের মতে, সরকারের কথামতো বিএনপি যদি অবরোধ-হরতালের কর্মসূচি স্থগিত বা প্রত্যাহার করে সংলাপে বসে, সেখানে গ্রহণযোগ্য সমাধান না হলে তাদের পক্ষে নতুন করে আন্দোলন শুরু করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
বড় দুটি দল ও জোটের নেতাদের অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতায় আটকে আছে বহুল কাঙ্ক্ষিত সংলাপ। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সব মহল থেকে সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনের দাবি তোলা হলেও অহমবোধের (ইগোর) সূক্ষ্ম বাধায় দল দুটি এখনও একসঙ্গে বসার অবস্থায় পৌঁছতে পারেনি। বরাবরই পরিবেশ তৈরি না হওয়ার অজুহাতে দল দুটি সংলাপকে পাশ কাটিয়ে চলেছে।
চলমান অস্থিতিশীলতায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপিকে নাশকতা বন্ধ করতে হবে। বিএনপি প্রথম থেকেই বলছে, সুনির্দিষ্ট এজেন্ডার ভিত্তিতে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত সংলাপে বসেনি দুই দল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি নিয়ে দুই দলের বক্তব্যই নিপুণ বাগচাতুর্যে ভরা। তাদের মতে, সরকারের কথামতো বিএনপি যদি অবরোধ-হরতালের কর্মসূচি স্থগিত বা প্রত্যাহার করে সংলাপে বসে, সেখানে গ্রহণযোগ্য সমাধান না হলে তাদের পক্ষে নতুন করে আন্দোলন শুরু করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এতে দল ও জোটের বড় ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া আন্দোলন বন্ধের সঙ্গে নাশকতা বন্ধের পর মানুষ খুনের সব দায় বিএনপিকেই নিতে হবে। একইভাবে সরকার যদি এজেন্ডা দিয়ে বিএনপিকে সংলাপে বসার আহ্বান জানায়, এতে তাদের নৈতিক পরাজয় হবে বলে মনে করছে। সেক্ষেত্রে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলার আশঙ্কাও করছেন শাসক দলের নেতারা। কিন্তু উভয় দলের নেতাদের প্রকৃতই সদিচ্ছা থাকলে বাস্তব অবস্থা ভিন্ন হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা যদি ২০ দলীয় জোটের নেতাদের বিশ্বাস করে, তাদের ওপর আস্থা রেখে সংলাপের ডাক দেয় তাহলে মুহূর্তেই অবস্থা পাল্টে যাবে। একইভাবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতারা শাসক দলের ওপর আস্থা রেখে আন্দোলন স্থগিত বা প্রত্যাহার করলেও একই ধরনের ঘটনা ঘটবে। কিন্তু দু’দলের কেউ সেই পথে হাঁটছে না। উভয় দলই মুখে সংলাপের কথা বলছে। কিন্তু অপর পক্ষের ওপর আস্থা রেখে কেউ সংলাপের পরিবেশ তৈরি করছে না। অর্থাৎ হরতাল-অবরোধ, নাশকতা বন্ধ করছে না। একইভাবে সংলাপের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডাও ঘোষণা করছে না।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, সংকট নিরসনে দুই প্রধান দলের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। তারা চাইলে কালই সংলাপে বসে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু হচ্ছে না। এর মূল কারণ দুই প্রধান দলের মধ্যকার ‘ইগো প্রবলেম’। সন্দেহ-অবিশ্বাস এবং দূরত্ব। তিনি আরও বলেন, শাসক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে যেমন সংলাপ-সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি বিএনপিকেও সংঘাত-সহিংসতার দায় নিয়ে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটানোর নিশ্চয়তা দিতে হবে।
দেশের আরেক সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন অন্য কথা। তার ভাষায়, যারা সরকারে থাকেন মূলত তাদেরই দায়িত্ব বেশি। কিন্তু আমাদের সরকার ‘গো’ ধরে আছে। তারা আলোচনার পরিবর্তে শক্তিপ্রয়োগ করে আজীবন ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়। তিনি বিএনপিকেও অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে সংলাপে বসার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে রোববার সরকারের পক্ষ থেকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, চলমান নাশকতা ‘বন্ধ না করলে’ বিএনপির সঙ্গে ‘কোনো সংলাপ হবে না’। তিনি বলেন, সংবিধান, গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তার আগে নাশকতা বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় কিছুই হবে না। কারণ দানবের সঙ্গে মানবের সংলাপ হয় না। আগুন-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। রোববার তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংলাপের অন্তরায় নাশকতা- আওয়ামী লীগ : ?ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নাশকতাকে সংলাপের অন্তরায় বলে মনে করছে। আর তাই সংলাপের মাধ্যমে সংকট থেকে উত্তরণের চেষ্টা সত্ত্বেও তারা এগোতে পারছে না। সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, দৃশ্যত কঠোর মনোভাব প্রকাশ করলেও তারা সমাধানের পথ খুঁজছেন। কিন্তু এ অবস্থায় তাদের কাছে সম্মানজনক কোনো পথ নেই। নীতিনির্ধারকদের মতে, চলমান সন্ত্রাস ও নাশকতার মধ্যে বিএনপির দাবি মেনে নিলে তাদের রাজনৈতিক পরাজয় হবে। তাই সমাধানের লক্ষ্যে সংলাপে যাওয়ার আগে নাশকতা বন্ধ হতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা রোববার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে রাজি হওয়ার অর্থ জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের কাছে নতি স্বীকার। তাই অবরোধ ও হরতালে নৃশংসতা বৃদ্ধি পেলেও তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবেন না। কারণ তারা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিকে রাজনৈতিক নয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখছেন। অবশ্য সরকারের কোনো কোনো নীতিনির্ধারক দৃঢ়ভাবে মনে করছেন, সহসাই বিএনপি-জামায়াত দুর্বল হয়ে পড়বে। অবরোধ উপেক্ষা করে মানুষ বেরিয়ে আসবে।
এদিকে সরকারের একজন নীতিনির্ধারক বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে রোববার ে বলেন, সংলাপে গেলে মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রশ্নে ছাড় দিতে হবে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পক্ষে তাদের বক্তব্য, সংবিধান এবং গণতন্ত্র রক্ষায় তারা এ নির্বাচন করেছে। তাই ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচনে যাওয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সেটা করতে গেলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরাজয় হবে। এসব বিষয় নিয়েও সরকারের মধ্যে দোটানা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকেও আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসের পথ পরিহারের আহ্বান জানান। দলটির সিনিয়র নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিদেশী কূটনীতিকদের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, পেট্রলবোমা ছুড়ে মানুষ পোড়ানো ও হত্যা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রম বন্ধ করে বিএনপি গণতান্ত্রিক পথে ফিরে এলেই শুধু আলোচনা হতে পারে।
বিদেশী কূটনীতিক ছাড়াও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রপতিকে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। জানা গেছে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে অ্যাপয়নমেন্ট চেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেদিন সমবেদনা জানাতে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে যান, সেদিন সংলাপের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তারা তো সংলাপ চায় না। শুধু জনগণের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বিএনপি সংলাপের কথা বলে। তাদের আসল উদ্দেশ্য যে কোনোভাবে ক্ষমতায় যাওয়া। এখন লক্ষ্য স্থির করেছে সন্ত্রাসের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তিনি কোনো আলোচনার আগে বিএনপিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিহারের পরামর্শ দেন। তারা সহিংসতা বন্ধ করলে আলোচনা হতে পারে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে সরকারের পতন ঘটাবে বলে মনে করছে। সেটা সম্ভব নয়। কাজেই সংলাপ চাইলে আগে এসব বন্ধ করতে হবে। তারপর আলোচনা।
নৈতিক পরাজয় ভেবেই সংলাপে সরকারের না- বিএনপি : সংকট নিরসনে আন্দোলনের শুরু থেকেই সংলাপের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সুনির্দিষ্ট এজেন্ডার ভিত্তিতে জোটের নেতারা সংলাপ চাচ্ছেন। এজন্য সরকারের ওপর দেশী-বিদেশী চাপও আছে। কিন্তু সরকার বিষয়গুলোকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। ফলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের আগ্রহ থাকার পরও সংলাপ হচ্ছে না। সংকটের সমাধানও আসছে না।
সংলাপের উদ্যোগ নেয়াকে সরকার নৈতিক পরাজয় হিসেবে দেখছে বলে মনে করেন জোটের নেতারা। তাদের মতে, সংকট নিরসনে সংলাপে বসলে দ্রুত নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার বাধ্য হতে পারে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় হতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে তাদের। এসব বিবেচনা করে সরকার সংলাপে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে মনে করছেন জোটের নীতিনির্ধাকররা।
সূত্র জানায়, বিএনপি সব সময় চাচ্ছে সংলাপের মাধ্যমে চলমান সংকটের সমাধান হোক। সবশেষ বিবৃতিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও একই আহ্বান জানিয়েছেন। সংলাপের মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে তারা এ আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলন যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে সেখান থেকে সরে আসার কোনো পথ নেই। তাদের মতে, বল এখন পুরোপুরি সরকারের কোর্টে। সরকারই পারে চলমান সংকট উত্তরণের উদ্যোগ নিতে। বিএনপির পক্ষ থেকে সংলাপের দাবি জানানো ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। সরকার ইতিবাচকভাবে সংলাপে বসতে চাইলে সেক্ষেত্রে তারা কিছুটা ছাড়ও দিতে পারে।
সূত্র জানায়, চলমান সংকটকে সবাই রাজনৈতিক সংকট হিসেবে মানলেও সরকার বলছে উল্টো। তাদের মতে, এটা রাজনৈতিক সংকট নয়। তারা এই আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত পেশাজীবীদের ফোরামসহ অন্যরাও একই বিষয় প্রমাণে সচেষ্ট। এভাবে আন্দোলন দমন করা সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, তারা সব সময় সংকট নিরসনে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সংলাপের বিকল্প হচ্ছে সংঘাত। সরকার সংলাপের উদ্যোগ না দিয়ে দেশকে সংঘাতের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, সংলাপের উদ্যোগ নিলেও নৈতিক পরাজয় হবে এমনটা ভেবে হয়তো সরকার এই উদ্যোগ নিচ্ছে না। একই সঙ্গে দ্রুত নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনদের পরাজয় হতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে। এসব বিবেচনা করে সরকার সংলাপে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
মাহবুব বলেন, জেদাজেদি ছেড়ে দিয়ে দেশের স্বার্থে সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারকে সংলাপের জন্য একটি আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দুই দল সংলাপে বসলে বর্তমান অচলাবস্থার দ্রুত নিরসন হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ে বলেন, আন্দোলন শুরুর আগ থেকেই ২০ দলের পক্ষ থেকে সংকট নিরসনে সংলাপের আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু সরকার তাদের দাবিকে পাত্তাই দেয়নি।
Tag: national
No comments: