ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যে মহিলা রোগীকে গতকাল মৃত ঘোষণার দু ঘন্টা পর মর্গের ট্রলিতে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়, সেই রোগী আজ অবশেষে মারা গেছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যে মহিলা রোগীকে গতকাল মৃত ঘোষণার দু ঘন্টা পর মর্গের ট্রলিতে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়, সেই রোগী আজ অবশেষে মারা গেছেন।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ মুশফিকুর রহমান বিবিসি বাংলাকে জানান, শুক্রবার বিকেলে অজ্ঞাতপরিচয় এই মহিলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
গতকাল জীবিত অবস্থাতেই তাকে কতর্ব্যরত এক ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেছিলেন। এ ঘটনা নিয়ে হাসপাতালে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি ঘোষণা করেছেন। কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আট তলায় ঘটেছিল সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা। মৃত ঘোষণার পর অজ্ঞাতপরিচয় এই মহিলাকে মর্গে নেয়া হচ্ছিল। হাসপাতালের বেড থেকে তাকে মর্গের ট্রলিতে তোলা হলো।
আমি ৩৪ বছর ধরে ডাক্তার হিসেবে কাজ করছি। এরকম ঘটনা এর আগে আমি দেখিনি
ডাঃ মুশফিকুর রহমান, উপ-পরিচালক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
ট্রলি ঠেলছিলেন মর্গের যে কর্মচারী, তিনি হঠাৎ দেখলেন, লাশ নড়ে উঠেছে। ডাক্তার যাকে মৃত ঘোষণা করেছেন কয়েকঘন্টা আগে, যার ডেথ সার্টিফিকেট লেখা হয়ে গেছে, তিনি নড়ে উঠে প্রমাণ করলেন, তিনি মরেন নি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক মুশফিকুর রহমান বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন কিভাবে কোন পরীক্ষা না করেই ৪৫ বছরের এক অসুস্থ রোগীকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি আরও জানিয়েছেন, ঘটনার জন্য দায়ী চিকিৎসককে চিহ্ণিত করা হয়েছ। ঘটনা তদন্তে গঠিত হয়েছে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি।
“আমার জানা মতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এরকম ঘটনার নজির নেই। আমি ৩৪ বছর ধরে ডাক্তার হিসেবে কাজ করছি। এরকম ঘটনা এর আগে আমি দেখিনি।"
জীবিত মানুষকে মৃত ঘোষণার এই ঘটনা নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে বাংলাদেশে। প্রশ্ন উঠেছে কিভাবে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই একজন চিকিৎসক এরকম একটি কাজ করতে পারলেন।
অজ্ঞাতপরিচয় মহিলা রোগী
এপারেন্টলি হয়তো রোগী নড়াচড়া করেনি, ডাক্তার ধরে নিয়েছেন রোগী মারা গেছে। পুরোপুরি কনফার্ম না হয়ে সিদ্ধান্তটি দেয়া হয়। এটি ছিল পুরোপুরি ভুল সিদ্ধান্ত
ডাঃ মুশফিকুর রহমান, উপ-পরিচালক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
ডাঃ মুশফিকুর রহমান বিবিসি বাংলার পুলক গুপ্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, গত মঙ্গলবার মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শহীদ মিনারের গেট থেকে এই রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়।
“অজ্ঞাতনামা এই মহিলা রোগী বাইরে শুয়ে ছিল। তাকে হাসপাতালের সাত নম্বর ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ৮০২ নম্বরে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।”
দুস্থ এই মহিলার সাথে কেউ ছিলেন না। তিনি কোন কথা বলতে পারছিলেন না। নিজের নাম পরিচয় বলতে পারছিলেন না।
তিন দিন হাসপাতালের বেডে পড়ে থাকার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন একজন ডাক্তার।
“এপারেন্টলি হয়তো রোগী নড়াচড়া করেনি, ডাক্তার ধরে নিয়েছেন রোগী মারা গেছে। পুরোপুরি কনফার্ম না হয়ে সিদ্ধান্তটি দেয়া হয়। এটি ছিল পুরোপুরি ভুল সিদ্ধান্ত”, বলছিলেন ডাঃ মুশফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
মর্গের যে কর্মচারি ট্রলি ঠেলছিলেন, তিনি দেখতে পান, লাশ নড়ে উঠেছে ট্রলির উপর। সাথে সাথে তাকে নামিয়ে বিছানায় দেয়া হয়। তার চেতনা ফিরিয়ে আনা হয়। আইভি ফ্লুইড এবং অক্সিজেন দেয়া হয়।
তদন্ত কমিটি
কিন্তু কিভাবে একজন জীবিত মানুষকে এভাবে মৃত ঘোষণা করলেন ডাক্তার?
মুশফিকুর রহমান বলেন, এই রোগীকে মৃত ঘোষণা করার কোন কারণই ছিল না। রোগী তো মারা যাননি। কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার চেয়েও বড় কথা, কনফার্ম করার জন্য সেখান ইসিজি মেশিন ছিল। সেটির পরীক্ষায় যদি কোন সাড়া পাওয়া না যেত, যদি ফ্লাট লাইন পাওয়া যেত, তাহলে একটা কথা ছিল। সেটি পরীক্ষা না করেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন ডাক্তার।
তিনি বলেন, যে কোন রোগীকে মৃত ঘোষণার আগে ভাইটাল সাইনগুলো পরীক্ষা করতে হয়। যেমন শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে কিনা। হাতে, গলায় এবং ফিমোরালে পালস পাওয়া যায় কিনা। এই তিনটা জায়গায় অন্তত পালস দেখতে হয়।
তিনি জানান, যে ডাক্তার এই কাজ করেছেন তাকে চিহ্ণিত করা হয়েছে। চার সদস্যের এক তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
No comments: