সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ায় মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ......রাজিউন)।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালায়া হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান শনিবার খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করা হয়েছে। তার মরদেহ আনা ও দাফনের বিষয়ে পারিবারিক সিদ্ধান্তের পর আপনাদের জানানো হবে।
মৃত্যুকালে আরাফাত রহমান কোকোর বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি কুয়ালালামপুরের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
কোকো বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যা নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও সিটি ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন।
মামলা নিয়ে দুই ছেলে প্রবাসে থাকার মধ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বর্তমানে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে রয়েছেন খালেদা জিয়া। কোকোর মৃত্যুর খবর আসার পর গুলশান কাঁচাবাজার সংলগ্ন মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে ওই কার্যালয়ে ঢুকতে দেখা যায়। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, কুরআনখানির জন্য তাদের আনা হয়েছে। খালেদা জিয়ার কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন এবং বিএনপির নেতাদের কার্যালয়ে ঢুকতে দেখা গেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গ্রেফতার হন কোকো। ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরদিন চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান কোকো। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় চলে যান। এরপর থেকে তিনি মালয়েশিয়াতেই অবস্থান করছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর কোকোর সাময়িক মুক্তির মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর আদালতে ডাকে তিনি না ফিরলে তাকে পলাতক দেখিয়েই বিচার এবং সাজার রায় হয়। ২০১১ সালের ২৩ জুন মুদ্রা পাচারের মামলার রায়ে আরাফাতকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। সেই সঙ্গে ১৯ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। পলাতক থাকায় আপিলের সুযোগ পাননি তিনি। তবে বিএনপির দাবি, এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কোকোর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হলেও কোকো সেই পথ ধরেননি। তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর আকস্মিকভাবে আরাফাতকে করা হয় জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।
অভিযোগ রয়েছে, বিসিবির নির্বাচিত কমিটিকে হটিয়ে আইনের মারপ্যাঁচে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে বিসিবিকে তখন ‘দখল’ করেছিল কোকো ও তার সঙ্গীরা।
কোকোর বিরুদ্ধে যত মামলা: আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে ৭টি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে দু`টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।
সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি টাকার বেশি অর্থ অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ কাফরুল থানায় আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ মামলায় সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী মরহুম আকবর হোসেনের ছেলে সায়মন হোসেনকে আসামি করা হয়। ২০১১ সালের ২৩ জুন এ মামলার রায় হয়। তাতে পলাতক দেখিয়ে আরাফাত রহমান কোকোকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেয় আদালত। কোকো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জামিন নিয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে যান। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় যান।
এছাড়া কোকোর বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির অভিযোগে ২০১০ সালের ১ মার্চ এনবিআর একটি মামলা করে। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোকোর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দু`টি চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। তারপর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক একটি মামলা করে।
সোনালী ব্যাংকের ঋণখেলাপি মামলায় বড় ভাই তারেক রহমানের সঙ্গে কোকোও আসামি। গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় মায়ের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে আরাফাত রহমান কোকোকে।
No comments: